আপনার সন্তান অনেক সারকাজম করে? আসলে এটা তার বুদ্ধিমত্তার লক্ষণ!

সারকাজম। সহজ বাংলায় যাকে বলা যায় ব্যঙ্গ-বিদ্রূপ। আর যারা কথায় কথায় এগুলো করে, তাদেরকে বলা হয় সারকাস্টিক।
তবে সারকাস্টিক হওয়া কি প্রশংসনীয়, নাকি নিন্দনীয়? এ ব্যাপারে এখনো মতভেদ রয়েছে যথেষ্ট।
বিশেষত তরুণ প্রজন্মের কাছে সারকাজম খুবই জনপ্রিয়। তারা যখন সমবয়সীদের সঙ্গে আড্ডায় মেতে ওঠে, তখন খানিকক্ষণ পরপরই আলোচ্য বিষয় নিয়ে সারকাজম করতে থাকে। যারা সারকাজমে পারদর্শী, তাদের সেন্স অব হিউমারের গুণগ্রাহীও থাকে অনেক।
কিন্তু মুদ্রার উল্টোপিঠে, সারকাজম বুঝতে না পেরে বিরক্ত হয় বহু মানুষ। কোনো তরুণ যদি সারকাজম করে, তাতে রেগেও যান কোনো কোনো বয়োজ্যেষ্ঠ ব্যক্তি। এমনকি তরুণদের মধ্যেও অনেকে আছে যারা সারকাজমকে স্বাভাবিকভাবে নিতে পারে না, অন্যের সারকাজমে অফেন্ডেড হয়ে গাল ফুলিয়ে থাকে।
সারকাজম নিয়ে বিভ্রান্তিকে কয়েকগুণ বাড়িয়ে দিতে বিশ্বখ্যাত লেখক অস্কার ওয়াইল্ডের অবদানও কম নয়। একবার তিনি সারকাজম নিয়ে সারকাজম করে বলেছিলেন, এটি রসবোধের সর্বনিম্ন স্তরের রূপ। তবে এখানেই থেমে গেলে তো হতোই! তার বদলে পরের লাইনেই তিনি বলে বসেন, এটি বুদ্ধিমত্তার শ্রেষ্ঠতম রূপও বটে।
সারকাজম আসলেই রসিকতার সবচেয়ে বাজে ধরন কি না, সে আলোচনা বরং পরের জন্য তোলা থাক। কিন্তু এটি যে আসলেই বুদ্ধিমত্তার ইঙ্গিতবাহী, তা এখন প্রমাণিত সত্য। ফলে যেসব বাবা-মায়েরা তাদের উঠতি বয়সী সন্তানের চরিত্রের সারকাস্টিক দিকটি দেখে কপালে চিন্তার ভাঁজ ফেলতে শুরু করেছেন, তারা এবার একটু নিশ্চিন্ত হতে পারেন।

মনস্তত্ত্ববিদ ও স্নায়ুবিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন, একটি সার্থক সারকাজম করার জন্য বক্তা বা রচয়িতার তার মস্তিষ্ককে বেশ ভালোভাবে খাটিয়ে নিতে হয়। তাহলেই কেবল একটি সঠিক ব্যাখ্যায় পৌঁছানো সম্ভব হয়।
অর্থাৎ একটি আক্ষরিক বক্তব্যের জন্য যে পরিমাণ মস্তিষ্কশক্তির প্রয়োজন হয়, তারচেয়ে ঢের বেশি প্রয়োজন হয় সারকাজম করার জন্য।
তাছাড়া কেউ কেউ যতই সারকাজমকে ছেলেমানুষি প্রবৃত্তি বলে বাতিল করে দিতে চাক না কেন, আদতে এটি হলো মানসিক পরিপক্বতারই জ্বলন্ত প্রমাণ। একটি মানবশিশু জন্ম থেকেই সারকাস্টিক হয়ে ওঠে না। বছরের পর বছর ধরে মস্তিষ্কের ক্রমোন্নয়নের এক পর্যায়ে এসে সে ব্যঙ্গাত্মক কথাবার্তা বলার যোগ্যতা অর্জন করতে সক্ষম হয়।
