Skip to main content
  • মূলপাতা
  • অর্থনীতি
  • বাংলাদেশ
  • আন্তর্জাতিক
  • খেলা
  • বিনোদন
  • ফিচার
  • ইজেল
  • মতামত
  • অফবিট
  • সারাদেশ
  • চাকরি
  • প্রবাস
  • English
The Business Standard বাংলা

Tuesday
June 03, 2025

Sign In
Subscribe
  • মূলপাতা
  • অর্থনীতি
  • বাংলাদেশ
  • আন্তর্জাতিক
  • খেলা
  • বিনোদন
  • ফিচার
  • ইজেল
  • মতামত
  • অফবিট
  • সারাদেশ
  • চাকরি
  • প্রবাস
  • English
TUESDAY, JUNE 03, 2025
ফিদেল কাস্ত্রো: এক জননেতা, তার সাক্ষাৎকার

ফিচার

ইগন্যাসিও র‍্যামোনেত
25 November, 2022, 12:25 pm
Last modified: 25 November, 2022, 12:47 pm

Related News

  • 'টাকা নেই': গ্রিড ব্যর্থতা এবং আর্থিক সংকটের মধ্যে কিউবা সম্পূর্ণ পতনের মুখে
  • দুইদিন ধরে পুরো বিদ্যুৎহীন কিউবা
  • রাশিয়ান নৌবহর হাভানায় ভেড়ার একদিন পর মার্কিন সাবমেরিন গুয়ানতানামো বেতে
  • মোটা অঙ্কের বেতন ও পাসপোর্টের আশায় রাশিয়ার হয়ে যুদ্ধ করছে কিউবানরা
  • ভিসার দরকার হয় না: পাখির অভিবাসন রহস্য উদ্ঘাটন করলেন কিউবার জীববিজ্ঞানীরা!

ফিদেল কাস্ত্রো: এক জননেতা, তার সাক্ষাৎকার

"মানুষ তাদের ভাগ্যের একশ ভাগ নিয়ন্ত্রক নয়। একজন মানুষ তার পারিপার্শ্বিক ঘটনাবলীর, কাঠিন্যের, সংগ্রামের ফসল। জীবনে উদ্ভূত নানা সমস্যা তাকে বিভিন্নভাবে গঠন করে, যেমনভাবে লেদমেশিনে ধাতুকে খোদাই করে নানা রূপ দেওয়া হয়। আমি বলতে পারি মানুষ জন্মমাত্রই বিপ্লবী নয়।"
ইগন্যাসিও র‍্যামোনেত
25 November, 2022, 12:25 pm
Last modified: 25 November, 2022, 12:47 pm

ঐতিহাসিক পটভূমি সবসময়ই ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ, সেই জন্য আমি আপনার কাছে প্রশ্ন রাখব- আপনার জন্ম তুলনামূলক ভাবে সচ্ছল পরিবারে, পড়েছেন ধনীদের জন্য নির্মিত গোঁড়া ধার্মিক স্কুলে, পরবর্তীতে আইনশাস্ত্র অধ্যয়ন করেছেন। এই সব মিলিয়েই আপনার পক্ষে একজন রক্ষণশীল নেতা হিসেবেই আবির্ভূত হবার কথা ছিল, তাই নয় কি?

হয়ত হতেও পারত, কিন্তু মানুষ তাদের ভাগ্যের একশ ভাগ নিয়ন্ত্রক নয়। একজন মানুষ তার পারিপার্শ্বিক ঘটনাবলীর, কাঠিন্যের, সংগ্রামের ফসল। জীবনে উদ্ভূত নানা সমস্যা তাকে বিভিন্নভাবে গঠন করে, যেমনভাবে লেদমেশিনে ধাতুকে খোদাই করে নানা রূপ দেওয়া হয়। আমি বলতে পারি মানুষ জন্মমাত্রই বিপ্লবী নয়।

তাহলে কিভাবে আপনার বিপ্লবের পথযাত্রা শুরু হল?

আমি নিজে নিজেই বিপ্লবীতে পরিণত করেছি। জীবনের নানা সময়ে বিভিন্ন ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে এগুলো হয়েছে। তবে সবকিছুর শুরু হয়েছে সেই গ্রাম্য এলাকাতে, যা আমার জন্মভূমি।

আপনার জন্মস্থান সম্বন্ধে কী মনে আছে?

আমার জন্ম হয়েছিল একটি খামারবাড়ীতে। ওরিয়েন্তে রাজ্যের উত্তরে, নিপে উপসাগরের কাছে, ইক্ষুর ফলনের জন্য বিখ্যাত মাকার্নের নিকটে। খামারটির নাম ছিল বিরান। এটি কোন শহর না, আসলে কোন গ্রামও নয়, কেবল বিচ্ছিন্নভাবে দাঁড়িয়ে থাকা গোটাকয়েক বাড়ী। আমার পরিবারের বাসভবন সেখানেই ছিল, বুড়ো ক্যামিনো নামের সেই ধুলাময় কর্দমাক্ত পথটির ধারে, যা কিনা রাজধানী থেকে শুরু হয়ে পৌরসভা ছুঁয়ে দক্ষিণে যাত্রা অব্যাহত রেখেছিল। সেই সময়ের রাস্তাগুলো আসলে ছিল স্রেফ বিশাল কাদাময় পথ। মানুষের চলাচলের বাহন ছিল ঘোড়া এবং গরুর গাড়ী। তখন যান্ত্রিক গাড়ীর, এমনকি বৈদ্যুতিক বাতির আবির্ভাবও ঘটেনি। আমার ছোটবেলায় মোমবাতি ও কেরোসিনের প্রদীপেই বাড়ী আলোকিত রাখা হত।

সেই বাড়ি নিয়ে কোন স্মৃতি মনে পড়ে কি? 

