Skip to main content
  • মূলপাতা
  • অর্থনীতি
  • বাংলাদেশ
  • আন্তর্জাতিক
  • খেলা
  • বিনোদন
  • ফিচার
  • ইজেল
  • মতামত
  • অফবিট
  • সারাদেশ
  • চাকরি
  • প্রবাস
  • English
The Business Standard বাংলা

Monday
June 16, 2025

Sign In
Subscribe
  • মূলপাতা
  • অর্থনীতি
  • বাংলাদেশ
  • আন্তর্জাতিক
  • খেলা
  • বিনোদন
  • ফিচার
  • ইজেল
  • মতামত
  • অফবিট
  • সারাদেশ
  • চাকরি
  • প্রবাস
  • English
MONDAY, JUNE 16, 2025
ঢাকার হাসপাতালে ‘অজ্ঞাত রোগীরা’ কোথা থেকে আসে, কোথায় যায়!

ফিচার

সালেহ শফিক
17 March, 2023, 02:50 pm
Last modified: 17 March, 2023, 02:49 pm

Related News

  • আবারও বাড়ছে করোনা, সংক্রমণ প্রতিরোধে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ১১ পরামর্শ
  • চক্ষুবিজ্ঞানে চিকিৎসা বন্ধ: রোগীদের নিকটস্থ হাসপাতাল থেকে সেবা নেওয়ার অনুরোধ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের 
  • সরকারি হাসপাতালে বিশৃঙ্খলা: চিকিৎসকরা অনিশ্চয়তায়, ভোগান্তিতে রোগীরা
  • নারীর স্বাস্থ্যসেবায় বিশেষ তহবিল গঠন ও বাজেটে অন্তত ৫% বরাদ্দের সুপারিশ স্বাস্থ্য সংস্কার কমিশনের
  • স্বাস্থ্যখাতে প্রবাসী বিনিয়োগে বিশেষ বন্ড চালুর সুপারিশ, বিলাস পণ্যে স্বাস্থ্য করের প্রস্তাব

ঢাকার হাসপাতালে ‘অজ্ঞাত রোগীরা’ কোথা থেকে আসে, কোথায় যায়!

ঢাকার হাসপাতালে প্রায়ই দেখা মেলে অজ্ঞাত রোগীর। কারা এই অজ্ঞাত রোগী? কোত্থেকে আসে এরা হাসপাতালে? চিকিৎসা শেষে এরা যায়ই বা কোথায়?
সালেহ শফিক
17 March, 2023, 02:50 pm
Last modified: 17 March, 2023, 02:49 pm
ছবি: রাজীব ধর

নিত্যদিনকার মতো সুজন মিয়া আজও ওয়ার্ডে সকাল সাড়ে আটটাতেই হাজির হয়েছেন। থাকবেন দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত। গতকাল ডিউটি বুঝিয়ে দেওয়ার সময় যতজন রোগী রেখে গিয়েছিলেন আজ তার চেয়ে দুজন বেশি দেখলেন। মানে বিকালে বা সন্ধ্যায় নতুন রোগী এসেছে। তাদের জায়গা হয়েছে ওয়ার্ডের বারান্দায়। রেজিস্ট্রার খাতায় এদের নামের পাশে অজ্ঞাতনামা বা আননোন লেখা। এমন রোগী মাসে ৫-৭ জন পান সুজনরা তাদের ওয়ার্ডে। পুলিশ অথবা পথচারীরা সইতে না পেরে তাদের নিয়ে আসে হাসপাতালে। সাধারণত এদের অ্যাটেনডেন্ট থাকে না, রাস্তার ধারে পড়ে থাকে হুঁশ হারিয়ে, ভর্তির সময় নাম-ধামও বলতে পারে না। অজ্ঞাতনামা লিখে এন্ট্রি দেওয়ার পর প্রযত্নে লেখা হয় পুলিশের নাম অথবা পথচারীর নাম। তবে পথচারীরা নাম-ধাম ভুল দিয়ে থাকেন প্রায়শ। কারণ বড় কোনো বিপদ হলে তাকে ভালোই হ্যাপা পোহাতে হয়।

