Skip to main content
  • মূলপাতা
  • অর্থনীতি
  • বাংলাদেশ
  • আন্তর্জাতিক
  • খেলা
  • বিনোদন
  • ফিচার
  • ইজেল
  • মতামত
  • অফবিট
  • সারাদেশ
  • কর্পোরেট
  • চাকরি
  • প্রবাস
  • English
The Business Standard বাংলা

ঢাকার হারিয়ে যাওয়া কমলাঘাটের খোঁজে

ঢাকার হারিয়ে যাওয়া কমলাঘাটের খোঁজে

ফিচার

সালেহ শফিক
28 June, 2024, 10:00 am
Last modified: 28 June, 2024, 10:36 am

Related News

  • হোমনা-মেঘনা আসন বহালের দাবিতে ২য় দফায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ 
  • মুন্সীগঞ্জে মোটরসাইকেল ও গাড়ির সংঘর্ষে ৩ বন্ধুর মৃত্যু
  • জিআই স্বীকৃতি পাওয়া সিরাজদিখানের পাতক্ষীর: না মিষ্টি না টক, তবু স্বাদে অদ্ভুত
  • এই মৃত শহর আঁকড়েই বেঁচে থাকার চেষ্টা করছি আমরা 
  • লক্ষ্মীপুরে মেঘনার তীর রক্ষা বাঁধ নির্মাণ বন্ধ রেখেছে ৫ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান, ভাঙন আতঙ্কে স্থানীয়রা

ঢাকার হারিয়ে যাওয়া কমলাঘাটের খোঁজে

সালেহ শফিক
28 June, 2024, 10:00 am
Last modified: 28 June, 2024, 10:36 am

ঘুম থেকে ওঠার পর এক মগ চা চাই মিহির পালের (৬৫)। যুগীন্দ্র দের বাড়ির ঘাটে বসে চা শেষ করতে আধা ঘণ্টা লাগিয়ে দেন। তারপর স্নান সারেন, নাস্তা করেন। ফুলহাতা শার্ট গায়ে চাপিয়ে চুল আঁচড়ে সাইকেল বের করেন। কমলাঘাট পৌঁছাতে তার বড়জোর ২০ মিনিট লাগে। কমলাঘাট বন্দরের সুদিন গত হয়েছে অনেক দিন হয়। এখন কমলাঘাট সুনসান। মিহির পাল স্টিমারঘাটের দিকে নিয়ে চললেন, যেতে যেতে দেখলাম বেশিরভাগ আড়ত ঘরেই বড় বড় তালা ঝুলছে। একটা খোলা চাতালে মুগ ডাল শুকাতে দিয়ে কয়েকজন শ্রমিক ছায়ায় জিরিয়ে নিচ্ছেন। চাতাল পার হয়ে গিয়ে ডান হাতের তর্জনী উত্তর-পশ্চিমে তাক করে দেখালেন, 'ঐখানে স্টিমার ভিড়ত, এখন তো নদীই দেখা যায় না।' মনোহারি পট্টি ধরে ফিরতে ফিরতে বললেন, 'সুগন্ধি সব শৌখিন জিনিসের জন্য এটা বিখ্যাত ছিল।'

গুড়পট্টিতে মিহির পালের পাকা দোতলা আড়ত ঘর। লম্বালম্বি ঘরটি দৈর্ঘ্যৈ দেড়শ ফুটের কম হবে না। মহাজনের বসার জায়গাটি মেঝে থেকে এক ফুট উঁচুতে। তার ওপর কাঠের ক্যাশবাক্স, লোহার সিন্দুক ও একটি ছোট আলমারি। ক্যাশবাক্সের ওপর নকুল পালের ছবি ঝুলছে। মিহিরের বাবা নকুল পাল বড় হয়েছিলেন বলহরি পালের বাড়িতে।

সুগন্ধি সব সৌখিন জিনিষের জন্য বিখ্যাত ছিল মনোহারি পট্টি। ছবি: সালেহ শফিক

সময়টা ১৯৩০ এর দশক

বলহরি আর বিপিন পাল দুই ভাই। তাদের তিন মহলা বাড়ি। একেকটি ভবন বর্গাকৃতির দোতলা, চুন-সুরকির দেয়াল এক হাত পুরু, পশ্চিম ধারে টানা লম্বা ঝুল বারান্দা, ঘরের মেঝে থেকে ছাদ ১৭-১৮ ফুট উঁচু, মেঝেতে লাল-নীল ছককাটা, জানালায় মোটা মোটা গরাদ, ভিতরবাড়িতে উঠান দুটি, প্রতি শরিকের আলাদা আলাদা রান্নাঘর। ঝুল বারান্দা বরাবর নীচতলার ভিটি ঘর ছেড়ে বেরিয়ে এসে রোয়াক তৈরি করেছে , সেখানে বিকালে বাড়ির বউ-ঝিরা আড্ডা জমায়। 

দক্ষিণের বাড়িতে বিপিন থাকে আর মধ্যম বাড়িতে বলহরি। উত্তরের বাড়িটি বৈঠকখানা। জোড়া দুই পুকুরের ধারে বাড়িটি । পুকুরগুলোর মাঝখান দিয়ে ছোট এক চিলতে পথ গিয়ে ঠেকেছে সাহাদের বাড়ি। সাহাদের বাড়িটিও দুই তলা, সামনে খোলা জায়গা, তাতে সুপারি গাছ, ভবন একটি হলেও বেশ বড়। সাহারা তামা-কাসার ব্যবসা করে। বলহরি পালের বাড়ির উল্টোদিকে মাঝখানে বেশ খোলা জায়গার ওধারে দেবেন্দ্র দের বাড়ি। তার নাতির ঘরের বড় ছেলে জয় দে বললেন, 'দেশ ভাগের সময় বড় বাবা (দেবেন্দ্র দে) দেশ ছেড়ে গিয়েছিলেন। কমলাঘাটে তারও বড় গদিবাড়ি ছিল। সেকালে লক্ষ টাকা খরচ করেছিলেন বাড়ি বানাতে। ওপারে (ভারতে) গিয়ে সুবিধা করতে পারেননি, আবার দেশে ফিরেছিলেন কিন্তু ব্যবসায় আর মন বসাতে পারেননি।'

