আগামী বছর এক লাখ বাংলাদেশি কর্মী নিয়োগ দেবে রোমানিয়া: মোমেন

বাংলাদেশ থেকে আগামী বছর এক লাখ শ্রমিক নিয়োগ দেবে দক্ষিণপূর্ব ইউরোপীয় দেশ রোমানিয়া। এই নিয়োগের বেশিরভাগই দেশটির নির্মাণখাতে দেওয়া হবে বলে মঙ্গলবার (৬ ডিসেম্বর) সাংবাদিকদের জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন।
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, "গত বছর থেকেই রোমানিয়ায় লোক যেতে শুরু করেছে। আগামী বছর এক লাখের বেশি শ্রমিক নিয়োগ দেবে দেশটি, বিশেষ করে নির্মাণ শ্রমিকদের নিয়োগ দেওয়া হবে। আগের মতোই তারা (রোমানিয়া) এখানে একটি অস্থায়ী কনস্যুলেট অফিস খুলবে।"
রোমানিয়ায় বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত তাকে বিষয়টি অবহিত করেছেন বলে উল্লেখ করেন মন্ত্রী।
"দীর্ঘদিন ধরে, আমাদের শ্রমিকরা কেবল মধ্যপ্রাচ্যেই যাচ্ছে। তাদের অন্য দেশে পাঠানো যায় কিনা, তা আমরা দেখার চেষ্টা করছি," যোগ করেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, "বাংলাদেশে রোমানিয়ার কোনো কনস্যুলেট নেই। আমি তাদের একটি কনস্যুলেট অফিস খুলতে বলেছি। কিন্তু তারা এর জন্য এত টাকা খরচ করতে চায় না। একই অবস্থা মাল্টা, হাঙ্গেরি, বুলগেরিয়াসহ কয়েকটি দেশে।"
"পরে, যখন আমরা লোকাল হসপিটালিটি প্রদানের বিষয়ে কথা বলি, তখন তারা রাজি হয় এবং ১৪ হাজার ভিসা দেয়। তাদের দেশে নির্মাণ কাজের জন্য লোক প্রয়োজন," বলেন মন্ত্রী।
বুলগেরিয়ার পর রোমানিয়াও বাংলাদেশি দক্ষ জনশক্তির জন্য দুয়ার খুলে দিয়েছে। পূর্ব ইউরোপে বাংলাদেশিদের জন্য খামার, নির্মাণ এবং পরিষেবা খাতে কাজের সুযোগ প্রসারিত হচ্ছে।
২০২১ সালের অক্টোবরে দুই দেশের পররাষ্ট্র বিষয়ক মন্ত্রীদের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক আলোচনার পর, রোমানিয়া ঢাকায় একটি অস্থায়ী কনস্যুলার অফিস খুলতে সম্মত হয়।
এর আগে, ১৯৭৫ সালে বাংলাদেশ রোমানিয়াতে তার প্রথম মিশন চালু করেছিল; কিন্তু ১৯৯৫ সালে এটি বন্ধ হয়ে যায়। ২০০০ সালে রোমানিয়াও বাংলাদেশে তার মিশন বন্ধ করে দেয়। তবে সম্প্রতি রোমানিয়ায় পুনরায় দূতাবাস চালু করেছে বাংলাদেশ।
চলতি বছরের ফেব্রুয়ারির শুরুতে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন সাংবাদিকদের বলেছিলেন, রোমানিয়া ৩,৪০০ মুলতুবি ভিসাসহ প্রায় ৫,০০০ ভিসা দিতে তিন মাসের জন্য ঢাকায় ছয় সদস্যের কনস্যুলার দল পাঠাচ্ছে।
এ বিষয়ে ব্যুরো অফ ম্যানপাওয়ার, এমপ্লয়মেন্ট অ্যান্ড ট্রেনিং (বিএমইটি)-এর মহাপরিচালক মোঃ শহিদুল আলম দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "আগে বাংলাদেশিদের রোমানিয়ার ভিসা পেতে ভারতে যেতে হতো। আমাদের সরকারের প্রচেষ্টায় রোমানিয়া ঢাকায় একটি অস্থায়ী কনস্যুলার অফিস খুলেছে; এতে আমাদের কর্মীরা এতে উপকৃত হচ্ছেন।"
জাতিসংঘের কোঅর্ডিনেশন অফ হিউম্যানিটেরিয়ান অ্যাফেয়ার্সের কার্যালয় অনুসারে, ২০২০ সাল পর্যন্ত প্রায় ১৬১ জন বাংলাদেশি রোমানিয়ায় বসবাস করছিলেন। তবে সংস্থাটির মতে, অনেক বাংলাদেশি প্রায়শই ইউরোপের বিভিন্ন দেশে পৌঁছানোর জন্য অবৈধ রুট ব্যবহার করে থাকেন, যা আনুষ্ঠানিক হিসাবে উল্লেখ থাকে না। সংস্থাটি বলছে, ওই বছর কমপক্ষে ২১ জন বাংলাদেশি অবৈধভাবে রোমানিয়ায় গেছেন।
২০২০ সালে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সরকারী ব্যবস্থায় রোমানিয়াগামী প্রত্যেক কর্মীদের জন্য অভিবাসন খরচ ১ লাখ ৬৫ হাজার টাকা নির্ধারণ করেছে। যেখানে প্রাইভেট এজেন্সির মাধ্যমে যেতে জনপ্রতি খরচ পড়ে কমপক্ষে ১০ থেকে ১২ লাখ টাকা।