সেটি ছিল স্প্যানিশ রীতি অনুসারে নির্মিত, আরো বিস্তারিত বললে গালিসিয়ান স্টাইলে। আমার বাবা ছিলেন স্পেনের লোক, ল্যুগো রাজ্যের লাঙ্কারা গ্রাম থেকে উঠে আসা একজন গালিসিয়ান। গালিসিয়াতে সেই ধরনের বাসগৃহ নির্মাণের রীতি ছিল যার নিচে গবাদিপশুদের থাকার স্থান থাকে। আমাদের বাড়ীটি গালিসীয় রীতিমতো করা হয়েছিল কারণ এটি ছিল কাঠের পিলারের, স্তম্ভের উপর নির্মিত। তিন বা চার বছর বয়সের স্মৃতি হাতড়ে দেখেছি, বাড়ীটির নিচে গরুরা ঘুমাত। তারা গোধূলিবেলায় বাড়ী ফিরে আসত এবং সেই নির্দিষ্ট জায়গাতেই ঘুমাত। সেখানেই খুঁটার সাথে বেধে তাদের দুগ্ধদোহন পর্বও চলত। গালিসিয়ার অন্যান্য আর সব বাড়ীর মতই আমাদের বাসগৃহের নিচে বিশেষ স্থান বরাদ্দ ছিল শুয়োর এবং নানা জাতের গৃহপালিত পাখি পালার জন্য যেখানে থাকত হাঁস, মুরগি, তিতির, টার্কি এমনকি রাজহাঁসও।

বিরানে গিয়েছিলাম আমি, যে বাড়ীতে আপনার জন্ম সেটিও দেখেছি, সেটি আপনি যেমন বললেন তেমনি এক সাধারণ আটপৌরে স্থাপত্য।

সেটি ছিল কাঠের বাড়ী। পিলারগুলো খুবই মজবুত কাঠের, তাদের উপরে পাটাতন বিছিয়ে মেঝে তৈরি করা হয়েছিল। যতদূর মনে পড়ে বাড়ীটি ছিল বর্গাকৃতির। পরবর্তীতে কিছু অংশ বর্ধিত করে অফিস করা হয়েছিল। আরো পরে সেখানে স্নানাগার, খাদ্য সংরক্ষণের জায়গা, খাবার ঘর ও রান্না ঘর নির্মাণ করা হয়েছিল। আর বাড়ীর মূল বর্গাকৃতির কাঠামোর উপরে ছোট আকৃতির একটি দ্বিতীয়তলা ছিল যার নাম বলা হত মিরাদোর। এবং প্রচলিত কাহিনীমতে ১৯২৬ সালের ১৩ আগস্ট, ভোর ২টায় সেখানেই আমার জন্ম হয়।

চারপাশের থেকে গ্রামের গাছ, ইক্ষু ক্ষেত, পাখি আর পতঙ্গময় সেই পরিবেশের মাঝেই খুব ছোট্টকাল থেকে বেড়ে উঠেছি আমি।

বিরানে গেলেই যে জিনিসটা সবাই প্রায় সাথে সাথেই অনুভব করতে পারে তা আপনার বাবা ডন অ্যাঞ্জেলের দৃঢ় চরিত্রের কথা-

বাবা ছিলেন প্রবল ইচ্ছাশক্তি সম্পন্ন একজন পুরুষ। অনেক প্রচেষ্টার পর নিজে নিজেই পড়তে এবং লিখতে শিখেছিলেন। তিনি ছিলেন প্রচণ্ড ধরনের কর্মঠ ধরনের মানুষ যে কিনা সব সময় কিছু একটা নিয়ে ব্যস্ত থাকতেন, আসলে কোন কিছু সমন্বয়ের জন্য তার ছিল প্রকৃতি প্রদত্ত ক্ষমতা।

উনি কেন কিউবাতে এসেছিলেন?

তিনি ছিলেন ক্যাম্পেনসিনোসদের সন্তান, প্রবল দারিদ্রের মাঝেই তাদের জীবন চলমান। ১৯৯২ সালে গালিসিয়া ভ্রমণের সময় আমি লানকারা যাই, যে শহরে উনি বাস করতেন, এবং সেই তিরিশ ফুট দৈর্ঘ্যের ও ১৮ ফুট প্রস্থের ছোট্ট বাড়িটিও দেখি যেখানে তার জন্ম হয়েছিল। এটি মাঠে পাওয়া শিলা দিয়ে তৈরি, যা কিনা সেই অঞ্চলে পর্যাপ্ত পরিমাণে পাওয়া যেত, ক্যাম্পেনসিনোসরা এই ভাবেই থাকার আশ্রয় গড়ে নিত আপন আলয়ে। সেই ক্ষুদের কাঠামোটিতেই সব পরিবার তাদের গৃহপালিত প্রাণীদের নিয়ে বাস করত। শোবার ঘর এবং রান্না ঘর ছিল একসাথেই। একহাত পরিমাণ উদ্বৃত্ত জমিও ছিল না। পরিবারগুলো সারা গ্রাম জুড়ে বিচ্ছিন্ন খণ্ড খণ্ড জমিতে কৃষিকাজ চালাতো।

ষোল-সতের বছর বয়সে বাবা স্পেনের সেনাবাহিনীতে যোগ দেন, কিন্তু কিউবাতে যখন ১৮৯৫ সালে সংঘটিত ২য় স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় আসেন, তার বয়স বিশ ছাড়িয়েছে। আসলে আমাদের কারোরই জানা নেয় ঠিক কি কারণে এবং কি ভাবে তিনি কিউবা এসেছিলেন। বড় হবার পরও বাবার সাথে এই ব্যাপারে আমার কোন কথা বলা হয় নি। মাঝে মাঝেই তিনি নানা গল্প বলতেন বিশেষ করে নৈশভোজের সময় বা বন্ধুদের সাথে। কিন্তু আমার বড় বোন অ্যাঞ্জেলিতা এবং বড় ভাই র‍্যামন, যারা এখনো জীবিত হয়ত এই ব্যাপারে আলোকপাত করতে পারবে, অন্তত তারা বাবার সাথে আমার চেয়ে বেশী কথা বলত। তবে পরের দিকে যখন আমি যখন হাভানায় বিপ্লবের সাথে জড়িয়ে পড়ি, মোনকাদা আক্রমণে নেতৃত্ব দেবার ফলে কারাবরণ করি এবং পরে গ্রানমা করে কিউবাতে ফিরে আসি তখন কিছু কিছু পর্যায়ে আমার ছোট ভাই এবং বোন বিশেষ করে রাউল, এমা এবং হুয়ানার সাথে বাবার অনেক অনেক বিষয়ে কথা হয়েছিল, যদিও সেগুলো শোনার জন্য নিজে উপস্থিত ছিলাম না।

তবে তাদের মুখ শুনে আমার যা মনে হয়েছে বাবা গালিসিয়ার এক দরিদ্র তরুণ, যিনি বিত্তবান কোন লোকের বদলে সামরিক বাহিনীতে গিয়েছিলেন অর্থের বিনিময়ে। আর এটা সত্য যে বাবা ক্যাম্পেসিনোসদের একজন ছিলেন, যারা যুদ্ধে এইভাবে অংশগ্রহণ করত। সেই যুদ্ধ যে কি ছিল তা সকলেরই জানা।

যুদ্ধে অংশগ্রহণের ব্যাপারটা তো লটারির মাধ্যমে হবার কথা, কিন্তু দেখা যাচ্ছে ধনীরা অর্থের মাধ্যমে অন্য কাউকে তাদের জায়গায় মিলিটারিতে যাওয়া তো বটেই এমনকি যুদ্ধে পর্যন্ত পাঠাতে পারত?