বলহরি আর বিপিন দুজনেই গাঁট্টাগোট্টা আর বলশালী ছিলেন। তাদের নেপালি বডিগার্ড ছিল যাদের কাঁধে ঝুলত দোনলা বন্দুক। মুন্সিগঞ্জ জেলার টংগীবাড়ি উপজেলার আব্দুল্লাপুর ইউনিয়নের আব্দুল্লাপুর গ্রামে বলহরিদের বাড়ি।

পালবাড়ির একাংশ। ছবি: সালেহ শফিক

এবার বলহরিদের বৈঠকখানার কথা বলা যাক। তিনতলার চিলেকোঠা বাদ দিলে ভবনটি দুইতলা।  নিচে ও ওপরে  একটি করে ঘর তবে বেশ বড় বড়। নিচতলা থেকে দোতলায় ওঠার সিড়িটা প্যাঁচানো লোহার। তিনদিকে জানালা ছয়টি, জাফরিকাটা আলোর প্রবেশ উন্মুক্ত করা হয়েছে ঘুলঘুলি দিয়ে, বারান্দায় যাওয়ার জন্য দরজা আছে, বারান্দায় দাঁড়ালে পুকুর ছুঁয়ে আসা ঠান্ডা বাতাস পাওয়া যায়। দোতলা থেকে  একটি কাঠের সিঁড়ি দিয়ে ছাদে ওঠা যায়, সেখানে আছে ছোট্ট চিলেকোঠা।

বলহরিদের ছাদের নাম-যশ ছিল, পৌষ সংক্রান্তি বা সাকরাইনে ছাদে ছাদে যে ঘুড়ি কাটাকাটির খেলা হতো তাতে বলহরিদের হারাতে পারত না কেউ। সাকরাইনের সন্ধ্যায় তাই এলাকার অন্য  সব বণিকদের নেমন্তন্ন থাকত বলহরি পালের বৈঠকখানায়। তাদের মধ্যে উপীন্দ্র দে, সাধু ঘোষ, লালমোহন দে, শ্যামসুন্দর বসাক, ত্রিনাথ মণ্ডল, কৃষ্ণমোহন দাশ, কামিনী পাল, প্রাণবল্লভ দে, জ্যোতি বসাকের উপস্থিতি ছিল অবধারিত। কেউ গরহাজির থাকলে বলহরির বডিগার্ড তাকে খুঁজে নিয়ে আসত। গভীর রাত পর্যন্ত  আড্ডা চলত আর বেশুমার খাওয়া দাওয়া।

বন্দরের নাম মিরকাদিম

সেকালের পূর্ববঙ্গে সুপারি, মরিচ, বালাম চাউল, তেল, লবণ, জিরা, ধনিয়া, খেসারি, মুগ, মুশুরি, কমলা, গুড়, নারকেলের অন্যতম (মদন পালের ভাষায় অদ্বিতীয়) বাজার ছিল মিরকাদিম বা কমলাঘাট বন্দর। কলকাতা, বার্মা (মিয়ানমার), ইতালি, ফ্রান্স, লন্ডনের সঙ্গে যোগাযোগ ছিল কমলাঘাটের বণিকদের। রঞ্জিত কুণ্ডু (৮২)যেমন বলছিলেন, 'আমার দাদা ইতালি থেকে সুগন্ধি  সাবান, ধুপ আর সরা আমদানি করতেন।'

মদন পাল (৬২) হলেন মিহির পালের ভাই এবং নকুল পালের ছোট ছেলে। লবণের কারবারে বেশ পয়সা করেছিলেন নকুল পাল। লবণের মোকামি করতে তিনি মহেশখালি, কুতুবদিয়া, ভারুয়াখালি ঘুরে বেড়াতেন। পাকিস্তান আমলের মাঝামাঝিতেও জাঁতা কলে লবণ ভাঙা হতো। দুজন থেকে দশজন পর্যন্ত জাঁতা ঘোরাত। শত শত শ্রমিক লবণ ভাঙার কাজই করত দিনভর। নকুল পাল টাইপ করতে জানতেন, আয়কর হিসাব কষতে পারতেন, জানতেন ইংরেজি পড়তে । তাই মহাজনদের কাছে তিনি আদরণীয় ছিলেন। নকুল পাল মারা গেছেন এক যুগ হয়ে গেছে। তার তিন ছেলের দুইজন মিহির ও মদন পাল এখনো 'মরা' কমলাঘাটে ব্যবসা করেন। মুন্সিগঞ্জ সদর উপজেলার  মিরকাদিম পৌরসভায় কমলাঘাটের অবস্থান।

নদীপথে যোগাযোগ ছিল সহজ 

মদন পালের কাছে জানতে চেয়েছিলাম, 'মিরকাদিমে বাণিজ্য কেন্দ্র গড়ে ওঠার কারণ কি? মদন পাল বলতে থাকলেন, মিরকাদিম কোম্পানি (ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি)  আমলের বন্দর। তখন মুন্সিগঞ্জকে লোকে বিক্রমপুর নামে চিনত। আর বিক্রমপুরের সুনাম ছিল পুরো ভারতবর্ষ এমনকি বিশ্বের আরো সব দেশে। সে আমলে যোগাযোগ ব্যবস্থা ছিল নদীকেন্দ্রিক। মিরকাদিম বন্দর ছিল ধলেশ্বরী নদীর পাড়ে যা মেঘনা, শীতলক্ষা ও বুড়িগঙ্গা থেকে বেশি দূরে ছিল না। তার ওপর এর পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া ধলেশ্বরীর একটি শাখা নদী পদ্মায় গিয়ে মিশেছিল। মিরকাদিম থেকে তাই নারায়ণগঞ্জ, সমগ্র দক্ষিণবঙ্গ, ফরিদপুর-শরীয়তপুরের যোগাযোগ ছিল সহজ। একসঙ্গে ধলেশ্বরী দিয়ে বান্দুরা, মানিকগঞ্জ, টাঙ্গাইল হয়ে যমুনায় গিয়ে ওঠা যেত। ফলে কলকাতা, পাটনার সঙ্গে যোগাযোগও সহজ ছিল। মিরকাদিম বন্দর ছিল 'সেকেন্ড ক্যালকাটা।'

