থানকুনি পাতা খেলে করোনা হবে না- এই মিথ্যা প্ররোচনায় গাছ উজাড়

বুধবার ভোররাত ৪টায় মায়ের ফোন কল পেয়ে ঘুম ভাঙ্গে ঢাকার একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের চাকরিজীবী মোহাম্মদ ইব্রাহীমের। গভীর রাতে মায়ের কল দেখে ভীষণ ভয় পেয়ে যান তিনি। ভেবেছিলেন হয়তো বড় কোনো বিপদের সংবাদ অপেক্ষা করছে তার জন্য।
ভয়ে ভয়ে কল রিসিভ করতেই -অপর প্রান্ত থেকে তার মা বললেন -ফজরের আজানের আগে তিনটি থানকুনি পাতা খেয়ে নিতে। জৈনপুরের পীর সাহেবের বরাত দিয়ে তিনি জানালেন যে-এই পাতা খেলে করোনা ভাইরাস আর আক্রমণ করতে পারবে না।
শুধু মোহাম্মদ ইব্রাহীমের মা নন, গতরাতে বরিশাল বিভাগের প্রতিটি জেলায় ছড়িয়ে পড়ে এই গুজব। এমন গুজব ছড়িয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে রাত দুইটা থেকে ফজর নামাজের আগ পর্যন্ত পাতা খাওয়ার হিড়িক চলে বরিশাল, ভোলা, পিরোজপুর, বরগুনা জেলার প্রায় সব উপজেলায়। কোথাও কোথাও থানকুনিপাতা খেতে মাইকযোগে আহ্বান জানানো হয়।
গুজবটি ছড়ানোর পর এসব এলাকার লোকজন বুধবার ভোররাতেই পাতার সন্ধানে বাড়ির আঙিনা ও আশপাশের মাঠ-ঘাট থেকে পাতা তুলে খেয়ে নেন। তবে কোথাও কোথাও পাতা খাওয়ার পাশাপাশি কাপড়-চোপড় দান করা হচ্ছে এমন গুজবও ছড়িয়ে পড়ে।
সাদিয়া জান্নান নাম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী জানান, গ্রামের বাড়ি বরিশাল থেকে ফোন করে থানকুনি পাতা ও কাপড় দান করার সংবাদ সত্য না গুজব তার কাছে জানতে চাওয়া হয় ।
গুজবের বিষয়টি সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে-কেউ কেউ থানকুনি পাতার স্বাস্থ্যগত বৈজ্ঞানিক গুণাগুণ বর্ণনা দিয়ে বিষয়টিকে ইতিবাচক ভাবে সমর্থণ করেন।
মনোয়ার ইসলাম আকন্দ নামে একজন ফেসবুকে লিখেছেন 'জর, কাশি ও ঠান্ডার জন্য থানকুনি পাতা উপকারী। যে বলেছে, সে (নিশ্চয়) উপকার পেয়েই বলেছে। এই পোস্টটা যদি কারও উপকারে আসে, তাহলে টেস্ট করে দেখতে পারেন।'
জানতে চাইলে বরিশাল বিভাগের এ বিষয়ে বরগুনার সিভিল সার্জন ডাঃ হুমায়ুন শাহিন খান বলেন, করোনা ভাইরাসের প্রতিষেধক এখন পর্যন্ত আবিষ্কৃত হয়নি। যুক্তরাষ্ট্রে সবেমাত্র প্রতিষেধকের পরীক্ষামূলক প্রয়োগ চলছে।
তিনি আরো বলেন, থানকুনি পাতা খাওয়ার মাধ্যমে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিহত করার বিষয়টি সম্পূর্ণ গুজব। করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিহত করতে হলে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকার পাশাপাশি আমাদের স্বাস্থ্য সচেতন থাকতে হবে। খুব বেশি প্রয়োজন না হলে ঘরের বাইরে যাওয়া যাবে না।
এছাড়া করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় প্রকাশিত নির্দেশাবলী পালনের অনুরোধও জানান তিনি।