দুই মাসেও ইসির আরপিও সংশোধনের প্রস্তাবে সাড়া নেই, মন্ত্রণালয়কে দ্বিতীয়বার চিঠি প্রেরণ

জাতীয় নির্বাচন বিষয়ক আইন 'গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও)'র কয়েকটি বিধান সংশোধনের প্রস্তাব করে আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছিল নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এই প্রস্তাবের অগ্রগতি জানতে চেয়ে আইন মন্ত্রণালয়কে দ্বিতীয় দফায় চিঠি দেয়া হয়েছে বলে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে ইসি।
এর আগে ইসি আরপিও'র কয়েকটি বিধান সংশোধনের প্রস্তাব করে আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছিল। কিন্তু দুই মাস পার হলেও এ বিষয়ে ইসিকে কিছু জানায়নি মন্ত্রণালয়। অগ্রগতি জানতে চেয়ে একটি চিঠিও পাঠিয়েছিল ইসি, তারও কোনো জবাব দেয়নি মন্ত্রণালয়। ফলে দ্বিতীয় দফায় চিঠি দেওয়া হয়েছে।
সোমবার গণমাধ্যমে পাঠানো ইসির জনসংযোগ পরিচালক ও যুগ্ম সচিব এসএম আসাদুজ্জামান স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন আসন্ন। সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য আরপিও-এর কতিপয় সংশোধন/সংযোজনের প্রয়োজনীয়তা অনুভূত হওয়ার প্রেক্ষিতে আরপিও সংশোধন সংক্রান্ত খসড়া বিল প্রস্তুত করে ০৮ আগস্ট আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিষয়ক বিভাগে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য প্রেরণ করা হয়।
দীর্ঘ সময় অতিবাহিত হলেও প্রেরিত বিলের বিষয়ে ব্যবস্থা গৃহিত না হওয়ায় বা অগ্রগতি সম্পর্কে অবহিত না করায় গত ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২২ তারিখে লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিষয়ক বিভাগকে জরুরী পত্র দ্বারা অগ্রগতির বিষয়ে নির্বাচন কমিশনকে অবগত করার জন্য অনুরোধ করা হয়। তা সত্ত্বেও অদ্যাবধি ওই খসড়া বিলের অগ্রগতির বিষয়ে নির্বাচন কমিশনকে অবহিত করা হয়নি। বিষয়টি জরুরী বিধায় সংশোধন সংক্রান্ত খসড়া বিলের অগ্রগতির বিষয়ে নির্বাচন কমিশনকে অবগত করার জন্য পুনরায় পত্র প্রদান করা হয়েছে।
এর মাঝে গত ৪ অক্টোবর কমিশনের অনুমোদন সাপেক্ষে আরপিও-এর ইভিএম সংক্রান্ত অনুচ্ছেদে বাস্তবতার নিরিখে কিছু সংশোধনী আনয়নের জন্যও খসড়া প্রস্তুত করে লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিষয়ক বিভাগ, আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করা হয়েছে বলে বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।
নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তারা জানান, ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ইভিএমে ভোটদানের ক্ষেত্রে আঙ্গুলের ছাপ না মেলায় প্রিজাইডিং কর্মকর্তার আঙ্গুলের ছাপ ব্যবহার করে ব্যালট ইউনিট ওপেন করার ব্যবস্থাটি আরপিওতে অন্তর্ভুক্ত করতে চাচ্ছে ইসি।
উক্ত বিষয়টি বর্তমানে সংসদ নির্বাচন পরিচালনা বিধিমালায় অন্তর্ভুক্ত থাকলেও আরপিওতে নেই। তাই মূল আইনটিতে বিষয়টি সংযোজন করতে চায় সংস্থাটি। এজন্য আরপিওতে ২৬ (ই) নামে নতুন একটু উপ-ধারা সংযোজন করার অনুমোদন দিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
