পড়ুয়ারা কেন ঝুঁকছেন অডিওবুকের দিকে? কিছু তরুণের হাত ধরে বাংলা অডিওবুক...
"মাসখানেক আগে আমার ক্যান্সার ধরা পড়েছে। ক্যান্সার সেন্টারে চার-পাঁচ ঘণ্টাব্যাপী ক্লান্তিকর আর দীর্ঘ একেকটা কেমোথেরাপির সেশনেও আমি তোমার অডিওবুক শুনি। বিশেষ করে হুমায়ূন আহমেদের হালকা রসের হিউমারাস বইগুলো আমাকে সেইসময় বেশ প্রফুল্ল রাখে। অনেক ধন্যবাদ তোমাকে! আমাদের জীবনের প্রতিদিনের সাথে তোমার অডিওবুক শোনা এখন একটা বিরাট অংশ জুড়ে থাকছে।"
'গল্পকথন বাই কল্লোল' নামের অডিওবুকভিত্তিক ইউটিউব চ্যানেলের ফেসবুক গ্রুপে নিজের অনুভূতি ব্যক্ত করে পোস্টটি লিখেছিলেন আমেরিকার টেক্সাসে বসবাসরত এক প্রবাসী বাঙালি। জীবনের নানান বাঁকে ব্যস্ততায় জর্জরিত হয়ে যারা বইয়ের প্রেম থেকে দূরে সরে যেতে বসেছিলেন তাদের জন্য অডিওবুক যেন প্রযুক্তির এক আর্শীবাদস্বরূপ। ট্রাফিক জ্যামের বিরক্তি দূর করতে, ঘরের কাজের ক্লান্তি সারাতে, নিদ্রাহীন রাতের সঙ্গী হতে যেকোনো বয়সী মানুষ এখন বেছে নিচ্ছেন অডিওবুককে। এমনকি কথা বলতে শেখার আগেই বাচ্চাদের পরিচয় করিয়ে দেওয়া হচ্ছে অডিওবুকের সঙ্গে। ভিনদেশী কার্টুন দেখা বা গেমিং এর মাধ্যমে মোবাইল আসক্ত হওয়ার পরিবর্তে সন্তানকে ছোটবেলা থেকেই সাহিত্য অনুরাগী করে গড়ে তুলতে অডিওবুককে বেছে নিচ্ছেন অনেক অভিভাবকেরা।
অডিওবুকের শুরু
১৯৩২ সালে দ্য আমেরিকান ফাউন্ডেশন ফর দ্য ব্লাইন্ড-এর রেকর্ড করা প্রথম অডিওবুকটি বের করা হয়েছিল দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের পড়াশোনায় সাহায্যের জন্য। তখন হয়তো অডিওবুকের এই বিষদ ব্যাপ্তির কথা মাথায় আসেনি কারো। সেসময় অডিওবুককে ডাকা হতো 'টকিং বুক' নামে।
ষাটের দশকে ক্যাসেট টেপ আবিষ্কার হওয়ার পর থেকে বইয়ের রেকর্ডিং বাড়তে থাকে। নব্বইয়ের দশকে এর নামকরণ করা হয় 'অডিওবুক'। এই সময় বইয়ের রেকর্ডিং সাধারণ মানুষের সুবিধাজনক মাধ্যমে ডাউনলোড করার সুযোগ চালু হয়। আমেরিকান অডিওবুক ও পডকাস্ট সার্ভিস 'অডিবল' ১৯৯৭ সালে ডিজিটাল অডিও প্লেয়ার বাজারজাত করে। পাশাপাশি তাদের অনলাইন ওয়েবসাইট থেকেও ডিজিটাল অডিওবুক কেনার সুবিধা চালু করে। অনলাইনে অডিওবুক রেকর্ডিং কেনা জনপ্রিয় হয়ে উঠলে ২০০৮ সালে অডিবল-কে কিনে নেয় আমাজন। এরপরের বছরগুলোতে বিস্ফোরণ ঘটেছে অডিওবুকের চাহিদার।
অডিওবুক পাবলিশার্স এসোসিয়েশনের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রে অডিওবুকের বিক্রি ছিল ২.১ বিলিয়ন ডলার, অন্যদিকে কাগজের বইয়ের বিক্রি ছিল ১.৮ বিলিয়ন ডলার। ফলে কাগজের বইয়ের পাশাপাশি লেখকেরা নিজেদের বইয়ের অডিও সংস্করণ প্রকাশ করতেও বেশ আগ্রহী হয়ে ওঠেন। করোনাকালীন অডিওবুকের শ্রোতা বেড়েছে উল্লেখযোগ্যহারে। আমাজনে নিজেদের অডিওবুক বিক্রি করে আয়ের সংস্থানও হচ্ছে অনেকের। বইপ্রেমীদের কাছে এখন নিত্যপ্রয়োজনীয় হয়ে উঠছে শ্রবণযোগ্য সাহিত্যের এই উৎস।
