কক্সবাজারে 'উন্মুক্ত কারাগার' নিয়ে মুখোমুখি কারা অধিদপ্তর ও বনবিভাগ

বনবিভাগের আপত্তিতে কক্সবাজারে প্রস্তাবিত ১৬০ একর বনভূমিতে 'উন্মুক্ত কারাগার' নির্মাণের উদ্যোগ নিয়ে জটিলতা তৈরি হয়েছে।
উন্নত বিশ্বের আদলে উন্মুক্ত কারাগার নির্মাণে কক্সবাজারের উখিয়ার পাগলির বিল এলাকায় ১৬০ একর ভূমি কারা অধিদপ্তরের নামে বরাদ্দ দিয়ে ২০১৯ সালে লিজ দলিল সম্পাদন করে ভূমি মন্ত্রণালয়।
চলতি বছরের ২৭ মে উখিয়া উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও কারাগার কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে সীমানা নির্ধারণ করে খুঁটি স্থাপন করা হয়। কিন্তু ২৫ জুন বন বিভাগের পক্ষ থেকে অভিযান চালিয়ে ওইসব খুঁটি উপড়ে দখল উচ্ছেদ করা হয়।
পরর্বতীতে ২৪ জুলাই বনবিভাগের স্থানীয় সহকারী বন সংরক্ষকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে চিঠি দেয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
কক্সবাজার দক্ষিণ বন বিভাগের সহকারী বন সংরক্ষক আনিসুর রহমান বলেন, 'নিয়মিত টহলের সময় কিছু খুঁটি দেখতে পেয়ে বনকর্মীরা আমাকে অবহিত করেন। পরে আমরা তা উপড়ে দখলমুক্ত করি।'
তিনি আরও বলেন, 'কেউ আমাদের জানায়নি যে কারাগারের জন্য এটি করা হয়েছে। আমরা মনে করেছি কোনো দখলদার পক্ষ রাতের আঁধারে এটি দখলের উদ্দেশ্যে খুঁটি দিয়েছে।'
পরর্বতীতে ৩০ আগষ্ট বনভূমির বন্দোবস্ত বাতিলের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ে বন অধিদপ্তরে চিঠি দেওয়ার কথা জানান কক্সবাজার দক্ষিণ বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মোঃ সরওয়ার আলম। তিনি বলেন, 'বনভূমি এভাবে বরাদ্দ দেয়ার বিষয়টি আমাদের জানা ছিল না। জানার পর ঘটনাটি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে। বন বিভাগের পক্ষ থেকে লিজ বাতিলের জন্য মন্ত্রণালয়কেও জানানো হয়েছে।'
বরাদ্দকৃত জমিটি গ্যাজেটে বনভূমি হিসেবে রেকর্ডভুক্ত। এখানে পাহাড়, প্রাকৃতিক বনাঞ্চল ও বন্যপ্রাণীর আবাসস্থল থাকায় এটি বন বিভাগের অর্ন্তভুক্ত বলে জানান তারা।
বন বিভাগের সূত্র মতে, ওই স্থানে কোনো স্থাপনা তৈরি করা হলে করা হলে বৈলাম, গর্জন, জাম, তেলসুর, চাপালিশ, আকাশমণি, গামারি, আছারগোল, ডুমুর, বটগাছসহ বিভিন্ন প্রজাতির সৃজিত ও প্রাকৃতিক গাছ কাটা পড়বে। কাটতে হবে উঁচু পাহাড়ও। এছাড়া অজগর, হরিণ, বানর, শিয়াল, সাপ, শজারু, শূকরসহ বিভিন্ন প্রজাতির বন্যপ্রাণী ও পাখির আবাসস্থল নষ্ট হবে।
পরিবেশ বিষয়ক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলোও বনভূমিতে প্রকল্পের বিরোধিতা করছে।
পরিবেশ রক্ষা বিষয়ক বেসরকারী স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন 'এনভায়রনমেন্ট পিপল'-এর প্রধান নির্বাহী রাশেদুল মজিদ বলেন, 'উখিয়া-টেকনাফে এমনিতেই হাজার হাজার একর বনাঞ্চল রোহিঙ্গাদের কারণে ধ্বংস করা হয়েছে। এর উপর বনভূমিতে স্থাপনা নির্মাণে এভাবে বনভূমি বরাদ্দ দেওয়া হলে নির্বিচারে বনাঞ্চল উজাড়, বনভূমি জবরদখল, হাতির বিচরণ ক্ষেত্র ও বন্যপ্রাণীর আবাসস্থল ক্ষতিগ্রস্ত হওয়াসহ উক্ত এলাকার পরিবেশ ও প্রতিবেশ মারাত্মক হুমকির মুখে পড়বে। বনভূমিতে যেকোনো উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণের আগে পরিবেশের ক্ষতির বিষয়টি বিশেষ বিবেচনায় রাখার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে কক্সবাজার জেলা কারাগারের জেল সুপার মো. শাহ আলম খান বলেন, 'উন্নত বিশ্বের আদলে দেশের প্রথম উম্মুক্ত কারাগার নির্মাণের উদ্যোগ নেয় সরকার। ইতিমধ্যেই উখিয়ায় ১৬০ একর ভূমি কারা অধিদপ্তরের নামে বন্দোবস্ত দিয়ে নামজারি হয়ে খাজনাও পরিশোধ করা হচ্ছে। জমির সীমানা নির্ধারণের পর তা খুঁটি স্থাপন করে বুঝে নেওয়া হয়। কিন্তু বন বিভাগের এক কর্মকর্তা সব খুঁটি উপড়ে ফেলেছেন। বন বিভাগ এটি বনভূমি দাবি করে এখন আপত্তি তুলছে, যা গ্রহণযোগ্য নয়।'