এবার বগুড়ায় করোনা উপসর্গে মৃত নারীকে গোসল করালেন ইউএনও

ভয়ে কেউ এগিয়ে না আসায় বগুড়ায় করোনা উপসর্গে মৃত এক নারীকে দাফনের আগে নিজ হাতে গোসল করালেন সোনাতলা উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সাদিয়া আফরিন।
মঙ্গলবার দিবাগত রাত দুইটার দিকে উপজেলার জোড়গাছা ইউনিয়নের কুশাহাটা গ্রামে উপস্থিত হয়ে মৃত রিনা বেগমের (৫৫) দাফন কাজে সহায়তা করেন তিনি।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, করোনা উপসর্গ ও নিউমেনিয়া আক্রান্ত হয়ে কয়েকদিন ধরেই বাড়িতে ছিলেন কুশাহাটা গ্রামের রিনা বেগম। ক্রমশ অবস্থার অবনতি হলে দুদিন আগে তাকে বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে বিকেল ৩ টার দিকে রিনা বেগমের মৃত্যু হয় বলে জানা যায়। করোনার উপসর্গ থাকলেও কোনো পরীক্ষা করা হয়নি।
জোড়গাছা ইউনিয়নের মো. রোস্তম আলী মন্ডল জানান, "রিনার দুই সন্তান। এক ছেলে ও এক মেয়ে। ছেলে উচ্চ শিক্ষা গ্রহণ করে তাইওয়ানে থাকেন। আর মেয়ের বিয়ে হয়েছে বগুড়ার গাবতলী উপজেলায়। মেয়েই তার মা রিনা ও বাবা মোতালেব হোসেনকে দেখাশোনা করেন। এর মধ্যে রিনার মেয়ের স্বামী করোনায় আক্রান্ত হয়। তাকে দেখতে গিয়েছিলেন রিনা ও তার স্বামী মোতালেব। এরপর বাড়িতে এসে স্বামী-স্ত্রী অসুস্থ হয়ে পড়েন।"
চেয়ারম্যান আরও বলেন, "মঙ্গলবার রিনা বেগমের মৃত্যুর খবর পাওয়া যায় রাত পৌনে ১০ টার দিকে। এ সময় তাকে গোসল করানোর জন্য কাউকে পাওয়া যাচ্ছিল না। গ্রামের লোকজন তার দাফন কাজে যেতে ভয় পাচ্ছিলেন। পরে বাধ্য হয়ে ইউএনওকে ফোন দেওয়া হয় রাত ১০ টার দিকে। ইউএনও সাথে সাথে আসার কথা জানান। ঘন্টা খানেক পরেই ইউএনও এসে নিজেই ওই নারীকে গোসল করান। এরপর রাত দুইটার দিকে রিনার দাফন করা হয়। এ সময় এলাকার ৩০ থেকে ৪০ জন মানুষ অংশগ্রহণ করেন।"
ইউএনও সাদিয়া আফরিন বলেন, "করোনা ভাইরাস এখনো মানুষের মধ্যে আতঙ্কের কারণ। এই কারণে মৃত ওই নারীকে কেউ গোসল করাচ্ছিলেন না। পরে চেয়ারম্যানের ফোন পেয়ে আমি ঘটনাস্থলে গিয়ে ওই নারীকে গোসল করাই। এ সময় আমাকে সঙ্গ দেন স্থানীয় একজন নারী।"
তিনি আরও বলেন, "রিনার মেয়ে বার বার দাবি করছিলেন তার মা করোনায় আক্রান্ত ছিলেন না। তবে রিনার প্রেসক্রিপশনে করোনা উপসর্গ ও নিউমোনিয়ায় মৃত্যু হতে পারে বলে উল্লেখ করা হয়েছে।"
সোনাতলা থানার অফিসার ইনচার্জ রেজাউল করিম রেজা বলেন, "মৃত নারীর স্বামী করোনায় আক্রান্ত। তিনি তার স্বামীর সেবাযত্ন করছিলেন। এর মধ্যে তিনিও অসুস্থ হয়ে পড়েন। তবে তিনি করোনায় মারা গেছেন কিনা তা নিশ্চিত নয়। করোনা উপসর্গ থাকায় এলাকার লোকজন দাফনকাজে আসছিলেন না।"
এর আগে, গত শুক্রবার পিরোজপুরের কাউখালীতে করোনায় মৃত এক নারীকে দাফনের জন্য গোসল করান কাউখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা খালেদা খাতুন রেখা। গণমাধ্যমে বিষয়টি আলোড়ন সৃষ্টি করে।