সুজন মিয়াদের নিউরোলজি ওয়ার্ড। যাদের হুঁশ কম থাকে বা থাকেই না তাদেরকে ইমার্জেন্সি থেকে এখানে পাঠানো হয়। সুজন যে দুজন অজ্ঞাতনামা রোগী আজ দেখতে পাচ্ছেন, তাদের একজন বেহুঁশ, আরেকজন প্রলাপ বকছে। যার হুঁশ নেই তার বাঁ পা গোড়ালির নিচ থেকে পচে গেছে বলা যায়, আর যিনি প্রলাপ বকছেন তিনি মনে হয় মাথায় আঘাত পেয়েছেন। মুখে আঘাতের চিহ্ন স্পষ্ট। সুজন এই ওয়ার্ডে ১৬ বছর ধরে কাজ করছেন, তবে রেজিস্টার্ড কর্মী নন। রোগীর ব্যান্ডেজ বেঁধে দিয়ে বা ট্রলিতে চড়িয়ে এক্স-রে করতে নিয়ে গিয়ে যে বখশিশ তিনি পান, তাতে কোনো মাসে ১০ হাজার, কোনো মাসে ২০ হাজার টাকাও আয় হয়। সুজন থাকেন কেরানীগঞ্জে বাসা ভাড়া করে। তিন সন্তান তার। তাই অজ্ঞাতনামা রোগীর পেছনে ছুটে সময় নষ্ট করা তার পোষায় না। ওয়ার্ডের অন্য কোনো বয়েরই পোষায় না। কিন্তু সুজন যতবারই যাচ্ছেন স্টোর রুমে, যেখানে গজ, ওষুধপত্র থাকে, ততবারই তার চোখ আপনা থেকে চলে যাচ্ছে বেহুঁশ রোগীটার দিকে।

প্রতিদিন সুজন কমপক্ষে ৫০০ টাকা বকশিস পাওয়ার টার্গেট নিয়ে আসেন ওয়ার্ডে। যদিও ওয়ার্ডের দেয়ালে দেয়ালে লেখা আছে ট্রলি বহন ইত্যাদি কোনো কাজে টাকা দেওয়া বিধিসম্মত নয়, কিন্তু এটা রেওয়াজ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে, আর তা বহু পুরোনো। এ ছাড়া রোগীর পক্ষে কোনো কাজ সমাধা করাও সম্ভব হয় না। রোগীর ব্যথা উঠলে অ্যাটেনডেন্টদের মধ্যে অস্থিরত দেখা দেয়। তখন তারা দুই-চারশ টাকাকে বড় কিছু ভাবার সুযোগ পান না। এক্স-রে রুমে, পোস্ট অপারেটিভ রুমে, ইসিজি করাতে গিয়ে লাইন পেতেও ওয়ার্ডবয়দের সাহায্যের বিকল্প নেই। সুজন যেমন ১৬ বছর ধরে আশায় আছেন, মাস্টাররোলে হলেও এনলিস্টেড হবেন। কিন্তু আশার আলো ক্রমেই দূরে সরে যাচ্ছে। এখন সময়ও চলে গেছে অনেক, নতুন কোনো কাজে যুক্ত হওয়া তার পক্ষে সহজ নয়, সংসারও পড়বে বিপদে।