এমন তো কিছু কিছু ক্ষেত্রে ঘটেছিলই, দেখা গেল চরম দারিদ্রের সাথে লড়াই করতে থাকা কাউকে ধনশালী কোন ব্যক্তি বেশ মোটা অঙ্কের টাকা দিয়ে ঘটনাটা ঘটাত।

বাবা একজন স্প্যানিশ সৈনিক হিসেবেই কিউবায় পদার্পণ করেছিলেন, এবং তিনি হুকারো ও মোরোনের মধ্যবর্তী অঞ্চলে বন পরিষ্কারের কাজে নিয়োজিত ছিলেন যেখানে পরবর্তীতে সেনাঘাঁটি গড়ে তোলা হয় , যা কিনা কিউবান বিপ্লবীরা মাসিও এবং মাক্সিমো গোমেজের নেতৃত্বে দখল করে হোসে মার্তির মৃত্যুর পরে।

সেই বিশাল জঙ্গল সাফ করে ঘাঁটি স্থাপন করা ছিল মহাকঠিন এক মিশন, যা ছিল বেশ কয়েক মাইল লম্বা। আমি এতটুকুই জানি বাবার কাজের দায়িত্ব সেখানে ছিল, তবে মাসিওর দখলের সময় মনে হয় বাবা সেখানে ছিলেন না। আমার এর বেশী কিছু জানা নেই, হয়ত অন্য ভাই-বোনদের জানা থাকতে পারে।

বাবার সাথে এই বিষয়ে কোন কথোপকথনের স্মৃতি আপনার মনে পড়ে না?

একবার পিনার দেল মায়ারিতে শ্রমিকদের এক ক্যাম্পে যাবার পথে উনাকে এই নিয়ে কথা বলতে শুনেছিলাম বটে! আসলে আমি বাড়ী ছাড়া সবখানে থাকতেই পছন্দ করতাম, বাড়ী মানেই মনে হত কোন রুদ্ধ গরাদ, যেখানে আমার বিপ্লবী চেতনা আন্দোলিত হতো ভিতর থেকেই।

তাহলে শিশুকাল থেকে আপনি একজন বিপ্লবী?

এটি হবার পিছনে একাধিক কারণ ছিল। বিশেষ করে স্প্যানিশদের কর্তৃত্বের নিচে বাস করার সময়, বিশেষ করে তাদের হুকুম দেবার প্রবণতায়- আমি এই কাজগুলো অপছন্দ করতাম, সেই সময়ও অনেক ধরনের শাস্তির ব্যবস্থা ছিল যেমন মাথায় আঘাত করা কিংবা বেল্ট দিতে পিটানো, এইসব নিয়েই সবসময় চলতে হত আমাদের, যদিও ধীরে ধীরে শিখে গিয়েছিলাম কি করে নিজেদের রক্ষা করে চলতে হয়।

আপনার বাবা বেশ কতৃত্বপরায়ণ ছিলেন বলা চলে?

একটু মেজাজি লোক তো ছিলেনই। কিন্তু সেটি ছাড়া তিনি কোনদিনই নিজেকে গড়ে তুলতে পারতেন না, সেই কৈশোর থেকেই প্রথমে পরিবার ও স্বদেশ থেকে এত দূরে থেকে যুদ্ধ, পরবর্তীতে একটি পয়সা ছাড়াও নিজের চেষ্টায় তিলে তিলে গড়ে তুলেছিলেন সচ্ছলতা, ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় পরিবারের প্রথম ব্যক্তি হিসেবে পড়তে এবং লিখতে শিখেছিলেন, কারোই সাহায্য পাননি জীবনের বন্ধুর দিনগুলোতে, মনে হয় খুব শক্ত চরিত্রের অধিকারী না হলে এই কাজগুলো কেউ করতে পারে না।

বাবা একজন গালিসিয়ান ইমিগ্রান্ট হিসেবে বিনয়ী এবং কর্মঠ ছিলেন সেই সাথে ছিলেন দৃঢ় চরিত্রের এবং সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যের অধিকারী। কিন্তু তিনি কখনই অবিচার করতেন না। তার আছে আসা সাহায্যপ্রার্থীদের কখনোই না বলতেন না। সবসময়ই সবার কথা শুনতেন মনোযোগ দিয়ে এবং সুযোগ পেলেই অন্যদের সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতেন। জীবনের বেড়ে ওঠার সময়টিতে তার অনেক অভাব ও প্রয়োজন ছিল। আমি জানি মাত্র এগার বছর বয়সে মা হারিয়ে তিনি অনাথে পরিণত হন। তার বাবা আবার বিয়ে করেন, এবং সেই বালকের শৈশব ছিল যথেষ্টই অত্যাচারিত এবং বিব্রতকর। কিন্তু গালিসিয়ান ইমিগ্রান্টদের স্বভাবজাত গুণাবলী ছিলই তার মাঝে- দয়া, বিনয়, অতিথিপরায়ণতা।

তার অতিথিপরায়ণতা নিয়ে অনেক গল্প চালু আছে, এমনকি দয়া নিয়েও। খাঁটি হৃদয়ের একজন মানুষ সবসময়ই তার বন্ধু, শ্রমিক এবং চারপাশের মানুষের কঠিন সময়ে আপনা থেকেই এগিয়ে আসে। হয়ত কোন সময়ে তিনি মৃদু অভিযোগ করতেন, বিরক্তও হতেন, কিন্তু কখনোই সমাধান ছাড়া সমস্যাগ্রস্ত কাউকে ফিরিয়ে দিতেন না। ফসল তোলার পরে যখন মানুষের হাতে উপার্জনের উপায় থাকে না বললেই চলে, তখন প্রায়শই তার কাছে মানুষেরা আসত, যারা অনাহার পীড়িত পরিবারের কথা, কাজের অভাবের কথা তুলে ধরত। বাবা সবসময়ই নিজের কিছু জমি যা পরিষ্কার করা বা নিড়ানো আবশ্যক ছিল না, তা তাদের কাজ দেবার ছলে পরিষ্কার করিয়ে নিয়ে অর্থ সাহায্য করতেন, যদিও তা আমাদের পরিবারের জন্য অর্থনৈতিক দিক থেকে লাভজনক ছিল না। বয়স কিছুটা বাড়ার পর স্কুলের অবসরে তার অফিসের কাজে সাহায্য করতে যেয়ে জিনিসটি আমি বুঝতে পারি, সেখানে কাজের জন্য ডাকা হয় নি এমন শ্রমিকদেরও কর্মসংস্থান করে দিতে হত যেন তারা ব্যবহার্য সামগ্রী কেনার টাকা আয় করতে পারে। তিনি ছিলেন একজন মহৎ এবং দয়ালু মানুষ।

১৮৯৮ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধের পর আপনার বাবা কিউবায় থেকে যেতে মনস্থির করেন?

না না, ১৮৯৮ সালে যুদ্ধের পরপরই তিনি স্পেনে ফিরে যান, কিন্তু কিউবায় তার এটি ভাল লেগেছিল যে পরের বছরই অন্য অনেক গ্যালিসিয়ান ইমিগ্রান্টের সাথে ফেরত এসেছিলেন এইখানে। হাভানা বন্দরের পুরনো নথি ঘেঁটে জানা গেছে ১৮৯৯ সালের ডিসেম্বরে তিনি পদার্পণ করেন দ্বীপদেশটিতে। কপর্দকহীন এবং একা অবস্থায় প্রথমেই তিনি শ্রমজীবন শুরু করেন। ঠিক জানা নেই কেন, কিন্তু শেষ পর্যন্ত ইস্টার্ন প্রভিন্সে তিনি খানিকটে থিতু হন, ঠিক সেই সময়েই আমেরিকান প্ল্যান্টেশন কোম্পানিগুলো বিভিন্ন জায়গার বন উজাড় করে জ্বালানী এবং নির্মাণ কাজে ব্যবহার করা শুরু করেছিল, অন্য অনেক বিখ্যাত ভবন এবং জাহাজের মতই সেই সময়ে বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী এবং বৃহৎ যুদ্ধজাহাজ সান্তিসমা ত্রিনিদাদ এই কাঠ দিয়েই তৈরি হয়, এর মূল নির্মাণস্থান ছিল হাভানা এবং ১৮০৫ সালে ইংরেজদের ট্রাফালগারে যুদ্ধের উদ্দেশ্যে ভাসানোর পরে এক সমুদ্রঝড়ে সলিল সমাধি ঘটে।

যাই হোক, মার্কিনরা গাছ কাটার এবং ইক্ষু ক্ষেত প্রস্তুতের জন্য সবসময়ই লোক ভাড়া করছিল। কোথাও বন থাকলে সেই জমি খুবই উর্বর হয়, তাই প্রথম দিকে ফলন হয়েছিল দুর্দান্ত।

আপনার বাবা মার্কিনীদের জন্য কাজ করতেন?

বাবা একজন সাধারণ শ্রমিক হিসেবে সেই সময়কার কর্মজীবন শুরু করেছিলেন ওরিয়েন্তে প্রভিন্সে, বিখ্যাত ইউনাইটেড ফ্রুট কোম্পানির জন্য, যাদের সেই প্রভিন্সে প্ল্যানটেশন ছিল। পরবর্তীতে তিনি একটি শ্রমিকদল গঠন করেন এবং তাদের নিয়ে বিভিন্ন জায়গায় ভাড়া খাটতে যেতেন। শুনেছি, একপর্যায়ে তার দলে ৩০০ শ্রমিক ছিল, যার ফলে একপর্যায়ে আর্থিক লাভের মুখও দেখেছিলেন। অসাধারণ সাংগঠনিক ক্ষমতা থাকলেও তিনি ছিলেন নিরক্ষর, তাই ধীরে ধীরে নিজে নিজেই লেখা এবং পড়া আয়ত্ত করেন, যা ছিল নিঃসন্দেহে কঠিন একটা কাজ। পরে একটি জ্বালানী কাঠের জোগান দেবার বা বন কেটে পরিষ্কার করবার জন্য একটি ছোটখাট ব্যবসা শুরু করেন। এখান থেকেই একজন সংগঠক হিসেবে তার ব্যবসা লাভজনক হতে থাকে। তার দলের অধিকাংশ শ্রমিকই ছিলেন স্পেন থেকে আসা অভিবাসী, সেই সাথে অল্প কয়েকজন ছিলেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের অন্যান্য দ্বীপের, বিশেষ করে জ্যামাইকার এবং হাইতির।

আপনার বাবা শেষ পর্যন্ত কতখানি জমির মালিক হয়েছিলেন?

শেষ পর্যন্ত তিনি ৯০০ হেক্টর (২০০০ একরের মত) জমি কিনতে সক্ষম হন এবং আরো কয়েক হাজার হেক্টর জমি লিজ হিসেবে কিউবার স্বাধীনতা যুদ্ধের সৈনিক দুইজন কিউবান জেনারেলের কাছ থেকে নেন। সেগুলো ছিল পাইনের বিশাল প্রান্তর, কুমারী অরণ্য। সত্যিকারের প্রাকৃতিক বন, পর্বত-উপত্যকা-মালভূমি ডিঙ্গিয়ে ১৮০০ ফুট উচ্চতাতেও ছিল গাছের রাজত্ব। বাবা মায়ারি এলাকার গাছ কাটার তদারক করতেন। প্রতিদিন পাইনের কাঠ ভর্তি ১৭টি ট্রাক সেখান থেকে আসত। গবাদিপশু এবং ইক্ষু থেকেও একটা মোটা উপার্জন আসছিল, কারণ উনার মালিকানায় নানা ধরনের কাজের উপযোগী জমি ছিল। সব মিলিয়ে হয়ত ১০,০০০ হেক্টর (২৫,০০০ একর) ছিল মোট জমি।

সে তো বিশাল সম্পত্তি।

তার নিজের অর্জন এবং লিজ নেয়া অংশগুলো এক করলে তিনি প্রায় ১১,০০০ হেক্টর জমির নিয়ন্ত্রণ করতেন।

বেশ সচ্ছল অবস্থা বলা চলে-

তা তো বটেই। বলতেই হবে আমি যে পরিবারে বড় হচ্ছিলাম তা সাধারণ দশটা পরিবারের চেয়ে আর্থিকভাবে সচ্ছল ছিল। এটি নিয়ে আমার গর্ব করার কিছু নেই, কিন্তু সঠিক চিত্র দেবার জন্যই পুরোটা বললাম।

আপনি তাহলে ছিলেন একজন কোটিপতির সন্তান?

আসলে ঠিক তা নয়। কেউই কখনো বলেনি বাবা একজন কোটিপতি ছিলেন। সে যুগে কোটিপতি বলতে যে পরিমাণ অর্থের মালিক বোঝানো হত তা ছিল অকল্পনীয় ব্যাপার। ধরা যাক একজন শ্রমিকের সারা দিনের হাড় ভাঙ্গা খাটুনির মূল্য ছিল এক ডলার, তাহলে তার মজুরির কয়েক লক্ষ গুণ টাকা বেশী থাকলেই কেবল কোটিপতি হওয়া সম্ভব, যা বাবার কোনদিনই ছিল না। তবে তার মোটা আর্থিক উপার্জন ছিল। সেই সমাজে একজন ধনী মানুষের সন্তান হিসেবে আমরা বেশ খাতির পেতাম। মনে পড়ে, অনেকে কেবলমাত্র তাদের ব্যক্তিগত স্বার্থসিদ্ধির জন্য আমাদের সাথে মধুর ব্যবহার করত, যদিও আমরা সেগুলো বুঝে উঠতে পারি নি।

বিরানে আপনার বাবা কেবলমাত্র একটি বাড়ী দিয়ে শুরু করলেও, ধীরে ধীরে সেখানে অন্যান্য ভবন, রুটির দোকান, পানশালা, বিদ্যালয়, হাইতিয়ান শ্রমিকদের জন্য বাসস্থান- সব মিলিয়ে একটা ছোটখাট শহরই তৈরি হয়ে গিয়েছিল!

আসলে সেখানে ছিল স্রেফ কিছু বাড়ী! শহর হিসেবে বিরানকে কল্পনা করা মুশকিল। শৈশবে বাড়ীর নিচেই দুধের খামার ছিল, পরবর্তীতে বাড়ী থেকে ৪০ গজ দূরে সেটি নির্মাণ করা হয়, রাস্তার ওপারেই ছিল কামারের দোকান। তার কাছেই একরত্তি কসাইখানা। তার থেকে আরও চল্লিশ গজ দূরে, উল্টো দিকে ছিল রুটির দোকান আর নিকটেই বিদ্যালয়। আরও ছিল এক মুদির দোকানে, মনে হয় জগতের এমন কিছু নেয় যা সেখানে মিলত না, তার সাথে সাথে ডাকঘর ও টেলিগ্রাফের অফিস। সেই আস্তানা থেকে সামান্য দূরেই ছিল হাইতি থেকে আসা শ্রমিকদের জন্য হতশ্রী কিছু কোনমতে দাঁড় করানো কাঠামো, নোংরা মেঝে আর তালপাতার ছাউনি। তারা মূলত শস্য কাটার সময়ে আসত, যা ছিল সারা মৌসুমে খামারের ব্যস্ততম সময়। বাবা নিজ উদ্যোগে একটি বিশাল কমলার বাগান গড়ে তুলেছিলেন বেশ ক' একর জায়গা জুড়ে, সেখানে কলা, পেঁপে, নারকেলসহ নানাবিধ ফলের গাছ ছিল। আমি এখনো চোখ বন্ধ করে সেই কমলা বাগানের ভেতর দিয়ে হেঁটে যেতে পারব, সেখানের প্রতিটি গাছ আমার চিরচেনা। সুযোগ পেলেই হাতেই কমলা ছাড়িয়ে খেতাম তারিয়ে তারিয়ে। পুরোটা গরমের এবং ক্রিসমাসের ছুটি আমার সেখানেই কাটত। আমার চেয়ে বেশী কমলাখোর পুরো তল্লাটে কেউ ছিল না।

সেখানে তো মোরগ লড়াই দারুণ জনপ্রিয় ছিল, মোরগ লড়ুয়েরাও ছিল নাকি?

হ্যাঁ, বাড়ী থেকে শ খানেক গজ দূরেই রাস্তার ধারে ছিলে সেই লড়াইয়ের স্থান। ফসলের মৌসুমে প্রতি রোববারে, এছাড়া বছরের বিশেষ কিছু ছুটির দিনে মোরগ লড়াই চলত। গ্রাম্যজীবনে এইটিই ছিল বিনোদন।

মানে বলতে চাচ্ছেন স্থানীয় বিনোদন-

তাই হবে, সেখানে তো বিনোদনের কোন আলাদা উৎস ছিল না। অনেকেই ডমিনো আর তাস খেলত। সৈনিক জীবনে বাবা তাস খেলতে খুব পছন্দ করতেন, তিনি অবশ্য খেলাটিতে দারুণ নৈপুণ্যও অর্জন করেছিলেন একসময়ে। আমার তিন বছর বয়সে বাড়ীতে একটি ফনোগ্রাফ এসেছিল, গান বাজানোর জন্য। সারা তল্লাটে কারো রেডিও ছিল না। মনে হয় আমার সাত বা আট বছর বয়সে বাবা রেডিও নিয়ে আসেন। না না, ততদিনে আমি নিশ্চয়ই দশ অথবা বারো, কারণ ১৯৩৬ বা ১৯৩৭ সাল ছিল সেটা, কারণ রেডিও এবং ক্ষুদে একটি জেনারেটর যা কিনা ঘণ্টা দুই চলতে পারত, হাতে পাবার আগেই স্পেনের গৃহযুদ্ধ শুরু হয়ে গিয়েছিল। জেনারেটরটি প্রতিদিনই কয়েক ব্যাটারির চার্জে ব্যবহৃত হত, তাই বলা যায় প্রতিদিনই আমরা অল্প বৃষ্টির জল ঢেলে এটিকে সচল রাখতাম।

এবং এই সবকিছুর মালিক আপনার বাবাই ছিলেন?

ডাকঘর এবং স্কুল বাদে প্রায় সবকিছুরই, সেগুলো ছিল সবার সম্পদ। ১৯২৬ সালের আমার জন্মের সময় বাবা ধনসম্পদ অর্জনের দিক থেকে বেশ ভাল অবস্থানে ছিলেন। অন্যরা তাকে ডন অ্যাঞ্জেল (ডন অ্যাঞ্জেল কাস্ত্রো) বলে সম্বোধন করত। সেখানে ডন মানেই তখন সর্বসাধারণের কাছে শ্রদ্ধার পাত্র এবং ক্ষমতাশালী কাউকে বোঝানো হত। সেই জন্যই আমি প্রথমেই বলেছিলাম আমি আসলেই এক অবারিত ভূসম্পদের মালিক এমন পরিবারের সন্তান, আর বাবা প্রতি বছরই অল্প অল্প করে জমি কিনে সেই সম্পদ বৃদ্ধি অব্যাহত রেখেছিলেন।

আমাদের আপনার মায়ের সম্পর্কে বলুন

উনার নাম লিনা। কিউবার পশ্চিমাঞ্চলের পিনার দেল রিওর মেয়ে। তার পূর্বপুরুষেরা অবশ্য ক্যানারি দ্বীপ থেকে এসেছিল। তিনিও সেই ক্যাম্পেসিনোদেরই বংশধর এবং তার পরিবার ছিল অতীব দরিদ্র। আমার নানা ছিলেন একজন গরুর গাড়ীচালক, তিনি সেই গাড়ীতে করে ইক্ষু পরিবহন করতেন। তারা বাড়ী ছেড়ে সপরিবারে ভাগ্য পরীক্ষার উদ্দেশ্যে সেই গরুর গাড়ী চেপে অনেকটা পথ পাড়ি দিয়ে বিরানে পৌঁছান, মায়ের বয়স তখন তের বা চৌদ্দ।