মিরকাদিম থেকে কমলাঘাট

আব্দুল্লাপুর থেকে মিরকাদিম আধা মাইল দূরে আর কমলাঘাটের দূরত্ব মিরকাদিম থেকে আধা মাইল। মিরকাদিমের সংখ্যাগরিষ্ঠ ব্যবসায়ী ছিলেন আব্দুল্লাপুরের বাসিন্দা যদিও আশপাশে আরো কিছু সমৃদ্ধ গ্রাম পানাম, মুরমা, নগর, নগর কসবা, রিকাবীবাজার, ফারিং (ফিরিঙ্গি) বাজার, গোপালনগর রয়েছে। মদন পালের ভাষ্যমতে আব্দুল্লাপুরের পাল, মণ্ডল, কুণ্ডু, বসাকরাই গড়ে তুলেছিল মিরকাদিম বন্দর যা পরে কমলাঘাটে স্থানান্তরিত হয়।

কেন মিরকাদিম বন্দর কমলাঘাটে স্থানান্তরিত হয়েছিল?  ধলেশ্বরী নদীই কারণ। মদন পাল বললেন, ''শুকনা বা শীত মৌসুমে ধলেশ্বরী মিরকাদিম থেকে বেশ দূরে সরে যেত। তখন ব্যবসায়ীরা ভিটি (গদিবাড়ি) উঠিয়ে নিয়ে যেতেন চরের মধ্যে নদীর কাছে। এককালে নদী সরতে সরতে যখন আর মিরকাদিমের ধারেকাছে ঘেষত না তখন ভিটিগুলো স্থায়ী হয়ে গেল কমলাঘাটে।'

মদন পাল আরো জানালেন, কমলা থেকেই কমলাঘাটের নামকরণ হয়েছে। বন্দরে তখন বেশ কিছু কমলার আড়ত ছিল। তাদের ফেলে দেওয়া পচা কমলা ভাসতে দেখা যেত মিরকাদিম খালে। সেকারণেই এই নাম।  

টোকানী পালের পাঞ্জাবী দারোয়ান

কমলাঘাট বন্দরে বলহরি পাল, কামিনী পাল বা ত্রিনাথ মণ্ডলের আগের ব্যবসায়ী প্রজন্ম ঈশ্বর মণ্ডল, টোকানী পাল বা সুনন্দ দে। এদের মধ্যে টোকানী পাল ছিলেন অগ্রণী। কমলাঘাটের গুড় পট্টিতে টোকানী পালের দোতলা হলুদ লম্বা ভবনটি আজও দাঁড়িয়ে আছে যার নাম রাধাশ্যাম নিকেতন। তিনি প্রভূত সম্পদ অর্জনের পর আব্দুল্লাপুর থেকে বসতি উঠিয়ে নিয়ে কাছের পাইকপাড়ায় চলে যান। সেখানে এক লপ্তে ২৫৬ একর জমি কেনেন, তার মধ্যে চার একর জায়গা জুড়ে ছিল তার বসত ভিটা। বাড়িটি সারা মুন্সিগঞ্জের লোক পালবাড়ি বলে চেনে । বাড়িতে ঢোকার মুখে পাকা ভিটির একটি বড় আটচালা আছে যেখানে যাত্রাপালা, কবিগানের আসর বসত।

একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হওয়ার গোড়ার দিকে পাক বাহিনী আটচালাটি পুড়িয়ে দেয়। আটচালার ভিটি পেরিয়ে পুকুরের পার ধরে কিছুটা গেলে বকুলতলায় টোকানী পালের সমাধি মন্দির। মন্দিরের গায়ে টোকানী পালের মৃত্যুর সন লেখা আছে ১৩২৭ বাংলা । টোকানী পালের ছিল ছয় ছেলে।  প্রতি ছেলের জন্য তিনি আলাদা পুকুর কাটিয়েছিলেন এবং আলাদা ভবন গড়ে দিয়েছিলেন। পাল বাড়িতে এখন  ১২টি ভবন বিদ্যমান। একটি বাদে সবই একতলা।  মাঝখানে উঠান রেখে চারটি ভবন একসঙ্গে করে একেকটি গুচ্ছ বাড়ি যেগুলো পূর্ববাড়ি, মধ্যম বাড়ি ও পশ্চিমের বাড়ি বলে পরিচিত।  মধ্যম বাড়িতে ঢোকার সদর দরজা চিনিটিকরির অলংকরণে মোড়ানো ছিল। দরজা পার হয়ে পাওয়া যায় বেশ কয়েকটি শেফালি ও জবা ফুলের গাছ। তারপরে উঠান, প্রতিটি ভবন থেকে চারটি করে সিঁড়ি নেমে এসেছে উঠানে, সিঁড়ির হাতলে সিংহের মাথা।

কমলাঘাটে টোকানী পালের দ্বিতল বাণিজ্য ভবন। ছবি: সালেহ শফিক

পূব বাড়ির এক ভবনে ডা. শৈবাল বসাক বাস করেন। তিনি জানালেন, ১৯০৫ সালের বঙ্গভঙ্গ আব্দুল্লাপুরের বণিকদের শঙ্কিত করেছিল এবং আরো পরে দেশ ভাগের পদধ্বনি শোনা যেতেই পালবাড়ির আর শ্রীবৃদ্ধি হয়নি। সে আমলে পালদের অনেকসংখ্যক পাঞ্জাবী দারোয়ান ছিল। পাচকদের জন্য, আশ্রিতদের জন্য, মালীদের জন্য, নিরাপত্তারক্ষীদের জন্য আলাদা আলাদা ভবন বা টিনের ঘর ছিল। নব্বই দশকের মাঝামাঝিতে টোকানী পালের নাতি পাঁচশোনাথ পাল বাড়ি আঁকড়ে পড়েছিলেন। শেষে ওপার বাংলায় চলে যান।