বইয়ের প্রতি ভালোবাসা থেকেই উদ্যোগ
বাংলাদেশি বইপ্রেমীদের এক জনপ্রিয় ফেসবুক গ্রুপে জানতে চেয়েছিলাম তাদের পছন্দের অডিওবুক চ্যানেলের নাম। পোস্টের সবগুলো উত্তরেই একটা ইউটিউব চ্যানেলের নাম ছিল সাধারণ। 'গল্পকথন বাই কল্লোল'। শুধু বাংলাদেশের বইপ্রেমীদের মধ্যেই নয়, বিশ্বের আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে থাকা অসংখ্য বাংলা ভাষাভাষী বইপোকাদের পছন্দের চ্যানেল এটি। ইউটিউবে চ্যানেলটির সাবস্ক্রাইবার সংখ্যা প্রায় দেড় লাখ।
চ্যানেলটির কথক রায়হানুল আমিন কল্লোল পড়াশোনার জন্য বাস করছেন ফিনল্যান্ডে। ছোটবেলা থেকেই বইয়ের প্রতি ভালোবাসা ছিল কল্লোলের। পাঠ্যবইয়ের পাশাপাশি পড়তেন প্রচুর সাহিত্যের বই। অনলাইনে অডিওবুক খুঁজতে গিয়ে বাংলা কন্টেন্টের অপ্রতুলতা দেখে নিজেই আগ্রহী হয়ে ওঠেন গল্পকথক হওয়ায়। কল্লোলের ভাষ্যে, "অনলাইনে আমার পছন্দের বাংলা বইগুলোর অডিও কোথাও খুঁজে পাচ্ছিলাম না। ভারতীয় রেডিও মির্চির 'সানডে সাসপেন্স' তখন বেশ জনপ্রিয় ছিল দুই বাংলার মানুষের কাছেই। কিন্তু আমার নিজস্ব পছন্দের সাথে সেই স্টাইলটা আসলে যাচ্ছিল না। আমি বইকে বইয়ের মতোই পড়তে ও শুনতে পছন্দ করি। কিন্তু সানডে সাসপেন্সে অতিরিক্ত সাউন্ড ইফেক্ট, সাউন্ড এক্সেসরিজ ব্যবহারের কারণে অনেকটাই অডিও ড্রামার মতো মনে হয় সেগুলোকে। সেজন্যই আমি চেষ্টা করেছিলাম নিজের জন্যই একটা কিছু করতে।"
নিজের জন্য নিজের পছন্দের বই পড়তে গিয়েই কল্লোল জনপ্রিয়তা পান তার মতো আরো অনেক বইপ্রেমীর কাছে। ২০১৮ সালে ইউটিউব চ্যানেলে প্রথম অডিওবুক আপলোড করেন তিনি। শ্রোতাদের উৎসাহ পেয়ে নিত্যদিনের কাজের ফাঁকে ফাঁকে পছন্দের বইগুলো নিয়মিতই রেকর্ড করতে থাকেন কল্লোল।
কাদের জন্য মূলত ইউটিউবের এই অডিওবুকগুলো- এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, "আজকাল আমরা সবাই এত ব্যস্ত যে পারলে আমাদের একাডেমিক বইগুলোও গুগল রিড দিয়ে রাস্তায় চলার পথে শুনে ফেলছি। যাদের বই পড়ার অভ্যাস ছিল কিন্তু দৈনন্দিন ব্যস্ততায় সময় পাচ্ছেন না, অডিওবুকের জন্য তাদের ডিমান্ডটা সবচেয়ে বেশি। এছাড়াও যারা দেশের বাইরে থাকছেন, যাদের কাছে বাংলা বইগুলো জোগাড় করা কষ্টসাধ্য, তারাও অডিওবুকের প্রতি ঝুঁকছেন। আমার শ্রোতাদের মধ্যে ৬০ শতাংশের বেশি বাংলাদেশের বাইরের মানুষ। শ্রোতাদের আরেকটা অংশ নানান শারীরিক প্রতিন্ধকতার শিকার ব্যক্তি। অনেকেই বয়স বেড়ে যাওয়ায় বই পড়তে সমস্যা হওয়ার কারণেও অডিওবুককে বেছে নিয়েছেন।"
