Skip to main content
  • মূলপাতা
  • অর্থনীতি
  • বাংলাদেশ
  • আন্তর্জাতিক
  • খেলা
  • বিনোদন
  • ফিচার
  • ইজেল
  • মতামত
  • অফবিট
  • সারাদেশ
  • চাকরি
  • প্রবাস
  • English
The Business Standard বাংলা

মিস ও মিস্টার কবুতর প্রতিযোগিতা, বিচারক আসেন বিদেশ থেকে!  

ন্যাশনাল পিজিয়ন অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ আয়োজিত দ্বিতীয় সৌখিন কবুতর প্রদর্শনীর আয়োজন ছিল গত ২৪ ফেব্রুয়ারি। মাগুরা, মেহেরপুর, নওগাঁ, পাবনা, চট্টগ্রাম, সুনামগঞ্জ ইত্যাদি অনেক জায়গা থেকে খামারিরা এসে পৌঁছেছিলেন মিরপুরের শহীদ সোহরাওয়ার্দী ইনডোর স্টেডিয়ামে। মোট ৩২টি ব্রিডের ৮০০ কবুতর প্রদর্শিত হয় প্রদর্শনীতে। মোট ৭ জনের বিচারক দল ছিল প্রদর্শনীতে। তাদের ৫ জন ওমানের, ১ জন আরব আমিরাতের আর ১ জন বাংলাদেশের। প্রতিটি ব্রিডের ১টি ফিমেল ও ১টি মেল কবুতরকে চ্যাম্পিয়ন ঘোষণা করা হয়েছে। ওমানের ড. ইসা আলবালুশি ছিলেন প্রধান বিচারক।
মিস ও মিস্টার কবুতর প্রতিযোগিতা, বিচারক আসেন বিদেশ থেকে!  

ফিচার

সালেহ শফিক
28 February, 2023, 12:50 pm
Last modified: 28 February, 2023, 01:23 pm

Related News

  • স্তন্যপায়ীরা পায়ুপথে শ্বাস নিতে পারে প্রমাণ করে ইগ নোবেল পেল যে দল 
  • তিমি, মরা ইঁদুর, বিড়াল নাকি কবুতর: গুপ্তচর হিসেবে সেরা কোন প্রাণী?
  • ডোঙায় যাতায়াত, ডোঙায় মাছ ধরা, সপ্তাহে দুই দিন ডোঙা বেচাকেনা
  • আকবর বাদশারও ‘হাই ফ্লায়ার’ কবুতর ছিল, তবে তার সানগ্লাস-দুরবিন ছিল না!
  • কবুতর যখন গোয়েন্দা: প্রাচীন গ্রিস থেকে বাংলা

মিস ও মিস্টার কবুতর প্রতিযোগিতা, বিচারক আসেন বিদেশ থেকে!  

ন্যাশনাল পিজিয়ন অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ আয়োজিত দ্বিতীয় সৌখিন কবুতর প্রদর্শনীর আয়োজন ছিল গত ২৪ ফেব্রুয়ারি। মাগুরা, মেহেরপুর, নওগাঁ, পাবনা, চট্টগ্রাম, সুনামগঞ্জ ইত্যাদি অনেক জায়গা থেকে খামারিরা এসে পৌঁছেছিলেন মিরপুরের শহীদ সোহরাওয়ার্দী ইনডোর স্টেডিয়ামে। মোট ৩২টি ব্রিডের ৮০০ কবুতর প্রদর্শিত হয় প্রদর্শনীতে। মোট ৭ জনের বিচারক দল ছিল প্রদর্শনীতে। তাদের ৫ জন ওমানের, ১ জন আরব আমিরাতের আর ১ জন বাংলাদেশের। প্রতিটি ব্রিডের ১টি ফিমেল ও ১টি মেল কবুতরকে চ্যাম্পিয়ন ঘোষণা করা হয়েছে। ওমানের ড. ইসা আলবালুশি ছিলেন প্রধান বিচারক।
সালেহ শফিক
28 February, 2023, 12:50 pm
Last modified: 28 February, 2023, 01:23 pm

নূপুর তালুকদার তাদের সাভারের বাড়িতে পোষা পাখি দেখতে দেখতে বড় হয়েছেন। ময়না, কাকাতুয়া, লাভ বার্ড ইত্যাদি আরো পাখির সঙ্গে কবুতরও ছিল নূপুরদের। তাই পাখির জন্য তার ভালোবাসা তৈরি হয় ছোটবেলাতেই। ২০০৪ সালে এসএসসি পরীক্ষা দিয়ে নূপুর ভাবলেন এবার নিজের মতো একটা লফট বা মাচান করবেন যেখানে তার পছন্দের পাখিই থাকবে। কবুতর বেছে নিলেন নূপুর। তখনো অবশ্য কবুতর বলতে তার চেনা ছিল গোল্লা বা গিরিবাজ।