ইউনিভার্সিটি অব কালগ্রির মনোভাষাবিদ পেনি পেক্সম্যান বলেন, "এটি খুবই চ্যালেঞ্জিং হতে পারে।"
তবে এই চ্যালেঞ্জ গ্রহণ বা মানসিক শক্তির অতিব্যবহারের সুফলও রয়েছে যথেষ্ট। এর মাধ্যমে আমাদের দৈনন্দিন আলাপচারিতা বা মিথস্ক্রিয়ায় কিছু সূক্ষ্ম তারতম্য সৃষ্টি হয়। এটি আমাদের করা অপমানগুলোকে খানিকটা মোলায়েম করে তোলে। আবার কারো প্রশংসার সময়েও সেখানে খানিকটা বন্ধুসুলভ খোঁচা টেনে আনে।
আবার এমন নজিরও রয়েছে যে সারকাজমের ফলে একজন মানুষ আরো বেশি সৃজনশীল হয়ে ওঠে, এবং মানসিকভাবে অবসাদগ্রস্ত অবস্থায় সারকাজম তাকে নিজের মনের নেতিবাচক আবেগের অবমুক্তি ঘটাতে সাহায্য করে।
সারকাজমের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তার ব্যাপারে পেক্সম্যান এতটাই সিরিয়াস যে, শৈশব থেকে কীভাবে সারকাজমের চেতনা গড়ে ওঠে, তা নিয়ে রীতিমতো গবেষণাও করেছেন পেক্সম্যান। সেখানে ব্যবহার করেছেন বিভিন্ন পাপেটকে।
যেমন গবেষণায় অংশগ্রহণকারীদের জেইন নামের একটি চরিত্রের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেওয়া হয়, যে একটি গোলাপ আঁকার চেষ্টা করছে। কিন্তু গোলাপ আঁকতে গিয়ে জেইন খুব বাজে রকমের ভুল করে ফেলে। তা দেখে পাপেটটির বন্ধু অ্যান বলে, "তুমি তো খুব চমৎকার আঁকো!" আবার স্যাম নামের একটি চরিত্রকে দেখানো হয়, যে বাগানে আগাছা পরিষ্কারের দায়িত্ব পেয়েছে। কিন্তু খুব অল্প সময়ের মধ্যেই নিজের কাজটা শেষ করে ফেলে সে। বন্ধু বব তাকে প্রশংসার বদলে বলে, "তুমি তো মালী হিসেবে জঘন্য!"
মোটের উপর, অনূর্ধ্ব পাঁচ বছর বয়সী শিশুরা এসব বক্তব্যের মাঝে লুকিয়ে থাকা সারকাজম শনাক্ত করতে ব্যর্থ হয়, এবং তারা যেকোনো বক্তব্যের আক্ষরিক অর্থটাকেই সত্যি বলে ধরে নেয়। আর যখন তারা এটুকু বোঝার বয়সে উত্তীর্ণ হয় যে অনেক শব্দের একাধিক বা গোপন অর্থ থাকতে পারে, তখনো তারা বক্তব্যের সূক্ষ্ম মারপ্যাঁচগুলো ধরতে পারে না। এমন অবস্থায় যদি তারা বুঝতে পারেও যে কারো বক্তব্য বাস্তবের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়, তখনো তারা সেটিকে সারকাজম হিসেবে চিহ্নিতের বদলে স্রেফ ধরে নেয় যে ওই ব্যক্তি মিথ্যা বলছে।
