Skip to main content
  • মূলপাতা
  • অর্থনীতি
  • বাংলাদেশ
  • আন্তর্জাতিক
  • খেলা
  • বিনোদন
  • ফিচার
  • ইজেল
  • মতামত
  • অফবিট
  • সারাদেশ
  • চাকরি
  • প্রবাস
  • English
The Business Standard বাংলা

আকাশ দেখতে বেনু ভিটার মানমন্দিরে

মহাকাশ নিয়ে যাদের আগ্রহ রয়েছে তাদেরকে বিশেষভাবে স্বাগত জানায় এই প্রতিষ্ঠান। কেউ আসেন অ্যাস্ট্রো-ফটোগ্রাফি করতে, আবার কেউ আসেন মহাকাশ পর্যবেক্ষণ করতে। এখানে আসা মানুষদের আগ্রহের উপর ভিত্তি করে তাদেরকে উপদলে ভাগ করে দেওয়া হয়। সেই দলগুলোর সাথে মহাকাশ পর্যবেক্ষণ কিংবা ছবি তোলার সুযোগ পাবেন আগ্রহীরা। কেউ চাইলে নিজেদের গ্রুপ নিয়ে এসেও পর্যবেক্ষণ করতে পারবেন।
আকাশ দেখতে বেনু ভিটার মানমন্দিরে

ফিচার

আফছার মুন্না
10 October, 2022, 12:30 pm
Last modified: 10 October, 2022, 04:03 pm

Related News

  • রাতের আকাশে বিরল গ্রহসমাবেশ, ফের দেখা যাবে ২০৪০ সালের পর
  • বড় এক গ্রহকে গিলে ফেলল নক্ষত্র! এই প্রথম বাঙালি বিজ্ঞানীর নেতৃত্বে এমন ঘটনা পর্যবেক্ষণ
  • আমরা কি কখনো বিগ ব্যাং-এর ছবি দেখতে পাব? যা বলছেন বিশেষজ্ঞ
  • এক মিনিটে পড়ুন: চাঁদ কি সারাক্ষণই দৃশ্যমান?
  • শুক্র গ্রহে প্রাণের সম্ভাব্য নিদর্শন খুঁজে পেয়েছেন জ্যোতির্বিদরা

আকাশ দেখতে বেনু ভিটার মানমন্দিরে

মহাকাশ নিয়ে যাদের আগ্রহ রয়েছে তাদেরকে বিশেষভাবে স্বাগত জানায় এই প্রতিষ্ঠান। কেউ আসেন অ্যাস্ট্রো-ফটোগ্রাফি করতে, আবার কেউ আসেন মহাকাশ পর্যবেক্ষণ করতে। এখানে আসা মানুষদের আগ্রহের উপর ভিত্তি করে তাদেরকে উপদলে ভাগ করে দেওয়া হয়। সেই দলগুলোর সাথে মহাকাশ পর্যবেক্ষণ কিংবা ছবি তোলার সুযোগ পাবেন আগ্রহীরা। কেউ চাইলে নিজেদের গ্রুপ নিয়ে এসেও পর্যবেক্ষণ করতে পারবেন।
আফছার মুন্না
10 October, 2022, 12:30 pm
Last modified: 10 October, 2022, 04:03 pm

বিস্তীর্ণ আকাশের দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে রাত পার করেছেন, এমন মানুষ নেহাত কম নয়। রাতের সেই তারকাখচিত আকাশ দেখে মুগ্ধ হওয়া অবধিই অনেকে থেমে থাকেন। আবার অনেকে এর সৌন্দর্য নিয়ে কবিতা, গল্প-সাহিত্য রচনা করেছেন, কেউ কেউ এই সুন্দরের পেছনের রহস্য খুঁজে বেড়িয়েছেন। শাহজাহান মৃধা বেনু তাদেরই একজন।

ছোটবেলা থেকেই আকাশ দেখতে ভালোবাসেন বেনু। তিনি শুধু আকাশই দেখেন না, নক্ষত্ররাজি নিয়ে প্রচলিত পৌরাণিক গল্পগুলো অধ্যয়ন করেন। গল্প হতো দিনের সূর্যের সাথেও। এভাবে চলতে থাকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা, দিনের পর দিন—সখ্যতা তৈরি হয় গ্রহ, উপগ্রহের সাথে।