জনপ্রিয়তা পায় রহস্য
বাংলা অডিওবুকের জন্য দেশের আরেক জনপ্রিয় চ্যানেল 'অডিও বুক বাংলা বাই ফাহিম'। ক্লাস নাইনে পড়ার সময়ই থ্রিলার বইয়ের প্রতি ভালোবাসা থেকে ইউটিউব চ্যানেলটি শুরু করেন ফাহিম নোমান। বর্তমানে একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে অনার্স প্রথম বর্ষে পড়ছেন তিনি। ফাহিমের ভাষ্যে, "ছোটবেলা থেকেই অনেক বেশি বই পড়তাম আমি। থ্রিলার জনরাঁর প্রতি আকর্ষণ থাকায় ইচ্ছা ছিল ড্যান ব্রাউন, আগাথা ক্রিস্টির মতো লেখকদের সব বই পড়ে ফেলার। স্কুলে পড়ার সময় বই কেনার মতো খুব বেশি টাকা থাকত না হাতে। আমি তখন ইউটিউবে সেই বইগুলোর অডিওবুক খুঁজতাম। ইংরেজি বইগুলোর অডিও এভেইলেবল ছিল, কিন্তু বাংলা অনুবাদগুলো ছিল না। আমি যেহেতু বাংলা মিডিয়াম ব্যাকগ্রাউন্ডের ছাত্র ছিলাম, তাই ইংরেজিতে খুব একটা দখল ছিল না। নিজের পড়ার জন্যই আমি বাংলায় থ্রিলার বইয়ের অডিও খুঁজতে শুরু করলাম। সেসময় বাংলাদেশি অন্যান্য বইগুলোর অডিও-ও পাওয়া যেত না। ভারতীয় বাংলা বইগুলো কিছু ইউটিউব চ্যানেলে পাওয়া যেত। তাই নিজেই ভাবলাম কিছু একটা করা যায় কি না। স্কুলে থাকতে আমার নিজের মোবাইলও ছিল না। শুক্রবারে যখন বাবা বাসায় থাকত, তখন তার ফোন দিয়ে পছন্দের বইগুলো রেকর্ড করা শুরু করি।"
অডিও বুক বাংলা বাই ফাহিম ইউটিউব চ্যানেলের বর্তমান সাবস্ক্রাইবার সংখ্যা প্রায় ৪০ হাজার। রহস্য গল্পের প্রতি নিজস্ব পছন্দের বাইরেও ফাহিম জানান শ্রোতাদের গ্রহণযোগ্যতার কথা। হুমায়ূন আহমেদের মিসির আলী সিরিজের বই তার চ্যানেলের পরিচিতি বাড়াতে সাহায্য করেছিল শুরুতেই। শার্লক হোমস, ব্যোমকেশ বক্সীর মত দেশ-বিদেশের নানান থ্রিলার গল্প-উপন্যাসের বইগুলোই বেশি পছন্দ করেন তার চ্যানেলের শ্রোতারা। তবে সবধরণের শ্রোতার কথা মাথায় রেখে নানান জনরাঁর বই পড়ে শোনান ফাহিম।
বই পড়ে গেলেই কাজ শেষ নয়
বাংলা গল্প-উপন্যাস শোনার জন্য দুই বাংলাতেই সমান জনপ্রিয় ইউটিউব চ্যানেল 'গল্পের সুর' আর 'গল্পের বাক্স বাই রোমানা নূপুর'। কাজের ফাঁকে ফাঁকে শখের বসেই অডিওবুক রেকর্ড করা শুরু করেছিলেন রোমানা নূপুর। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে ছায়ানটের আবৃত্তি কর্মশালার সাথে যুক্ত ছিলেন তিনি। কবিতা আবৃত্তি করতে গিয়ে শুদ্ধ উচ্চারণের চর্চা ছিল আগে থেকেই। অডিওবুক রেকর্ডিং-এ সেটিই সবচেয়ে কাজে লেগেছে বলে জানান তিনি।