একবার মিরপুর ১ নম্বরে পাখির বাজারে গিয়ে ইন্ডিয়ান ফ্যানটেইল (যার পুচ্ছদেশ হয় পাখার মতো) দেখে আনন্দ পেলেন। দাম জিজ্ঞেস করে দমে গেলেন। কারণ এগুলো ফ্যান্সি বার্ড মানে সৌখিন কবুতর। বাহারি হওয়ায় দাম হয় বেশি। নূপুর তাই সঠিক সময়ের  অপেক্ষায় থাকলেন। ২০০৮ সালে তার বিয়ে হলো যার সঙ্গে তিনিও পাখিপ্রেমী। দু'জনে মিলে ঠিক করলেন কবুতর পুষবেন, সৌখিন কবুতর। আবার মিরপুর ১ নম্বর গিয়ে একজোড়া করে মুক্ষী, ফ্যানটেইল আর বোম্বে কিনে আনলেন। তবে তখনো পর্যন্ত কবুতরের 'কোয়ালিটি' সম্পর্কে তাদের জানা ছিল না। সৌন্দর্যই ছিল বড় ব্যাপার। কোয়ালিটি হলো কবুতরের তেমন অনেকগুলো বিষয় যেমন চোখ, ঠোঁট, শরীরের ভারসাম্য বা মাথার তাজ ইত্যাদি  যা দেখে বিচারকরা কবুতরটিকে সেরা নির্বাচন করেন। দিনে দিনে নূপুরের কবুতরের জাত ও তার সৌন্দর্য সম্পর্কে ধারণা বাড়তে থাকে।

কবুতর প্রতিযোগিতা; ছবি-মুমিত এম/টিবিএস

সৌখিন কবুতর পালন সহজও নয়। এরা বিশেষ সংবেদনশীল হয়। গরম আর শীতের মাঝামাঝি পরিবেশে থাকতে পছন্দ করে। সবসময় পরিচ্ছন্ন রাখতে হয়। নূপুরের সংসার একসময় হয়ে উঠল কবুতরের সংসার।

স্বামীর সঙ্গে নূপুর থাকতেন বাইপাইলে এক ভাড়া বাড়িতে। বাড়ির মালিকের কাছ থেকে অনুমতি নিয়ে ছাদে শেড তুলে কবুতরগুলোর থাকার জায়গা করলেন। এর মধ্যে ঘটল এক বিরাট দুর্ঘটনা। তখন নূপুরের ৫৪ জোড়া কবুতর। ৭টি বাদে সবগুলো চুরি হয়ে গেল। চোরের দল এমন কিছু ছড়িয়ে রেখে গিয়েছিল যে বাকি ৭টিও মারা গেল অল্পদিনের মধ্যে। নূপুরের কান্না দেখে কে! বলছিলেন, 'আমি সেসব রাতে ঘুমাতে পারতাম না। চোখ লেগে এলেই কবুতরগুলো আমার চারপাশে ভিড় জমাত। মনে হতো তারা ডুকরে কাঁদছে। আমি চিৎকার দিয়ে জেগে উঠতাম।'

ছবি-মুমিত এম/টিবিএস

পরে নূপুর আবার নতুন করে খামার গড়ায় মন দিলেন কারণ তিনি বুঝতে পেরেছিলেন, কবুতর ছাড়া তার বেঁচে থাকা সম্ভব না। এখন তার খামারে ১৩ জাতের (ব্রিড) ৪২ জোড়া কবুতর আছে। তবে তিনি জাত আর বাড়াতে চান না বরং যেগুলো আছে সেগুলোরই কোয়ালিটি বাড়াতে চান। প্রতি মাসে নূপুর ৪-৫ জোড়া বাচ্চা কবুতর বিক্রি করেন অনলাইন মার্কেটে। বিশেষ করে আর্ক অ্যাঞ্জেল জাতের কবুতরে তিনি সারাদেশে সুনাম কুড়িয়েছেন। নূপুরের কাছ থেকে জানা গেল, আর্ক অ্যাঞ্জেল তার চকচকে ধাতব রঙের জন্য বেশি আকর্ষণীয়। ছোট গড়নের পাখিটার চলাফেরা অবশ্য রাজকীয় ধরণের। এর পা পালকে মোড়ানো থাকে না, চোখের রং হয় গাঢ় কমলা। অ্যাড্রিয়াটিক সাগরের পুবপাড়ে পাখিটার প্রজনন ঘটানো হয়েছিল দূর অতীতে। এর মাথা কিছুটা বাঁকা আর লম্বাটে হয়, চিকন লম্বা হয় ঠোঁট, ঘাড় বেশ বড়সড় হয়, বুক হয় চিতোনো, পেছনদিকটা সোজা নেমে যায় লেজ অবধি, পাখা হয় লম্বা, সরু লেজটি মাটির সঙ্গে গড়াগড়ি যায় না।

