আন্দামান সাগরে ‘নিখোঁজ’ জাহাজের রহস্য উদঘাটন হয়নি ১ মাসেও

ভিয়েতনাম থেকে ১১০ কোটি টাকা মূল্যের ১১ হাজার মেট্রিক টন ইস্পাতের রোল নিয়ে চট্টগ্রাম বন্দরের উদ্দেশ্যে আসছিলো পানামা পতাকাবাহী জাহাজ এমভি তান বিন ১২৭ । সাধারণ কার্গোবাহী এই জাহাজটি গত ৪ আগষ্ট চট্টগ্রাম বন্দরে পৌঁছার কথা ছিল। বন্দরে জাহাজ পৌঁছার আগে শুল্কায়নের জন্য চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসে নথিপত্রও জামা দিয়েছিলো ওই জাহাজে থাকা পণ্যের আমদানিকারকরা।
কিন্তু ভিয়েতনাম থেকে চট্টগ্রাম আসার পথে মিয়ানমার উপকূলের অদূরে আসার পর পণ্যবাহী এই জাহাজটির আর কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি। জাহাজটি ডুবে গেছে নাকি পরিত্যাক্ত হয়েছ নাকি অন্য কোনো কারণে এর খোঁজ মিলছে না তা নিয়ে রহস্য তৈরি হয়েছে। জাহাজটির স্থানীয় এজেন্ট এবং মালিক পক্ষ জাহাজ ডুবির সঠিক তথ্য না দেওয়ায় আমদানিকারকরা চরম উদ্বেগ উৎকণ্ঠার মধ্যে রয়েছেন।
এদিকে জাহাজটি সম্পর্কে শুরুতে গত ৩ আগস্ট তথ্য প্রকাশ করে মিয়ানমার নৌ প্রশাসন। মিয়ানমার নৌ প্রশাসন নোটিশে জানায়, ১ আগস্ট মিয়ানমার উপকূল থেকে ৯০ নটিক্যাল মাইল পশ্চিমে জাহাজটি পরিত্যক্ত ঘোষণা করে জাহাজের ক্যাপ্টেন। ওই জাহাজের ১৮ জন নাবিককে এমসিসি চিটাগাং নামের একটি কন্টেইনার জাহাজের নাবিকরা উদ্ধার করেন বলে ওই নোটিশে বলা হয়।
জাহাজের গতিপথের তাৎক্ষনিক তথ্য প্রদান করা ওয়েবসাইট মেরিন ট্রাফিকের তথ্য অনুযায়ী, দূর্ঘটনার আগের দিন জাহাজটি আন্দামান সাগরের সঙ্গে সংযুক্ত মালাক্কা প্রণালিতে অবস্থান করছিলো। এরপর জাহাজটি সম্পর্কে আর কোন তথ্য পাওয়া যায়নি।
এমভি তান বিন ১২৭ জাহাজে কেরানীগঞ্জের তন্ময় মেটাল ইন্ডাষ্ট্রিজ লিমিটেডের ৫১৯ মেট্রিক টন পণ্য ছিলো।
প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক রতন কুমার বনিক দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "ওই জাহাজটিতে বিভিন্ন আমদানিকারকের প্রায় ১১০ কোটি টাকা মূল্যের ১১ হাজার মেট্রিক টন পণ্য ছিলো। জাহাজটি সম্পর্কে স্থানীয় শিপিং এজন্ট হক এন্ড সন্স আমাদের একেক সময় একেক তথ্য দিচ্ছে। অথচ জাহাজটি পরিত্যক্ত ঘোষণা করে নাবিকরাও নেমে গেছে। জাহাজের মালিক পক্ষ জাহাজ পরিত্যক্ত ঘোষণা না দেওয়ায় বীমা দাবিও করতে পারছি না। পণ্য হাতে না পেয়ে উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। এ অবস্থায় চরম আর্থিক ক্ষতির মুখোমুখি হয়েছি আমরা।"
জাহাজটির বাংলাদেশের স্থানীয় এজেন্ট হক এন্ড সন্স শিপিং লাইন্সের সিনিয়র অপারেশন অফিসার মতিউল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, জাহাজটির মালিক ভিয়েতনামের প্রতিষ্ঠান তানবিন কোম্পানি লি:। মালিক পক্ষ থেকে আমাদের জানানো হচ্ছে না জাহাজটির ডুবে গেছে নাকি অন্য কোনো দূর্ঘটনার কবলে পড়েছে। গত ১ মাস ধরে জাহাজ মালিকের সাথে প্রতিনিয়ত যোগাযোগ করা হলেও তারা কোন সাড়া দিচ্ছেনা।
ওই জাহাজটিতে ঢাকার হাজীবাগের সুজন এন্টারপ্রাইজেরও পণ্য ছিলো। ওই প্রতিষ্ঠানের মালিক মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, আমদানি পণ্যের মুল্য বাবদ কোরিয়ার সরবরহাকারী প্রতিষ্ঠানকে আমদানি পণ্যের মূল্য পরিশোধ করা হয়েছে। অথচ এখনো পণ্য হাতে পাইনি।
জাহাজে পণ্য আমদানিকারকদের সংগঠন বাংলাদেশ আয়রন অ্যান্ড স্টিল মার্চেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের সিনিয়র সহসভাপতি আমীর হোসেন নুর আলী বলেন, জাহাজটি ডুবেছে কিনা, এর কোন তথ্য মালিক পক্ষের প্রতিনিধি কিংবা স্থানীয় এজেন্টের পক্ষ থেকে দেওয়া হচ্ছেনা। বিষয়টি ইস্পাত খাতের ব্যবসায়ীদের জন্য খুবই উদ্বেগের। এমন পরিস্থিতিতে আমদানিকারকরা চরম আর্থিক ক্ষতির মুখোমুখি হয়েছে।