রোগী টেনে টেনে আড়াইটার ঘণ্টা পড়ল। বিকালের শিফটের লোক চলে এলো। সুজনের বাড়ি ফেরার সময় এখন। কিন্তু সুজন যেতে পারছেন না, কী যেন এক অদৃশ্য সুতা তাকে পেছন থেকে টেনে ধরছে। তিনি ধীরে ধীরে পচা পায়ের রোগীটার কাছে এগিয়ে গেলেন। এর মধ্যে তাকে ব্যথা কমানোর ওষুধ গেলানো হয়েছে পানির সঙ্গে মিশিয়ে। ব্যথায় টিকতে না পেরেই হুঁশ হারিয়েছে লোকটা । সুজন ডিস্টিলড ওয়াটার, নরমাল স্যালাইন, হাইড্রোজেন-পার-অক্সাইড দিয়ে লোকটার পা পরিষ্কার করলেন অনেক সময় নিয়ে। পচা চামড়া ছাড়ালেন আলগোছে, তারপর জীবানুনাশক মিশিয়ে ব্যান্ডেজ বেঁধে দিল। লোকটা তখনো বেহুঁশ তবে ঠোট নাড়ছে।

ছবি: রাজীব ধর

ক্ষত আছে লোকটার হাঁটুর ওপরেও। সুজন ধারণা করলেন, কোনো মারাত্মক অস্ত্র দিয়ে তার পা কেটেছে। হাঁটুর ওপরেও ব্যান্ডেজ বেঁধে দিলেন সুজন। তারপর বাড়ি ফিরলেন। পরদিন ডিউটিতে গিয়ে সুজন দেখলেন, লোকটাকে আগের তুলনায় সুস্থ দেখাচ্ছে, তবে তার চেতনা পুরো ফেরেনি। ফুরসত পেলে সুজন নতুন করে ব্যান্ডেজ লাগিয়ে দিলেন পায়ে। লুঙ্গির ওপর ময়লা একটা ছাপা শার্ট পরা লোকটার। মনে হয় গোসল করেনি বেশ কিছুদিন, গা থেকে গন্ধ আসছে। তবে এই অবস্থায় গোসল করানো কঠিন। আগামীকাল একটু নড়াচড়া করতে পারলে গোসল করিয়ে দেবে বলে ভাবলেন সুজন। ডাক্তারের পরামর্শমতো স্যালাইন দিয়ে লিকুইড খাবার দেওয়া হচ্ছে লোকটাকে।

তৃতীয় দিন ওয়ার্ডে গিয়ে সুজন দেখেন লোকটা উঠে বসেছে। বেশ সুস্থ দেখাচ্ছে তাকে। তবে তাকে গোসল করানো দরকার। গন্ধে তার কাছে বেশি কেউ যেতে পারছে না। সুজন নিজে থেকে শ্যাম্পু আর সাবান কিনে আনলেন। ক্ষত স্থানগুলো পলিথিনে মুড়ে দিয়ে সুজন তাকে ভালোমতো গোসল করিয়ে দিলেন। আর যে লোকটা প্রলাপ বকছিল, তাকেও বাদ দিলেন না।

ওয়ার্ডের কাজ শেষ করার পর সুজন যখন বাড়ি ফেরার পথ ধরছিল, তখন পা পচা লোকটি সুজনের হাত জড়িয়ে ধরল। সুজন জানতে চাইলেন, কিছু খাবেন ? কিছু লাগবে?

লোকটি কোনো উত্তর না দিয়ে হাত ধরেই থাকল, ছাড়তে চাইছে না। সুজন ঘটনাটির বর্ণনা দিয়ে বললেন, 'মানুষ আমি গরীব, তবে লোকটা আমাকে যে ভালোবাসা দিল, তা আমার সারাজীবনের প্রাপ্তি। আমার সন্তানরা লোকটার দোয়া পাবে। এর চেয়ে বেশি আশাও করি না। বছর দুই আগে একবার এক আধপাগলা রোগী এসেছিল, একটু ভালো হওয়ার পর চলেও গিয়েছিল। সেই লোকের সঙ্গে রাস্তায় একদিন দেখা। আমাকে ছাড়বেই না। চা, কলা, কেক খাওয়াতে চাইল। আমার কাছে এগুলাই বড় কিছু। গরিব মানুষ, আর বেশি কী পামু?'