সারকাজম যে এক প্রকার রসিকতা, এবং এটি কাউকে টিজ করতে বা নির্দোষ কৌতুক হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে, সেই বুঝটা একটি শিশুর অনেক দেরিতে আসে। পেক্সম্যানের মতে, এই বোধশক্তির আগমন ঘটে নয় বা দশ বছর বয়সের দিকে।
এভাবে সারকাজম না বোঝা থেকে বোঝার মাঝপথে মানবশিশুর মস্তিষ্কের ক্রমবিকাশ চলতে থাকে। আর এই ক্রমবিকাশ অনুসরণ করে 'থিওরি অব মাইন্ড'-কে। এই থিওরি হলো একটি শিশুর অন্যের উদ্দেশ্য বা অভিসন্ধি বোঝার ক্ষমতা। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই ক্ষমতা বাস্তবানুগ হতে থাকে।
এর পাশাপাশি আরো কিছু ফ্যাক্টরও কাজ করতে থাকে। যেমন ভোকাবুলারি, ব্যাকরণ জ্ঞান, অন্যের গলার স্বরের সূক্ষ্মতা থেকে তার মেজাজ বুঝতে পারা, এবং কনটেক্সট বা প্রেক্ষাপট অনুযায়ী কোনো বক্তব্যের সিরিয়াসনেস বা সারকাজম চিহ্নিত করতে পারা। একটি শিশু যত বেশি সামাজিক পরিস্থিতিতে উপনীত হবে, ততই তার এ জাতীয় অভিজ্ঞতার ঝুলি ঋদ্ধ হতে থাকবে।
"পাজলের এই সবগুলো টুকরো একত্র করতে পারলেই কেবল একটি শিশুর পক্ষে সারকাজম বোঝা সম্ভব হয়। কিন্তু এককভাবে কোনো একটি টুকরোই যথেষ্ট নয় তাকে সারকাজম বোঝাতে," পেক্সম্যান জানান।
পেক্সম্যানের সাম্প্রতিক গবেষণাগুলোতে আরো উঠে এসেছে যে একটি শিশুর ঘরোয়া পরিবেশেরও একটা বড় প্রভাব থাকে তার সারকাজম বোঝা ও নিজের ব্যবহার করায়। যদি কোনো বাবা-মা সারকাজম করেন, তাহলে তাদের সন্তানেরও স্বতঃস্ফূর্তভাবে এ ধরনের সক্ষমতা সৃষ্টির সম্ভাবনা বেড়ে যায়।
"চার বছর বয়সের দিকে একটি শিশুর মধ্যে অন্য কোনো ব্যক্তির দৃষ্টিকোণ বুঝবার মতো ক্ষমতা জন্মায়, এবং সে এটাও অনুধাবন করতে পারে যে তার নিজের মনে যে ধরনের বিশ্বাসের আনাগোনা রয়েছে, তার সঙ্গে অন্য কোনো ব্যক্তির বিশ্বাসের তফাৎ থাকতে পারে," পেক্সম্যান জানান।
কিন্তু এই বয়সেই একটি শিশু সারকাজম বুঝতে পারে না। কারণ, সারকাজম বোঝার জন্য একাধারে যেমন প্রয়োজন হয় বক্তার প্রকৃত বিশ্বাসের অনুধাবন, তেমনই আবার বক্তা তার উচ্চারিত শব্দগুলো আসলে কোন উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে বলেছে তা ব্যাখ্যার ক্ষমতাও। অর্থাৎ এটি একটি দুই ধাপ বিশিষ্ট প্রক্রিয়া, যা একদম ছোট শিশুদের পক্ষে দুঃসাধ্য ব্যাপারই বটে।
কিন্তু কৈশোরে পদার্পণ করতে করতে অনেকেই এই জটিল দক্ষতাগুলো রপ্ত করে নেয়। এবং এটিও সম্ভবত বিস্ময়কর ব্যাপার নয় যে অনেক কিশোর-কিশোরীই তাদের এই নবলব্ধ গুণ নিয়ে এক্সপেরিমেন্ট করতে পছন্দ করে; দেখতে চায় যে অন্যদের উপর এগুলো কেমন প্রভাব ফেলছে।