ছবি-মুমিত এম/টিবিএস

ন্যাশনাল পিজিয়ন অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ আয়োজিত দ্বিতীয় সৌখিন কবুতর প্রদর্শনীর আয়োজিত হলো ২৪ ফেব্রুয়ারি শুক্রবার, মিরপুরের শহীদ সোহরাওয়ার্দী ইনডোর স্টেডিয়ামে। সকাল নয়টাতেই প্রদর্শনকেন্দ্রের দ্বার খুলে গিয়েছিল। মাগুরা, মেহেরপুর, নওগাঁ, পাবনা, চট্টগ্রাম, সুনামগঞ্জ ইত্যাদি অনেক জায়গা থেকে খামারিরা এসে পৌঁছেছিলেন ইনডোর স্টেডিয়ামে। কমলা, আপেলের বড় যে হার্ডবোর্ড বাক্স হয় তাতে করে কবুতর বহন করে এনেছিলেন তারা। বড় একটা দল এসেছিল গাজীপুর থেকেও। তারা সকলে হলুদ রঙের গেঞ্জি পরিহিত ছিলেন। ফলের বাক্স থেকে বের করে কবুতরগুলো প্রদর্শনস্থলে রাখা রূপালি খাঁচায় ঢোকানো হয়েছিল। স্টেডিয়ামের এমাথা থেকে ওমাথা সার ধরে পাতা হয়েছিল টেবিল আর তার ওপর গায়ে গা লাগিয়ে রাখা হয়েছিল খাঁচার পর খাঁচা। প্রতিটি টেবিলের শুরুতে যে ব্রিডের জন্য টেবিলটি নির্ধারিত তার নাম লেখা ছিল যেমন ইংলিশ লংফেস বা বিউটি হোমার। বিপরীত পাশের খাঁচাগুলো নির্ধারিত ছিল একই ব্রিডের ফিমেল কবুতরগুলোর জন্য। খাঁচার গায়েও একটি করে কাগজের ট্যাগ ঝোলানো ছিল, সেটায় ব্রিডারের নাম, খামারের নাম আর জেলার নাম লেখা ছিল। প্রতিটি কবুতরের পায়ে একটা করে লেগ ব্যান্ড আঁটা ছিল যাতে তার পরিচয়সূচক সংখ্যা ০১৩ বা ২৩৬৭ লেখা ছিল। মোট ৩২টি ব্রিডের ৮০০ কবুতর প্রদর্শিত হলো প্রদর্শনীতে। 

কয়েকটি জাতের কথা

ছবি-মুমিত এম/টিবিএস

চারশর অধিক ব্রিডের সৌখিন কবুতর পাওয়া যায় পৃথিবীজুড়ে। প্রতিটির আবার ৫/৬টি করে উপজাত রয়েছে। ব্রিড চিনতে সময় কম লাগে না, তবে বেশি লাগে ব্রিড কোয়ালিটি তৈরির জন্য। প্রদর্শনীতে যেসব ব্রিড প্রদর্শিত হয়েছে তার একটি জ্যাকোবিন। পনের শতকের ভারত এর জন্মস্থান,পরে ডাচরা আরো উন্নয়ন ঘটিয়েছে। পৃথিবীজুড়েই অন্যতম মশহুর ব্রিড জ্যাকোবিন। এর মাথার দিকে হুড বা ঘোমটা থাকে যেমন থাকত প্যারিসের খ্রিস্টান জ্যাকোবিন ভিক্ষুদের। জ্যাকোবিন নামটা হয়েছে সে কারণেই। ১৫ বছর বাঁচতে পারে এ পাখি আর চাহিদা বেশি বলে দামও হয় ভালো। তারপর বোখারা ট্রাম্পেটারের কথা বলা যেতে পারে। এ পাখিটার উন্নয়ন বা রূপান্তর (মিউটেশান) ঘটানো হয়েছে যুগ যুগ ধরে। পায়ের মোজার (মাফ) জন্য এর গুরুত্ব বেড়েছে অনেক বেশি, এছাড়া এর ঘাড়ের পালক এতোদূর নেমে আসে যে চোখ বলতে গেলে ঢেকে যায়। এর ডাক অনেকটা হো হো হাসির মতো তাই নামকরণ হয়েছে ট্রাম্পেটার।

