Skip to main content
  • মূলপাতা
  • অর্থনীতি
  • বাংলাদেশ
  • আন্তর্জাতিক
  • খেলা
  • বিনোদন
  • ফিচার
  • ইজেল
  • মতামত
  • অফবিট
  • সারাদেশ
  • চাকরি
  • প্রবাস
  • English
The Business Standard বাংলা

Wednesday
May 14, 2025

Sign In
Subscribe
  • মূলপাতা
  • অর্থনীতি
  • বাংলাদেশ
  • আন্তর্জাতিক
  • খেলা
  • বিনোদন
  • ফিচার
  • ইজেল
  • মতামত
  • অফবিট
  • সারাদেশ
  • চাকরি
  • প্রবাস
  • English
WEDNESDAY, MAY 14, 2025
দ্য রোমান্স অব অ্যান ইস্টার্ন ক্যাপিটাল: একজন প্রেমিকের চোখ দিয়ে ঢাকাকে দেখেছেন ব্র্যাডলি

ফিচার

রাফিয়া মাহমুদ প্রাত
20 September, 2023, 02:20 pm
Last modified: 20 September, 2023, 04:55 pm

Related News

  • সেকালের গঙ্গাজলি আজকের নূর মার্কেট: কেমন ছিল গঙ্গাজলি, কারা থাকত সেখানে
  • অতীতের রাজধানী: কেমন ছিল ঢাকার কার্জন হল, মেডিকেল কলেজ, মিটফোর্ড, ভুলভুলাইয়া বা দিলখুশা…
  • হোটেল শাহবাগ: এক বাড়ির তিন কাল; নাচঘর, হোটেল, হাসপাতাল
  • ‘ওকে’: ঢাকার প্রথম ইংলিশ রেস্তোরাঁ!
  • আটটি আন্ডা এবং ঢাকা ক্লাবের পূর্বসূরী আন্টাঘরের গল্প

দ্য রোমান্স অব অ্যান ইস্টার্ন ক্যাপিটাল: একজন প্রেমিকের চোখ দিয়ে ঢাকাকে দেখেছেন ব্র্যাডলি

বেশিরভাগ ইংরেজ সাহেব-মেমসাহেবদের কাছে যেখানে অভিযোগ ছিল- ভারত হলো প্রচণ্ড গরম এবং শুষ্ক আবহাওয়ার নোংরা ঘিঞ্জি একটি দেশ। সেখানে প্রাচীন ঢাকার অলিতে-গলিতে, মিনারে-গম্ভুজে এবং সেই হারানো অতীতের প্রতিটি মোড়ে, প্রতিটি বাঁকে, ব্র্যাডলি বার্ট দেখতে পেয়েছেন মোহকর রহস্যময়তা। যেমন তিনি লিখেছেন, ‘এই নগরীর আঁকাবাঁকা অলি-গলি দেখে মনে হবে যেন বাইরের দৃষ্টি থেকে রহস্য ঢেকে রাখার জন্যে বিশেষ এক আদর্শে এগুলো তৈরি করা হয়েছিল। মহানগরীর বুকের তলায় যতো রহস্য লুকিয়ে আছে, তার কতটুকুই বা মানুষ জানে!’ (বাংলা অনুবাদ)
রাফিয়া মাহমুদ প্রাত
20 September, 2023, 02:20 pm
Last modified: 20 September, 2023, 04:55 pm

সময়টা ১৮৯৬ সাল। সাগর পাড়ি দিয়ে বঙ্গদেশে এসে পা রেখেছিলেন এক ব্রিটিশ যুবক। ইন্ডিয়ান সিভিল সার্ভিসের একজন ইংলিশ মেম্বার হিসেবে কর্মজীবন শুরু করা সে যুবক এ দেশে এসেছিলেন সহকারি ম্যাজিস্ট্রেট ও কালেক্টর হিসেবে কাজ করতে। মূলত খুলনা, মেদিনীপুর, হুগলি এবং কলকাতার রাজস্ব আদায় থেকে শুরু করে প্রশাসনিক, বিচার বিভাগীয় ও সামরিক-বেসামরিক নানা দায়িত্ব অর্পিত ছিল তার ওপর। নাম তার ফ্রান্সিস ব্র্যাডলি বি বার্ট।

জাতিতে ব্র্যাডলি ইংরেজ হলেও, মননে তিনি প্রাচ্যকেই লালন করতেন। তাই অন্য আর দশটা ইংরেজ কর্মকর্তাদের মতো এদেশেকে তার নোঙরা, বিশৃঙ্খল কিংবা অশেষ ধন্যভাণ্ডারের একটি কুলাঙ্গার জাতির দেশ বলে মনে হয়নি। বরং মনে হয়েছে শস্য-শ্যামলা, উজলা এক দেশ। বিশেষ করে রাজধানী ঢাকার প্রেমে পড়ে গিয়েছিলেন তিনি। ঢাকার ইমারত, মসজিদ, মন্দির, নদ-নদী, অলিগলি এ সবকিছুর মধ্যে যেন তিনি অতীতের প্রতিধ্বনি শুনতে পেতেন। একারণেই হয়তো তার কাছে ঢাকা ছিল এক রহস্যময়ী নগরী।      

আর তার প্রমাণ 'দ্য রোমান্স অব অ্যান ইস্টার্ন ক্যাপিটাল' বইটি। ঢাকা নগরীর প্রতি মুগ্ধ হয়ে ব্র্যাডলি এ বই লেখেন। বইটির প্রথম প্রকাশকাল ১৯০৬ সাল। যা লন্ডন থেকে ইংরেজি ভাষায় প্রকাশিত হয়।

তবে বইটি কেন লেখা হলো এ নিয়ে আছে ভিন্ন মত। ঔপন্যাসিক হাবিব আনিসুর রহমানের সমকালে প্রকাশিত (১ এপ্রিল, ২০২২) 'প্রাচীন ঢাকা নিয়ে' শীর্ষক নিবন্ধে পাওয়া যায়, পূর্ব বাংলা ও আসামকে নিয়ে ইংরেজরা নতুন একটি প্রদেশ গঠন করে ১৯০৫ সালে। এই প্রদেশের রাজধানী হয় ঢাকা। নতুন প্রদেশের রাজধানী হওয়ায় প্রাচীন নগরী ঢাকাকে নতুন করে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার প্রয়োজন পড়ে। আর সে কারণে ইংরেজ লেখক ব্র্যাডলি বার্টের ওপর দায়িত্ব বর্তায় মোগল রাজধানী ঢাকার প্রাচীন গৌরব নিয়ে একখানি গ্রন্থ রচনার। তাই ঢাকাকে নিয়ে তিনি লিখলেন ১৯০৬ সালে, 'দ্য রোমান্স অব অ্যান ইস্টার্ন ক্যাপিটাল'।     

লাইব্রেরী অব কংগ্রেসের সংরক্ষিত দ্য রোমান্স অব অ্যান ইস্টার্ন ক্যাপিটাল বইটির ছবি/ ছবিসূত্র- লাইব্রেরী অব কংগ্রেস

এদিকে গবেষক ও প্রকাশক ইরফান শেখ জানান, 'বইয়ের নাম এবং বইয়ের ভেতর যে বর্ণনাভঙ্গি তাতে ধারণা করা যায়, বইটি ব্র্যাডলি একটি ভ্রমণকাহিনী হিসেবেই লিখেছেন। তাছাড়া, সরকারিভাবে ইতিহাস লিপিবদ্ধ করার জন্য ব্রিটিশ সরকার বি সি অ্যালেনকে নিযুক্ত করেছিলেন। একই কাজের জন্য ব্রিটিশ সরকার দুজনকে নিযুক্ত করার কথা না।' 

তবে যে উদ্দেশ্যেই লেখা হোক না কেন, ঢাকার ওপর প্রকাশিত প্রথম ইতিহাসভিত্তিক বই এই  'দ্য রোমান্স অব অ্যান ইস্টার্ন ক্যাপিটাল', জানান ইরফান শেখ।

ঢাকাকে ব্র্যাডলি দেখেছেন একজন প্রেমিকের চোখ দিয়ে  

ঢাকাকে কেন্দ্র করে ব্র্যাডলির বিমুগ্ধতার নিদর্শন এই বইটি। বেশিরভাগ ইংরেজ সাহেব-মেমসাহেবদের কাছে যেখানে অভিযোগ ছিল- ভারত হলো প্রচণ্ড গরম এবং শুষ্ক আবহাওয়ার নোংরা ঘিঞ্জি একটি দেশ। সেখানে প্রাচীন ঢাকার অলিতে-গলিতে, মিনারে-গম্ভুজে এবং সেই হারানো অতীতের প্রতিটি মোড়ে, প্রতিটি বাঁকে, ব্র্যাডলি বার্ট দেখতে পেয়েছেন মোহকর রহস্যময়তা।

যেমন তিনি লিখেছেন, 'এই নগরীর আঁকাবাঁকা অলি-গলি দেখে মনে হবে যেন বাইরের দৃষ্টি থেকে রহস্য ঢেকে রাখার জন্যে বিশেষ এক আদর্শে এগুলো তৈরি করা হয়েছিল। মহানগরীর বুকের তলায় যতো রহস্য লুকিয়ে আছে, তার কতটুকুই বা মানুষ জানে!' (বাংলা অনুবাদ)

এই রহস্যময়তা তাকে যেমন করেছে বিমোহিত, তেমনি করেছে আবিষ্ট। ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, মানিকগঞ্জ, সোনারগাঁও- বইয়ে বর্ণিত প্রতিটি জায়গায় ঘুরে ঘুরে দেখেছেন আর বিস্মিত হয়েছেন তিনি। একজন ইংরেজের চোখে ঢাকা নগরীর সে বিস্ময়ময়তা বইটির পাতায় পাতায় ডুবে আছে। বইয়ের মলাট উল্টালেই দেখা যাবে- বুড়িগঙ্গার তীরে অবস্থিত এই অঞ্চলটিতে কীভাবে একে একে বৌদ্ধরা, হিন্দুরা, মোগলরা, ইংরেজরা শাসন করে গেছে সে ইতিহাস যেমন রূপায়িত হয়েছে, তেমনি ফুটিয়ে তোলা হয়েছে নগরীর বুকে ঊষালগ্নের দীপ্তি ছড়িয়ে পড়ার চিত্র আর রাতের নীরবতায় কালো চাদরে ঢেকে যাওয়া ঢাকা নগরীর রূপ…

ব্র্যাডলি বইটিতে সন্ধ্যার বর্ণনা দিয়েছেন এভাবে,

'উষার সূচনা থেকে এ শহরটির বুকে যে প্রাণের খেলা শুরু হয় তা চলতে থাকে সুর্যের পশ্চিম আকাশে ঢেলে পড়া পর্যন্ত। সূর্য ডুবতে থাকে, নামাজ, নদীর ওপারে শিয়ালের ডাক, কুকুরের আওয়াজ, কেবলামুলখী, আল্লাহকে ডাকা। সকল প্রাণচাঞ্চল্য অস্তমিত হয়ে যায় সূর্য ডুবতে শুরু করলে। নদীর মাঝে কালো উলঙ্গপ্রায় অবয়বগুলোকে দেখলে মনে হয় যেন পটে আঁকা ছবি।'

জন্মাষ্টমীর উৎসবে ঢাকায় মাহুতটুলির মেলা এবং হাতির শোভাযাত্রার ছবি, ছবিসুত্র- দ্য রোম্যান্স অব অ্যান ইস্টার্ন ক্যাপিটাল

আবার ভোরের বর্ণনা দিয়েছেন এভাবে-  

'ঊষার এই আধা-আলো আধা-অন্ধকারে জাহাজের বিরাট খোলগুলো কাল ভূতের মতো দেখায়। স্টিমারগুলোর চোখ ধাঁধানো আলো অকস্মাৎ নিভে যায়। আগুনের চোখগুলো যেন মন্ত্রবলে কোথায় অদৃশ্য হয়ে গেল। সমগ্র পৃথিবী ধূসর বর্ণ ধারণ করে। ধূসর বর্ণের ওপর এক ঝলক গোলাপী রক্তিমাভা। যেখানে আকাশ আর নদী এক হয়ে গেছে সেখানে ঝুলন্ত সাদা কুয়াশা গলে যেতে থাকে। সূর্যের আসন্ন আবির্ভাবে তারাগুলোর চোখ ঘুমে মিটমিট অরে। অকস্মাৎ পৃথিবী জেগে উঠেছে। সারারাত যেসব নৌকা বাঁধা ছিল, সেগুলোর যাত্রা শুরু হয়। কাপড়ে গা জড়িয়ে ধীবরগণ সারাদিনের মাছ শিকারের জন্যে তাদের জাল ঠিক করে নেয়। সকালের ঝিরঝিরে বাতাসে বাদামী রঙের পাল তোলা একটি ডিঙ্গি তরতর করে এগিয়ে চলে। নিস্তব্ধ জনহীন নদীতীরে আবার কর্মব্যস্ত জনতার ভিড় শুরু হয়। সূর্য ওঠে যেন ঘুম থেকে ওঠা দানবের মতো।'

আবার জন্মাষ্টমীর বর্ণনা দিতে গিয়ে বলেছেন, আজও এই শহর বিভিন্ন উৎসবে সজ্জিত হয়। কিন্তু অতীতে মতো জৌলুস ও আড়ম্বর নেই। শুধু জন্মাষ্টমীই পালিত হয় অতীতের মতো বিরাট উদ্দীপনার সাথে। জন্মাষ্টমীর মিছিলের বর্ণনা নিয়ে লিখেছেন,  

'মিছিলের সময় যতই নিকটবর্তী হতে থাকে, ততোই মনে হবে শহরটি যেন মধ্যযুগে ফিরে গেছে। মনে হবে, এইতো শায়েস্তা খাঁর সেই রাজধানী। চারধারে শুধু উৎসবমুখর জনতার ভিড়। গৃহের জানালায়, ব্রান্দায় ও ছাদে দলে দলে লোক উৎসুক চোখে তাকিয়ে থাকে। এক পাল হাতি মিছিলে যোগদানের জন্য সারি বেঁধে দাঁড়িয়ে থাকে। সূর্যের প্রখর তেজ, বাতাসু নেই-তবু ঘন্টার পর ঘন্টা ধরে উৎসুক জনতা অসহ্য গরমের মধ্যে দাঁড়িয়ে থাকে আনন্দ পায়। সে-কি উত্তেজনা আর উন্মত্ত আনন্দ!'

একবার আত্মরক্ষার জন্য সোনারগাঁওয়ে বাংলার হিন্দু রাজাদের শেষ বংশধরগণ বিজয়ী মুসলমানদের আক্রমণে বিপর্যস্ত হয়ে পালিয়ে আসেন। এরপর কীভাবে হিন্দুদের আধিপত্যের শেষ যবনিকা মুসলমানদের হাতে চলে আসে, হিন্দু মন্দির-সৌধগুলোর ওপরে বিজয়ী মুসলমানদের ইমারত গড়ে তোলার ইতিহাস, মগ ও আরাকানরা সহ অজ্ঞাত আরও উপজাতিদের বর্বর আচরণ, একের পর এক শাসনকর্তার আগমন, নির্গমন আর ক্ষমতার প্রাণঘাতী লড়াই দেখে বলেছিলেন, 'সত্য বটে, প্রাচ্যবাসীদের চরিত্রে পরস্পর বিরোধী গুণের অদ্ভুত সমাবেশ দেখা যায়।'

যেখানে ইংরেজদের একটি বড় অংশের কাছে বাঙালিরা কল্পনাবিলাসী, বাস্তববিমুখী ও অলস বলে পরিচিত, সেখানে লেখক ঢাকাবাসীর সঙ্গে একাত্ম হয়ে মিশে গেছেন। ঢাকা এবং ঢাকাই  সংস্কৃতি সম্পর্কে তার আগ্রহ ও উচ্ছ্বাস উপরের লেখাতেই স্পষ্ট।

'পূর্ববাংলার ভাঙ্গাগড়ার ইতিহাসে ব্যাপক কোনো ধর্মীয় নির্যাতন নেই'…

বইটির মোট বারোটি অধ্যায়ে ধারাবাহিকভাবে ঢাকার গোটা জীবনকে তুলে ধরেছে। একদম বিক্রমপুর থেকে সোনারগাঁও, শায়েস্তা খাঁয়ের হাত ধরে ঢাকা প্রতিষ্ঠা, মোগল সালতানাত, ইংরেজ আমল পর্যন্ত পর্যায়ক্রমিক বর্ণনা তুলে ধরা হয়েছে এতে।   

ফলে যেমন আছে সম্রাট অশোকের হাত ধরে ভারতবর্ষে বৌদ্ধধর্মের অভ্যুদয়কাহিনী, যথাক্রমে হিন্দু, মুসলমান ও খ্রিষ্টান ধর্মের বিকাশ। তেমনি আছে মোগলদের উত্থান- পতন, রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক আধিপত্য নিয়ে ইংরেজ এবং ফরাসিদের মাঝে শত্রুতা, ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির জাগরণ এবং ব্রিটিশ আমলের ঢাকা নিয়ে অনেক সুগভীর বর্ণনা।      

ছবিসূত্র- ফেসবুক

তবে একটি বিষয় গর্বের সঙ্গে উল্লেখ করেছেন তিনি বইয়ে, যার প্রয়োজনীয়তা আজকের দিনে সবচেয়ে বেশি। তা হলো-  'পূর্ববাংলার ভাঙ্গাগড়ার ইতিহাসে ব্যাপক কোনো ধর্মীয় নির্যাতন নেই।'

ঢাকাবাসীর অনেক পাওয়া না পাওয়া, আনন্দ-আশ্রুর গল্প

নিজে একজন ব্রিটিশ হয়েও ব্র্যাডলি ব্রিটিশ যুগের অর্থনৈতিক ও সামাজিক চিত্র তুলে ধরেছেন পক্ষপাতিত্বহীন ভাবে। বণিকের তুলাদণ্ড রাজদণ্ডরূপে আত্মপ্রকাশ করার পর পূর্ব বাংলায় নেমে আসে এক চরম শিল্প ও অর্থনৈতিক বিপর্যয়। এর অনিবার্য ফলশ্রুতিতে উপর্যুপরি তিনটি মহা মন্বন্তর ও মহামড়কে দেশ উৎসন্নপ্রায় হয়ে যায়। মসলিন শিল্পের মতো অন্যান্য শিল্পও ধ্বংস হলো। শিল্পচ্যুত ব্যবসাহারা লক্ষ লক্ষ মানুষ শহর ছেড়ে গ্রামে চলে গেল জীবিকার জন্য। যে হাত 'আর রোওরা', 'বেগমখাস' বুনতো, তাকে ধরতে হলো লাঙ্গলের মুঠো। কিন্তু ভাগ্য সেখানেও দেখা দেয়নি।

মড়ক, মহামারি আর মহা মন্বন্তরের অভিঘাতে বিধ্বস্ত এ দেশের যে চিত্র ব্র্যাডলি এঁকেছেন, তাতে ক্ষমতাগর্বী দাম্ভিক বিদেশী সরকারের আসল চেহারাটির সন্ধান পাওয়া যাবে। পরবর্তীকালে মুসলিম গণ-মানসে যে স্বাতন্ত্র্য-বোধ ও চেতনার উদ্ভাসন ঘটে এবং যা পাকিস্তান আন্দোলনের রূপ নিয়ে দূর্বার তরঙ্গে ভেঙ্গে ফেটে পড়ে, তার দীর্ঘ-বিস্তৃত পটভূমির বিক্ষিপ্ত পরিচয় ছড়িয়ে আছে গ্রন্থের বিভিন্ন অধ্যায়ে।     

সমসাময়িক মুসলিম জাতীয় জীবনের অনেক পাওয়া না পাওয়া, আনন্দ-আশ্রুর গল্প রচিত আছে। উঠে এসেছে কুলীন প্রথা, জাতভেদ, বিয়ের বাজারে দর কষাকষির মতো ঘৃণিত সমাজব্যবস্থার নিন্দাও। ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে তিনি তখনকার ঢাকাকে কখনো মুগ্ধ হয়ে দেখেছেন, কখনো নিন্দিত সমাজব্যবস্থাগুলোর পরিণাম তুলে ধরেছেন।

আছে অজানা অনেক কিংবদন্তী

ইতিহাসভিত্তিক এই বইটির পরতে পরতে শুধু বিভিন্ন কিংবদন্তী কল্পকাহিনী। যা পড়তে গিয়ে পাঠক পাবে ঢাকাবাসীর সাধাসিধে জীবন যাপনের আঁচ। বইটির বিক্রমপুর অধ্যায়েই সবচেয়ে বেশি কিংবদন্তি তুলে ধরা হয়েছে। বিশেষ করে, রাজা বল্লাল সেনের সময়কার বিভিন্ন ঘটনা নিয়ে কিংবদন্তীগুলো লেখক তুলে ধরেছেন কোনো কার্পণ্য না করে। এই বল্লাল সেন আদিশূরের পুত্র না সেন বংশের শেষ রাজা বল্লাল সেন তা লেখক নিজেও জানিয়ে যেতে পারেন নি। তার ধারণামতে, বল্লাল সেন নামে ওই রাজবংশে দুজন রাজা ছিলেন। একজন সেনবংশের প্রতিষ্ঠাতা রাজা আদিশূরের পুত্র, অপরজন বংশের শেষ রাজা। কিন্তু দুজনকে নিয়েই প্রচুর গল্প এবং কিংবদন্তী থাকায় কার আমলে কোন কাহিনী তা আলাদা করা যায়নি।

পুণ্যস্নানের ছবি

বল্লাল সেনের জন্ম মৃত্যুর উভয় নিয়েই লেখক কিংবদন্তী লিখেছেন-

কথিত আছে যে, জ্যোতিষীরা গণনা করে বলেছিল, বল্লাল সেনের মৃত্যু ঘটবে গলায় মাছের কাঁটা বেঁধে। এজন্য বল্লাল সেন তার ভোজন-উপকরণ থেকে কাচকি (যেহেতে কাঁটা নেই) ছাড়া বাকি সব মাছ বর্জন করেন। পদ্মার এই কাচকি মাছ যেন সহজেই রাজপ্রাসাদে সরবরাহ করা যায় তাই 'কাচকি দরওয়াজা' নামে এক সড়ক নির্মাণ করেন। যার বর্তমান ঠিকানা আসলে কোথায় তা জানা যায়নি। হয়তো নাম পরিবর্তিত হয়েছে, নয়তো বিলুপ্ত হয়ে গেছে বা এটি শুধুই লোককাহিনী।   

একইভাবে আছে রামপাল দীঘিকে নিয়ে কল্পকাহিনী। রাজা বল্লাল সেনের হঠকারিতায় তার ঘনিষ্ঠ বন্ধু রামপালের মৃত্যু হয় এই দিঘীতে। তাই তার নামকরণ রামপাল দীঘি। যা বর্তমানে মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলার রামপাল ইউনিয়নের গ্রামে রামপাল গ্রামে অবস্থিত।  

বাদ যায়নি ঢাকেশ্বরী মন্দির, ব্রক্ষ্মপুত্র নদের সাথে জড়িয়ে থাকা কিংবদন্তীও। এরকম নানা ইমারত, খাল, ঘটনা বা নামকরণের সঙ্গে জড়িয়ে আছে কিংবদন্তী সব গল্প। যা পাঠককে উপভোগ করাবে এবং সেই সাথে ইতিহাস সম্পর্কে করবে সচেতনও। এছাড়া লেখকের উদ্দেশ্য ছিল নতুন রাজধানীর অতীত ও সমসাময়িক কালের ইতিহাসের সাথে পাঠক সমাজের পরিচয় করিয়ে দেওয়া। তা করতে গিয়ে তিনি ইতিহাসের অনেক অজ্ঞাত, অনধিত ও বিস্মৃত অধ্যায়ের উন্মোচন করেছেন। সোনারগাঁও ও বিক্রমপুর সম্পর্কে লিখিত দুটি অধ্যায়ে বহু দুর্লভ তথ্যের সন্ধান পাওয়া যায়। 

তার তোলা ছবিতে উঠে এসেছে ঢাকার যৌবন

ইংরেজ রাজনীতির আগে যে বাংলার নাম শুনলে কেবল বন-বাদাড় পোকামাকড়ের উপদ্রব, নদ-নর্দমার দেশ বোঝাতো, সেই বাংলাকে দেখেই ব্র্যাডলি বলেছেন, 'পূর্ব বাংলার মধ্যে এমন একটা মোহকর রূপ আছে যা প্রাচ্য ভূখণ্ডের সকল বিস্ময়কে হার মানায়।'

ব্র্যাডলি তাই বুড়িগঙ্গা, শীতলক্ষ্যা, ব্রক্ষ্মপুত্র এই তিনটি নদীর অববাহিকায় অবস্থিত এই ঢাকাকে ঘুরে ঘুরে দেখতে চেয়েছেন। জানতে চেয়েছেন ঢাকার অলিগলি। তথ্য সংগ্রহের পাশাপাশি ক্যামেরা দিয়ে নিজেই ছবি ধারণ করেছেন তখনকার ঢাকার। সেই সব ছবি সংখ্যায় কত হবে তা জানা যায়নি, তবে বইটিতে প্রকাশ পেয়েছে তার ৩০টি ছবি ও একটি মানচিত্র। যে ৩০টি ছবিতে আছে জন্মাষ্টমীর উৎসবে ঢাকায় মাহুতটুলির মেলা এবং হাতির শোভাযাত্রার ছবি, ব্রহ্মপুত্র নদে চৈত্রের শুক্লা অষ্টমীতে পুণ্যস্নানের ছবি, ঢাকা জেলখানার কয়েদিদের ছবিসহ বিভিন্ন দুর্লভ ছবি।   

ঢাকার ইতিহাস নিয়ে বই অনেকই আছে। শুধু ঢাকাকে কেন্দ্র করেও এরপরে বহু বই প্রকাশিত হয়েছে। কিন্তু সেই ১৯০৬ সালে প্রকাশিত একটি বইয়ে ব্র্যাডলি যেভাবে পাঠকের সুবিধার জন্য ইতিহাসের পাশাপাশি ঐতিহাসিক ছবিও যুক্ত করে দিয়েছেন, তা অতুলনীয়। হয়তো তিনি ছবি না তুললে সে সময়ের অনেক ছবিই আজ পাওয়া যেত না বা বিলুপ্ত হয়ে যেত।

আজও ঢাকার ইতিহাস সম্পর্কিত বইগুলোতে ব্র্যাডলির তোলা ছবিগুলোই ছবিসূত্র হিসেবে কাজ করে। পুরোনো ছবি ঘাঁটতে গেলে যেসকল ছবি পাওয়া যায় তারমধ্যে বেশিরভাগ ছবিই ব্র্যাডলির তোলা ছবি।

পাকিস্তান আমলের পর আবার এই মুদ্রণ কপি পাওয়া যাচ্ছে  

১১৭ বছর পর বইটির সচিত্র পুনর্মুদ্রণ এনেছে আদিত্য প্রকাশ/ ছবি- সংগৃহীত

ঢাকার ইতিহাস নিয়ে প্রথম বই হবার পরেও ইতিহাসের চিরাচরিত কাঠখোট্টা, রসকসবর্জিত গুণাবলি পেরিয়ে এ বইটিকে একটি সার্থক ভ্রমণসাহিত্যের তকমা দেওয়া যায়। বইটির নামকরণ এবং লেখনী দুটোই ঢাকার প্রতি তার মুগ্ধতার সাক্ষ্য হয়ে আছে।    

এই ভ্রমণ লেখকের ভ্রমণ নয়, এ ভ্রমণ পাঠকেরও। ঢাকার একদম ভ্রুণ অবস্থা থেকে বঙ্গভঙ্গের সময় পর্যন্ত গোটা যুগকে পাঠকের সামনে জীবন্ত করে তুলবে এ বই। নিজস্ব আবেগ, মুগ্ধতা এবং অনবদ্য ভাষায় রচিত প্রচুর ইতিহাসমিশ্রিত কাহিনী ও কিংবদন্তী এটিকে করে তুলেছে আরও আকর্ষণীয়।

ফ্রান্সিস ব্র্যাডলি বার্ট যে বইটি বের করেছিলেন সেটি ছিল চামড়ায় বাঁধানো। ঢাকার ইতিহাসকেন্দ্রিক বই হলেও আশ্চর্যের বিষয় হলো, ১৯০৬ সালে প্রকাশিত প্রথম মুদ্রণের কোনো বই বর্তমান বাংলাদেশের কোথাও আছে বলে জানা যায় না। মাঝে পাকিস্তান আমলে ১৯৬৫ সালে রহীম উদ্দীন সিদ্দীক বইটির ঐতিহাসিক গুরুত্ব আমলে নিয়ে বাংলা অনুবাদ করেন। অনূদিত বইটির নাম 'প্রাচ্যের রহস্য নগরী'। সেটিরও কোনো কপি বর্তমানে বাজারে নেই। পাকিস্তান আমলের পর আজ এতবছর বাদে এ বইটি আবারও মুদ্রিত অবস্থায় পাওয়া যাচ্ছে বাজারে।

এ বছর আগস্ট মাসে আদিত্য প্রকাশ বইটির মূল ইংরেজির পুণর্মুদ্রণ নিয়ে এসেছে। এতবছর ধরে মুদ্রণ না থাকায় এবার শুরুতে মাত্র এক হাজার কপি মুদ্রণ করেছে আদিত্য প্রকাশ। সাড়া পেলে বাড়ানো হবে কপিসংখ্যা। গবেষক ও আদিত্য প্রকাশের পরিচালক ইরফান শেখ বলেন, 'এ বইটির প্রথম মুদ্রণ কলকাতায়, দিল্লীতে, লন্ডনে আছে। কিন্তু আমাদের দেশে আছে কিনা জানা নেই। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গ্রন্থগারে থাকার সম্ভাবনাও অনেক ক্ষীণ। তবে তা সাধারণ মানুষের ধরাছোয়ার বাঁইরে। নর্থব্রুক হল পাঠাগারেও থাকতে পারে কিন্তু অনেক বছর যাবত সেটিও পড়ে আছে তালাবদ্ধ অবস্থায়। বইটি ঢাকা শহরকে নিয়ে, কিন্তু এ বই পড়ার উপায় ঢাকাবাসীর কাছে নেই।'

'এই বইয়ের কিছু কপি আবার আমেরিকাতেও গিয়েছিল। এখনও মার্কিন দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো যেমন মিশিগান স্টেট, ইয়েল, কর্নেলের গ্রন্থাগারগুলোতে তার কপি পাওয়া যায়। আমরা বইটির সন্ধান পেয়েছি নিউ ইয়র্কের কর্নেল ইউনিভার্সিটি থেকে', তিনি যোগ করেন।

কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয় এই যে, বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন দেশে বিশেষত শুধু যুক্তরাষ্ট্রেই এ বই একাধিকবার মুদ্রিত হলেও বাংলাদেশে হয়নি একবারও। মুদ্রিত হয়েছে কি হয়নি তার চেয়েও দুঃখজনক হলো, ঢাকাবাসীর কাছে এই বই বিস্মৃত। তাদের চোখের আড়ালেই রয়ে গেছে 'দ্য রোমান্স অব অ্যান ইস্টার্ন ক্যাপিটাল'...  
 
 

Related Topics

টপ নিউজ

ঢাকার ইতিহাস / ঢাকার ঐতিহ্য / প্রাচীন ঢাকা

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.

MOST VIEWED

  • জমির দলিলমূল্য ও বাজারমূল্যের ব্যবধান কমাতে উদ্যোগ সরকারের
  • আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ: মুক্ত ও গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে সমর্থন করে যুক্তরাষ্ট্র
  • চীনের যুদ্ধবিমান ও ক্ষেপণাস্ত্র পাকিস্তানকে ভারতের বিরুদ্ধে জয় এনে দিয়েছে
  • সার্বভৌমত্ব রক্ষায় আ.লীগ নিষিদ্ধ জরুরি ছিল, নির্বাচন অভ্যন্তরীণ বিষয়: দিল্লির মন্তব্যের জবাবে প্রেস সচিব
  • উপহার হিসেবে কাতারের বিমান না নেওয়াটা ‘বোকামি’ হবে: ট্রাম্প
  • এনবিআর বিলুপ্ত করে পৃথক ২ বিভাগ: প্রতিবাদে তিন দিনের কলম-বিরতি ঘোষণা কর্মকর্তা-কর্মচারীদের

Related News

  • সেকালের গঙ্গাজলি আজকের নূর মার্কেট: কেমন ছিল গঙ্গাজলি, কারা থাকত সেখানে
  • অতীতের রাজধানী: কেমন ছিল ঢাকার কার্জন হল, মেডিকেল কলেজ, মিটফোর্ড, ভুলভুলাইয়া বা দিলখুশা…
  • হোটেল শাহবাগ: এক বাড়ির তিন কাল; নাচঘর, হোটেল, হাসপাতাল
  • ‘ওকে’: ঢাকার প্রথম ইংলিশ রেস্তোরাঁ!
  • আটটি আন্ডা এবং ঢাকা ক্লাবের পূর্বসূরী আন্টাঘরের গল্প

Most Read

1
বাংলাদেশ

জমির দলিলমূল্য ও বাজারমূল্যের ব্যবধান কমাতে উদ্যোগ সরকারের

2
বাংলাদেশ

আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ: মুক্ত ও গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে সমর্থন করে যুক্তরাষ্ট্র

3
আন্তর্জাতিক

চীনের যুদ্ধবিমান ও ক্ষেপণাস্ত্র পাকিস্তানকে ভারতের বিরুদ্ধে জয় এনে দিয়েছে

4
বাংলাদেশ

সার্বভৌমত্ব রক্ষায় আ.লীগ নিষিদ্ধ জরুরি ছিল, নির্বাচন অভ্যন্তরীণ বিষয়: দিল্লির মন্তব্যের জবাবে প্রেস সচিব

5
আন্তর্জাতিক

উপহার হিসেবে কাতারের বিমান না নেওয়াটা ‘বোকামি’ হবে: ট্রাম্প

6
বাংলাদেশ

এনবিআর বিলুপ্ত করে পৃথক ২ বিভাগ: প্রতিবাদে তিন দিনের কলম-বিরতি ঘোষণা কর্মকর্তা-কর্মচারীদের

EMAIL US
contact@tbsnews.net
FOLLOW US
WHATSAPP
+880 1847416158
The Business Standard
  • About Us
  • Contact us
  • Sitemap
  • Privacy Policy
  • Comment Policy
Copyright © 2025
The Business Standard All rights reserved
Technical Partner: RSI Lab

Contact Us

The Business Standard

Main Office -4/A, Eskaton Garden, Dhaka- 1000

Phone: +8801847 416158 - 59

Send Opinion articles to - oped.tbs@gmail.com

For advertisement- sales@tbsnews.net