তবে পাঠক, আপনি যদি এখনো পুরোপুরি নিশ্চিত হতে না পারেন যে আপনার কিশোরবয়সী সন্তানের সারকাজমের প্রতি ভালোবাসা একটি উদযাপনের মতো উপলক্ষ্য, তাহলে এবার জেনে নিতে পারেন যুক্তরাজ্যের ইউনিভার্সিটি অব নটিংহ্যামের মনস্তত্ত্ববিদ রুথ ফিলিকের সাম্প্রতিক এক্সপেরিমেন্টটি সম্পর্কেও। ওই এক্সপেরিমেন্টে অংশগ্রহণকারীদের কিছু সাধারণ ঘটনা সম্পর্কিত দৃশ্য পড়ার সময় এফএমআরআই (ফাংশনাল ম্যাগনেটিক রেজোন্যান্স ইমেজিং)-এ মিথ্যা বলতে বলা হয়।
কিছু কিছু ক্ষেত্রে, চরিত্রদের বক্তব্যের উদ্দেশ্য ছিল হালকা ধাঁচের আয়রনিক হওয়া। যেমন :
বার্নিস ও কেটলিন দুজনই যুক্তরাষ্ট্রের একটি ইউনিভার্সিটিতে সাইকোলজি কোর্সের জন্য এপ্লাই করছিল। তারা দুজন একসাথে তাদের অ্যাপ্লিকেশন প্রিন্ট আউট করাতে গেল। প্রিন্টারে কেবল গোলাপি রঙের কাগজই ছিল। তখন বার্নিস কেইটলিনকে বলল, "খুবই ফরমাল ব্যাপার!"
আবার আরেকটি দৃশ্যপটে এই একই কথাগুলোই সারকাস্টিম সমালোচনা হিসেবে ব্যবহৃত হয় একজন নির্দিষ্ট ব্যক্তির উদ্দেশ্যে :
বার্নিস ও কেটলিন দুজনই যুক্তরাষ্ট্রের একটি ইউনিভার্সিটিতে সাইকোলজি কোর্সের জন্য এপ্লাই করছিল। তারা দুজন একসাথে তাদের অ্যাপ্লিকেশন প্রিন্ট আউট করাতে গেল। কেইটলিন ঠিক করল তার অ্যাপ্লিকেশনটি গোলাপি কাগজে প্রিন্ট করাবে। তাই দেখে বার্নিস কেইটলিনকে বলল, "খুবই ফরমাল ব্যাপার!"
এই এক্সপেরিমেন্টের মাধ্যমে ফিলিক দেখতে পান, সাধারণ ভাষা প্রক্রিয়াজাতের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সিম্যান্টিক নেটওয়ার্ককে, এবং হিউমার অনুধাবনে ব্যবহৃত মস্তিষ্কের বিশেষ অঞ্চলগুলোকেও নাড়া দেয় সারকাজম। অথচ নন-সারকাস্টিক আয়রনিতে এই ব্যাপারটি খুব একটা দেখা যায় না।
ফিলিক বলেন, "আরো বেশি চ্যালেঞ্জিং কাজ হলো অন্য কোনো ব্যক্তির বিশ্বাস কী ছিল, কেন সে একটা কথা বলেছিল, এবং আদতে সে নিছকই মজা করছিল নাকি কাউকে খাটো করতে চাইছিল।"
সব মিলিয়ে সারকাজম করা বা বোঝা এক ধরনের মানসিক ব্যায়াম, এবং এর কিছু আশ্চর্য সুবিধা থাকতে পারে।

ফ্রান্সের ফন্টেইনব্লিয়ার ইনসিড বিজনেস স্কুলের লি হুয়াং কাজ করছেন হার্ভার্ড অ্যান্ড কলম্বিয়া ইউনিভার্সিটির সহকর্মীদের সঙ্গে। তিনি তার গবেষণার মাধ্যমে প্রমাণ করেছেন, নিজে সারকাজম করা, অন্যের সারকাজম শোনা কিংবা নিছকই কোনো সারকাস্টিক মন্তব্যের স্মৃতিচারণাও সৃজনশীল চিন্তার প্রভাবক হিসেবে কাজ করতে পারে।