ডা. বসাক আরো জানিয়েছেন, এবাড়িতে একাধিক নামি নির্মাতা নাটক ও চলচ্চিত্রের দৃশ্যধারণ করেছেন। চৈত্র সংক্রান্তিতে ঢাকার ও পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের ফটোসাংবাদিকরা পালবাড়িতে ভিড় জমাতেন লাল কাছের (একরকম চরক নৃত্য) ছবি তোলার জন্য।

বাণিজ্যে বিক্রমপুর  

সুপ্রাচীনকাল থেকে বিক্রমপুরবাসী 'বাণিজ্য বসতে লক্ষ্মী' জ্ঞান করে এসেছে। বাংলা ১২৭৫ সনে প্রকাশিত অম্বিকা চরণ ঘোষ বিক্রমপুরের ইতিহাস গ্রন্থে এমন বলছেন, 'যদি আগের মতোই বিক্রমপুরবাসী বাণিজ্য রত ও মনোযোগী থাকত, যদি এখনকার মত তাহারা পরের দাসত্বের নিমিত্ত চাকুরির মোহিনী মায়ায় বিমোহিত না হতো, তাহলে কি আজ সোনার বিক্রমপুরের এরূপ অনুন্নত ও হীনদশা আমাদের ব্যথিত করত?'

বাণিজ্য কার্যকেই কেন ধ্যানজ্ঞান করেছিল বিক্রমপুরবাসী তার কারণ অম্বিকা চরণের বই থেকে খোঁজার চেষ্টা করা হয়েছে- প্রথমত বিক্রমপুর সমতল ভূমি নয়। কিছু স্থান  উঁচু হলেও বেশিরভাগই বর্ষায় জলমগ্ন থাকে। অতি বর্ষায় এখানকার ধান ও শস্যরাজি বিনষ্ট হয়। আবার গ্রীষ্মকালে নদী, খাল, বিল, সরোবর একরকম শুষ্ক হয়ে যায়। তখন লোকজন জলাভাবে ভোগে। ধানের মধ্যে বিক্রমপুরে হয় আমন ধান। এছাড়া যব, তিল, কলাই, পাট, কার্পাস, কালিজিরা, ধনিয়া, তামাক, সুপারি, মেথি, শণ, চিনাই, কাউন উৎপাদিত হয়। ফলের মধ্যে আম, কাঁঠাল, নারিকেল, খেজুর, কলার উৎপাদন উল্লেখযোগ্য। বেতকা, বজ্রযোগিনী, পাইকপাড়া, কসবায় ইক্ষুর ভালো ফলন। 

ওপরের বিষয়গুলো বিবেচনায় নিয়ে আব্দুল্লার বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের (১৮৯৯ সালে প্রতিষ্ঠিত) অবসরপ্রাপ্ত সহকারী প্রধান শিক্ষক হিমাংশু ভূষণ মান্না বললেন, 'অধিকাংশ এলাকা নিম্নভূমি বলে বিক্রমপুর মূলত এক ফসলি। বন্যা সহনীয় পাটের ফলন এখনো কোথাও কোথাও দেখা যায়। উঁচু ভূমি রামপালে এখনো বেশ পরিমাণে কলা চাষ হয়। কিন্তু কৃষিজীবী সমাজ গড়ে ওঠার জন্য যে ব্যাপক বিস্তৃত আবাদি জমি প্রয়োজন হয় তা বিক্রমপুরে ছিল না। তাই স্বভাবতই লোকজন বাণিজ্যে ঝুঁকে পড়ে। এখনো ঢাকার শ্যামবাজারে, ইসলামপুরে, পাটুয়াটুলিতে বিক্রমপুরের ব্যবসায়ীদের প্রাধান্য দেখবেন।'

অম্বিকা চরণ বিক্রমপুরের বিখ্যাত বন্দরের মধ্যে শ্রীনগর, লৌহজংয়ের সঙ্গে মিরকাদিমের নাম  উল্লেখ করেছেন। আরো বলছেন, এখান থেকে ঘি, ক্ষীর, বাংলা কাগজ ও বস্ত্র রপ্তানি হয়ে থাকে। এখানকার কর্মকার ও স্বর্ণকারের পটুতা অনস্বীকার্য।

আব্দুল্লাপুরের বণিকদের স্মৃতিমন্দির। ছবি: সালেহ শফিক

নিতাই মণ্ডল ছিলেন বেচাল

উনিশশো ত্রিশের দশকে আব্দুল্লাপুরের তেঁতুলতলা, অধ্যয়ন নগর, জোড় পুকুর পার, ব্যাপারী বাড়ি, গোয়ালবাড়ি মিলিয়ে এক বর্গমাইলের মধ্যে কমপক্ষে ৪০টি দ্বিতল ভবন ছিল। নিতাই মণ্ডল (৮৪) গুনে গুনে সংখ্যাটি নিশ্চিত করলেন। তিনি ২০১৯ সাল পর্যন্ত কমলাঘাটে বেচাল বা ব্রোকার হিসাবে কাজ করেছেন। ব্রোকাররা সাধারণত গদির মহাজনের কাছে পাইকার (যারা পাইকারি দরে পণ্য কেনে) ধরে নিয়ে আসত। তখনকার প্রথামতো একটি গামছা পাইকার ও মহাজনের হাতের ওপর বিছিয়ে দেওয়া হতো। তারপর কোনো কথা না বলে আঙুল ধরে দরদাম ঠিক হতো। যেমন চার আঙুল ধরলে চারশ টাকা মণ, মহাজন রাজী হলে দুই টোকা দিতেন আর রাজী না হলে হাতে চাপ দিতেন। সাধারণত অন্য পাইকারদের কাছে দাম লুকিয়ে রাখতেই এ কৌশল নেওয়া হতো। 

