খুলনায় বিএনপির মহাসমাবেশ: যশোর- খুলনাগামী বাস বন্ধ

আগামীকাল খুলনায় বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশকে কেন্দ্র করে আজ শুক্রবার থেকে শুরু হয়েছে দুই দিনের 'পরিবহন ধর্মঘট', যশোর থেকে খুলনাগামী আন্তঃজেলা বাসসহ সব ধরনের গণপরিবহন বন্ধ রেখেছেন পরিবহন মালিক ও শ্রমিকরা।
এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন সাধারণ যাত্রীরা, সমাবেশস্থলে যোগ দিতে বিকল্প পরিবহনের দ্বারস্থ হয়েছেন বিএনপি নেতা-কর্মীরা।
যশোর থেকে খুলনাগামী যাত্রীবাহী বাস বন্ধ থাকলেও বাকি ১৭টি রুটে সকল পরিবহন চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে। বিএনপি নেতাকর্মীরা গতকাল সকাল থেকে ট্রেনসহ বিভিন্নভাবে খুলনার উদ্দেশ্য রওনা হয়েছে।
দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের রুটগুলোর যাত্রীবাহী বাসের শেষ গন্তব্যস্থান হলো খুলনার সোনাডাঙা বাস টার্মিনাল। তবে খুলনার বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশের জন্য দুই দিনের 'পরিবহন ধর্মঘটের কারণে খুলনার টার্মিনালগুলোতে প্রবেশ করতে পারছে না যাত্রীবাহী বাসগুলো। ফলে এই অঞ্চলের রুটগুলোর যাত্রীবাহী বাস থেমে জড়ো হচ্ছে যশোর কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালে।
যাত্রীরা খুলনায় যেতে না পেরে ভোগান্তিতে পড়ছেন। এমনকি অনেকেই নিজ গন্তব্যে না যেতে পেরে যশোর থেকে ফিরে যেতে বাধ্য হচ্ছেন। আবার অনেকেই সিএনজিচালিত অটোরিকশাসহ বিভিন্ন যানবাহনে গন্তব্যে যাচ্ছেন।
বাস টার্মিনালের সংশ্লিষ্টরা বলছেন, যশোর কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল থেকে ১৮টি রুটে বাস চলাচল করে। শুক্রবার সকাল থেকে যশোর থেকে খুলনাগামী কোন বাস চলেনি; এমনকি খুলনা থেকেও কোন বাস যশোরে ছেড়ে আসেনি। তবে যশোর থেকে অন্য ১৭টি রুটের বাস যশোর টার্মিনালে নিয়মিত আসছে এবং নিদিষ্ট সময় শেষে খুলনাবাদে সকল রুটে ছেড়ে যাচ্ছে।
পরিবহন শ্রমিকেরা বলছেন, কী কারণে বাস চালানো বন্ধ রয়েছে তা তারা বলতে পারেন না।
শুক্রবার দুপুরে যশোর কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালে গিয়ে দেখা গেছে, কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর, ঝিনাইদহসহ বিভিন্ন জেলা থেকে ছেড়ে আসা খুলনাগামী যাত্রীবাহী পরিবহন যশোর বাস টার্মিনালে এসে থেমে যাচ্ছে। কোনো ধরণের নোটিশ ছাড়াই মানুষকে বাস থেকে যশোরে নামিয়ে দেওয়া হচ্ছে।
যাত্রীদের অতিরিক্ত ভাড়া নিয়ে ইজিবাইক বা নছিমনে করে কেটে কেটে যেতে হচ্ছে।
যশোর থেকে খুলনাগামী বেসরকারি এনজিও কর্মী হুমায়ুন কবির তার ৬ মাস ও ৬ বছর বয়সী মেয়েসহ স্ত্রীকে নিয়ে যশোর বাসটার্মিনালে বসে ছিলেন। তিনি বলেন, শুক্রবার ও শনিবার ছুটি থাকায় স্ত্রী সন্তানদের নিয়ে খুলনার বয়রায় গ্রামের বাড়ি যাচ্ছিলাম।