রোমানার ভাষ্যে, "নিজে পড়তে গেলে যেমন বইয়ের সব দৃশ্য কল্পনায় আনতে পারেন পাঠক, শুনেও যেন শ্রোতারা সেই অনুভূতিটা পান সেদিকে খেয়াল রাখতে হয় আমাকে। সংলাপের আবেগটুকুকে ঠিকভাবে উপস্থাপন করতে হয়। পরিস্থিতি অনুযায়ী বদলাতে হয় স্বরের ওঠানামা। উচ্চারণ ঠিক না থাকলে সব প্রচেষ্টাই ব্যর্থ হয়। অনেক সময় শ্রোতারাও সঠিক উচ্চারণ সাজেস্ট করেন আমাকে। প্রতিনয়তই শেখার চেষ্টা করি আমি।"
অডিও রেকর্ডের পর নজর দিতে হয় সাউন্ড এডিটিং এর প্রতি। অনাকাঙ্ক্ষিত কোনো নয়েজ থাকলে তা বাদ দিতে হয়, প্রয়োজন অনুসারে ব্যবহার করতে হয় সাউন্ড ইফেক্ট। অডিওবুকের কভারটি বেশ গুরুত্বপূর্ণ বলে জানান তিনজন গল্পকথকই। গল্পের আমেজ অনুযায়ী যথাযথ কভার বানাতে হয়। অডিওবুকের কভার মানসম্মত না হলে বইটি শুনে দেখার আগ্রহ হারান অনেক শ্রোতাই।
ইউটিউব চ্যানেলে আপলোড করা এসব অডিওবুক থেকে আয় কীভাবে হয় জিজ্ঞেস করলে কল্লোল জানান, ভিডিওগুলোর রেগুলার ভিউ, অ্যাড সংখ্যা ইত্যাদির উপর নির্ভর করে আয় হয়। আগে থেকেই কোন ভিডিওতে কেমন আয় হবে তা নির্দিষ্ট করে বলা যায় না। সংশ্লিষ্ট সূত্র থেকে জানা যায়, ২০-২৫ হাজার সাবস্ক্রাইবার সমৃদ্ধ মোটামুটি পরিচিত কোনো চ্যানেলে নিয়মিত অডিওবুক আপলোড করা হলে মাসে ৩০-৫০ হাজার টাকা বা কোনো কোনো ক্ষেত্রে আরো অনেক বেশি আয় করা সম্ভব। গল্পকথকের দক্ষতা ও বই নির্বাচনের উপর অনেকটাই নির্ভর করে এই আয়।
কপিরাইটের লঙ্ঘন
দিনদিন অডিওবুকের প্রতি বইপ্রেমীদের আগ্রহ বাড়তে থাকলেও দেশীয় ইউটিউব চ্যানেলের অনেক অডিওবুক প্রচারেই মানা হচ্ছে না কপিরাইট আইন। বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন করা হলে নির্দ্বিধায় স্বীকার করে তিনজন গল্পকথকই। তারা জানান, তাদের পাঠ করা বেশীরভাগ বই-ই পাবলিক ডোমেইনে থাকা, যেগুলোর কপিরাইট মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়েছে। কিন্তু হুমায়ূন আহমেদের বইয়ের ক্ষেত্রে কপিরাইট থাকলেও লেখকের উত্তরাধিকার সংক্রান্ত জটিলতা থাকায় অডিওবুক করার অনুমতি নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। শ্রোতাদের তুমুল চাহিদা থাকার কারণে আইন লঙ্ঘন করেই বইগুলো অডিওবুক হিসেবে প্রকাশ করা হয়েছে। তবে রায়হানুল আমিন কল্লোল বলেন, "এবছর থেকে শুধু পাবলিক ডোমেইনে থাকা বইগুলোই অডিওবুক হিসেবে প্রকাশ করতে চাই আমি।"
কপিরাইটের আওতায় অন্যান্য বই অডিওবুক হিসেবে প্রকাশ করার আগে লেখকের অনুমতি নিয়েই তা রেকর্ড করেন বলে জানান ফাহিম। অডিওবুকের সাহায্যে নতুন মাধ্যমে বইয়ের প্রচার হচ্ছে বলে বেশিরভাগ সময়ই লেখক ও প্রকাশকরা উৎসাহ দিয়ে থাকেন। তবে শ্রোতাদের চাহিদা থাকলেও কখনো সদ্য প্রকাশিত বইয়ের অডিওবুক প্রকাশ করেন না তারা।
