অধ্যক্ষ গোপাল কৃষ্ণ মুহুরী হত্যা: মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত তিনজনের দণ্ড কমিয়ে আমৃত্যু কারাদণ্ডের রায়

চট্টগ্রামের চাঞ্চল্যকর অধ্যক্ষ গোপাল কৃষ্ণ মুহুরী হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত তিন আসামির সাজা কমিয়ে আমৃত্যু কারাদণ্ড দিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ।
মঙ্গলবার (৬ অক্টোবর) জ্যেষ্ঠ বিচারপতি ইমান আলীর নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আপিল বিভাগের ভার্চুয়াল কোর্টে এই রায় দেন।
এই তিন আসামি হলেন, তসলিম উদ্দীন ওরফে মন্টু, আজম ও আলমগীর কবির ওরফে বাইট্টা আলমগীর।
ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অমিত দাস গুপ্ত সাংবাদিকদের বিষয়টি জানিয়েছেন। আদালতে আসামিপক্ষে ছিলেন সিনিয়র আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন ও অ্যাডভোকেট হেলাল উদ্দিন মোল্লা।
উল্লেখ্য, ২০০১ সালের ১৬ নভেম্বর সকাল ৭টার দিকে চট্টগ্রামের জামালখান এলাকার বাসায় নাজিরহাট কলেজের অধ্যক্ষ গোপাল কৃষ্ণ মুহুরীকে গুলি করে হত্যা করা হয়।
এ ঘটনায় তার স্ত্রী রেলওয়ে সাবেক অডিট কর্মকর্তা উমা মুহুরী বাদী হয়ে কোতোয়ালি থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। তদন্ত শেষে মোট ১১ আসামির বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করেন।
২০০৩ সালের জানুয়ারি মাসে চট্টগ্রাম মহানগর হাকিম আদালত থেকে মামলাটি চট্টগ্রাম বিভাগীয় দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে পাঠানো হয়।
একই বছরের ৬ ফেব্রুয়ারি দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল চার আসামিকে মৃত্যুদণ্ড দেন। আর চারজনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও ৫০ হাজার টাকা করে অর্থদণ্ড দেওয়া হয়। অপর চারজন বিচারিক আদালতের রায়ে খালাস পান।
বিচারিক আদালতের রায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত চার আসামি হলেন নাছির ওরফে গিট্টু নাছির, আজম, আলমগীর কবির ওরফে বাইট্ট্যা আলমগীর ও তছলিমউদ্দিন মন্টু।
আর যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত চারজন হলেন সাইফুল ইসলাম ওরফে সাইফুল, মো. শাহজাহান, মহিউদ্দিন ওরফে মহিন উদ্দিন (পলাতক) ও হাবিব খান (পলাতক)।
মামলায় খালাসপ্রাপ্ত চারজন হলেন অধ্যাপক মো. ইদ্রিছ মিয়া চৌধুরী, অধ্যাপক মো. জহুরুল হক, অধ্যাপক তফাজ্জল আহম্মদ ও ছাত্রশিবির ক্যাডার নাসির।
বিচারিক আদালতের রায়ের পর আসামিদের মৃত্যুদণ্ড অনুমোদনের জন্য বিচারিক আদালতের রায়সহ নথিপত্র ওই বছরই হাইকোর্টে আসে, যা ডেথ রেফারেন্স (মৃত্যুদণ্ড অনুমোদন) মামলা হিসেবে নথিভুক্ত হয়। অন্যদিকে কারাগারে থাকা দণ্ডিত আসামিরা হাইকোর্টে আপিল করেন। চারজনকে খালাসের বিরুদ্ধে বাদীপক্ষ আপিল করে।
ডেথ রেফারেন্স ও আপিলের শুনানি শেষে ২০০৬ সালের জুলাই মাসে হাইকোর্ট রায় দেন। রায়ে এই তিনজনের মৃত্যুদণ্ড বহাল থাকে। এর আগে ২০০৫ সালের মার্চে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি গিট্টু নাছির র্যাবের 'ক্রসফায়ারে' নিহত হন।
যাবজ্জীবন দণ্ডিত দুই আসামি সাইফুল ও শাহজাহান হাইকোর্টে খালাস পান। এর আগে ২০০৪ সালের জুনে নিজের বাসায় সাইফুল সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহত হন।
পলাতক যাবজ্জীবন দণ্ডিত মহিউদ্দিন ওরফে মহিন উদ্দিন ও হাবিব খানের আপিল বা আবেদনের বিষয়ে তথ্য পাওয়া যায়নি। চারজনকে খালাসের বিরুদ্ধে অধ্যক্ষ মুহুরীর স্ত্রীর করা আপিল হাইকোর্টে খারিজ হয়।
হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত তিন আসামির মধ্যে বাইট্ট্যা আলমগীর আপিল বিভাগে ২০০৮ সালে আপিল করেন। অপর দুজন তসলিম উদ্দিন মন্টু ও আজম ২০০৬ সালে জেল পিটিশন করেন। এসব আপিল খারিজ করে রায় দিলেন আপিল বিভাগ।