মানুষটার মা আছে

করলা আর ডাল দিয়ে পা পচা মানুষটার ভাত খেতে ইচ্ছে করছে। মানুষটার বয়স ২৭-২৮ হবে। নাম বললেন, মো. মামুন মিয়া। বাবা মারা গেছেন। তিন ভাই বোন তারা। মা বেঁচে আছেন। মা কোথায় আছেন এখন? জানতে চাইলে মামুন বললেন, অনেকদিন দেখি না, ৮-১০ বছর দেখি না। কোথায় আছে জানি না।

পরে আরও জানতে চাই, আপনাদের বাড়ি কোথায়? মামুন মিয়া বললেন, দৌলতপুর হইতে পারে, কুমিল্লা হইতে পারে, ফরিদপুর হইতে পারে।

ব্যাপারটি খোলাসা হলো না। আরো কিছু কথা চালিয়ে বুঝলাম, এর কোনোটি তার দাদাবাড়ি, কোনোটি নানাবাড়ি, বোনের শ্বশুরবাড়িও হতে পারে। 

ছবি: রাজীব ধর

লেখক: আপনার সমস্যা কী হইছিল? আঘাত পাইছিলেন কীভাবে?

মামুনের কাছে এর উত্তর নেই। সুজন ধারণা করেন, তাকে সন্ত্রাসীরা পিটিয়েছে, ভারী কিছু দিয়ে পা থেঁতলে দিয়েছে। ব্যথা সইতে না পেয়ে অজ্ঞান হয়ে পড়েছিল রাস্তায়।

মামুন জানালেন, তিনি ইপিজেডে কাজ করতেন, কসমেটিকসের দোকানেও কাজ করেছেন। কিন্তু আহত কীভাবে হয়েছেন, তা তিনি বলতে পারেন না। 

সুজনের কাছ থেকে জানলাম, অজ্ঞাতনামা রোগী বেশি পাওয়া যায় মেডিসিন বিভাগ। এটি নতুন ভবনের ছয়, সাত ও আটতলায়।

নতুন ভবনে ভিড়

ঢাকা মেডিকেলের সব জায়গাতেই ভিড়, যাকে বলে থিকথিকে ভিড়। ওয়ার্ড ছাড়াও বারান্দায়, সিঁড়ির তলায়, সব জায়গাতেই ভিড়। এত ভিড় যে খাবারের ট্রলি ঢোকানোর জায়গাও মিলছে না। একজন রোগীর সঙ্গে অ্যাটেনডেন্ট থাকেন একাধিক। ক্ষণে ক্ষণে টেলিফোন বাজছে, মানুষ রক্ত জোগাড় করতে ছুটছে, খাবার আসছে বাইরে থেকেও। একসঙ্গে অনেক মানুষ কথা বলছে, তাই কান পাতা দায়।

ঢাকা মেডিকেল হাসপাতালের পুরাতন ভবন চালু হয় ১৯৪৬ সালে, নতুন ভবনের বয়স তিন-চার বছর। নতুন ভবনে ৫টি লিফট আছে। প্রতিটিতে ১৬ জন করে লোক আঁটে। তবে সবসময়ই লিফটের কাছে ২০-২৫ জন অপেক্ষমাণ থাকে, আর কে আগে উঠবে তা নিয়ে গোলমালও লাগে মাঝেমধ্যে।

তৃতীয় দফায় যখন লিফটে চড়ার সুযোগ পেলাম, তখন ছয় তলায় নেমে গেলাম। নেমেই প্রমাদ গুমলাম। পুরো মেঝেজুড়ে বিছানা পাতা। রোগী ও তার স্বজনরা শুয়ে-বসে হাসপাতালবাস আনন্দময় করার চেষ্টা করছেন। এক রোগীর কথা শুনলাম, হঠাৎই হাত-পায়ের সব জোর বা বল হারিয়ে বসে পড়েছেন, এখন হাত দিয়ে হালকা কিছুও ধরে রাখতে পারেন না। আরেকজন কিশোরগঞ্জ থেকে এসেছেন। তিনি গরুর গাড়ি চালাতে গিয়ে চাকার নিচে পড়ে গিয়েছিলেন।