পিঠে ঝালর থাকে বলে আরেকটি কবুতরের নাম হয়েছে ফ্রিলব্যাক। ১০০ পয়েন্ট ধরে মার্কিং করা হলে এর পঞ্চাশ পয়েন্টই বরাদ্দ থাকে ঝালরের ওপর। এছাড়া মাথায় ১৫ পয়েন্ট, শরীর গঠনে ১০ পয়েন্ট আর মোজায় ১০ পয়েন্ট থাকে। এ কবুতর আকারে কিছুটা বড় হয়, লেজ থাকে লম্বা। মাথা হয় সমতল নয়তো ডিম্বাকৃতির। ফ্রিলব্যাকের চোখ লাল আভাযুক্ত কমলা রঙের হলে খুশি হন বিচারক। চোখগুলো ঠোঁটের সমান্তরাল হওয়া দরকার। এর ওপরের ঠোট নীচেরটির চেয়ে অল্প একটু লম্বা হয়। ফ্রিলব্যাকের মোজা ২ থেকে ৩ ইঞ্চি দৈর্ঘ্যের হলে ভালো হয়। এর পিঠের সবটাই ঝালরে ঢাকা হলে বেশি নম্বর পাওয়ার সুযোগ থাকবে।

নামই সাক্ষ্য দেয় ইন্ডিয়ান ফ্যানটেইলের জন্মস্থান ভারত, ১৫৬০ খ্রিস্টাব্দে। এদের লেজ হয় পাখার মতো, তাই দেখায় সুন্দর, বিশ্বজুড়েই পাখিটার আদর আছে আর এটি পুষতেও সুবিধাজনক। এদের বুক চিতানো হয় আর মাথায় ছোট্ট ঝুঁটি থাকে, গড়ে এদের উচ্চতা হয় ১১ ইঞ্চি। অন্য কবুতরের মতোই এরাও ধান, গম, মেইজ, চাউল, সরিষা, সবজি খেতে পছন্দ করে।

ছবি-মুমিত এম/টিবিএস

প্রদর্শনীতে আরো যেসব কবুতর এসেছিল তার মধ্যে আমেরিকান  কিং, পমেরানিয়ান পটার, জার্মান বিউটি হোমার, ওরিয়েন্টাল ফ্রিল, আমেরিকান সেইন্ট, ড্যানিশ টাম্বলার, ইংলিশ ফ্যানটেইল, আমেরিকান হেলমেট, লাহোরি, রিভার্স উইং পটার, ডাচ টাম্বলার, হাঙ্গেরিয়ান হাউজ পিজিয়ন, ইংলিশ লং ফেস টাম্বলার, রোস্টভ টাম্বলার, মডেনা, মুক্কি, বোম্বে উল্লেখযোগ্য।

বিচারকার্য 
মোট ৭ জনের বিচারক দল ছিল প্রদর্শনীতে। তাদের ৫ জন ওমানের, ১ জন আরব আমিরাতের আর ১ জন বাংলাদেশের। প্রতিটি ব্রিডের ১টি ফিমেল ও ১টি মেল কবুতরকে চ্যাম্পিয়ন ঘোষণা করা হয়েছে। ওমানের ড. ইসা আলবালুশি ছিলেন প্রধান বিচারক। তিনি গালফ কলেজ অব ওমানের অর্থনীতির অধ্যাপক। ওমান থেকে আরো ছিলেন রুদাইন আল মুসাফির, স্কুল শিক্ষক ইয়াকুব আলশামসি, এয়ার ওমানের কর্মী মুসা আওলাদ আহমেদ এবং নাজিম আলমুসালামি। আরব আমিরাত থেকে এসেছিলেন বাদের আলনোখিদা আর বাংলাদেশ থেকে ছিলেন সাব্বির হোসাইন। 

বিচারকরা কাজ শুরুর আগে একটি কালো রঙের হাতাকাটা জ্যাকেট পরে নিলেন যার পিছনদিকে বিচারকের নাম লেখা। সামনে অনেকগুলো স্টিকার। বিচারক আগে যেসব কবুতর প্রদর্শনীতে অংশ নিয়েছেন ও স্বীকৃতি পেয়েছেন সেগুলোর লোগো আছে ওইসব স্টিকারে। যেমন মুসা আওলাদ আহমেদ উপসাগরীয় দেশ সৌদি আরব, আরব আমিরাত, বাহরাইনের কবুতর প্রদর্শনীতে অংশ নিয়েছেন। তিনি বলছিলেন, 'ছোটবেলা থেকেই কবুতরের সঙ্গে বেড়ে উঠেছি। বাড়ি থাকলে আমার দিন শুরু হয় কবুতরের সঙ্গে। বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ব্রিডের কবুতর ছিল, এখন ১১-১২টি ব্রিডের কবুতর আছে। আমার তিন সন্তানের সবাই কবুতর পছন্দ করে।'