বাবার মত মা-ও প্রথম দিকে নিরক্ষর ছিলেন, এবং নিজের প্রবল চেষ্টাতেই লিখতে এবং পড়তে শিখেন। তিনি কোনদিন স্কুলের চৌকাঠ মাড়িয়ে ছিলেন বলে শুনি নি। অসম্ভব ধরনের পরিশ্রমী একজন মানুষ যার নজর এড়িয়ে যেত পারত না কোনকিছুই। তিনি ছিলেন আমাদের ডাক্তার, বাবুর্চি, সবকিছুরই যোগানদার, আমাদের প্রয়োজনীয় সবকিছুর মা-র কাছ থেকে আসত, কোন সমস্যায় পড়লে সবার জন্যই বিষাদে কাঁদার আশ্রয় ছিল তার কাঁধ। তিনি আমাদের বখে যেতে দেন নি, অত্যন্ত কড়াভাবে আদেশ, সঞ্চয় এবং পরিষ্কার থাকার তালিম পালন করিয়ে নিতেন। এককথায় বলা চলে তিনি ছিলেন বাড়ীর অন্দরের এবং বাহিরের সকল কাজের সফল তদারককারী, এবং সেই সাথে পরিবারের অর্থনীতিবিদ। কারোই জানা ছিল এই বিপুল কাজ ও দায়িত্ব পালনের শক্তি এবং সময় তিনি কোথা থেকে পেতেন! আমি তাকে কখনোই সারা দিনের মাঝে এক মুহূর্তের জন্যেও বসা অবস্থায় দেখি নি, তিনি কখনোই বসতেন না!

সাত-সাতজন সন্তানের জন্মদান করেছিলেন তিনি ঐ বাড়ীতেই। নতুন শিশুর ভূমিষ্ঠ হবার সময়টুকু একজন দাই আসত বটে কিন্তু সেই পোড়া বিবর্জিত দেশে ডাক্তার আসার কোন সম্ভাবনা ছিল না।

নিজ সন্তানদের বিদ্যালয়ে পাঠাবার জন্য তার মত পরিশ্রম মনে হয় আর কেউই করত না, তার নিজের জীবনের বঞ্চনা যেন আমাদের কাছে না আসে সেই জন্য তার চেষ্টার অন্ত ছিল না। নিজের কথাই বলি- আমি সবসময়ই পড়তে খুবই পছন্দ করি- মায়ের সাহায্য ছাড়া আজো আমি এক মূর্খই থেকে যেতাম। মা সবসময়ই এই ব্যাপারে কথা না বললেও বোঝা যেত তিনি সন্তানদের অত্যন্ত স্নেহ করেন। দৃঢ়চেতা, সাহসী এবং ত্যাগী একজন মানুষ ছিলেন মা। আমাদের অনিচ্ছাকৃত সৃষ্ট যে কোন অঘটন তিনি সাহসের সামনে আগ বাড়িয়ে মোকাবেলা করতেন। যে জমি তিনি এত ভালবাসতেন , পরবর্তীতে সেগুলো পুনঃবণ্টন করা হলে তিনি কোন তিক্ততা পোষণ করেন নি।

মা ছিলেন অতিমাত্রায় ধার্মিক, বিশ্বাস এবং নীতিতে, যা আমি অত্যন্ত শ্রদ্ধা করি। একজন জননী হবার কষ্টের মাঝেও তিনি শান্তি খুঁজে নিয়েছিলেন এবং বিপ্লবের সময়ে তার ভূমিকায় মা অনেক অনেক সহজাত ভাবেই মানিয়ে নিয়েছিলেন নিজেকে, যিনি ছিলেন একজন দরিদ্র কিন্তু বিনয়ী ক্যাম্পেসিনা, যার পক্ষে মানব জাতির ইতিহাস এবং তার অবস্থার জন্য দায়ী জটিল কারণগুলো জানা কোন সময়ই সম্ভব ছিল না।

১৯৬৩ সালের ৬ আগস্ট মা শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন, বিপ্লবের ঠিক সাড়ে তিন বছর পরে।

আপনার বাবা কতদিন বেঁচে ছিলেন?

আরও আগে। তিনি মায়ের চেয়ে বেশ বয়স্ক ছিলেন। ১৯৫৬ সালের ২১ অক্টোবর তিনি চলে যান। আমার তিরিশতম জন্মদিনের দুই মাস পরে এবং গ্রান মা করে মেক্সিকো থেকে আমাদের যাত্রা শুরুর ঠিক দুই মাস আগে।

আপনার বাবা কি গালিসিয়ান ভাষা জানতেন?

অবশ্যই, কিন্তু সেটা কখনোই ব্যবহার করতেন না।

আপনি কখনো তাকে সেটি বলতে শুনেছেন?

মাঝে মাঝে শুনেছি। সেখানে আরো কয়েকজন গালিসিয়ান থাকতেন, তাদের সাথেই বাবা সেই ভাষাতে কথা বলতেন হয়ত। কিন্তু সেখানে স্পেনের অন্য এলাকার যেমন আন্দালুসিয়ার মানুষেরা ছিল যারা ভাষাটি বুঝত না একেবারেই। পরবর্তীতে নানা কারণে, মূলত কাজের প্রয়োজনেই সবাই স্প্যানিশ শিখে ফেলে, বিশেষ করে কিউবানরাও গালিসিয়ান জানত না, কাজেই সর্বক্ষেত্রে এমনকি বাড়ীতে স্ত্রী বা প্রেমিকার সাথেও তাদের স্প্যানিশেই কথা বলতে হত। সেই জন্যই আমি তাকে প্রায় কখনোই গালিসিয়ান বলতে শুনি নি।

স্পেনের গৃহযুদ্ধ যখন শুরু হয় তখন সম্ভবত আপনার বয়স কেবল দশ?

তখনো ঠিক দশ হয় নি, আমার জন্ম হয়েছিল ১৯২৬ সালের ১৩ আগস্ট আর গৃহযুদ্ধ শুরু হয়েছিল ১৯৩৬ সালের ১৮ জুলাই, কাজেই আমার বয়স ছিল নয় বছর এগার মাস, তার মধ্যেই আমি লিখতে এবং পড়তে পারতাম।

আপনার মনে পড়ে কি স্পেনের গৃহযুদ্ধের ফলে আপনার বাবা কোন কারণে উদ্বিগ্ন ছিলেন কি না?

বিরানে বারো থেকে চোদ্দ জন স্প্যানিয়ার্ড ছিলেন। তার মধ্যেও যুদ্ধের কারণে বিভেদ ঘটে দুটি দল হয়ে গিয়েছিল।

মানে সেই স্প্যানিয়ার্ডরা যারা আপনাদের বাড়ীতে আসত?

যারা বিভিন্ন সময়ে তার সহকর্মী বা শ্রমিক হিসেবে কাজ করেছেন তারাই। তাদের একজন উচ্চ শিক্ষিত হিসাবরক্ষক ছিলেন। উনি বলতেন সাত সাতটি ভাষা তার জানা ছিল এবং সম্ভবত কথাটি সত্য! বাড়ীর রেডিওতে ইংরেজি বা জার্মানে কিছু সম্প্রচারিত হলে তিনি অনুবাদ করে দিতেন। খুব ভাল ল্যাতিন লিখতে পারতেন। ছোটখাট গড়নের মানুষটির মত জ্ঞানী আমাদের অত্র এলাকাতে ছিল না। গ্রীস সম্পর্কে সম্যক ধারণা ছিল তার, উনার কাছেই প্রথমবারের মত ডেমোস্থেনিসের কথা শুনি। এমন অনেক কিছু নিয়ে তার কাছে জানতাম মুগ্ধ বিস্ময়ে।

এরাই সবাই আসত, এর বাহিরে বিদ্রোহীরা আসত, মানে যারা প্রজাতন্ত্রের বিরুদ্ধে ছিল তাদের বিদ্রোহী বলে সম্বোধন করা হত।

মানে ফ্রাঙ্কোর সমর্থকরা?

ঠিক ধরেছেন । আর ছিল প্রজাতন্ত্রের সমর্থনের অন্যদলটি। তারা ছিল খামারের শ্রমিক, সম্পূর্ণভাবে নিরক্ষর। ভালেরো নামের এক কিউবান যে কিনা ডাকঘর এবং টেলিগ্রাফ অফিসের দায়িত্বে ছিল, সে ছিল তাদের দলে। আর একজন বাবুর্চিও ছিলেন, তার নাম ছিল গার্সিয়া, পেশাগতভাবে রান্না শেখা হয় নি তার, কোন অজ্ঞাত অসুখে অন্য কায়িক শ্রমের কাজ করা তার পক্ষে সম্ভব ছিল না, তাই সবাই মিলে তাকে রান্নার কাজে নিয়োগ দিয়েছিল। তার সাথে চমৎকার এক সম্পর্ক দাঁড়িয়ে গিয়েছিল আমার, যদিও একজন পাচক হিসেবে খুব একটা সফলতা অর্জন সম্ভব হয় না মানুষটার পক্ষে, অন্তত আমাদের বাড়ীতে প্রায়ই তারা রান্না নিয়ে অভিযোগ আসত। কিন্তু আমি তাকে খুবই পছন্দ করতাম। গার্সিয়া ছিলেন নিরক্ষর।

নিরক্ষর?

আমার শৈশবে বিরানের সমস্ত বাসিন্দাদের মাঝে শতকরা ২০ ভাগ মানুষও লেখাপড়া জানতেন না। সেই সময়ের অভিজ্ঞতাই আমাকে আজ বুঝতে শিখিয়েছে অশিক্ষিত একজন মানুষ জীবনে কত বঞ্চনার শিকার হয়।

নিরক্ষর একজন মানুষ কে? সেই মানুষটি যার অবস্থান আমাদের সমাজের সবচেয়ে নিচু স্তরে, যার প্রেমিকার কাছে চিঠি লেখার জন্য একজন বন্ধুর সাহায্য নিতে হয়। বিরানের যারা লেখাপড়া জানত না, অন্যদের সাহায্য নিয়ে প্রেমপত্র পাঠাত। তারা সেই পত্রলেখকের সামনে যেয়ে এইটাও বলত না, লেখ- আমি কাল রাতে তাকে স্বপ্নে দেখেছি, তার জন্য ক্ষুধা-তৃষ্ণা উবে গেছে, মানে যে কথাগুলো তারা বলতে চাইত, বরং তার বদলে পত্রলেখককে বলত, তোমার যেমন মনে হয় তেমন কিছু লিখে দাও, যাতে সে আমার প্রেমে পড়ে!

আমি বাড়িয়ে বলছি না! সেই সময়ের ঘটনাপ্রবাহ এমনই ছিল।

আপনার কি সেই সময়ে স্পেনের গৃহযুদ্ধ নিয়ে কোন তর্ক-বিতর্ক মনে পড়ে?

১৯৩৬ সালে যখন যুদ্ধ শুরু হয় তখন আমি আবাসিক ছাত্র হিসেবে সান্তিয়াগো দ্য ক্যুবার এক স্কুলে ছিলাম, বয়স হয়ত তখনো দশ ছোঁয়নি, গরমের ছুটিতে বাড়ী আসতাম-

এমনই একসময়ে যখন ছুটিতে বিরানে ছিলাম, লিখতে পড়তে শিখে গেছি ততদিনে, গার্সিয়া নামের সেই পাচক বন্ধু আমাকে খবরের কাগজ পড়ে শোনাতে বলে, যে কিনা ছিলো প্রজাতান্ত্রিকদের পাঁড় সমর্থক। আমি বোঝার চেষ্টা করতাম কেন সে একপক্ষকে এমন পাগলের মত ভালবাসে। আসলে তাকে খবরের কাগজ পড়ে শোনাতে শোনাতেই দশ বছরে পা দেবার আগেই স্পেনের যুদ্ধ সম্পর্কে আমার কিছুটা জানা হয়ে যায়। প্রতিদিনই বেশ কটা খবরের কাগজ পড়া হত তার জন্য, তাদের নাম ছিল ইনফরমাশিওঁন, এল মুন্ডো, এল পাইস্‌ এল দিয়ারিও দ্য ক্যুবা, যদিও প্রধান খবরের কাগজ ছিল দিয়ারিও দে ল্য মারিনা।

হাভানা থেকে আসত দিয়ারিও দে ল্য মারিনা?

সেটি আসলে গোটা দেশে চলত, স্বাধীনতা যুদ্ধ এবং বিপ্লবের কারণে এটি ছিল স্প্যানিশ বিরোধী, রবিবারে এর বিশেষ সংখ্যা আসত, যা ছিল বেশ জনপ্রিয়, মোটাসোটা, বিজ্ঞাপনে ভরা। ম্যানুয়েল গার্সিয়ার কাঠের বাড়ীতে সেটি পৌঁছানোর পরপরই আমি আগা থেকে গোঁড়া পড়ে শোনাতাম। বিদ্রোহীদের সেখানে যদিও কেবল ছাপার অক্ষরে বিদ্রোহীই বলা হত, কিন্তু সেটি ছিল প্রশংসারই নামান্তর।

ফ্রাঙ্কোর পক্ষে যারা ছিল তাদের কি বলা হত?

জাতীয়তাবাদী। আর অন্যদের বলা হত রেড, লিটল রেড ইত্যাদি। তাদের প্রজাতন্ত্রী নামেও লেখা হত। এটিই ছিল বিরানে আসা সবচেয়ে ওজনদার খবরের কাগজ, যা আমাকে প্রায়ই গার্সিয়াকে পড়ে শোনাতে হত, যদিও অন্যান্য কাগজও আসত কিন্তু এটিতেই স্পেনের খবর সবচেয়ে বেশী থাকত।
যুদ্ধের শুরু থেকেই সেই কারণে আমার মনে আছে, যেমন প্রজাতন্ত্রীদের হাতে তেরুয়েলের পতন!

আর ইবরো রণাঙ্গনের কথা?

সেটা ছিল প্রায় শেষের দিকে।

মাদ্রিদের যুদ্ধ?

মাদ্রিদের দখল নিয়ে মনে পড়ে। প্রজাতন্ত্রীরা গুয়াদালাখারাতে মুসোলিনির সৈন্যদের বেশ একহাত নিয়েছিল। পরে তারা তেরুয়েল দখল করে নেয়। আরও নানা সব রণাঙ্গনের খবর। সেই দুর্গটার নামে যেন কি ছিল যেখানে ফ্রাঙ্কোর সেনারা আটক ছিল?

টলেডোর আলকাজার দুর্গ।

আলকাজার যুদ্ধের সব ঘটনা গার্সিয়াকে পড়ে শোনাতাম, এবং আসলে আমি তার পক্ষে চলে গেছিলাম, তাকে উৎফুল্ল রাখার জন্য নানা জায়গার টুকরো টুকরো খবর জোড়া লাগিয়ে পরিবেশন করতাম যা ছিল প্রজাতন্ত্রীদের জন্য ভালো খবর! এইভাবেই বিরান চলছিল স্পেনের যুদ্ধ নিয়ে।
আপনার বাবা কি সেই যুদ্ধ নিয়ে কোন আগ্রহ দেখাতেন না নির্লিপ্ত ছিলেন?
বাবা প্রজাতন্ত্রের বিপক্ষে ছিলেন।

বিপক্ষে?

হ্যাঁ, এমন অনেকেই ছিল সেখানে। আসলে বিরানের স্প্যানিয়ার্ডের মাঝে অধিকাংশই প্রজাতন্ত্রের বিরুদ্ধে ছিল। কিন্তু সেখানে অন্য দলটাও ছিল যারা শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত প্রজাতন্ত্রী ছিলেন। মাঝে মাঝেই এই দুই দলের মাঝে ডমিনো খেলা চলত, এক আদর্শের বিরুদ্ধে আরেক আদর্শ।

চলবে...।

[কমিউনিস্ট কিউবার অবিসংবাদিত নেতা ফিদেল কাস্ত্রোর মৃত্যুদিবস উপলক্ষে আজ (২৫ নভেম্বর) এ লেখাটি ছাপা হলো। কাল প্রকাশিত হবে এর বাকি অংশ] 

  • অনুবাদ–তারেক অণু

Related Topics

টপ নিউজ

ফিদেল কাস্ত্রো / কিউবা

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.

MOST VIEWED

  • সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য ১৫ শতাংশ পর্যন্ত বিশেষ প্রণোদনা, পাবেন জুলাই থেকে
  • সরকারি কর্মচারীদের জন্য বিশেষ সুবিধা বাড়ানোর ঘোষণা অর্থ উপদেষ্টার
  • যেসব পণ্যের দাম কমতে পারে, যেসব পণ্যের দাম বাড়তে পারে
  • নোবেল পুরস্কারসহ ৯ ধরনের পুরস্কারের আয়ে দিতে হবে না কর
  • ঢাকার পরিবহন ব্যবস্থায় ৪০০ ইলেকট্রিক বাস যুক্ত করার ঘোষণা
  • এখন থেকে বছরে একবারের বেশি ব্যাগেজ রুলসের সুবিধায় স্বর্ণ আনা যাবে না

Related News

  • 'টাকা নেই': গ্রিড ব্যর্থতা এবং আর্থিক সংকটের মধ্যে কিউবা সম্পূর্ণ পতনের মুখে
  • দুইদিন ধরে পুরো বিদ্যুৎহীন কিউবা
  • রাশিয়ান নৌবহর হাভানায় ভেড়ার একদিন পর মার্কিন সাবমেরিন গুয়ানতানামো বেতে
  • মোটা অঙ্কের বেতন ও পাসপোর্টের আশায় রাশিয়ার হয়ে যুদ্ধ করছে কিউবানরা
  • ভিসার দরকার হয় না: পাখির অভিবাসন রহস্য উদ্ঘাটন করলেন কিউবার জীববিজ্ঞানীরা!

Most Read

1
অর্থনীতি

সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য ১৫ শতাংশ পর্যন্ত বিশেষ প্রণোদনা, পাবেন জুলাই থেকে

2
অর্থনীতি

সরকারি কর্মচারীদের জন্য বিশেষ সুবিধা বাড়ানোর ঘোষণা অর্থ উপদেষ্টার

3
অর্থনীতি

যেসব পণ্যের দাম কমতে পারে, যেসব পণ্যের দাম বাড়তে পারে

4
বাংলাদেশ

নোবেল পুরস্কারসহ ৯ ধরনের পুরস্কারের আয়ে দিতে হবে না কর

5
বাংলাদেশ

ঢাকার পরিবহন ব্যবস্থায় ৪০০ ইলেকট্রিক বাস যুক্ত করার ঘোষণা

6
অর্থনীতি

এখন থেকে বছরে একবারের বেশি ব্যাগেজ রুলসের সুবিধায় স্বর্ণ আনা যাবে না

EMAIL US
contact@tbsnews.net
FOLLOW US
WHATSAPP
+880 1847416158
The Business Standard
  • About Us
  • Contact us
  • Sitemap
  • Privacy Policy
  • Comment Policy
Copyright © 2025
The Business Standard All rights reserved
Technical Partner: RSI Lab

Contact Us

The Business Standard

Main Office -4/A, Eskaton Garden, Dhaka- 1000

Phone: +8801847 416158 - 59

Send Opinion articles to - oped.tbs@gmail.com

For advertisement- sales@tbsnews.net