"যশোর টার্মিনালে এসে দেখি বাস চলাচল বন্ধ। শুনেছিলাম খুলনার সাথে বাস চলাচল বন্ধ থাকবে; তবে এ রুটে সব বাস বন্ধ থাকবে সেটা জানতাম না। বাস না পাওয়ায় আর গ্রামের বাড়ি যাওয়া হলো না। কর্মস্থলের কোয়ার্টারে চলে যাচ্ছি।"
বিপ্লব বিশাস নামে আরেক যাত্রী বলেন, 'অভয়নগর উপজেলা থেকে সকালে সমাজ সেবা অধিদপ্তরে চাকরির নিয়োগ পরীক্ষা দিতে যশোর শহরে এসেছি। পরীক্ষা শেষে বাড়িতে ফেরার জন্যে দুপুরে বাস টার্মিনালে এসে দেখি খুলনা রুটে কোনো বাস চলছে না। বড় ধরণের সংকটে পড়েছি। কারণ, ইজিবাইকে কেটে কেটে যেতে গেলেও ভাড়া লাগছে বাসের চেয়ে দুই থেকে তিনগুণ বেশি। আবার তা পাওয়াও যাচ্ছে না। রাজনৈতিক সমাবেশের কারণে সাধারণ মানুষের এই ভোগান্তি দেওয়ার কোনো মানে হয় না।'
খুলনা -চুয়াডাঙ্গা লাইনের শাপলা পরিবহনের কাউন্টার মাস্টার সবদুল শেখ বলেন, 'যশোর থেকে ১৭ রুটে বাস চলাচল করছে। শুধু যশোর থেকে খুলনায় কোনো বাস চলাচল করছে না। বিএনপির সমাবেশের কারণে বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে।'
যশোর খুলনা পরিবহন রুটের যশোর টার্মিনালের সময় নিয়ন্ত্রক মাছুম চৌধুরি বলেন, মানুষের ভোগান্তির শেষ নেই। বাস বন্ধ হওয়ায় অফিসে বসে মানুষের ভোগান্তি দেখছি; তবে আমাদের কিছু করার নেই।
যশোর আন্তঃজেলা বাস সিন্ডিকেটের সাধারণ সম্পাদক ও ঈগল পরিবহনের স্বত্ত্বাধিকারী পবিত্র কাপড়িয়া বলেন, ' সরকারের কোন নিষেধাজ্ঞা নেই। খুলনার সমাবেশকে কেন্দ্র করে কোন অপ্রীতকর ঘটনা যাতে না ঘটে সেই কারণে আমরা নিজেরাই খুলনাগামী সকল রুটে বাস বন্ধ রেখেছি। এমনকি বিএনপি কোন নেতাকর্মীদেরও বাস ভাড়া দিচ্ছি না।
বাংলাদেশ পরিবহন সংস্থা শ্রমিক ইউনিয়ন যশোরের সাধারণ সম্পাদক সেলিম রেজা মিঠু জানান, মহাসমাবেশের দিন গাড়ি চলাচল করলে শ্রমিকদের জীবন হুমকির মুখে পড়তে পারে, আবার গাড়ি ভাংচুরের আশংকায় মালিক শ্রমিকরা মিলে যশোর খুলনার গণপরিবহন চলাচল দুই দিন বন্ধ রাখা হয়েছে।
যশোর জেলা বিএনপির সদস্য সচিব সৈয়দ সাবেরুল হক বলেন, 'যশোরের কোনো বাস বা মাইক্রোবাস আমাদের কাছে ভাড়া দিচ্ছে না। এ বিষয়ে আমরা পরিবহন মালিক সমিতির নেতাদের সাথে কথা বলেছি। তাদের অনেকে বলেছেন, সরকারের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে অলিখিত নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।'
বিএনপির খুলনা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিত অভিযোগ করে বলেন, আওয়ামী লীগের নির্দেশেই খুলনাকে সারাদেশ থেকে বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। -ট্রলার এবং ঘাটও বন্ধ করে রেখেছে তারা।