ছবি-মুমিত এম/টিবিএস

গায়ে জ্যাকেট গলিয়ে বিচারকরা সার ধরে থাকা খাঁচাগুলোর কাছে এগিয়ে গেলেন। কোনো কোনো খাঁচায় আঙুল দিয়ে টোকা দিলেন, দেখলেন কবুতরগুলোর প্রতিক্রিয়া। একেকজন বিচারক একেক সারির দিকে গেলেন। প্রতিজনের সঙ্গে প্লাস্টিকের ঝুড়ি হাতে দু'জন করে ভলান্টিয়ার। একটা ব্রিডের সবগুলো পাখি দেখতে কারো লাগল আধঘণ্টা, কারো ৪৫-৫০ মিনিট। তারমধ্যেই শর্টলিস্ট করা হয়ে গেল। ভলান্টিয়াররা শর্ট লিস্টেড কবুতরগুলো ঝুড়িতে করে মঞ্চের কাছে এগিয়ে গেলেন। সেখানে মাঝখানে দূরত্ব রেখে চারটা আলাদা আলাদা টেবিল রাখা হয়েছে আর টেবিলগুলোর ওপর আধ ডজন খাঁচা। প্রতিটি টেবিলের সামনে অনেকগুলো চেয়ার।  শর্ট লিস্টেড পাখিগুলোকে সেসব খাঁচায় রাখা হলো। নাজিম আল মুসালামি বিচারকাজ শুরু করলেন। ব্রিডার ছাড়াও, দর্শকরা চেয়ারে এসে বসেছেন। নাজিম ইংরেজি বলেন ভাঙ্গা ভাঙ্গা তবে পরিষ্কার। নাজিম বিচার শুরু করলেন পমেরানিয়ান পটারের। ৮টি পাখি শর্টলিস্টেড হয়েছে। এর মধ্যে মেল ও ফিমেল দুটিই আছে। বললেন, পমেরানিয়া বলে জার্মানিতে এক জায়গা আছে যেখানে দুই বা তিনশ বছর আগে এই পাখিটির জন্ম। এর পালক নরম হয়, পা হয় লম্বা। এটি চেনার সহজ উপায় এর ঊর্ধাঙ্গের গোলাকার বৃত্ত বা বল দেখে। পাখিটি বিচার করার সময় বেশি খেয়াল রাখা হয় এর বডি ব্যালান্স বা ভারসাম্যের ওপর। যদি বল বেশি বড় হয়ে যায় যা নিম্নাঙ্গের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়, তবে সেটিকে ডিজকোয়ালিফাইড করা হয়, আবার যদি শরীরের গড়ন অনুযায়ী বলটি ছোট হয় তবেও ডিজকোয়ালিফাইড। এছাড়া যদি এর মোজা ভাঙ্গা থাকে তবেও নম্বর কম পায়। পাখিটি সুস্থ, সবল ও চঞ্চল থাকার ওপর নম্বর বাড়ে। আধাঘণ্টারও বেশি সময় ধরে তিনি পাখিগুলোর সৌন্দর্য বিচার করলেন এবং নানান বৈশিষ্ট্যের বিবরণ দিলেন। শেষে দুটি পাখি রাখলেন যারা গ্র্যান্ড ফাইনালিস্ট, দুটি পাখিকেই চ্যাম্পিয়ন ঘোষণা করা হলো কারণ এর একটি মেল অন্যটি ফিমেল।

ছবি-মুমিত এম/টিবিএস

কিছুক্ষণ পর জানা গেল, পাখি দুটিরই মালিক একজন, নাম নাজির সরকার। তিনি আদতে গার্মেন্টস এক্সেসরিজের ব্যবসা করেন। শখের বশে কবুতর পোষেন। বললেন, 'পমেরিয়ান পোষা এবং এর সৌন্দর্য তৈরি করা কঠিন কাজ কারণ এটি তুলতুলে পাখি। পালক দিয়ে এর পুরোটা ঢাকা। খুব ছোট্ট এর ঠোঁট, মাথাটাও বলতে গেলে দেখা যায় না। আমি ভেবেছিলাম, মেহনত করব তো সবচেয়ে কঠিনটার ওপরেই করব। আজকে তার পুরস্কার পেলাম।'

