অ্যাসাইনমেন্ট সংগ্রহ করছে না বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের বহু শিক্ষার্থী

রাজধানীর যাত্রাবাড়ি এলাকার রোজ গার্ডেন হাইস্কুলের ৪০০ শিক্ষার্থীর মধ্যে মাত্র ১৮০ জন তাদের স্কুল থেকে অ্যাসাইনমেন্ট সম্পর্কিত কাজের তথ্য সংগ্রহ করেছে। বাকিদের এখনো পর্যন্ত স্কুলের কোনো শিক্ষা কার্যক্রমের সঙ্গে যোগাযোগ নেই। ফলে শিক্ষকরা বাকি ৫৫% শিক্ষার্থীর দুর্বলতা ধরতে পারছেন না।
দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড (টিবিএস) বিভিন্ন বেসরকারি ও এমপিওভুক্ত স্কুলের শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলে জানতে পারে, বেসরকারি স্কুলগুলোতেই শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে অ্যাসাইনমেন্ট নেওয়ার ব্যাপারে অনীহা সবচেয়ে বেশি।
সরকার যেহেতু পরের ক্লাসে অটো প্রমোশন দিয়েই দিয়েছে, তাই অ্যাসাইনমেন্ট করার আর প্রয়োজন নেই বলে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকেরা মনে করছেন। এছাড়া, স্কুলের বেতন-ফি ইত্যাদি দিতে না চাওয়ার কারণেও অনেকে স্কুলের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে না বলে জানায় বিভিন্ন বেসরকারি স্কুল কর্তৃপক্ষ।
ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক মানজুর আহমেদ টিবিএসকে বলেন, সরকার শিক্ষার্থীদের দুর্বলতা চিহ্নিত করতে না পারলে দেশের শিক্ষার মান বিঘ্নিত হবে।
তিনি আরও বলেন , 'এটি খুবই প্রশংসনীয় যে, সরকার অ্যাসাইনমেন্টের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন করার উদ্যগ নিয়েছে; কিন্তু এখানে সকল শিক্ষার্থীর অংশগ্রহণ অত্যাবশ্যক।'
শিক্ষার্থীদের বার্ষিক পরীক্ষার পরিবর্তে প্রতি সপ্তাহে অ্যাসাইনমেন্ট দেওয়ার মাধ্যমে মূল্যায়ন প্রক্রিয়াটি সরকার গত ১ নভেম্বর থেকে শুরু করে। এরই মধ্যে পাঁচটি অ্যাসাইনমেন্ট দেওয়া হয়েছে এবং রোবারের মধ্যেই ষষ্ঠটি দেওয়া হবে।
বাংলাদেশ কিন্ডারগার্টেন অ্যাসোসিয়েশনের সেক্রেটারি মিজানুর রহমান সরকার বলেন, শিক্ষকরা অভিভাবকদের অ্যাসাইনমেন্টের বিষয়ে বোঝাতে সক্ষম হচ্ছেন না, বরং তারা শিক্ষকদের ফোনকলকে নেতিবাচকভাবে নিচ্ছেন।
রাজধানীর আদাবরে আঞ্জুমান মডেল স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান শিক্ষক নিজাম উদ্দিন জানান, তার স্কুলে মাধ্যমিকের ৩০০ শিক্ষার্থীর মধ্যে মাত্র ১০০ জন স্কুলের সঙ্গে যোগাযোগ রেখেছে এবং তাদের অ্যাসাইনমেন্ট নিয়েছে। বাকিদের তিনি এ বিষয়ে বোঝানোর চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছেন।
সায়েদাবাদের একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়েরও একই চিত্র দেখা গেছে, সেখানে ১৫০ শিক্ষার্থীর কেউই অ্যাসাইনমেন্ট নেয়নি।
অন্যদিকে, এমপিওভুক্ত স্কুলগুলোর অবস্থা তুলনামূলকভাবে ভালো।
রাজবাড়ি সদর উপজেলার বসন্তপুর কো-অপারেটিভ স্কুলের ৫৫৩ শিক্ষার্থীর মধ্যে ৫০ জন বাদে সবাই অ্যাসাইনমেন্ট করেছে বলে জানা গেছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ভোলার একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকও জানিয়েছেন, তার স্কুলের ৭০% শিক্ষার্থীই অ্যাসাইমেন্ট নিয়েছে।
মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক দপ্তরের সাধারণ পরিচালক অধ্যাপক বেলাল হোসেন জানান, তারা শিক্ষকদের নির্দেশ দিয়েছেন সব শিক্ষার্থীর কাছে অ্যাসাইনমেন্ট পৌঁছানোর জন্যে। তিনি আরও বলেন, 'প্রধান শিক্ষকেরা সবকিছুর জন্যে জবাবদিহি করতে বাধ্য থাকবেন। আমরা ৩১ ডিসেম্বরের পর যেকোনো দিন এ মূল্যায়নের ফল প্রকাশ করব।'
বর্তমানে বাংলাদেশে প্রায় ৮ হাজার বেসরকারিভাবে পরিচালিত মাধ্যমিক বিদ্যালয় রয়েছে। কিছু বেসরকারি সংগঠনের মতে, এসব স্কুলে প্রায় দশ লাখ শিক্ষার্থী রয়েছে যার মধ্যে অন্তত ৫-৬ লাখই অ্যাসাইনমেন্ট নিচ্ছে না।
বাংলাদেশ শিক্ষা ও পরিসংখ্যান ব্যুরোর হিসাব অনুযায়ী, দেশে সরকারি, বেসরকারি ও এমপিওভুক্তসহ বিভিন্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও মাদ্রাসায় প্রায় ১ কোটি ৫ লাখ শিক্ষার্থী পড়ালেখা করছে। এদের মধ্যে স্কুলে ৮৭ লাখ ৩২ হাজার এবং বাকিরা মাদ্রাসায় পড়ছে।
কোভিড-১৯ মহামারির কারণে শিক্ষা মন্ত্রণালয় এ বছরের ১৬ মার্চ থেকে ৩১ মার্চ পর্যন্ত সকল ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও কোচিং সেন্টার বন্ধ রাখার নির্দেশ দেয়।
এ পরিস্থিতিতে চলতি বছরে অনুষ্ঠিতব্য পিইসি, জেএসসি, জেডিসি ও এইচএসসি পরীক্ষা বাতিল ঘোষণা করা হয়।
সরকার এরই মধ্যে পিইসি ও জেএসসি পরীক্ষার্থীদের বিনা পরীক্ষায় পরবর্তী শ্রেণিতে উত্তীর্ণ করার সিদ্ধান্ত জানিয়ে দিয়েছে।
এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের রেজাল্ট তাদের আগের জেএসসসি ও এসএসসি পরীক্ষার রেজাল্ট দিয়ে নির্ধারণ করা হবে বলে জানিয়েছে সরকার।
১৮ মার্চ থেকে ক্লাস বন্ধ থাকলেও শিক্ষা কার্যক্রম ধীরে ধীরে চালু হয়েছে। সম্প্রতি সরকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এই ছুটি ১৪ নভেম্বর পর্যন্ত বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে।