দাবায় প্রতারণা: উদঘাটনে মাঠে নামছেন সেরা ‘দাবা গোয়েন্দা’

যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব বাফেলোর কম্পিউটার সায়েন্সের একজন অধ্যাপক কেনেথ রিগ্যান। সম্প্রতি দাবা খেলার বিশ্বে তিনি হয়ে উঠেছেন 'প্রতারণা বিশেষজ্ঞ'। ভুল বুঝবেন না! তিনি প্রতারণা করেন না, বরং প্রতারণা চিহ্নিত করেন। অনেকের কাছে তিনি হয়ে উঠেছেন 'চেস ডিটেক্টিভ' বা দাবা গোয়েন্দা। তবে বহু প্রশংসা বাক্যের ভিড়ে তাকে শুনতে হয় সমালোচনাও। তার জীবনী এবং কৃতিত্বের বর্ণনা উঠে এসেছে টাইম-এর এক প্রতিবেদনে।
২০২০ সাল থেকে নিজের মালিকানাধীন প্রতারণা সনাক্তকরণ সফটওয়্যারের মাধ্যমে তিনি ১০ লাখেরও বেশি খেলা বিশ্লেষণ করেছেন। চেস ডট কম (Chess.com) এর মতো ওয়েবসাইটকে পরামর্শ প্রদান করার পাশাপাশি বিভিন্ন টুর্নামেন্ট পর্যবেক্ষণ করেন তিনি। এবং এর জন্য তাকে অর্থও প্রদান করে দ্য ইন্টারন্যাশনাল চেস ফেডারেশন (এফআইডিই)।
প্রাযুক্তিক উন্নয়নের ফলে দাবা খেলায় মানব দাবাড়ুর চেয়ে বেশি দক্ষ হয়ে উঠেছে কম্পিউটার। আর এর সাথে সাথে বেড়েছে প্রতারণার সংখ্যাও। কেবল অনলাইনে নয়, সশরীরে খেলার সময়ও অনেকে জেতার জন্য কম্পিউটারের সাহায্য নিয়ে প্রতারণার আশ্রয় নেন।
রিগ্যান জানান, সম্প্রতি দাবা খেলায় 'বড় রকমের' প্রতারণার হার এক-তৃতীয়াংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। দাবাড়ুরা অনেক উপায়ে প্রতারণা করেন। এই যেমন, বাথরুমে গিয়ে মুঠোফোনের মাধ্যমে কারও কাছ থেকে পরামর্শ নেওয়া, পোশাকে কোনো ডিভাইস লুকিয়ে রাখা, সহযোগীদের থেকে কোড করা সংকেত পাওয়া ইত্যাদি। এমনকি একবার প্রতারণায় সহকারী এক খেলোয়াড়কে দাবা বোর্ডের বর্গাকৃতির ঘরগুলোর সংকেত হিসেবে বিভিন্ন চেয়ারের পেছনে দাঁড়িয়ে থাকতেও দেখা যায়।
দাবা খেলায় সাম্প্রতিক কেলেঙ্কারি
দাবা খেলা পর্যবেক্ষণে রিগ্যানের রয়েছে বহু বছরের অভিজ্ঞতা। সম্প্রতি একটা বড় কেস পেয়েছেন ৬৩ বছর বয়সী এই সাবেক দাবাড়ু। চলতি বছর সেপ্টেম্বরের পাঁচ তারিখে শীর্ষ দাবাড়ু ম্যাগনাস ক্লারসেন একটি রহস্যপূর্ণ টুইট করেন। তিনি কটাক্ষ করে বলেন, সেইন্ট লুইয়ে অনুষ্ঠিত একটি টুর্নামেন্টে তার প্রতিদ্বন্দ্বী ১৯ বছর বয়সী উদীয়মান মার্কিন দাবাড়ু হ্যান্স নিম্যান প্রতারণার আশ্রয় নেন। এর প্রতিক্রিয়ায় নিম্যান স্বীকার করে নেন যে তিনি ১২ এবং ১৬ বছর বয়সে করলেও এরপর থেকে তিনি আর প্রতারণা করেননি। ধূর্ততার জন্য কোনো ডিভাইস আছে কি না তা পরীক্ষা করতে সেইন্ট লুইয়ের নিরাপত্তা আরও জোরদার করলেও নিম্যানের কাছে কিছুই পাওয়া যায়নি।
তবে হাল ছাড়েননি ইন্টারনেট জগতের পণ্ডিতেরা। তারা খুঁজে পাওয়া কঠিন এমন শরীরস্থানে বাজার্স লুকিয়ে রাখার মতো নানা প্রতারণা কৌশলের চিন্তা করতে থাকে। এদিকে ম্যাগনাস ক্লারসেনও তার অভিযোগে আরও শক্ত অবস্থান নেন।

রীতিমত অধ্যাপক রিগ্যানকে ডাকা হয় এর ফয়সালা করতে। অক্টোবরের চার তারিখে চেস ডট কম নিম্যান ১০০'র বেশি অনলাইন খেলায় প্রতারণা করেন উল্লেখ করে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। সেখানে রিগ্যানকে 'স্বাধীন কর্তৃপক্ষ' হিসেবে উল্লেখ করে বলা হয় তিনি প্রতিবেদনটির মূল্যায়ন সমর্থন করেছেন। এর দুই সপ্তাহ পর নিম্যান তার প্রতিদ্বন্দ্বী ক্লারসেন, চেস ডট কম এবং তার সমালোচনা করেছেন এমন এক খেলোয়াড়ের বিরুদ্ধে একটি মানহানি মামলা করেন। এ মামলায় ক্ষতিপূরণ হিসেবে তিনি এক কোটি ডলার দাবি করেন।
রিগ্যানের সফটওয়্যারটি প্রতারণা চিহ্নিত করার জন্য কিছু কৌশল ব্যবহার করে। এটি একজন খেলোয়াড়ের তার দক্ষতা অনুযায়ী গুটি পরিবর্তনের সম্ভাবনাকে পরখ করে দেখে। এছাড়াও এটি একটি সংখ্যাতাত্ত্বিক পদ্ধতি ব্যবহার করে দাবাড়ুর গুটি পরিবর্তনকে কম্পিউটারের গুটি পরিবর্তনের সাথে তুলনা করে। খেলোয়াড় এবং কম্পিউটার- এই দুইয়ের গুটি পরিবর্তনের মাঝে কতটুকু মিল আছে তা বোঝাতে একটি জেড-স্কোর প্রদান করা হয়। এর জন্য একটি নির্দিষ্ট সীমা বেধে দেওয়া হয় এবং জেড-স্কোর এই নির্ধারিত সীমা অতিক্রম করলে খেলাটির আরও তদন্তের প্রয়োজন বলে সিদ্ধান্ত দেওয়া হয়।
আয়োজকরা রিগ্যানকে নিম্যানের সাম্প্রতিক এক খেলা বিশ্লেষণ করার দায়িত্ব দেন। ফলাফলে তার কাছে খেলাটি স্বাভাবিক বলে মনে হয়। তিনি বলেন, 'অবশ্যই নিম্যান অন্য খেলোয়াড়দের চেয়ে বেশি আক্রমণাত্মকভাবে খেলেছিলেন। কিন্তু তার খেলার দক্ষতা অনুযায়ী এটি প্রত্যাশিত সীমার মধ্যে ছিল।'
কার্লসেন কোনো পরিসংখ্যানসংক্রান্ত প্রমাণ ছাড়া নিম্যানকে প্রতারণার অভিযোগ করলে রিগ্যান আতঙ্কিত হয়েছিলেন। তার ভাষায়, 'এটি ছিল হতাশাজনক।'
এর পাশাপাশি তিনি নিম্যানের মামলা নিয়েও হতাশ। তিনি জানান, নিম্যানের মামলা তার বিবৃতিগুলোকে 'বিকৃত' করেছে। কারণ প্রকৃতপক্ষে অনুমোদন করলেও, মামলাটি বলছে চেস ডট কমের প্রতিবেদনের সাথে তিনি একমত ছিলেন না। ফলে মামলাটি যদি বিচারের দিকে এগোয়, তাকে উভয় পক্ষে সাক্ষ্য দিতে হতে পারে।
'আমাকে সবকিছুর জন্য প্রস্তুত হতে হবে', বলেন রিগ্যান।
দাবা গোয়েন্দার জীবনের গল্প
রিগ্যানকে অনেক সময় চেস ডিটেক্টিভ বা 'দাবা গোয়েন্দা' হিসেবে অভিহিত করা হয়। যদিও এমন খেতাবে লাইসেন্সের প্রয়োজন নেই, এরকম অনানুষ্ঠানিক উল্লেখ তার জন্য ইতিবাচক।
রিগ্যান যুক্তরাজ্যের নিউ জার্সি অঙ্গরাজ্যের প্যারামাসে বেড়ে ওঠেন। পাঁচ বছর থেকে তিনি তার বাবার সাথে দাবা খেলা শুরু করেন এবং মাত্র ছয় মাসের মাথায় তার বাবাকে হারিয়ে দেন। দাবার জগত কাঁপিয়ে দেওয়া ববি ফিশারের পর তিনিই সবচেয়ে কম বয়সী দাবাড়ু হিসেবে 'মাস্টার' উপাধি অর্জন করেন। তখন তার বয়স ছিল মাত্র ১২।
জর্জ মেসন ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক এবং অর্থনীতিবিদ টাইলের কোওয়েন ছোটবেলায় রিগ্যানের সাথে দাবা খেলতেন। তার ভাষায় রিগ্যানের খেলার ধরন 'অত্যন্ত উদ্ভট'- অদ্ভুত শুরু এবং নির্দয় সমাপ্তি! রিগ্যানের এই প্রতিভাই তাকে দাবা খেলা ছেড়ে দেওয়ার তাগিদ দিয়েছিল বলে জানান তিনি।
শেষতক গণিতে অধ্যয়নের উদ্দেশ্যে রিগ্যানও 'ইন্টারন্যাশনাল মাস্টার' উপাধি অর্জনের পর দাবা খেলা থেকে পিছু হটেন। ফলে 'গ্র্যান্ডমাস্টার' উপাধিটি আর পাওয়া হয়নি তার। বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় কিছু বিশ্ববিদ্যালয়- প্রিন্সটন, অক্সফোর্ড এবং কর্নেল থেকে পড়াশোনা করে পেশা হিসেবে বাফেলো ইউনিভার্সিটিতে অধ্যাপনা শুরু করেন। এসময় থেকে তিনি বিভিন্ন দুর্বোধ্য তাত্ত্বিক প্রশ্নাবলি সমাধানে নিজেকে নিবেদিত করেন, বিশেষ করে বিখ্যাত 'পি বনাম এনপি' নামে পরিচিত সমস্যা যা 'দাবা খেলা সমাধান করা সম্ভব কিনা' এই প্রশ্নের সাথেও কিছুটা সম্পর্কিত।
২০০৬ সালে এসে তার এ সাধনার মনোযোগ অন্যদিকে ধাবিত হয়। সেবছর তিনি লক্ষ্য করেন রাশিয়ান চ্যাম্পিয়ন ভ্লাদামির ক্রামনিক এক খেলায় বারবার ওয়াশরুমে যাচ্ছেন। ফলে তার মনে প্রতারণার সন্দেহ জাগে। এর একটা সুরাহার তাগিদ অনুভব করেন তিনি। 'টয়লেট গেট' নামে পরিচিত এই কেলেঙ্কারিতে তার সন্দেহটাই ঠিক বলে প্রমাণিত হয়।
এক্ষেত্রে রিগ্যান পর্যবেক্ষণ করে দেখেন, ক্রামনিকের গুটি পরিবর্তন চেস ইঞ্জিনের গুটি পরিবর্তনের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ। তবে অভিযোগ প্রমাণের জন্য কেবল এটিই যথেষ্ট ছিল না। তাই তিনি শীঘ্রই এমন একটি সফটওয়্যার বানানো শুরু করেন যা পরবর্তীতে তার 'কলিং কার্ড' বনে যায়।
২০১১ সালে রিগ্যান যখন তার এই প্রতারণা বিরোধী (অ্যান্টি-চিটিং) প্রোগ্রামটি সবার সম্মুখে আনেন, অনেকেই এটি নিয়ে সন্দিহান ছিলেন। সেসময় এফআইডিই-এর লক্ষ্য ছিল যতসম্ভব প্রতারণা হ্রাস করা। অনলাইন দাবা খেলা ও ইঞ্জিন তথা কম্পিউটারের বিস্তার বাড়ার সাথে সাথে অন্যান্য খেলার অ্যান্টি-ডোপিং (মাদকবিরোধী) পদক্ষেপের মতো প্রতারণা চিহ্নিতকরণও দাবা খেলার টিকে থাকার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছিল।
রিগ্যানের এই প্রতারণা বিরোধী সফটওয়্যার ফরাসী গ্র্যান্ডমাস্টার সেবাস্টিয়ান ফেলার এবং বুলগেরিয়ান দাবাড়ু বরিসলাভ ইভানভের বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ সমর্থন করেছিল। এক্ষেত্রে ফেলারের সহযোগী স্বীকার করলেও ফেলার এবং ইভানভ উভয়েই অভিযোগ নাকচ করে দিয়েছিলেন।

২০১৩ সালে তদন্ত করে তিনি খুঁজে পান যে রাশিয়ায় অনুষ্ঠিত একটি টুর্নামেন্ট নির্দিষ্ট কয়েকজন খেলোয়াড়ের রেটিং বাড়ানোর জন্য আংশিকভাবে প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে সাজানো হয়েছিল।
এরপর ২০১৯ সালে রিগ্যানের ডেটায় প্রতারণা প্রমাণিত হওয়ার পর লাতভিয়ান-চেক গ্র্যান্ডমাস্টের ইগর্স রাউসিস অভিযোগ স্বীকার করেন। এরপর একই বছর, এফআইডিই-কে ওভার-দ্য-বোর্ড প্রতারণা চিহ্নিতকরণ সেবা প্রদানের জন্য রিগ্যান চেস ডট কম, লিচেস এবং চেবেইজের সাথে প্রতিযোগিতা করেন। বর্তমানে রিগ্যানের পদ্ধতিই এফআইডিই অনুমোদিত একমাত্র পদ্ধতি।
ফেডারেশনটির পরিচালক ডানা রিজনিস ওযোলা বলেন, 'আমাদের ফেয়ার-প্লে সিস্টেম রিগ্যানের দক্ষতার ওপর খুবই নির্ভরশীল।'
কেবল সাফল্যই নয়, অনেক সমালোচনাও আছে রিগ্যানের ঝুলিতে।
সমালোচকদের দাবি তার পদ্ধতিতে ত্রুটি আছে। এক পডকাস্টে ইতালিয়ান-আমেরিকান গ্র্যান্ডমাস্টার ফ্যাবিয়ানো কারুয়ানা জানান তিনি রিগ্যানের হিসাবকে সঠিক মনে করেন না। কারণ তিনি এমন একজনকে চেনেন যিনি রিগ্যানের প্রতারণা বিরোধী ফাঁদ থেকে বেঁচে গিয়েছিলেন।
আরেক সমালোচক রাশিয়ান গ্র্যান্ডমাস্টার এভগেনি গ্লিযারভ লেখেন যে প্রতারণা চিহ্নিত করতে ব্যবহৃত অ্যালগরিদমটি একটি 'ধূম্রজাল'-এর সৃষ্টি করে যা প্রাথমিক প্রতারকদের ধরতে পারলেও 'স্মার্ট' প্রতারকরা সহজেই পার পেয়ে যেতে পারে। যেমন, একজন খেলোয়াড় কম্পিউটার থেকে প্রতি ঘর পরিবর্তনে পরামর্শ না নিয়ে কেবল কয়েকবার পরামর্শ নিতে পারে। অথবা কম্পিউটারের শীর্ষ সুপারিশের (টপ রেকমেন্ডেশন) পরিবর্তে চতুর্থ বা পঞ্চম পরামর্শ গ্রহণ করলে ধরা পড়ার আশঙ্কা থাকে না।
তার সিস্টেম যে 'পারফেক্ট' নয়, তা স্বীকার করেন রিগ্যান। তিনি বলেন, 'আমার পরীক্ষা যে এতটা সংবেদনশীল নয় তা বলা ন্যায্য বটে।'
প্রতি খেলায় কেবল দুই-একবার প্রতারণা করা খেলোয়াড়ের ধরা পড়ার সম্ভাবনাটাই বেশি। তাছাড়া প্রতারককে চিহ্নিত করার জন্য কেবল একটি খেলা পরখ করাই যথেষ্ট নয়। সাধারণত একটি প্যাটার্ন চিহ্নিত করতে রিগ্যানের অন্তত চারটি খেলা পুনঃমূল্যায়ন করতে হয়। প্রতি নয় খেলার তিনটিতে প্রতারণা করলে তা চিহ্নিত করতে পারেন তিনি। তাছাড়া একজন টপ-লেভেলের দাবাড়ুর প্রত্যেক গুটি পরিবর্তন যে কম্পিউটারের সাথে মিলে যাবে- এটিও স্বাভাবিক হতে পারে।
তবে রিগ্যান জানান, প্রতারণার কোনো প্যাটার্ন থাকলে তা যতই অনিয়মিত হোক না কেন, একটা সময়ে তিনি তা চিহ্নিত করতে পারবেন।