ক্লাস নাইনে পরীক্ষা দিয়েই নিতাই চলে যান কমলাঘাট, সেটা ১৯৫৪ সাল। কেমন ছিল তখনকার কমলাঘাট? নিতাই মণ্ডল বললেন, 'কমপক্ষে চারশ ভিটাবাড়ি ছিল, সবগুলোতেই দিনরাত কাজ চলত। এগুলোর কোনোটা ছিল গোডাউড, কোনোটা আড়ৎঘর, কোনোটা তেল মিল,  কোনোটাবা ডালের মিল। মনোহারি পট্টি, গুড় পট্টি, আড়ত পট্টি নামে তিনটি পট্টি ছিল। লেবার, পাইকার, বেচাল, সরকার, মহাজনদের হাকডাকে সারা এলাকা সরগরম থাকত। লেবারদের প্রায় সবাই ছিল পশ্চিমা (বিহারের মুঙ্গের থেকে আগত)। সংখ্যায় তারা ছিল হাজারের বেশি। প্রতিটি আড়ত ঘরের ওপরে দূরদূরান্ত (ভোলা, ঝালকাঠি, শরীয়তপুর, ফরিদপুর, কুষ্টিয়া, টেকনাফ, ছাতক বা  চাঁদপুর) থেকে আগত পাইকারদের থাকার ব্যবস্থা ছিল। পাইকাররা  কমলাঘাট থেকে তেল, চাল বা গোখাদ্য কিনে নিজের এলাকায় নিয়ে যেতেন। কমলাঘাটের মনোহারি পট্টির ছিল বিশেষ আকর্ষণ। এখানে সুগন্ধি তেল, সাবান, স্নো, ক্রিমসহ প্রসাধন দ্রব্য আসত কলকাতা থেকে।  দক্ষিণ বঙ্গের পাইকার ও ব্যাপারীরা ব্যবসা-বাণিজ্য ফুরালে পরে ঘরের লোকদের জন্য এসব প্রসাধন দ্রব্য কিনে নিত।'

কমলাঘাটের পশ্চিমা লেবাররা স্থানীয়ভাবে বিয়ে শাদী করত না। বছরে এক দুবার তারা বিহারে ছুটি কাটাতে যেত। এক সর্দারের নেতৃত্বে যতজন লেবার থাকত সবাই একসঙ্গে নিজেরা রান্না করে খেত। কমলাঘাটে তিনটি ভাতের হোটেল ছিল বিখ্যাত। তার মধ্যে কালাচানের হোটেলটি বেশি বিখ্যাত। পাইকাররা সেখানে মাসচুক্তিতে খাবার খেত। ব্রিটিশ আমলের পরে পাকিস্তান আমলেও কমলাঘাটে স্টিমারঘাট ছিল। মাহসুদ, লেপচা, অস্ট্রিচ ভিড়ত এ ঘাটে। 

কমলাঘাটে বড় বড় আড়তদারদের নিজেদের ঘাট ছিল যেমন  পালদের ঘাট, রায়দের ঘাট বা মণ্ডলদের ঘাট। ঘাটগুলোয় নিজেদের খরচে পাকা সিঁড়ি করে দিয়েছিলেন আড়ৎদাররা।  হাজার-দেড় হাজার মণি নৌকা আসত পণ্য বোঝাই করে, নোঙর করে থাকত মাঝ নদীতে। আড়াই-তিনশত মণি নৌকা গিয়ে মাল খালাস করে ঘাটে নিয়ে আসত। কমলাঘাটের মহাজনদের চৌমুহনী, ঝালকাঠি, নড়িয়া, হাজীগঞ্জ, ভোলা, হাতিয়ায় শাখা অফিস বা কালেকশন হাউজ ছিল। 

শ্রীলঙ্কা থেকে শঙ্খ আনত কুণ্ডুরা

নিতাই মণ্ডল বিয়ে করেছেন ঈশ্বর মণ্ডলের নাতির মেয়েকে। ত্রিশ, চল্লিশ ও পঞ্চাশের দশকে মণ্ডলদের ছিল জমজমাট ব্যবসা-বর্মী কাঠের, নারিকেলের বা কমলার। নানারকম ব্যবসা ছিল মণ্ডলদের আর সবগুলোতেই তারা সাফল্য পেয়েছিল। তাদের বড় দুর্গা মণ্ডপ ছিল। মণ্ডলবাড়ির পুকুরে ৮টি ঘাট, এর মধ্যে আমিষ ঘাট এবং নিরামিষ ঘাটও ছিল ।  তাদের বাড়িতে দুপুরের খাবারের সময় ঘণ্টা বাজানো হতো, কারণ বাড়িটি এতো বড় আর মানুষ এতো বেশি ছিল যে সবাইকে ডেকে ডেকে খাওয়ানো সম্ভব ছিল না। মন্ডলদের প্রত্যেক শরিকের জন্য আলাদা আলাদা ভবন নির্মিত হয়েছিল দুর্গামণ্ডপ  ঘিরে ,সংখ্যায় যা ৬টি। বছর দশেক আগে ওপার বাংলায় চলে যান ঈশ্বর মণ্ডলের নাতি বিশ্বনাথ মণ্ডল। বাড়িটিতে এখনো বহু লোকের বাস, তবে সবাই মণ্ডল পরিবারের সদস্য নন, কেউ কেউ আছেন মাতুল বংশীয়। দুর্গা পূজা ও চৈত্র সংক্রান্তিতে এখনো আশপাশের দশ গ্রামের লোক মণ্ডল বাড়িতে ভিড় করেন। 

মণ্ডলদের পাশের বাড়িটিই কুণ্ডুদের। রঞ্জিত কুণ্ডু  দীর্ঘদিন কমলাঘাটে ব্যবসা করেছেন। এখন দিনের বেশিরভাগ সময় পুরোনো স্মৃতি বয়ে বাড়ির আশপাশে ঘুরে বেড়ান। শ্রীলঙ্কা থেকে তারা শঙ্খ ও মূল্যবান পাথর আমদানি করতেন, বার্মা থেকে আনতেন কাঠ। আলাপচারিতায় রঞ্জিত বললেন, 'কী দিন ছিল আর কী দিন এলো! কাজের চাপে খাওয়ার সময় পেতাম না। আমার ঠাকুর্দা পাল্কি চড়ে কমলাঘাট যেতেন, সঙ্গে সঙ্গে চলত তার বডিগার্ড। লাখ টাকা কুণ্ডুদের কাছে কোনো ব্যাপার ছিল না, সেটা মোকামের (যেখান থেকে পণ্য পাঠানো হতো) ব্যবসায়ীরাও জানত, তাই মুখের কথায় লাখো টাকার পণ্য পাঠিয়ে দিত।'

কমলাঘাটের সচল একটি ময়দার মিল। ছবি: সালেহ শফিক

বণিকরা ধোপা, মুচি, গোয়াল এনে বসিয়েছিলেন

মীরকাদিম খালে যুগীন্দ্র দে বাড়ির ঘাট ছিল মশহুর। ছোটখাটো ক্ষয় ছাড়া বলা চলে সেগুলো বহাল তবিয়তেই আছে। বিশেষ করে ছৈয়ালরা যুগীন্দ্র দের বাড়ি কিনে নেওয়ার পর আবার ঘাট সংস্কার করে সাজিয়ে তুলেছে। ২০-২২ টি প্রশস্ত সিঁড়ি খালে নেমে গেছে দে বাড়ির ঘাটের।  ঘাটটি নির্মাণ করে গ্রামবাসীর কৃতজ্ঞতাভাজন হয়েছিলেন যুগীন্দ্র দে। স্নান কাজে অনেক লোক এটি ব্যবহার করত। যুগীন্দ্রের মা জনকল্যাণে পুত্রের তৎপরতায় বেশ খুশি হয়েছিলেন বলে জানালেন নিতাই মণ্ডল। এই ঘাট থেকে বর্ষায় কমলাঘাট পর্যন্ত খেয়া নৌকা চলাচল করত। তিন পয়সা বা পাঁচ পয়সা ছিল যাত্রীপ্রতি ভাড়া। বাড়িটির তিন ধারে বিস্তৃত খোলা জায়গা ছিল যেখানে শাক-সবজি চাষ হতো। দরিদ্র লোকদের মধ্যে যুগীন্দ্রের মা সেগুলো বিলি করে আনন্দ পেতেন। সাম্প্রতিককালের সুখ্যাত চলচ্চিত্র নির্মাতা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী তার টেলিভিশন চলচ্চিত্রের কিছু অংশ এই বাড়িতে ধারণ করেছিলেন।

কমলাঘাটে কি মুসলমান বণিক ছিল না? প্রশ্নটি নিতাই মণ্ডলকে করেছিলাম। তিনি বললেন, 'হ্যা বড় বড় মুসলমান ব্যবসায়ী ছিল তবে সংখ্যায় কম। আমাদের আব্দুল্লাপুরেরই  হোসেন আলী ব্যাপারী বড় ব্যবসায়ী ছিলেন। ভালো ব্যবসা ছিল মীরকাদিমের আমজাদ আলী বেপারীর। পানাম, এনায়েত নগরেরও মুসলমান ব্যবসায়ী ছিল।'

মধু মণ্ডল, শনি বসাক এবং নিতাই মণ্ডল প্রায় সমবয়সি। তারা বিভিন্ন সময়ে কমলাঘাটে বেচালদার, সরকার বা পাইকার ছিলেন। এদের মধ্যে মধু মণ্ডলের স্মৃতি নড়বড়ে তবে শনি বসাকের স্মৃতি টনটনে। তিনি বললেন, 'আব্দুল্লাপুরের বণিকরা অনেক টাকা পয়সা করেছিল। এই গ্রামের পূর্বদিকে ধোপাছাড়া, উত্তরদিকে বাজাইন্যাবাড়ি, উত্তর-পূর্বদিকে জেলে পাড়া ও কুমারপাড়া, পশ্চিম দিকে গোয়ালবাড়ি আর নদীর ধার ঘেঁষে মুচিপাড়া। ধোপাছাড়ার ধোপারা কাপড় ধোয়ার কাজ করত, বাজাইন্যাবাড়িতে ছিল বাজনাদারদের বসতি, তাদের পূজা-পার্বণে ঢোল-ঢাক বাজাতে ভাড়া করে আনা হতো, জেলে পাড়ার বাসিন্দারা মাছ ধরত, কুমারপাড়ায় মাটির হাঁড়ি-পাতিল তৈরি হতো, মুচিরা জুতা-স্যান্ডেল তৈরি করত আর গোয়ালবাড়ির লোক মিষ্টি-দই তৈরি করত। এসব পেশাজীবীদের আব্দুল্লাপুরের বণিকরা এনে বসিয়েছিল নিজেদের প্রয়োজনে মেটাতে। সব বণিকই অনুষ্ঠানাদিতে প্রয়োজনের চেয়ে বেশি খরচ করার সামর্থ্য রাখত তাই গোয়াল, কুমার, জেলেদের রোজগার মন্দ হতো না।   আব্দুল্লাপুরের মিষ্টি ও দই এখনো নামকরা এবং সুস্বাদু।'