বর্তমানে বই বিমুখ হয়ে যেতে থাকা প্রজন্মের কথা চিন্তা করে কোনো কোনো লেখক নিজেরাই তাদের বই অডিওবুক হিসেবে প্রকাশ করতে অনুরোধ করেন কথকদের। নতুন লেখকদের প্রচারণার জন্য অডিওবুক বেশ কার্যকর মাধ্যম বলে জানান কল্লোল।
কী বলছেন শ্রোতারা
শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী জাইবুন্নিসা জুহির প্রিয় লেখক হুমায়ূন আহমেদ। স্কুলে পড়ার সময়ই লেখকের সব বই পড়া শেষ তার। তবুও মন খারাপ হলে এখনো হুমায়ূন আহমেদের বইয়ের চেয়ে ভালো কোনো সঙ্গী খুঁজে পান না। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের হলের রুমে তার পছন্দের সব বই সংগ্রহে রাখার সুযোগ নেই। তাই মন খারাপের সময়ে এখন অডিওবুকই ভরসা জুহির। তিনি বলেন, "বছরখানেক হলো অডিওবুক শোনা শুরু করেছি। পছন্দের বইগুলোর অডিও ভার্সন এখন সহজেই খুঁজে পাওয়া যায় ইউটিউবে। রাতে ঘুম না আসলে বা তীব্র মন খারাপে আমার ঔষুধের মতো কাজ করে এই অডিওবুকগুলো।"
পুরান ঢাকার ব্যবসায়ী ইমরান আহমেদ কাজের ফাঁকে পছন্দ করেন অনুপ্রেরণামূলক বই শুনতে। তার ভাষ্যে, "ব্যস্ততার কারণে ছাপা বই পড়ার সুযোগ মেলে না একদমই। অডিওবুক আমার মতো মানুষদের জন্য খুবই কাজের। ব্যাংকের লাইনে দাঁড়িয়ে বা তীব্র জ্যামে বসে পছন্দের অডিওবুক শুনতে শুনতে সহজেই সময় কেটে যায় আমার।"
অডিওবুকের উপকারিতা
অডিওবুকের ধারণাটি বাংলাদেশে খুব বেশি পুরোনো না হলেও বিশ্বজুড়ে ইতোমধ্যেই বেশ সমাদৃত হচ্ছে। বইপ্রেমীরা ভবিষ্যতে পাঠক থাকবেন নাকি শ্রোতা হতেই বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করবেন তা নিয়েও চলছে বিস্তর আলোচনা। সময় ও শ্রম সাশ্রয়ী হওয়ার পাশাপাশি অডিওবুকের রয়েছে আরো বেশ কিছু উপকারিতা-
- চোখের উপর চাপ কমায় অডিওবুক। দীর্ঘক্ষণ বইয়ের পাতায় বা ইলেকট্রনিক স্ক্রিনে তাকিয়ে থাকার ক্লান্তি থেকে মুক্তি দেয় এটি।
- নিদ্রাহীনতা দূর করতে সাহায্য করে। রাতে যাদের ঘুমাতে সমস্যা হয় অডিওবুক তাদের জন্য বেশ উপকারী।
- সঠিক উচ্চারণ শিখতে সাহায্য করে। স্থানভেদে নানা বিশেষায়িত উচ্চারণও শেখা যায় অডিওবুক শুনে। পাশাপাশি ব্যক্তির শ্রবণ দক্ষতাও বাড়ায় অডিওবুক।
- মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতিতে সহায়তা করে। ভালো একটি অডিওবুক শুনতে মনোযোগী হলে খারাপ চিন্তা থেকে অনেকটাই দূরে থাকা যায়।
- সৃষ্টিশীল চিন্তার দক্ষতা বাড়ায় অডিওবুক। সাধারণ কাজের পাশাপাশি অডিওবুক শোনায় সৃজনশীল চিন্তা করার ক্ষমতা বাড়ে মনোযোগী শ্রোতার।