রিগ্যানের প্রতারণা চিহ্নিতকরণ সিস্টেম অ্যাকাডেমিকভাবে পিয়ার-রিভিউড হয়নি, তবে হয়েছে এটির পদ্ধতি। যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব নর্থ ক্যারোলাইনা-এর পরিসংখ্যানের অধ্যাপক রিচার্ড এল. স্মিথ বিশ্বাস করেন যে, রিগ্যানের পদ্ধতি 'যুক্তিসম্মত'। তার মতে, 'এরকম সিস্টেমে কিছু অনিশ্চয়তা থাকা স্বাভাবিক।'
রিগ্যানের পদ্ধতির প্রশংসা করে চেস ডট কমের প্রধান দাবা কর্মকর্তা ড্যানি রেঞ্চ বলেন, 'প্রতারণা চিহ্নিত করতে এটি বড় একটি অবদান।' তবে তার দাবি তার নিজের ওয়েবসাইট চেস ডট কমের সিস্টেমই এখনো পর্যন্ত বিশ্বে সেরা।
রিগ্যান কাজ করেন একা। অন্যদিকে চেস ডট কমের ২০ জন কর্মী মিলে একটি 'ফেয়ার প্লে' দল রয়েছে যারা দাবা খেলা বিশ্লেষণ করেন। তাছাড়া তারা পরিসংখ্যান সংক্রান্ত পরীক্ষাই কেবল ব্যবহার করে না, খেলা চলাকালীন কিছু ডেটাও বিশ্লেষণ করে, যেমন, প্রতিটি গুটি পরিবর্তনের মধ্যকার বিরতি অথবা অনলাইনে খেলার সময় এক উইন্ডো থেকে আরেক উইন্ডোতে গমন যেটি খেলোয়ারটি একটি ইঞ্জিন বা কম্পিউটার থেকে পরামর্শ নিচ্ছে তারও সংকেত হতে পারে।
এখন পর্যন্ত শুধু পরিসংখ্যানের ওপর ভিত্তি করে এফআইডিই প্রতারণার জন্য কোনো শাস্তি প্রদান করেনি।
রিগ্যানের দাবার কাজ যেন সর্বগ্রাসী। আজকাল তাকে সপ্তাহে ৩০ ঘণ্টা এর পেছনে দিতে হচ্ছে। তাছাড়া তার আরেকটি কাজ তো রয়েছেই- অধ্যাপনা। প্রতি বছর তিনটি কোর্সে শিক্ষাদানের পাশাপাশি তিনি গণিত এবং কম্পিউটিং নিয়ে জনপ্রিয় সব ব্লগ লেখেন। বছরের পর বছর শ্রম দিয়েছিলেন 'পি বলাম এনপি' সমস্যা সমাধানে কিন্তু সফলতার মুখ দেখেননি তিনি।
২০০২ সালে তিনি খাদ্যনালী সংক্রান্ত অসুখের জন্য ওষুধ খাওয়া শুরু করেন যার একটি পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া-হতাশা। তিন বছরে তার কাজ স্থবির হয়ে পড়ে। বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতার এক দশকের বেশি সময়ের পরও সহযোগী অধ্যাপক হওয়ার পর আর পদোন্নতি পাননি তিনি। সেসময় যেন 'জম্বি' বনে গিয়েছিলেন তিনি। দাবা খেলায় প্রতারণা চিহ্নিত করার কাজটিই আবার তাকে ঘুরে দাঁড়াতে সাহায্য করে। তিনি বলেন, 'আমার মস্তিষ্ককে সর্বোচ্চ চাপ দেওয়ার পরিবর্তে এ কাজটি আমাকে এমন কিছু দিয়েছে যা আমার ক্ষেত্রের (তার অধ্যাপনার বিষয়) মূল সমস্যা সমাধানের চেয়ে সহজ।' দাবা বিশ্লেষণের সুবাদে তিনি চলতি বছর আবার পূর্ণকালীন অধ্যাপকে ফিরে গেছেন।
রিগ্যান বিশ্বাস করেন দাবা খেলায় প্রতারণা চিহ্নিত করতে বিশুদ্ধ প্রাযুক্তিক সমাধান বের করা অসম্ভব। প্রতারক এবং গোয়েন্দার এই যুদ্ধ যেন সীমাহীন।