পাশের মজমায় ড. ইসা বিউটি হোমার বিচার করছিলেন। পাখিটার ঘাড় বেশ লম্বা তবে সরু এবং মাথা আধা গোল। এর ঠোঁট খুব শক্ত। ইসা বলছিলেন, 'পাখিটার শরীর হলো নৌকার মতো, শক্তিশালী এই পাখি হতে হয় চর্বিবিহীন, ছিপছিপে। এটাকে বলা যায় সার্কাস পাখি। এই পাখিটা এমন হবে যেন একটা রিংয়ের ভিতর দিয়ে সহজেই যাওয়া-আসা করতে পারে। পাখিটার দুই ঠোঁট যেখানে বিভাজিত ঠিক তার সমান্তরালে থাকবে চোখ।'

ছবি-মুমিত এম/টিবিএস

হাতে একটি পাখি ততক্ষণে তুলে নিয়েছেন ইসা। উপস্থিত সকলকে দেখালেন এর দুই ঠোঁটের মাঝখানে ফাঁকা জায়গা আছে, বললেন, এই ফাঁকটি পাখিটার ডিমেরিট। তারপর জ্যাকেটের পকেট থেকে একটি ধাতব পাত বের করে ঠোঁটের একটা জায়গা ঘষে দিয়ে ফাঁক পূরণ করলেন। সামনের শ্রোতাদের উদ্দেশে বললেন, 'সুন্দর বলেই পাখিটা মূল্যবান, সৌন্দর্যে কোথাও ফাঁক রাখলে তবে আর পোষা কেন? আমরা পাখিগুলো বিচার করছি আমেরিকান স্ট্যান্ডার্ডে আর আমেরিকানরা এটা ধার করেছে জার্মানদের কাছ থেকে। বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে কবুতর নিয়ে যে ভালোবাসা দেখছি তা আমাকে আনন্দিত করেছে। আমি এখানে বারবার আসতে চাই। আশা করি আগামীবারের শোয়ে আরো সুন্দর সুন্দর কবুতর দেখতে পাব।'

ইসা কবুতর নিয়ে পৃথিবীর অনেক দেশে গেছেন। ৪০-৫০ জাতের কবুতর ছিল তার সংগ্রহে। তবে তিনি সংগ্রহ ধরে রাখেন না বরং আগ্রহীদের মধ্যে বিলি করে দেন। তিনি বলছিলেন, 'পাখি যারা পোষে তারা মানুষ হিসাবে ভালো হয়। পাখি তাদেরকে বাজে অভ্যাস থেকে দূরে রাখে। একটা কবুতরকে সুন্দর করতে এবং এর সৌন্দর্য ধরে রাখতে আপনাকে অনেক যত্ন নিতে হবে। এর ফলে পিতা-মাতা, ভাই-বোনের প্রতিও আপনি যত্নবান হবেন ধরে নেওয়া যায়। আপনার মধ্যে মায়া ও মমতাবোধ তৈরি হবে। আমি সময় ব্যয় করে এখানে এসেছি কারণ আমি নলেজ শেয়ার করতে চাই। এখনকার নতুন ছেলেমেয়েরা মোবাইল-ট্যাবে আসক্ত হয়ে পড়ছে, এই আসক্তি থেকে বাঁচতে পাখি পোষা একটি দারুণ বিকল্প হতে পারে।' 

ছবি-মুমিত এম/টিবিএস

ফোকাস তৈরি হচ্ছে

কিশোরগঞ্জের খামারি ইমন পরিচিত 'ড্যানিশ ইমন' নামে কারণ ড্যানিশ টাম্বলারে তার নাম সারা দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। বাবার কাছ থেকে ইমন পাখিপ্রেম পেয়েছে। নির্দিষ্ট কোনো কবুতরের ওপর ফোকাস তৈরির ব্যাপারটি অবশ্য ইমনের মাথাতেই প্রথম আসে। এর কারণ পাখিটার সর্বোচ্চ কোয়ালিটি অর্জন করার আকাঙক্ষা। অনেক কয়টি ব্রিডের ওপর আগ্রহ রাখলে সব সময় ঠিক ফলাফল একটাতেও পাওয়া সম্ভব হয় না। তাই ইমন ড্যানিশ টাম্বলারের ওপরই মেহনত করে চলেছে আর তার ফলও পাচ্ছে।

ঢাকার পুরানা পল্টনের নিলয় চৌধুরীও পরিচিত 'কিং অব আমেরিকান সেইন্ট' নামে। তিনি নতুন ব্রিড তৈরি করার ব্যাপারেও সাহসী হয়েছেন। তিনি জানাচ্ছিলেন, পাখিগুলোর বড় শত্রু হলো কৃমি আর চর্বি। যে পাখি কৃমির আক্রমণে পড়েছে তার পক্ষে বাচ্চা দেওয়া কঠিন। তবে পাখিকে ওড়ার জায়গা দিলে চর্বি কাটানো সহজ।