২২ বছর বয়সী আরেক ছেলের মাথায় ক্ষত তৈরি হয়েছে। সে বালির ট্রাকের ড্রাইভার। ট্রাকের ঘা খেয়েই আজ হাসপাতালে। তার মা ও ছোট বোন এসেছে সঙ্গে। নিয়ে এসেছে বিদ্যুৎ কালো নিমের মাজন আর কসকো সাবান। অসুস্থ মানুষ দেখে দেখে মাথায় ব্যথা ধরে যাচ্ছে।

উত্তর দিকের একেবারে শেষ মাথায় একজন লোক পড়ে আছে। তার নাকে নল লাগানো, কিন্তু কাছে-পিঠে কোনো অ্যাটেনডেন্ট দেখতে পাচ্ছি না। লোকটার শ্বাস-প্রশ্বাসের সমস্যা এত প্রবল যে বুক আর পেট হাঁপরের মতো ওঠানামা করছে। অনেক খুঁজেও কাউকে পেলাম না, রোগীটা সম্পর্কে জানতে। পরে ৭ তলার দিকে উঠতে থাকলাম।

ছয়তলার মতোই সাততলা

সাততলার চেহারা ছয়তলার চেয়ে খুব একটা ভিন্ন নয়। সারি সারি মাদুর বা চাটাই বিছানো। রোগীদের চেহারায় বিষণ্নতার ছাপ, রোগীর স্বজনের চেহারাও ক্লান্তিজড়ানো। আশপাশে অনেক পানির বোতল আর ছোট ছোট পলিথিন। পলিথিনগুলোর কোনোটায় ভাত, কোনোটায় ডাল। যেসব রোগী শক্ত খাবার গিলতে পারে না, তাদের জন্য বাইরের দোকানগুলো থেকে জাউভাতও আনা হয় এসব পলিথিনে করে।

একেবারে স্বজনহীন কাউকেই দেখলাম না। তবে ৭০১ নম্বর ওয়ার্ডের সামনে ইউনিফর্ম পরে বসে থাকা একজনের কাছে জানতে চাইলাম, এই ওয়ার্ডে কোনো অজ্ঞাতপরিচয় রোগী আছে কি না। তিনি বললেন, একজন আছে।

ছবি: রাজীব ধর

আমি এগিয়ে গেলাম। ইউনিফর্ম পরা লোকটিও পেছন পেছন এলেন। জানতে চাইলাম, এমন রোগীরা কোন শ্রেণি-পেশার মানুষ হয়ে থাকে। তিনি বললেন, 'গরিব মানুষই এরা। বছরের পর বছর রাস্তাতেই থাকে। আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে এদের কোনো যোগাযোগ থাকে না। একসময় সবাই এদের ভুলে যায়, এরাও কারোর কথা মনে করতে পারে না।'

কিভাবে এরা দুর্ঘটনার শিকার হয়? লোকটি বললেন, 'রাস্তা পার হতে গিয়ে, জায়গার দখল (মানে যেখানে শোয়) নিয়ে মারামারি করে, টাকা হারিয়ে ফেলার পর যার ওপর সন্দেহ পড়ে তার সঙ্গে ধস্তাধস্তি করে।'

বড়লোক ঘরের অজ্ঞাত রোগীও পাওয়া যায়? উত্তর পেলাম, হ্যাঁ, বড়লোক ঘরের রোগীও পাওয়া যায়। তারা সাধারণত স্মৃতি হারিয়ে ফেলা ব্যক্তি হন। সুস্থ হওয়ার পর অনেকে ঘর-বাড়ির খোঁজ দিতে পারেন, সেইমতো আত্মীয়-স্বজনকে খবর দেওয়া হয়। অনেকের ছবি আবার ফেসবুকে আপলোড করলে পরিচিতজনেরা নিজেরাই এসে বাড়ি নিয়ে যান।