আব্দুল্লাপুরের পাকিস্তান আমল

আব্দুল্লাপুরে দেশভাগের আগে মুসলমান বসতি ছিল নগণ্য। পাকিস্তান আমলে পঞ্চাশের দাঙ্গা, চৌষট্টির দাঙ্গা ও  পয়ষট্টির পাক-ভারত যুদ্ধের ফলাফলে অনেক বণিক বা তাদের শরিকেরা ওপার বাংলায় পাড়ি জমায়। তখন বেশ কমদামে তারা  পাশের সলিমাবাদ, পাইকপাড়ার মুসলমানদের কাছে বাড়ি বিক্রি করে দিয়েছিলেন।   কলকাতার বড়বাজার, হাওড়া, শোভাবাজার বা গড়িয়াহাটায় আব্দুল্লাপুরের প্রায় সব বণিকের বাড়ি বা ব্যবসাকেন্দ্র ছিল । আব্দুল্লাপুরের মোট জনগোষ্ঠীর ৫০ ভাগ এখনো সনাতনধর্মী, এ থেকে বোঝা যায় সবাই যায়নি, অনেকে আবার যাওয়া-আসার মধ্যে ছিলেন । ডা. শৈবাল বসাক তাই বলছিলেন, 'পাকিস্তান আমলে যারা চলে গিয়েছেন তাদের জন্য কমলাঘাটে শূন্যতা তৈরি হয়েছিল ঠিকই কিন্তু ক্ষত তৈরি হয়নি।'

লালমোহন দের নাতি এবং গোবিন্দ দের ছোট ছেলে সুব্রত দে কমলাঘাটে ব্যবসা টিকিয়ে রেখেছিলেন ২০১০ সাল পর্যন্ত। ২০০৩ সালে গোবিন্দ দে মারা যাওয়ার আগে পর্যন্ত জমজমাট ব্যবসা করে গেছেন। তবে গোবিন্দ দের আত্মীয় স্বজনদের অনেকে প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছিলেন আর  আশি-নব্বইয়ের দশকে ওপার বাংলায়  চলেও গিয়েছিলেন।

আড়ৎঘরের ভিতরভাগ যেমন দেখতে। ছবি: সালেহ শফিক

কমলাঘাটের পতন 

নব্বই সালের পর থেকে বন্দরে ধস নেমেছে। যদিও ষাটের দশক থেকে হিন্দু বণিকদের সংখ্যা কমছিল, বহির্দেশীয় যোগাযোগও  বন্ধ হয়ে গিয়েছিল কিন্তু আশির দশক পর্যন্ত বন্দর জমজমাট ছিল। 

মদন পাল বললেন, 'নদী শুকিয়ে যাওয়া কমলাঘাট বন্দরের মরে (পতন) যাওয়ার অন্যতম কারণ। আরো দুটি কারণ পরশ্রীকাতরতা ও অসততা। একই গদির দুই শরিক একে অন্যের উন্নতি সহ্য করতে পারত না, পাইকার ভাগিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করত, শেষে তিতিবিরক্ত হয়ে পাইকার বন্দরে আসাই বন্ধ করে দিয়েছে। ভোলা বা টেকনাফের যারা ব্যবসায়ী তারা অনেকসময় নিজেরা আসতে পারত না, বিশ্বাস করে পণ্য পাঠিয়ে দিত, মহাজনরা উচ্চ দরে মাল বিক্রি করে ব্যবসায়ীদের নিম্নদর ধরে টাকা পাঠিয়ে দিত। এটা তো অসততা, কতদিন লুকিয়ে রাখা যায়! তাই দূরের ব্যবসায়ীরা আস্তে আস্তে পণ্য পাঠানো বন্ধ করে দেয়। এইসঙ্গে সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতির ফলে বিভিন্ন জায়গায় বাজার গড়ে ওঠে। তাই কমলাঘাটের ওপর নির্ভরতা কমতে থাকে।'

ধলেশ্বরী শুকিয়ে যাওয়া কমলাঘাট বন্দর পতনে কতটা ভূমিকা রেখেছে? জানতে চাইলে মদন পাল বললেন, 'অনেক ভূমিকা রেখেছে। নৌপথেই কমলাঘাটের মালপত্র যাওয়া আসা করত। বন্দরটি তিন দিক দিয়ে জলে ঘেরা। বন্দরের দুই দিকে দুটি ব্রিজ হয়েছে কিন্তু সড়ক পথে পণ্য আনতে পথ ঘুরতে হয় অনেক। তাতে পরিবহণ খরচ বেড়ে যায়। উপরন্তু বিভিন্ন স্থানে বাজার বসে যাওয়ায় কমলাঘাট আর আগের আবেদন রাখে না। বাবা (নকুল) যখন আশির দশকে আমাকে মোকামে পাঠাতেন তখন আমরা নৌপথে যাতায়াত করতাম, পণ্যও একই পথে পরিবহণ করতাম। এতে খরচ কম পড়ত, মহাজনদের লাভ থাকত বেশি। নদীকেন্দ্রিক অনেক বন্দরই এখন মরে গেছে। কমলাঘাটও সেই তালিকায় নাম  লেখাতে যাচ্ছে।'

আড়তের জায়গায় নতুন বসতবাড়িও হচ্ছে। ছবি: সালেহ শফিক

সুদিন কি আসবে

ষাটের দশকে কমলাঘাটে মিনার্ভা সিনেমা হল চালু হয়। সত্তরের দশকে ফটো স্টুডিও বসে এবং কিছু বাইন্যার (রং কারবারি) দোকান। রিকাবীবাজারের বিখ্যাত পট চিত্রশিল্পী শম্ভু আচার্য কমলাঘাট থেকেই দেশীয় পদ্ধতিতে তৈরি রং কিনেছেন বহুদিন।

এখন কমলাঘাটের বেশিরভাগ গদি ও গুদামঘরগুলো তালাবদ্ধ থাকে। যে দু-চারটি গদিঘর খোলা থাকে সেগুলোয়  মহাজন ও সরকারেরা অলস সময় পার করেন। কিছু গদিঘরের জায়গায় বসতবাড়িও উঠেছে।

মিহির পাল প্রতিদিনই গদি খোলেন। বন্দরে এখনো ডালের ব্যবসা টিকে আছে, বেশ কিছু ডালের মিল সচল আছে। তেলের এবং ময়দার মিলও চালু আছে কয়েকটি। এ নিয়েই চালিয়ে যাচ্ছেন মিহির পাল ও তার সতীর্থ ব্যবসায়ীরা। অলস সময়ে তারা পুরোনো দিনের গল্প করেন। কিন্তু আবার সুদিন ফিরবে বন্দরের, এমন আশা করেন না।

Related Topics

টপ নিউজ

নদী / কমলাঘাট / বিক্রমপুর / মুন্সিগঞ্জ

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.