ছবি-মুমিত এম/টিবিএস

মুশাররফ পারভেজ ২০১৯ সালে সৌখিন কবুতরের প্রতি আগ্রহী হয়ে ওঠেন। তার বাড়ি নওগাঁ।

ধামইরহাটে আমেরিকান কিং নামের কবুতরটি দেখে তিনি কৌতূহলী হন কারণ কবুতর যে এমন হয় সেটি তার জানা ছিল না। পরে একজোড়া বেবি কিনে নেন। করোনায় লকডাউনের সময় কবুতর পরিচর্যা করেই সময় কাটিয়েছেন বেশি আর অভিজ্ঞও হয়ে উঠেছেন। এবারের প্রদর্শনীতে তিনি অংশ নেননি কারণ প্রস্তুত হতে তার আরো কিছু সময় দরকার।

ছবি-মুমিত এম/টিবিএস

মাগুরার মুজাহিদ অর্ক বিএ পরীক্ষা দেবেন বলে প্রস্তুত হচ্ছেন। অর্কর ছোট্ট একটা খামার আছে মাগুরায়। ৬ পেয়ার কবুতর আছে সেখানে। অর্ক জানালেন, তার এক প্রতিবেশি শুধু ফ্যান্সি কবুতর বিক্রি করে মাসে ২ লাখ টাকা রোজগার করে। তারও ইচ্ছে আছে একজন সফল খামারি হওয়ার।

তানভীর হাসান বললেন

ছবি-মুমিত এম/টিবিএস

ন্যাশনাল পিজিয়ন অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক কোরেশী মো. তানভীর হাসানের কবুতরের সঙ্গে সখ্যতা গড়ে ওঠে শৈশবেই। তার খামারে কবুতর ছাড়াও ফ্যান্সি মুরগী এবং আরো সব পাখি আছে। তার কাছ থেকে জানা গেল, মোটা দাগে কবুতর চার রকমের হয়- হাইফ্লাইয়ার, রেসার, রোলার এবং ফেন্সি। ফেন্সি হলো অর্নামেন্টাল কবুতর যার আদর সৌন্দর্যের জন্য। পৃথিবীতে যে এখন চারশর বেশি জাতের কবুতর আছে তা বেসিক কয়েকটি জাত থেকে উদ্ভুত। আমাদের এখানে সহজলভ্য যে জালালী কবুতর তা একটি বেসিক জাত। তারপর দিনে দিনে বিভিন্ন জাতের মিশ্রণ ঘটিয়ে রঙ-বেরঙের কবুতর যেমন তৈরি করা হয়েছে, নতুন নতুন জাতেরও দেখা মিলেছে। একটি নতুন জাতের কবুতর পেতে গড়ে ১২ বছর সময় লাগে। আমাদের এখানে ব্যাপকভাবে ফেন্সি কবুতর পোষার প্রচলন ঘটেছে ৩-৪ দশক ধরে। নতুন জাতের উদ্ভাবনে আমরা এখনো পারদর্শী হইনি, আমদানি করা পাখির বাচ্চা ফুটিয়ে আমরা সংখ্যা বাড়াই। তবে এটিও সহজ কাজ নয় কারণ এর জন্য অনেক ধৈর্য্য আর যত্ন লাগে।

তানভীর হাসান প্রথম লক্ষা জাতের ফেন্সি কবুতর কিনেছিলেন '৯৩ সালে। তারপর তিনি '৯৮ সাল থেকে ৭-৮ বছর বিদেশে ছিলেন, ফিরে আসার পর আবার খামার সাজাতে শুরু করেন। এখন তার কাছে ৫০ জাতের কবুতর আছে।