কথা বলতে বলতে আমরা ওয়ার্ডের শেষ মাথায় চলে এসেছি। সব রোগী থেকে বিচ্ছিন্ন খালি গায়ের একজন প্রায় বৃদ্ধ শুয়ে আছেন চাটাইয়ের ওপর। তার গায়ের রঙ শ্বেতবর্ণের। কথা বলার মতো অবস্থায় তিনি ছিলেন না। তাকে স্যালাইন দেওয়া হচ্ছে।

আমি কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে ফেরার পথ ধরলাম। মাঝখানে ৭০১ নম্বর ওয়ার্ডের ইনচার্জকে মনে করিয়ে দিলাম, সুভাষ দত্ত পরিচালিত ডুমুরের ফুল ছবিটির কথা। ওই ছবিতে নায়িকা ববিতা ছিলেন নার্স। একটি শিশু আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়। শিশুটির সঙ্গে ববিতার ভাই-বোনের সম্পর্ক তৈরি হয়ে যায়। কিন্তু শিশুটি সুস্থ হওয়ার পর যখন তার হাসপাতাল ছেড়ে যাওয়ার প্রসঙ্গ ওঠে তখন এক হৃদয়বিদারক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। পথ থেকে আসা শিশু এখন যাবে কোথায়? হাসপাতালে বরং তার থাকা-খাওয়ার নিরাপত্তা আছে, কিন্তু পথে তো এসব কিছুই মিলবে না। শিশুটি তখন কাঁচ দিয়ে আবার তার পা কেটে ফেলে, যেন আরো কিছুদিন হাসপাতালে থাকার সুযোগ হয়। ইনচার্জের কাছে এমন রোগীর কথা জানতে চাইলাম। তিনি কিছুক্ষণ ভেবে নিয়ে বললেন, ছবিটির কথা তিনি মনে করতে পারেন, তবে এমন রোগী এখানে পেয়েছেন বলে মনে পড়ে না।

কথায় কথায় বেলা ফুরাতে চলল। এখন এই বেলায় হাসপাতাল পরিচালকের সঙ্গে একবার দেখা করা দরকার। হদিস জেনে নিয়ে চললাম সেদিকে।

প্রশাসনিক ব্লকে

পুরনো ভবনের প্রশাসনিক ব্লকে পরিচালকের ঘর। অনেক লোকের ভিড় ঘরের ভেতর ও বাইরে। পরিচালকের পিএ (পারসোনাল অ্যাসিস্ট্যান্ট) সাহেবের কাছে ভিজিটিং কার্ড দিয়ে অপেক্ষা করতে থাকলাম। ছবি তোলার জন্য তার অনুমতি নেওয়া প্রয়োজন। প্রায় পনেরো মিনিট পর ডাক পড়ল। ঘরের ভিতরেও অনেক লোক।

ছবি: রাজীব ধর

ছবি তোলার অনুমতি পেতে বেশি সময় লাগল না, তারপর পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. নাজমুল হক বললেন, 'এটা সরকারি হাসপাতাল, এখানে উপস্থিত সকল রোগীকেই আমরা সেবা দিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তবে অজ্ঞাত রোগীদের সেবা দেওয়ার বিষয়টি কিন্তু সিটিজেন চার্টারে নেই। রাস্তায় অসুস্থ বা আহত কেউ পড়ে থাকলে লোকেরা তাদেরকে এখানেই নিয়ে আসে, এখানকার কথাই তাদের আগে মনে পড়ে। কিন্তু যদি এমন ৫০টি রোগীও আমরা মাসে পাই, তবে তাদের জন্য বাড়তি যে ব্যবস্থাপনা প্রয়োজন তা তো আমাদের নেই।

'একজন রোগী মানে কিন্তু একজন সাধারণ অতিথি নয়। রোগী মানেই হলো সেবা-শুশ্রুষা। তার জন্য খাবার, ওষুধ, ব্যান্ডেজ, স্যালাইন, তাকে এক্স-রে রুমে স্থানান্তর, অ্যাটেনডেন্ট, গোসল, পরিচ্ছন্নতা ইত্যাদি সবকিছুর দরকার হয়। একজন অপরিচ্ছন্ন রোগী অন্য সব রোগীরও কষ্টের কারণ হয়। এখন সরকারের তরফ থেকে যদি এদের জন্য নার্স, ওয়ার্ডবয় এবং সেবাদান পদ্ধতি নির্ধারণ না করা হয় তবে সবার কষ্টই বাড়ে। আর এমন রোগী কেবল এ হাসপাতালে নয়, অন্য হাসপাতালেও আনুপাতিক হারে বণ্টন করতে পারলে ভালো। মানবিক কারণে আমরা করি, কিন্তু তা কতদিন পারা যায়? আপনারাই বিবেচনা করুন।'

শেষে পাওয়া গেল নাজিফাকে

গত ৪ মার্চ সকালে টিবিএসের আলোকচিত্রী রাজীব ধর ছবি তুলতে গিয়েছিলেন ঢাকা মেডিকেলে। এপিসি (অ্যাসিস্ট্যান্ট প্লাটুন কমান্ডার) মোশাররফ তার সঙ্গী হয়েছিলেন। মোশাররফ মারফত রাজীব জানতে পেরেছিলেন ২৬ ফেব্রুয়ারি থেকে শিশু ওয়ার্ডে একটি শিশু পড়ে আছে যাকে তার মা (কথিত) ফেলে রেখে গেছে একটি পুঁটলি সমেত।

শিশুটির নাম বলা হয়েছে নাজিফা, রেজিস্ট্রার খাতায় বয়স লেখা হয়েছে তিন। শিশুটির যত্নআত্তি করছেন আশপাশের রোগীর স্বজনেরা। নাজিফার ঘটনাটি আমাদের ফাতিমার (পুরনো বিমানবন্দরে পাওয়া পরিত্যক্ত শিশুটির নাকে ক্ষত তৈরি করেছিল কুকুর) কথা মনে করিয়ে দিল। পরে ফাতিমাকে হাসপাতাল কর্মীরা সারিয়ে তোলেন এবং শেষে তার স্থান হয় সমাজসেবা অধিদপ্তরের ছোটমণি নিবাসে। আশা করা যায় নাজিফাও সেখানে স্থান পাবে যেখানে জুবলি বেগম রানুর মতো মাতৃময়ী তত্ত্বাবধানকারী আছেন। কিন্তু নাজিফার মা তাকে ফেলে গেল কেন?

ছবি: রাজীব ধর

চার্লি চ্যাপলিনের বিশ্বখ্যাত চলচ্চিত্র দ্য কিড, যেটি তিনি ১৯২১ সালে নির্মাণ করেছিলেন, সে ছবি থেকে এর উত্তর মিলতে পারে। কিড ছবির মা শিশুটিকে একটি দামি গাড়ির ভেতর ফেলে রেখে কাঁদতে কাঁদতে চলে যান, কারণ তিনি অবিবাহিত ছিলেন। অবিবাহিত মায়ের সন্তানকে সমাজ স্বীকৃতি দেবে না, তা জানে সব লোকেই। তবে নাজিফার মায়ের আরো কারণ থাকতে পারে, তিনি হয়তো এ শিশুর লালন-পালনে সমর্থ নন। হয়তো তিনি নিজের জীবিকা আহরণেই গলদঘর্ম। আমাদের ১৭ কোটি মানুষের এ দেশে দুঃখী, অসমর্থ, অক্ষম মানুষের সংখ্যা অর্ধেকেরও বেশি হতে পারে। আর সংখ্যাটি দিনে দিনে বাড়ছেই।

Related Topics

টপ নিউজ

অজ্ঞাত রোগী / রোগী / স্বাস্থ্যসেবা

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.

MOST VIEWED

  • ইরানের নতুন হামলায় ইসরায়েলে নিহত ৮, তেহরানে কুদস ফোর্সের সদর দপ্তরে হামলার দাবি ইসরায়েলের
  • পারমাণবিক অস্ত্র বিস্তার রোধ চুক্তি থেকে বেরিয়ে যাবে ইরান, আইন প্রণয়ন করছে
  • ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞার তালিকায় আরও ৩৬ দেশ যুক্ত করার কথা ভাবছে ট্রাম্প প্রশাসন
  • ইসরায়েল-ইরান যুদ্ধ যেভাবে শেষ হতে পারে...
  • ইরান কেন রাতে ইসরায়েলে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালাচ্ছে
  • বাণিজ্য সম্প্রসারণ ও কূটনৈতিক সংযোগ বাড়াতে ৫ দেশে নতুন মিশন খুলবে বাংলাদেশ

Related News

  • আবারও বাড়ছে করোনা, সংক্রমণ প্রতিরোধে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ১১ পরামর্শ
  • চক্ষুবিজ্ঞানে চিকিৎসা বন্ধ: রোগীদের নিকটস্থ হাসপাতাল থেকে সেবা নেওয়ার অনুরোধ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের 
  • সরকারি হাসপাতালে বিশৃঙ্খলা: চিকিৎসকরা অনিশ্চয়তায়, ভোগান্তিতে রোগীরা
  • নারীর স্বাস্থ্যসেবায় বিশেষ তহবিল গঠন ও বাজেটে অন্তত ৫% বরাদ্দের সুপারিশ স্বাস্থ্য সংস্কার কমিশনের
  • স্বাস্থ্যখাতে প্রবাসী বিনিয়োগে বিশেষ বন্ড চালুর সুপারিশ, বিলাস পণ্যে স্বাস্থ্য করের প্রস্তাব

Most Read

1
আন্তর্জাতিক

ইরানের নতুন হামলায় ইসরায়েলে নিহত ৮, তেহরানে কুদস ফোর্সের সদর দপ্তরে হামলার দাবি ইসরায়েলের

2
আন্তর্জাতিক

পারমাণবিক অস্ত্র বিস্তার রোধ চুক্তি থেকে বেরিয়ে যাবে ইরান, আইন প্রণয়ন করছে

3
আন্তর্জাতিক

ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞার তালিকায় আরও ৩৬ দেশ যুক্ত করার কথা ভাবছে ট্রাম্প প্রশাসন

4
আন্তর্জাতিক

ইসরায়েল-ইরান যুদ্ধ যেভাবে শেষ হতে পারে...

5
আন্তর্জাতিক

ইরান কেন রাতে ইসরায়েলে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালাচ্ছে

6
বাংলাদেশ

বাণিজ্য সম্প্রসারণ ও কূটনৈতিক সংযোগ বাড়াতে ৫ দেশে নতুন মিশন খুলবে বাংলাদেশ

EMAIL US
contact@tbsnews.net
FOLLOW US
WHATSAPP
+880 1847416158
The Business Standard
  • About Us
  • Contact us
  • Sitemap
  • Privacy Policy
  • Comment Policy
Copyright © 2025
The Business Standard All rights reserved
Technical Partner: RSI Lab

Contact Us

The Business Standard

Main Office -4/A, Eskaton Garden, Dhaka- 1000

Phone: +8801847 416158 - 59

Send Opinion articles to - oped.tbs@gmail.com

For advertisement- sales@tbsnews.net