ডিসি-এসপিদের হইচইয়ে ইসি বিব্রত: রাশেদা
নির্বাচন ভবনে জেলা প্রশাসক (ডিসি) ও পুলিশ সুপারদের (এসপি) সাথে মতবিনিময় সভায় ডিসি-এসপি হইচইয়ে ইসি বিব্রত হয়েছেন তবে বিচলিত নন বলে জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনার রাশেদা সুলতানা।
সোমবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব বলেন।
জেলা পরিষদ ও গাইবান্ধা উপ-নির্বাচনসহ দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের ব্যপারে মাঠের পরিস্থিতি জানতে দেশের ৬১ ডিসি ও এসপিদের সাথে ঢাকায় গত শনিবার বৈঠক করে নির্বাচন কমিশন। সেখানে ভোটে মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তাদের পক্ষপাতমূলক আচরণের বিষয়টি বক্তব্যে তুলে ধরেন ইসি আনিছুর রহমান। তখনই সভাকক্ষে হইচই সৃষ্টি হয়। ডিসি-এসপিদের আপত্তির মুখে বক্তব্য থামিয়ে ডায়াসে চলে যান তিনি।
ইসি রাশেদা বলেন, 'হইচই করাটা তাদের ঠিক হয় নাই৷ এটা সত্য কথা। পরিবেশটা তৈরী হওয়াটা কোনোভাবেই ঠিক হয় নাই। সাময়িকভাবে বলবো মনে একটু খারাপ লাগছে। বিব্রত তো বটেই। কারণ ওরকম একটা ঘটনা মাথার মধ্যেই তো আনতে পারি নাই। ওরকম একটা পরিস্থিতি তৈরী হবে। যেটা গেছে, গেছে ওটা নিয়ে আমরা এত বিচলিত না। বিচলিত হওয়ার কোন কারণ আছে বলে আমি মনে করি না।'
তিনি বলেন, 'যে উত্তপ্ত হয়েছিল হয়তো কথার প্রক্ষেপনটা ওনাদের ভালো লাগে নাই৷ আমার কাছে মনে হয়েছে। যে প্রসঙ্গ নিয়ে হঠাৎ উত্তেজনাকর অবস্থার সৃষ্টি হলো প্রসঙ্গগুলো যে খুব মিথ্যে তা কিন্তু না। প্রসঙ্গগুলো যে আমাদের সমাজে নাই তা কিন্তু না। প্রসঙ্গগুলো সত্য। হয়তো বলার ধরনটা ওনারা নিতে পারেন নাই।'
'আর একটা বিচ্ছিন্ন বিষয় নিয়ে 'রিঅ্যাক্ট' করার মানেই এই না যে ওনারা সার্বিক দায়িত্ব থেকে সরে যাবেন।ওনারা বলেছে ইসি যেভাবে নির্দেশনা দিবেন সেভাবে কাজ করবে। বিচ্ছিন্ন বিষয়ের জন্য তারা আমাদের সহযোগিতা করবে না এটা আমি বিশ্বাস করি না', যোগ করেন তিনি।
ডিসি-এসপিদের সঙ্গে ভুল বোঝাবুঝির সুযোগ নেই: ইসি আলমগীর
নির্বাচনকালীন দায়িত্ব পালনের সময় জেলা প্রশাসক (ডিসি) ও পুলিশ সুপারদের (এসপি) সঙ্গে শত্রুতার কোনো অবকাশ নেই বলে জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনার মোঃ আলমগীর।
'আমরা সবাই আমাদের দায়িত্ব পালন করছি। আমাদের মধ্যে সম্পর্কের অবনতির কোনো সুযোগ নেই। ভুল বোঝাবুঝির সুযোগ নেই', বলেন ইসি আলমগীর।
তিনি বলেন, 'এটি একটি সূক্ষ্ম জিনিস। আমাদের আলোচনা সফলভাবে শেষ হয়েছে। আমাদের আলোচনা তারা মন দিয়ে শুনেছেন। তারা এটা পালন করবেন বলে জানিয়েছেন। ওনারা যেসমস্ত সমস্যার কথা বলেছে। আমরাও বলেছি এগুলো আমরা আমাদের সীমিত সক্ষমতার মধ্য দিয়ে সর্বোচ্চ চেষ্টা করবো।'
'এখানে সবাই আমরা দায়িত্ব পালন করতে আসছি। যিনি দায়িত্ব পালন করতে ব্যর্থ হবেন তাকে বাদ দেয়া হবে…কমিশনে আমি যদি আমার ভূমিকা পালন করতে না পারি, আরেকজন আসবে,' যোগ করেন তিনি।