তার করা এক্সপেরিমেন্টগুলোর একটির নাম ছিল 'ক্যান্ডেল প্রবলেম'। সেখানে অংশগ্রহণকারীদের দেওয়া হয় একটি মোমবাতি, এক প্যাকেট ম্যাচ, এবং এক বক্স পেরেক। তাদের টাস্কটি ছিল এমন যে, দেয়ালে একটি জ্বলন্ত মোমবাতি এমনভাবে গেঁথে দিতে হবে যেন সেটি মেঝেতে গলে যাওয়া মোম না ফেলেই শেষ পর্যন্ত পুড়ে যায়।
এই টাস্কের সমাধানটি হলো : পেরেকের বক্স থেকে সবগুলো পেরেক বের করে নিতে হবে। তারপর সেগুলোকে দেয়ালে গেঁথে তার ভেতর মোমবাতিটিকে বসাতে হবে। কিন্তু এই সমাধান তো আর সবার মাথায় আসবে না। টাস্কের প্রতিটি উপাদানের কার্যকারিতা সম্পর্কে আলাদা আলাদা করে চিন্তা করলেই কেবল এ সমাধান বের হবে।
তবে এবার আসা যাক এক্সপেরিমেন্টের সবচেয়ে ইন্টারেস্টিং অংশে। সমস্যাটির সমাধানের আগে কয়েকজন অংশগ্রহণকারীকে বলা হয়েছিল তারা যেন অতীতে ঘটা কোনো সারকাস্টিক আলাপচারিতার কথা মনে হয়। আবার অন্য কয়েকজনকে বলা হয়েছিল কোনো সিরিয়াস বা নিরপেক্ষ আলাপচারিতার কথা মনে করতে।
অবিশ্বাস্য হলেও সত্য, সারকাস্টিক ঘটনার স্মৃতি অংশগ্রহণকারীদের সাফল্যের হার বাড়িয়ে দেয় দ্বিগুণেরও বেশি; ৩০ থেকে পুরো ৬০ শতাংশে!
এক ধরনের হিউমার হিসেবে সারকাজম আমাদের বিরক্তি বা উদ্বেগের বিরুদ্ধে টিকে থাকতেও সাহায্য করতে পারে।
"এটি হতে পারে মনের উত্তাপ নিঃসরণের একটি ভালো উপায়," বলেন নর্থ ক্যারোলাইনার গ্রিনভিলের ইস্ট ক্যারোলাইনা ইউনিভার্সিটির ক্যাথরিন রথারমিক। তার একটি সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে, কোভিড-১৯ চলাকালীন ডিপ্রেশনে ভোগা বা উদ্বিগ্ন ব্যক্তিদের সারকাজম ব্যবহারের পরিমাণ উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। এ থেকে ধারণা করা যেতে পারে, সারকাজমকে তারা একটি কোপিং মেকানিজম হিসেবে কাজে লাগিয়েছে।
তবে সামগ্রিকভাবে, সারকাজমের প্রাথমিক অনুপ্রেরণা হলো ভাষা – আমরা আমাদের কথার মাধ্যমে যে বার্তাটি দিতে চাই সেখানে কিছুটা রঙ যোগ করা।
"সারকাজমের মাধ্যমে আপনি অন্তর্নিহিত অর্থকে একটা চাদর দিয়ে ঢেকে দিতে পারেন,' পেক্সম্যান বলেন।
এই গবেষণাগুলো যদিও প্রাপ্তবয়স্কদের অংশগ্রহণে করা হয়েছে, তবু কিশোরবয়সীরাও যে সারকাজম ব্যবহারের সময়ে একই ধরনের অনুভূতিরই অভিজ্ঞতা লাভ করবে, সে সম্ভাবনাই বেশি। আর এভাবেই, তারাও হয়তো সারকাজমকে আবিষ্কার করবে নেতিবাচক অনুভূতি বা কঠিন পরিস্থিতি কাটিয়ে ওঠার রাস্তা হিসেবে।

এতসব আলোচনার পরও, অনেক বাবা-মাই হয়তো তাদের সন্তানকে প্রথম প্রথম সারকাজম করতে দেখে আঁতকে উঠবেন। তাদের সন্তান অকালে পেকে গেছে ভেবে মন খারাপ করবেন। আর যদি কোনো সন্তানের অভ্যাস হয়ে যায় প্রতিটি বাক্য, প্রতিটি আলাপচারিতাতেই সারকাস্টিক হওয়া, তাহলে তো কথাই নেই। ওই সন্তানের বাবা-মাকে যে কতটা মানসিক কষ্টের মধ্য দিয়ে যেতে হবে, সে কথা বলাই বাহুল্য। ওই বাবা-মায়েরা নিশ্চিতভাবেই চিন্তা করবেন : আমাদের সন্তান কি তাহলে কখনোই সিরিয়াসলি চিন্তা করতে ও কথা বলতে পারে না?
কিন্তু আসলেই কি এর জন্য আমাদের কিশোরবয়সীদের দোষ দেওয়া উচিত হবে? মোটেই না। বরং আমাদের উচিত এটি যে মানসিক পরিপক্বতার কত বড় একটি নিদর্শন, সে কথা ভেবে খুশি হওয়া। ভুলে গেলে চলবে না, প্রাপ্তবয়স্করা তাদের দৈনন্দিন জীবনে যে পরিমাণ ভাষা ব্যবহার করে, তার একটি বড় অংশই কিন্তু আক্ষরিক নয়। সুতরাং, শিশু-কিশোরদের বড় হওয়ার আগে অন্য সবক্ষেত্রে প্রস্তুত করে তোলার মতো, ভাষা ব্যবহারের মাধ্যমে আলাপচারিতায় পারদর্শী করে তুলতে সারকাজমে দক্ষ হয়ে ওঠাও হবে খুবই ইতিবাচক একটি ব্যাপার।
পেক্সম্যান এই দর্শনের সঙ্গে একমত। তাই তো তিনি চান যেসব শিশুরা আলাপচারিতা ও ভাষা ব্যবহারের সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম ব্যাপারগুলো অনুধাবনে ব্যর্থ, তাদেরকে সারকাজম শেখাতে। এরই ফলস্বরূপ তিনি লিখেছেন 'সিডনি গেটস সারকাস্টিক' নামের একটি গল্পের বই, যেখানে তিনি সারকাজমের অনেক উদাহরণ দিয়েছেন, এবং সেগুলো ব্যবহারের কার্যকারণও ব্যাখ্যা করেছেন।
৫-৬ বছর বয়সীদের নিয়ে করা একটি সাম্প্রতিক এক্সপেরিমেন্টের মাধ্যমে তিনি দেখিয়েছেন, যেসব শিশু ওই গল্পগুলো পড়েছে এবং নিজেদের মধ্যে গল্পের বিষয়বস্তু নিয়ে আলোচনা করেছে, পরবর্তীতে পরীক্ষার সময় তাদের পক্ষে সারকাস্টিক বক্তব্য শনাক্ত করা সহজ হয়েছে।
দিনশেষে পেক্সম্যানের মতো মনস্তত্ত্ববিদদের বিশ্বাস, সারকাজম সম্পর্কে সমাজের যে নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি, তা পরিবর্তনের এখনই সময়। আর তা সম্ভব হবে তখনই, যখন আমরা সারকাজমের জটিলতাগুলোকে আরেকটি সুনজরে দেখব।
- সূত্র: বিবিসি