MOST VIEWED

  • ডিজিটাল পেমেন্ট সার্ভিস পরিচালনার অনুমোদন পেল রবির স্মার্ট পে
    ডিজিটাল পেমেন্ট সার্ভিস পরিচালনার অনুমোদন পেল রবির স্মার্ট পে
  • ছবি: টিবিএস
    মিরপুরে আগুনে নিহত বেড়ে ১৬, বিষাক্ত গ্যাস থেকে মৃত্যু: ফায়ার সার্ভিস
  • জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির সাইয়েদ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের। ফাইল ছবি: সংগৃহীত
    ষড়যন্ত্রে লিপ্ত উপদেষ্টাদের কণ্ঠ রেকর্ড আছে, সংশোধন না হলে নাম প্রকাশ করা হবে: জামায়াত নেতা তাহের
  • ভারতের গুরুগ্রামে বিদ্যুতের খুঁটির পাশ দিয়ে যানবাহন চলাচল করছে। ছবি: রয়টার্স
    চীনকে ঠেকাতে ভারতের পাল্টা ৭৭ বিলিয়ন ডলারের বৃহৎ জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের ঘোষণা
  • জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে অংশ নিতে চলতি বছরের ২৭ মে কঙ্গোর রাজধানী কিনশাসার উদ্দেশ্যে ঢাকা ছাড়ে বাংলাদেশ পুলিশের ১৮০ সদস্যের একটি দল। ফাইল ছবি: বাসস
    জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশন থেকে বাংলাদেশ পুলিশের শেষ কনটিনজেন্টকে দেশে ফেরার নির্দেশ
  • মিরপুরে আগুন লাগা পোশাক কারখানার কর্মী নাজমুল ইসলামের ছবি নিয়ে তাকে খুঁজছেন স্ত্রী নাসিমা বেগম। ছবি: টিবিএস
    ‘কারখানায় আগুন লাগছে, আমারে বাঁচাও’, স্ত্রী নাসিমার কাছে ফোনে স্বামীর শেষ আর্তনাদ

Related News

  • হোমনা-মেঘনা আসন বহালের দাবিতে ২য় দফায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ 
  • মুন্সীগঞ্জে মোটরসাইকেল ও গাড়ির সংঘর্ষে ৩ বন্ধুর মৃত্যু
  • জিআই স্বীকৃতি পাওয়া সিরাজদিখানের পাতক্ষীর: না মিষ্টি না টক, তবু স্বাদে অদ্ভুত
  • এই মৃত শহর আঁকড়েই বেঁচে থাকার চেষ্টা করছি আমরা 
  • লক্ষ্মীপুরে মেঘনার তীর রক্ষা বাঁধ নির্মাণ বন্ধ রেখেছে ৫ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান, ভাঙন আতঙ্কে স্থানীয়রা

Most Read

1
ডিজিটাল পেমেন্ট সার্ভিস পরিচালনার অনুমোদন পেল রবির স্মার্ট পে
অর্থনীতি

ডিজিটাল পেমেন্ট সার্ভিস পরিচালনার অনুমোদন পেল রবির স্মার্ট পে

2
ছবি: টিবিএস
বাংলাদেশ

মিরপুরে আগুনে নিহত বেড়ে ১৬, বিষাক্ত গ্যাস থেকে মৃত্যু: ফায়ার সার্ভিস

3
জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির সাইয়েদ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের। ফাইল ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশ

ষড়যন্ত্রে লিপ্ত উপদেষ্টাদের কণ্ঠ রেকর্ড আছে, সংশোধন না হলে নাম প্রকাশ করা হবে: জামায়াত নেতা তাহের

4
ভারতের গুরুগ্রামে বিদ্যুতের খুঁটির পাশ দিয়ে যানবাহন চলাচল করছে। ছবি: রয়টার্স
আন্তর্জাতিক

চীনকে ঠেকাতে ভারতের পাল্টা ৭৭ বিলিয়ন ডলারের বৃহৎ জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের ঘোষণা

5
জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে অংশ নিতে চলতি বছরের ২৭ মে কঙ্গোর রাজধানী কিনশাসার উদ্দেশ্যে ঢাকা ছাড়ে বাংলাদেশ পুলিশের ১৮০ সদস্যের একটি দল। ফাইল ছবি: বাসস
বাংলাদেশ

জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশন থেকে বাংলাদেশ পুলিশের শেষ কনটিনজেন্টকে দেশে ফেরার নির্দেশ

6
মিরপুরে আগুন লাগা পোশাক কারখানার কর্মী নাজমুল ইসলামের ছবি নিয়ে তাকে খুঁজছেন স্ত্রী নাসিমা বেগম। ছবি: টিবিএস
বাংলাদেশ

‘কারখানায় আগুন লাগছে, আমারে বাঁচাও’, স্ত্রী নাসিমার কাছে ফোনে স্বামীর শেষ আর্তনাদ

The Business Standard
Top

Contact Us

The Business Standard

Main Office -4/A, Eskaton Garden, Dhaka- 1000

Phone: +8801847 416158 - 59

Send Opinion articles to - oped.tbs@gmail.com

For advertisement- sales@tbsnews.net

Copyright © 2022 THE BUSINESS STANDARD All rights reserved. Technical Partner: RSI Lab