বিদেশি প্রতিষ্ঠানের দখলে এলিভেটর, এস্কেলেটরের বাজার

রাজধানী ঢাকার ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সিটি বসুন্ধরায় অনুষ্ঠিত হচ্ছে ৪র্থ গ্লোবাল এলিভেটর অ্যান্ড এস্কেলেটর এক্সপো ২০২২। দেশের দ্রুত বর্ধনশীল আবাসন শিল্পে লিফট ও এস্কেলেটর সম্পর্কে জানাতে এবং এসব পণ্যের প্রদর্শনে এ আয়োজন করা হয়েছে।
বাংলাদেশে লিফট এবং এস্কেলেটরের বাজারের প্রায় ৮৫ শতাংশই বিদেশি প্রতিষ্ঠানের দখলে।
যদিও ওয়াল্টন গ্রুপ এবং প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের মতো বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান এ খাতে বিনিয়োগ করেছে। তবে উদ্যেক্তারা বলছেন, দেশি উদ্যেক্তাদের এগিয়ে নেওয়ার জন্য দক্ষ কর্মী তৈরিসহ সরকারের নীতি সহায়তার প্রয়োজন।
এ বছর বৃহস্পতিবার (৩ নভেম্বর) থেকে শুরু হওয়া এ প্রদর্শনীর আয়োজন করেছে ভার্গো কমিউনিকেশনের সহযোগিতায় বাংলাদেশ লিফট এস্কেলেটর অ্যান্ড লিফট ইমপোর্টার অ্যাসোসিয়েশন (বিইইলিআইএ)।
বাংলাদেশ, চীন, জার্মানি, ইতালি, ভারত, জাপানসহ ১০টি দেশের ৫০টিরও বেশি কোম্পানি মেলায় অংশ নিয়েছে।

ইভেন্টে অংশগ্রহণকারী বাংলাদেশি কোম্পানিগুলোর মধ্যে রয়েছে ওয়ালটন, প্রপার্টি লিফটস, বিডি লিফট, ব্রাইট পাওয়ার টেক, ইউনাইটেড লিফট, ইউরো এলিভেটর বিডি, হরাইজন টেকনো, ইজি টেক, জুপিটার এন্টারপ্রাইজ এবং রোজমাউন্ট বিডি।
আয়োজকরা বলছেন, ঢাকা ও চট্টগ্রামের মতো বড় শহর ছাড়াও দেশের অন্যান্য শহরাঞ্চলে রিয়েল এস্টেট খাতের প্রসারের সঙ্গে সঙ্গে লিফট ও এস্কেলেটরের চাহিদা বাড়ছে।
তিনদিনব্যাপী এ প্রদর্শনীর দ্বিতীয় দিন শুক্রবার (৪ নভেম্বর) এক্সপোতে কথা হয় ভার্গো কমিউনিকেশন অ্যান্ড এক্সিবিশনের পরিচালক অনিতা রঘুনাথের সঙ্গে। তিনি দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, বাংলাদেশে প্রতিবছর ৬ থেকে ৭ হাজার লিফট বিক্রি হয়। প্রতিবছরই এ চাহিদা ১৫ শতাংশ করে বাড়ছে।

সূত্রের তথ্য অনুযায়ী, লিফটপ্রতি গড় দাম ২০ লাখ টাকা ধরলে, বার্ষিক বাজার দাঁড়ায় ১২ থেকে ১৪ হাজার কোটি টাকা। যার প্রায় ৮৫ শতাংশই বিদেশি ব্রান্ডের দখলে।
বাংলাদেশ লিফট এস্কেলেটর অ্যান্ড লিফট ইমপোর্টার অ্যাসোসিয়েশন (বিইইলিএ)-এর পরিচালক মুহাম্মদ জাকিরুল হক দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "আমাদের সদস্য আছে ৭০ থেকে ৮০ জন । সবমিলে ১৫০ থেকে ২০০ প্রতিষ্ঠান লিফট বিক্রি করছে। তবে সব নিয়ম মেনে ২০ থেকে ২৫টি প্রতিষ্ঠান বিদেশ থেকে আমদানি করছে লিফট এবং এস্কেলেটর। বিক্রি হওয়া ৮৫ শতাংশ লিফটই বিদেশি ব্রান্ডের।"
তিনি বলেন, "লিফট এবং এস্কেলেটরকে ক্যাপিটাল মেশিনারি হিসেবে দেখানো হতো আগে। কিন্তু সম্প্রতি লিফটকে ক্যাপিটাল মেশিনারি হিসেবে বাদ দেয়া হয়েছে। আমরা চাই এটিকে যেন আবারও ক্যাপিটাল মেশিনারি হিসেবে দেখানো হয়।"
তিনি আরও বলেন, দেশের কিছু প্রতিষ্ঠান চীন, ইতালিসহ বিভিন্ন দেশ থেকে যন্ত্র আমদানি করে দেশে লিফট তৈরি করছে। তবে এখনও কোনো প্রতিষ্ঠান এস্কেলেটর তৈরি শুরু করেনি।
জাকিরুল হক বলেন, বছরে এস্কেলেটর ৪০০ থেকে ৫০০ ইউনিট বিক্রি হয়। ইউনিট প্রতি দাম ২০ থেকে ৩০ লাখ টাকা। সেই হিসেবে এর বাজার ৮০ কোটি থেকে ১৫০ কোটি টাকা ।

ওয়াল্টন গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান এস এম শামছুল আলম বলেন, "আমরা দেশে লিফট উৎপাদন শুরু করলেও সরকারি প্রতিষ্ঠানে আমাদের পণ্য ব্যবহার করা হচ্ছে না। দেশের প্রতিষ্ঠানকে এগিয়ে নিতে হলে আমাদের পণ্য সরকারকে কিনতে হবে।"
ফরচুন বিজনেস ইনসাইটস অনুসারে, ২০২১ সালে গ্লোবাল এলিভেটর এবং এস্কেলেটরের বাজার ছিল ৭৯.৭০ বিলিয়ন ডলার। ২০২২ সালে এই বাজার দাঁডিয়েছে ৮৩.৮৬ বিলিয়ন ডলারে; আশা করা হচ্ছে, ২০২৯ সাল নাগাদ ১৩২.০৮ বিলিয়নে দাঁড়াবে এ বাজার।
বাংলাদেশ বেশিরভাগ লিফট আমদানি করে সুইজারল্যান্ড, ফিনল্যান্ড, জাপান, চীন ও দক্ষিণ কোরিয়া থেকে। মানের ওপর ভিত্তি করে লিফটগুলোর দাম ৮ লাখ টাকা থেকে ৬০ লাখ টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে।
উদ্যোক্তারা দুর্ঘটনা এড়াতে মানসম্পন্ন লিফট ও এস্কেলেটর তৈরি ও আমদানি নিশ্চিত করতে একটি মনিটরিং এজেন্সি চালু করার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।