ছবি-মুমিত এম/টিবিএস

তিনি বলছিলেন, '২০০৫ সালে সারাদেশে খামারি ছিল ২৫০-৩০০। এখন খামারির সংখ্যা হবে ২০ হাজার। প্রতি জেলা এমনকি উপজেলাতেও সৌখিন খামারিদের সমিতি আছে। প্রদর্শনীর আগে প্রচারণার নিমিত্তে আমরা বেশ কিছু জেলায় সফর করেছি। কবুতরের হাটগুলোতে লিফলেট বিলি করেছি। জার্মানি, নেদারল্যান্ড, যুক্তরাষ্ট্র ফেন্সি কবুতর বাজারের অনেকটাই নিয়ন্ত্রণ করে। অথচ তাদের চেয়ে আমাদের সুবিধা বেশি। ওগুলো শীতপ্রধান দেশ হওয়ায় ব্রিডিং টাইম পায় মাত্র ৪ মাস, আমরা এখানে ব্রিডিং টাইম পাই ৮ মাস। কিন্তু আমাদের অসুবিধা অন্যত্র। ব্রিটিশ আমলে করা আইনে আমরা ফেঁসে গেছি। পোষা কবুতরও আমাদের এখানে বন্যপ্রাণী হিসাবে গণ্য হয়। আমরা বেশ কিছু কাল ধরে আবেদন জানিয়ে আসছি, পাখিটাকে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ে আওতায় আনার জন্য। তখন একে আমরা রপ্তানি করতে পারব। ফেন্সি কবুতরের চাহিদা আছে পুরো ভারতজুড়ে এবং মধ্যপ্রাচ্যের অনেক দেশে।'

ছবি-মুমিত এম/টিবিএস

তিনি আরো বললেন, 'পোলট্রি খামার করার চেয়েও কবুতরের খামার করা অনেক বেশি সুবিধাজনক, বড় কারণ এতে জায়গা লাগে কম। মার্কেট ব্রিড (যেগুলোর চাহিদা বেশি) ও ভালো কোয়ালিটির এক পেয়ার বেবির দাম ২০ হাজার টাকাও হয়। কোনো কোনো  এক পেয়ার অ্যাডাল্ট ফেন্সি কবুতর বিক্রি হয় পাঁচ লাখ টাকায়ও। কাজেই এ দিয়ে কর্মসংস্থানের ভালো সুযোগ আছে। এখন প্রয়োজন সরকারের সদয় বিবেচনা।' 

Related Topics

টপ নিউজ

কবুতর / কবুতর পালন / কবুতরের রেস / কবুতরের হাট / কবুতর প্রতিযোগিতা

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.

MOST VIEWED

  • চীনের কাছ থেকে এবার স্টেলথ ফাইটার পাচ্ছে পাকিস্তান
  • পৃথিবীর ইতিহাসের সবচেয়ে বড় বন্যার ফলে যেভাবে সৃষ্টি হয়েছিল ভূমধ্যসাগর
  • নির্বাচন আয়োজনের জন্য আগামী ঈদুল ফিতরের পর এক মাস সময় যথেষ্ট: বদিউল আলম মজুমদার
  • অনিরাময়যোগ্য রোগী যারা, কেমন কাটবে তাদের ঈদ
  • কোভিড-১৯: আবারও জনসমাগমপূর্ণ এলাকায় মাস্ক পরার পরামর্শ
  • কসাই নিয়ে কাড়াকাড়ি!

Related News

  • স্তন্যপায়ীরা পায়ুপথে শ্বাস নিতে পারে প্রমাণ করে ইগ নোবেল পেল যে দল 
  • তিমি, মরা ইঁদুর, বিড়াল নাকি কবুতর: গুপ্তচর হিসেবে সেরা কোন প্রাণী?
  • ডোঙায় যাতায়াত, ডোঙায় মাছ ধরা, সপ্তাহে দুই দিন ডোঙা বেচাকেনা
  • আকবর বাদশারও ‘হাই ফ্লায়ার’ কবুতর ছিল, তবে তার সানগ্লাস-দুরবিন ছিল না!
  • কবুতর যখন গোয়েন্দা: প্রাচীন গ্রিস থেকে বাংলা

Most Read

1
আন্তর্জাতিক

চীনের কাছ থেকে এবার স্টেলথ ফাইটার পাচ্ছে পাকিস্তান

2
আন্তর্জাতিক

পৃথিবীর ইতিহাসের সবচেয়ে বড় বন্যার ফলে যেভাবে সৃষ্টি হয়েছিল ভূমধ্যসাগর

3
বাংলাদেশ

নির্বাচন আয়োজনের জন্য আগামী ঈদুল ফিতরের পর এক মাস সময় যথেষ্ট: বদিউল আলম মজুমদার

4
ফিচার

অনিরাময়যোগ্য রোগী যারা, কেমন কাটবে তাদের ঈদ

5
বাংলাদেশ

কোভিড-১৯: আবারও জনসমাগমপূর্ণ এলাকায় মাস্ক পরার পরামর্শ

6
ফিচার

কসাই নিয়ে কাড়াকাড়ি!

The Business Standard
Top

Contact Us

The Business Standard

Main Office -4/A, Eskaton Garden, Dhaka- 1000

Phone: +8801847 416158 - 59

Send Opinion articles to - oped.tbs@gmail.com

For advertisement- sales@tbsnews.net

Copyright © 2022 THE BUSINESS STANDARD All rights reserved. Technical Partner: RSI Lab