Skip to main content
  • মূলপাতা
  • অর্থনীতি
  • বাংলাদেশ
  • আন্তর্জাতিক
  • খেলা
  • বিনোদন
  • ফিচার
  • ইজেল
  • মতামত
  • অফবিট
  • সারাদেশ
  • কর্পোরেট
  • চাকরি
  • প্রবাস
  • English
The Business Standard বাংলা

Saturday
September 06, 2025

Sign In
Subscribe
  • মূলপাতা
  • অর্থনীতি
  • বাংলাদেশ
  • আন্তর্জাতিক
  • খেলা
  • বিনোদন
  • ফিচার
  • ইজেল
  • মতামত
  • অফবিট
  • সারাদেশ
  • কর্পোরেট
  • চাকরি
  • প্রবাস
  • English
SATURDAY, SEPTEMBER 06, 2025
যান্ত্রিক কোলাহলমুক্ত 'রাঢ়': টেরাকোটা ও ম্যুরালের এক অপরূপ ভাণ্ডার      

ফিচার

সুস্মিতা চক্রবর্তী মিশু
11 October, 2022, 12:15 pm
Last modified: 11 October, 2022, 01:23 pm

Related News

  • কুষ্টিয়ায় বিশ্বকবির ম্যুরালে কালি, ভাঙচুর
  • সুনামগঞ্জের বিশ্বম্ভরপুরে কৃষকের ভাস্কর্য ভাঙচুর
  • জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে হলের নাম পরিবর্তন, শেখ পরিবারের ম্যুরাল ও স্মৃতিচিহ্ন মুছে দিল শিক্ষার্থীরা
  • সিলেটে বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে শেখ মুজিবের ম্যুরাল
  • হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে শেখ মুজিবের ভাস্কর্য, ম্যুরাল নির্মাণে অর্থ তছরুপের অভিযোগ অনুসন্ধানে দুদক

যান্ত্রিক কোলাহলমুক্ত 'রাঢ়': টেরাকোটা ও ম্যুরালের এক অপরূপ ভাণ্ডার      

২০২১ সালে অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে অবস্থিত ‘আবহমান বাংলা’ বাড়িটি অসাধারণ স্থাপত্যশিল্পের জন্য এ’ ডিজাইন অ্যাওয়ার্ড (আয়রন) অর্জন করে। এ’ ডিজাইন অ্যাওয়ার্ড স্থাপত্যের জন্য একটি অত্যন্ত মর্যাদাপূর্ণ পুরস্কার। চমৎকার গাঠনিক নকশা ও টেরাকোটার দেয়ালচিত্রের নান্দনিকতার কারণে এই পুরস্কার পায় বাড়িটি। স্থাপত্যশিল্পে বাড়িটির পুরস্কার অর্জন রাঢ়েরও একটি বড় অর্জন।
সুস্মিতা চক্রবর্তী মিশু
11 October, 2022, 12:15 pm
Last modified: 11 October, 2022, 01:23 pm
আবাসিক বাড়ির দেয়ালের ম্যুরাল, ছবি সৌজন্যে- রাঢ়

যান্ত্রিক নগরীতে মাটিকে ভালোবেসে আঁকড়ে পড়ে থাকেন- এমন মানুষের সন্ধান খুব কমই পাওয়া যাবে। তবে তার কাছে মাটি সাধনার মতো পবিত্র। জীবনে অনেক উত্থান-পতনের মুখোমুখি হয়েছেন কিন্তু কখনোই মাটিকে ছাড়েননি। অবিরাম মাটিতে আঁকিবুকি করেই কেটে গেছে জীবনের অনেকটা সময়। আফসোস নেই কোনো, বরং মাটিকে অবলম্বন করেই খুশি তিনি। বলছিলাম সৈয়দ মামুনুর রশিদের কথা; পেইন্টিং, টেরাকোটা, পোড়ামাটির দেয়ালচিত্র, ভাস্কর্য, মটকা, কাঠের উপর খোদাই শিল্পে যার জুড়ি মেলা ভার।

মাটির প্রতি ভালোবাসা থেকেই সৈয়দ মামুনুর রশিদ গড়ে তুলেছেন 'রাঢ়' স্টুডিও। তবে 'রাঢ়' গঠনের কাজে তিনি একা ছিলেন না; সহ-প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে ছিলেন আসাদুজ্জামান মিলন। মৃৎশিল্পকে ভালোবেসে একজন সামলেছেন শিল্পের দিক আর আরেকজন ব্যবসায়; দুজনের ঐকান্তিক পরিশ্রমেই গড়ে উঠেছে 'রাঢ়'। রাঢ় মূলত টেরাকোটার দেয়ালচিত্র, ম্যুরাল, টেপাপুতুল, পেইন্টিং, কলমদানি, গাছের পট, কাঠের উপর খোদাই সামগ্রী তৈরি, বিপণন ও বাজারজাতকরণের কাজ করে থাকে। 

রাঢ়ের মূল কারিগর, ছবি সৌজন্যে- রাঢ়

যান্ত্রিক কোলাহলমুক্ত 'রাঢ়'

ব্যস্ত নগরীর কোলাহল থেকে অনেকটা দূরেই রাঢ়ের অবস্থান। রাঢ় স্টুডিওতে যাওয়ার জন্য ঢাকা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর পেরিয়ে অটোরিক্সায় সর্বপ্রথমে যেতে হয় দক্ষিণখান বাজারে, তারপর সেটি পার করে পানির পাম্প সংলগ্ন রাস্তা দিয়ে যেতে হয় সৈয়দনগর রোডে। কোনো নামফলক না থাকায় সৈয়দনগর রোডে ঢুকে অবশ্য 'রাঢ়' স্টুডিও খুঁজে পাওয়া বেশ দুষ্কর ব্যাপার হয়ে দাঁড়াবে। আশপাশের লোকজনও রাঢ়ের কথা তেমন একটা জানেন না। তবে তারা জানেন শিল্পী সৈয়দ মামুনুর রশিদের কথা, যিনি মাটি দিয়ে বিভিন্ন সামগ্রী তৈরির কাজ করেন।

রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই, ছবি- সুস্মিতা চক্রবর্তী মিশু

মূল ফটক পেরিয়ে রাঢ়ের ভেতরে ঢুকতেই নাকে ভেসে আসবে সোঁদা মাটির গন্ধ। একটু এগিয়ে চারপাশে চোখ বোলালেই দেখা যাবে মাটিকে কাজের উপযোগী করার মতো দুটি চৌবাচ্চা, কাঠের কাজ করার ঘর এবং মাটির কাজ করার বিশাল কারখানা। কারখানার ভেতরে পা রাখলেই হারিয়ে যেতে হবে অন্যজগতে; আচমকা চোখের সামনে উঠে আসবে বায়ান্ন থেকে একাত্তরের ইতিহাস। যে ইতিহাস তুলে ধরবে ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের চিত্র, ১৯৬৬ সালের ছয়দফা আন্দোলনের বৃত্তান্ত আবার ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের আখ্যান।

একপাশে তাকালে দেখা যাবে, মুক্তিবাহিনী 'এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম' লেখা প্ল্যাকার্ড হাতে দাঁড়িয়ে আছে; সাথে আছে বাংলাদেশের পতাকা এবং 'জয় বাংলা' বলে মুক্তিসেনাদের চিৎকার। ঠিক পাশের অসমাপ্ত ম্যুরালেই দেখা যাবে ভিন্ন চিত্র; পাকিস্তান সেনাবাহিনীর জেনারেল আমির আবদুল্লাহ খান নিয়াজি আত্মসমর্পণের দলিলে জেনারেল জগজিত সিং অরোরার সামনে সই করছেন। গোটা কারখানাই সজ্জিত এমন মাটির ও কাঠের ম্যুরাল দিয়ে, যার মধ্যে কিছু কাজ শেষ হয়ে গেছে আবার কিছু কাজ এখনো চলমান আছে।

শিল্পীর হাতের ছোঁয়া, ছবি সৌজন্যে- রাঢ়

'রাঢ়' নামেই উদ্দামতা

প্রাচীন বাংলার জনপদ হিসেবে রাঢ় পরিচিত। গঙ্গা তীরবর্তী রাঢ় অঞ্চলের মাটির রং লাল হওয়ায় 'লাল মাটির দেশ' হিসেবেও একে আখ্যায়িত করা যায়। আধুনিক স্থাপত্যশৈলীর এক অবিচ্ছেদ্য অংশ হলো টেরাকোটা। টেরাকোটার মাটি বা বরেন্দ্র অঞ্চলের মাটির রং লাল হওয়ায় এই স্টুডিওর নাম রাখা হয় 'রাঢ়'। টেরাকোটার কাজ, পোড়ামাটির কাজ যেহেতু এই স্টুডিওতে বেশি হয়, তাই একে রাঢ় স্টুডিও নামেই পরিচিত করেন উদ্যোক্তারা।

'রাঢ়' নামটি ব্যবহারের মূল পরিকল্পনা আসাদুজ্জামান মিলনেরই ছিলো। মিলন জানান, 'রাঢ় শব্দটি বেশ আকর্ষণীয়। রাঢ় শব্দের আরেকটি অর্থ অসভ্য। কিন্তু আমরা রাঢ় শব্দটিকে নিছক একটি চিত্তাকর্ষক ও মাটি কামড়ানোর শব্দ হিসেবে ব্যবহার করেছি, যা আমাদের শিল্পকর্মগুলোকে একটি পরিচিতিমূলক শিরোনাম দিয়েছে'। বাংলাদেশের সৃজনশীল ও নান্দনিকতামণ্ডিত টেরাকোটা শিল্পের অপর নাম হিসেবে কাজ করছে রাঢ়।

রাঢ় যেখানে অনন্য

স্বাভাবিক তাপমাত্রায় শুকানো হচ্ছে, ছবি- সুস্মিতা চক্রবর্তী মিশু

কাজের মধ্যে সৃজনশীলতা ও মৌলিকতা বজায় রাখা 'রাঢ়'কে অন্যদের থেকে আলাদা করে বলে মনে করেন প্রতিষ্ঠাতা আনিসুজ্জামান মিলন। মিলন বলেন, 'অনেকেই পিন্টারেস্ট, গুগল থেকে ছবি ডাউনলোড করে কাজ করে। এরা মৌলিক আর্টওয়ার্কার না বরং কপি আর্টওয়ার্ক করে। অর্থাৎ একই ছবি দেখে একাধিক ব্যক্তি কাজ করে। আমাদের প্রধান বিশেষত্ব হলো আমরা প্রতিটি কাজই নতুন করে করি, প্রতিটিই মৌলিক।'

প্রত্যেক কাজ শুরুর আগে তারা ক্লায়েন্টের সাথে নকশা বা ছবি নিয়ে আলাপ করেন। একেক ক্লায়েন্টের পছন্দ একেকরকম থাকে। অনেকে ফিগার পছন্দ করেন, অনেকের পছন্দের তালিকায় থাকে লিভিং ফর্ম। গ্রাহকের সাথে কথা বলে, তার পছন্দ জানার পরেই শুরু করেন কাজ।

ছবি- সুস্মিতা চক্রবর্তী মিশু

পুরো প্রক্রিয়াটিই দ্বিমুখী হয়ে থাকে। আর্টিস্টের ভাবনার সাথে সাথে গ্রাহকের অংশগ্রহণকেও সমানভাবে মূল্য দেন তারা। মিলনের ভাষ্যমতে, বাংলাদেশে এই মৃৎশিল্প অঙ্গনে গ্রাহককে যেভাবে তারা মূল্যায়ন করেন, সেটিই 'রাঢ়'কে অনন্য করে তোলে।

সাহিত্যের নান্দনিকতাও ফুটে ওঠে তাদের শিল্পের মধ্যে। কখনো তা তুলে ধরে দৈনন্দিন জীবন, আবার কখনোবা লোকায়ত যাত্রার বাঁকে বাঁকে চলা উপকথা দিয়েই সেজে ওঠে এসব শিল্প। মিলনের মতে, আর্ট কিংবা সাহিত্য ব্যক্তি শুরু করলেও তা ব্যক্তিকেন্দ্রিক নয়; বরং তা ব্যক্তিকে ছাপিয়ে গিয়ে সূক্ষ্ম জীবনবোধেরই প্রকাশ ঘটায়।

হাতের ছোঁয়ায় যত জাদু

রাঢ়ের মুখ্য শিল্পী সৈয়দ মামুনুর রশিদের ভাষ্যমতে, পৃথিবীর পঞ্চশক্তির তিনটিকেই মৃৎশিল্পে কাজে লাগানো হয়। যার মধ্যে আছে আগুন, জল ও মাটি। এই তিনটি শক্তির মধ্যে মাটি সবচেয়ে সহজলভ্য। বাংলাদেশের প্রায় সব জেলার মাটি কাজ করার জন্য উপযোগী বলে মনে করেন তিনি।

রাঢ় মাটি সংগ্রহের কাজ করে সাভার থেকে। এছাড়াও আশেপাশে পাইলিং এর কাজ চললে সেখান থেকেও মাটি সংগ্রহ করেন। বিভিন্ন জায়গা মাটি সংগ্রহ করে চাক করে রাখতে হয় প্রথমে। তারপর শুরু হয় মাটি প্রক্রিয়াকরণের কাজ। প্রক্রিয়াজাতকরণের নিয়ম জানলে সব রকমের মাটি দিয়েই শিল্পকর্ম করা সম্ভব বলে মনে করেন রাঢ়ের স্বত্বাধিকারীরা। তবে মাটির মধ্যে স্থিতিস্থাপকতা আছে নাকি আগে সেটা যাচাই করে নেয়ার কথাও বলেছেন তারা।

মাটি প্রক্রিয়াজাতকরণের জন্য চৌবাচ্চা, ছবি- সুস্মিতা চক্রবর্তী মিশু

শিল্পোপযোগী করার জন্য সর্বপ্রথমে মাটিকে ছেঁকে নেন তারা। মাটি থেকে কাঁকর, বালি আলাদা করে শুরু হয় মূল কাজ। অনেকসময় মাটিকে শক্ত করার জন্য গ্রগ নামে একটি উপাদান তারা ব্যবহার করেন। টেরাকোটার কাজের জন্য মাপ অনুযায়ী কেটে মাটির বোর্ড তৈরি করা হয়, তার উপরে চলে নকশার কাজ। প্রত্যেকটি অংশের কাজ শেষ করার পর জোড়া লাগানোর কাজ শুরু হয়। গুঁড়ো মাটি পুড়িয়ে তার সাথে আইকা মিশিয়ে পুটিং দেয়ার কাজ করেন তারা।

মাটি প্রক্রিয়াজাত করা থাকলে একেকটি টেরাকোটার দেয়ালচিত্র খোদাইয়ের কাজ করতে সময় লাগে ২০ থেকে ৩০ দিন। এরপর শুরু হয় শুকানোর কাজ, তাতে সময় লাগে ১৫ দিনের মতো। ছায়ায় রেখে স্বাভাবিক তাপমাত্রায় শুকানোর কাজ করতে হয়। রোদে দিয়ে জোর করে এসব শিল্পকর্ম শুকানোর কাজ করা যায় না, তাতে দ্রুত ফেটে যাওয়া বা বেঁকে যাওয়ার প্রবণতা থাকে। এরপর শুরু হয় পোড়ানোর কাজ, তাতে সময় লাগে ৩ থেকে ৫ দিনের মতো। সবমিলিয়ে ৪০ থেকে ৫০ দিনের মধ্যেই একেকটি দেয়ালচিত্র বা ম্যুরালের কাজ সম্পন্ন করা যায়।

শুরুর গল্প

সৈয়দ মামুনুর রশিদ ও আসাদুজ্জামান মিলন 'রাঢ়' শুরুর আগে থেকেই অপ্রাতিষ্ঠানিকভাবে বিভিন্ন কাজ শুরু করেন। রাঢ়ের মুখ্য শিল্পী সৈয়দ মামুনুর রশিদ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগের শিক্ষার্থী ছিলেন। ২০০৭ সাল থেকে নিজের বাসায়ই বিভিন্ন কাজ করতেন তিনি। এক পর্যায়ে আকস্মিকভাবে এক বন্ধুর মারফতে আসাদুজ্জামান মিলনের সাথে আলাপ হয়।

আসাদুজ্জামান মিলনের মতে, সৈয়দ মামুনুর রশিদের কাজকর্ম অনেকটা সাধকের মতো। নির্জনে মাটি নিয়ে নিজের মতো কাজ করতে ভালোবাসেন তিনি। কোনো এক সন্ধ্যেবেলায় এমনভাবেই রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আঙ্গিনায় সাক্ষাত হয় দুজনের। শুরুর দিকে গাজীপুরে ছোট দুইরুমের স্টুডিও ছিলো তাদের। পরবর্তী সময়ে তারা গাজীপুরের পাট চুকিয়ে সৈয়দনগরে প্রকৃতির খোলা প্রাঙ্গণে নিজেদের নতুন পরিচয় 'রাঢ়' এর কাজ শুরু করেন।

ছবি- সুস্মিতা চক্রবর্তী মিশু

পূর্ববর্তী বিভিন্ন কাজের সুনাম তাদেরকে প্রাতিষ্ঠানিকীকরণের দিকে ঝুঁকতে সাহায্য করে। তাই ২০১৯ এর শেষে চাকরি ছেড়ে দিয়ে আসাদুজ্জামান মিলন ও সৈয়দ মামুনুর রশিদ ঠিক করলেন 'রাঢ়' শুরু করার কথা। লক্ষ্য তখন তাদের একটাই মৃৎশিল্পকে মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়া।

প্রাথমিকভাবে তাদের কারখানা, অফিস তৈরি, মাটি এবং প্রক্রিয়াজাতকরণের অন্যান্য সামগ্রীর জন্য পুঁজি ছিলো আড়াই থেকে তিন লাখ টাকা। এরপর পরিকল্পিত উপায়ে শুরু হয় কাজ। কিন্তু শুরুতেই তাদের পড়তে হলো বিড়ম্বনায়; কাজের প্রাক্কালে আঘাত হানে করোনা। তাই তাদের পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজের ব্যাঘাত ঘটে এ সময়ে। মহামারির শুরুতে কাজের জন্য নির্ধারিত জায়গা ছেড়ে দিতে হয় তাদের।

দুই-তিনমাস কাজ বন্ধ থাকার পর তারা ঠিক করলেন- সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে কাজ শুরু করবেন। যেই কথা সেই কাজ, ফেসবুকে রাঢ় নামে পেজ খুলে বিভিন্ন কাজের হালনাগাদ তথ্য দিতে শুরু করেন।

কারখানার একাংশ, ছবি- সুস্মিতা চক্রবর্তী মিশু

প্রথম অর্ডারে বাজিমাত

রাঢ় প্রতিষ্ঠার পর ফেসবুকের মাধ্যমেই সুদূর অস্ট্রেলিয়া থেকে প্রথম অর্ডারটি আসে। ওয়ার্ল্ড হেলথ অরগানাইজেশনে কাজ করা একজন প্রবাসী বাঙালি তার স্বপ্নের বাড়ির জন্য ২৭ ফুট বাই ৫ ফুট আকারের ম্যুরালের অর্ডার দেন। প্রথম কাজটির বিশেষত্ব ছিলো এক টুকরো বাংলাদেশ। যার মাধ্যমে উঠে এসেছে আবহমান বাংলার নারীদের উড়ুন-গাইন দিয়ে ধান ভানা, কুলা দিয়ে ধান ঝাড়া, যাতা দিয়ে চাল-গমের গুঁড়ো করা, একতারা ও ঢোল হাতে বাউলের চিত্র। ম্যুরালের কাজটি শেষ হতে মাস ছয়েক লাগলেও প্রথম কাজেই বাজিমাত করেন তারা।

প্রথম অর্ডারের কাজ, ছবি সৌজন্যে- রাঢ়

দেশের বাইরে অস্ট্রেলিয়াতে তারা তিনটি কাজ পাঠিয়েছেন, এরমধ্যে দুটি কাজ প্রবাসী বাঙালিদের বাড়িতে এবং  একটি কাজ অস্ট্রেলিয়ার বাংলাদেশ দূতাবাসে রয়েছে। রাঢ় শুরুর আগে অপ্রাতিষ্ঠানিকভাবে ২০১৬ সালে অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে 'আবহমান বাংলা' নামে একটি কাজ পাঠানো হয়েছিলো। কাজটি প্রবাসী বাঙালি বিপ্লব কুমার সাহা নামের একজন স্থপতির বাড়ির বাইরের দেয়ালে টেরাকোটার দেয়ালচিত্রটি স্থাপন করা হয়েছিলো।

রাঢ়ের যত অর্জন ও কাজ

২০২১ সালে অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে অবস্থিত 'আবহমান বাংলা' টেরাকোটাযুক্ত বাড়িটি অসাধারণ স্থাপত্যশিল্পের জন্য এ' ডিজাইন অ্যাওয়ার্ড (আয়রন) অর্জন করে। এ'ডিজাইন অ্যাওয়ার্ড স্থাপত্যের জন্য একটি অত্যন্ত মর্যাদাপূর্ণ পুরস্কার। চমৎকার গাঠনিক নকশা ও টেরাকোটার দেয়ালচিত্রের নান্দনিকতার কারণে এই পুরস্কার পায় বাড়িটি। স্থাপত্যশিল্পে বাড়িটির পুরস্কার অর্জন রাঢ়েরও একটি বড় অর্জন।

পুরস্কারপ্রাপ্ত স্থাপত্য, ছবি সৌজন্যে- রাঢ়

বাংলাদেশের ভেতরে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে কাঠামো ছাড়া সবচেয়ে বড় টেপাপুতুল ভাস্কর্য তৈরির কৃতিত্বও সৈয়দ মামুনুর রশিদের। ১৬ ফুট উচ্চতার 'রিজেনারেশন' নামের এই ভাস্কর্যটি ২০০৭ সালে শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন পুরস্কারও অর্জন করে।

এছাড়াও ঢাকা ক্যান্টনমেন্টের আর্মি হেডকোয়ার্টারে 'ব্রাদারহুড' স্থাপত্য, কক্সবাজারের পানি উন্নয়ন বোর্ডের সামনের বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণ ও মুক্তিযুদ্ধের ম্যুরাল, বাগেরহাটের উপজেলা কমপ্লেক্স লনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরাল, রাজশাহী কলেজের লনে 'উদয়াস্ত' ম্যুরাল, খাগড়াছড়ির গুইমারা অঞ্চলের ২৪ আর্টিলারি ব্রিগেডের 'বজ্রকণ্ঠ' ম্যুরাল, বাংলাদেশ এয়ার ফোর্সের '১০১ স্পেশাল ফ্লাইং ইউনিট' ভাস্কর্যের কৃতিত্বও সৈয়দ মামুনুর রশিদেরই। এছাড়াও বিভিন্ন বাংলা ও আরবি ক্যালিগ্রাফির কাজও তারা করেছেন।

ম্যুরাল কিংবা টেরাকোটার দাম

বর্তমানে ফরমায়েশি কাজই বেশি করতে হয় তাদের। বিভিন্ন বাসা-বাড়ি, সরকারী-বেসরকারী অফিসে এই শিল্পের ব্যাপক চাহিদা। ঘর সাজানো কিংবা অফিস সাজানো সবকিছুতেই টেরাকোটার দেয়ালচিত্র কিংবা ম্যুরালের সৌন্দর্য কিছু বলার অপেক্ষা রাখে না। যার দরুণ তাদের কাজ কখনো থেমে থাকে না। বর্তমানে বিভিন্ন সরকারি অফিসে ঐতিহাসিক ম্যুরালের চাহিদা বেশি থাকে। বেসরকারি প্রতিষ্ঠান কিংবা বাসাবাড়িতে লোকজ অঙ্গের বিভিন্ন কাজের কাটতি বেশি থাকে। 

কাজের নানা ধরন, ছবি- সুস্মিতা চক্রবর্তী মিশু

ম্যুরাল বা টেরাকোটার দাম প্রতি স্কয়ার ফিট অনুযায়ী নির্ধারিত হয়। পুরো বিল্ডিং জুড়ে যেসব ম্যুরাল বা দেয়ালচিত্র থাকে সেগুলোর দাম স্কয়ার ফিট অনুযায়ী ৩৫০০ টাকা থেকে ৭৫০০ টাকার মধ্যেই দেখা যায়। নকশার মাপ অনুযায়ী মূল্য ওঠানামা করে বলে জানিয়েছেন তারা। বড় আকৃতির এক জোড়া টেপাপুতুলের দাম ৩৫০০০ টাকা থেকে শুরু হয়। তবে রিলিফ ভাস্কর্যের দাম তুলনামূলক বেশি থাকে। তবে বেশিরভাগ টেরাকোটার দেয়ালচিত্রের দাম স্কয়ার ফিট অনুযায়ীই ঠিক করা হয়।

রাঢ়ের বর্তমান অবস্থা

করোনা মহামারিতে অনেক প্রতিষ্ঠান হারিয়ে গেলেও মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে রাঢ়। মিলন মনে করেন, কাজের মৌলিকতা এবং কাজের মান দুটোই তাদের মাথা তুলে দাঁড়ানোর মূল অবলম্বন।

বর্তমানে মৃৎশিল্পের কাজে অন্যান্য অনেক প্রতিষ্ঠানের তুলনায় রাঢ়ের অবস্থান বেশ ভালো বলেই মনে করেন রাঢ়ের স্বত্বাধিকারীরা। তবে বর্তমানে তাদের সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে গ্যাসের স্বল্পতা। বার্নারে বড় কাজ সম্ভব হয় না বলে বিসিকে গিয়ে তাদের মাটির তৈরির বিভিন্ন সামগ্রী পোড়ানোর কাজ করতে হয়। যার কারণে ছোট কাজগুলো করাটাও ব্যয়বহুল হয়ে দাঁড়ায় তাদের জন্য।

বিমূর্ত টেরাকোটা, ছবি সৌজন্যে- রাঢ়

শুরু থেকেই রাঢ়ের ইচ্ছে ছিলো ছোট ছোট কাজ দিয়ে মানুষের দ্বারে পৌঁছে যাওয়ার, কিন্তু নিজেদের আগুনের ব্যবস্থা না থাকার কারণে সেটি বাস্তবায়ন করা কঠিন হয়ে যাচ্ছে। তাই অচিরেই এই সমস্যা মিটিয়ে অদূর ভবিষ্যতে পুরোদমে বড় কাজের পাশাপাশি ছোট কাজ করার স্বপ্নও দেখেন তারা।

বর্তমানে রাঢ়ে ৭ থেকে ৮ জন কর্মী স্থায়ীভাবে কাজ করেন। কাজ বেড়ে গেলে বাইরে থেকে কর্মী নিয়েও কাজ করতে হয়। কর্মীদের জন্য এখানে কাজের সময়সীমা ও ছুটির তালিকাও নির্ধারণ করা আছে। সরকারি ছুটিগুলোতে কর্মীদের নিয়মিত ছুটি দেওয়া হয় এখানে। এছাড়াও স্থায়ী কর্মীরা সকাল ৯টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত কাজ করে।

ভবিষ্যত পরিকল্পনা

বাংলাদেশের প্রায় প্রতিটি জেলাতেই পালপাড়া থাকার কারণে সেখানকার কুমারদের সাথে কাজ করার পরিকল্পনা রাঢ়ের আছে। বংশানুক্রমে পালপাড়ার কুমাররা কাজ করলেও অনেকসময় তাদের কাজে নান্দনিকতার ছোঁয়া পাওয়া যায় না। তাই প্রতিটি জেলার পালপাড়াতে পৌঁছে গিয়ে তাদের দক্ষ হাতকে সঠিকভাবে ব্যবহার করার চিন্তাভাবনাও রাঢ় করছে।

বিমূর্ত টেরাকোটা, ছবি সৌজন্যে- রাঢ়

মিলন জানান, 'নিজেদের শিল্পকর্মের পাশাপাশি অদূর ভবিষ্যতে রাঢ়কে আমরা বিভিন্ন শিল্পীদের মিলনস্থল হিসেবে দেখতে চাই। আমরা কল্পনা করি রাঢ়ে সব শিল্পী কাজ করবে। এছাড়াও আমরা ৭দিন বা ১০ দিনব্যাপী কর্মশালা আয়োজন করতে চাই। পারষ্পরিক বোঝাপড়ার ভিত্তিতে দেশের নানা স্থানের আর্টিস্টরা এখানে এসে কাজ করবে এমনটাই ভাবনা আমাদের।'  
 
 

Related Topics

টপ নিউজ

রাঢ় / টেরাকোটা / ম্যুরাল / ভাস্কর্য / পোড়ামাটি

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.

MOST VIEWED

  • গোয়ালন্দে ‘ইমাম মাহদি’ দাবিকারী নুরাল পাগলার ‘লাশে অগ্নিসংযোগ’, নিহত ১, আহত শতাধিক
  • হাতে হাতকড়া ও পায়ে শিকল, যুক্তরাষ্ট্র ফেরত পাঠালো আরও ৩০ বাংলাদেশিকে
  • মার্কিন শুল্কের চাপ সামলাতে ভারতের বড় কর ছাড়: সস্তা হচ্ছে এসি-গাড়ি-টিভি, বাড়ছে তামাক ও বিলাসপণ্যের দাম
  • রাজশাহীর পাহাড়িয়াদের ৫৩ বছরের বসতি 'উচ্ছেদ' ও ‘বিদায়ী খাসি ভোজ’ আপাতত স্থগিত, তদন্তে প্রশাসন
  • গ্রেপ্তার আ.লীগের ৫,০৭৯ নেতাকর্মী; মামলায় শীর্ষে আনিসুল, সবচেয়ে বেশি রিমান্ডে গেছেন পলক
  • সেপসিসের নাটক সাজিয়ে নিজের পা কাটলেন সার্জন, বীমা জালিয়াতির দায়ে কারাদণ্ড

Related News

  • কুষ্টিয়ায় বিশ্বকবির ম্যুরালে কালি, ভাঙচুর
  • সুনামগঞ্জের বিশ্বম্ভরপুরে কৃষকের ভাস্কর্য ভাঙচুর
  • জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে হলের নাম পরিবর্তন, শেখ পরিবারের ম্যুরাল ও স্মৃতিচিহ্ন মুছে দিল শিক্ষার্থীরা
  • সিলেটে বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে শেখ মুজিবের ম্যুরাল
  • হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে শেখ মুজিবের ভাস্কর্য, ম্যুরাল নির্মাণে অর্থ তছরুপের অভিযোগ অনুসন্ধানে দুদক

Most Read

1
বাংলাদেশ

গোয়ালন্দে ‘ইমাম মাহদি’ দাবিকারী নুরাল পাগলার ‘লাশে অগ্নিসংযোগ’, নিহত ১, আহত শতাধিক

2
বাংলাদেশ

হাতে হাতকড়া ও পায়ে শিকল, যুক্তরাষ্ট্র ফেরত পাঠালো আরও ৩০ বাংলাদেশিকে

3
আন্তর্জাতিক

মার্কিন শুল্কের চাপ সামলাতে ভারতের বড় কর ছাড়: সস্তা হচ্ছে এসি-গাড়ি-টিভি, বাড়ছে তামাক ও বিলাসপণ্যের দাম

4
বাংলাদেশ

রাজশাহীর পাহাড়িয়াদের ৫৩ বছরের বসতি 'উচ্ছেদ' ও ‘বিদায়ী খাসি ভোজ’ আপাতত স্থগিত, তদন্তে প্রশাসন

5
বাংলাদেশ

গ্রেপ্তার আ.লীগের ৫,০৭৯ নেতাকর্মী; মামলায় শীর্ষে আনিসুল, সবচেয়ে বেশি রিমান্ডে গেছেন পলক

6
আন্তর্জাতিক

সেপসিসের নাটক সাজিয়ে নিজের পা কাটলেন সার্জন, বীমা জালিয়াতির দায়ে কারাদণ্ড

EMAIL US
contact@tbsnews.net
FOLLOW US
WHATSAPP
+880 1847416158
The Business Standard
  • About Us
  • Contact us
  • Sitemap
  • Privacy Policy
  • Comment Policy
Copyright © 2025
The Business Standard All rights reserved
Technical Partner: RSI Lab

Contact Us

The Business Standard

Main Office -4/A, Eskaton Garden, Dhaka- 1000

Phone: +8801847 416158 - 59

Send Opinion articles to - oped.tbs@gmail.com

For advertisement- sales@tbsnews.net