মহাকাশ নিয়ে কৌতূহলী হয়ে ওঠেন বেনু—তা মেটাতে ছোটকাল থেকেই মহাকাশ নিয়ে লেখা বইপত্র পড়তেন আগ্রহ নিয়ে। বই পাঠে জানতে পারেন, মহাবিশ্ব জন্মের যে সূত্রগুলো বিজ্ঞানীরা দিয়েছেন এবং এখনও দিয়ে যাচ্ছেন সেগুলো মহাকাশ চর্চারই ফল। যদি বিজ্ঞানের এই শাখাটি বিকশিত না হতো তবে এ বিশ্ব সম্পর্কে এতোকিছু জানার কোন সুযোগই থাকতো না। তাই শৈশবের কৌতূহলপূর্ণ সেই আকাশ মৃধার কাছে হয়ে উঠেছে রহস্যময় জিনিসে ভরপুর জ্ঞানের এক জগত।

মানুষ আর পশুর মাঝে এমনকি মানুষে-মানুষে আকাশ দেখার পার্থক্য খুঁজে পান এই জ্যোতির্বিদ ও বিজ্ঞানচিন্তক। তার ভাষ্যমতে, 'গরুর কাছে আকাশ হলো বৃষ্টি আর রোদের পূর্বাভাস, আকাশে মেঘের অবস্থান দেখে তারা ছাউনির খোঁজ করে, মাঠে ঘাস খেতে যায়। কিন্তু মহাকাশ নিয়ে চিন্তা করে এমন মানুষের কাছে এর আলাদা অর্থ আছে, সেই অর্থেরই খোঁজ করি আকাশে।'

মহাকাশ বিজ্ঞানের প্রতি ভালোবাসার তাড়না থেকেই গড়ে তোলেন অবজারভেটরি তথা মানমন্দির। তবে এটিই প্রথম নয়…। এর আগেও বেনুর হাত ধরে দেশে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে আরও দু'টি মানমন্দির। কিন্তু সেগুলোতে নানা প্রতিবন্ধকতার কারণে নতুন করে বেনু ভিটায় এই মানমন্দির স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেন বেনু।

বেনু ভিটায় মানমন্দির স্থাপন

শাহজাহান মৃধা বেনু ১৯৫২ সালে মুন্সিগঞ্জ জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। তিনি একাধারে রাজনীতিবিদ, লেখক, সমাজসেবক এবং সংগঠক। অনুসন্ধিৎসু চক্র ও বাংলাদেশ ঘুড়ি ফেডারেশনের গুরুত্বপূর্ণ পদে বহাল আছেন। তবে তার অন্যসব পরিচয় থেকে বড় হয়ে উঠেছে মহাকাশ গবেষক পরিচয়টিই। কারণ, এটিই তাকে সবার থেকে আলাদা পরিচয় দিয়েছে।

২০২০ সাল। কোভিডের আঘাতে সবকিছুই থেমে আছে, বিনা কাজে ঘর থেকে বের হওয়াতেও এসেছে নিষেধাজ্ঞা। কিন্তু তাতে জ্ঞানের চর্চাও থেমে থাকবে তা হয় না। বেনু ঠিক করলেন, তিনি সেই সময়টাকে কাজে লাগাবেন। লেগে পড়লেন মানমন্দির স্থাপনের কাজে।

মানমন্দির গড়ে তোলার জন্য গাজীপুরের শ্রীপুরে নিজের সঞ্চয়ের টাকায় জমি কিনেছেন। সে সম্পত্তিই এলাকাবাসীর কাছে বেনু ভিটা বা বেনু মিয়ার প্রজেক্ট হিসেবে পরিচিত।

যাইহোক, শুরু হলো ভবন নির্মাণের কাজ। ভবন তৈরির পাশাপাশি চলতে থাকলো সেক্সট্যান্ট, থিওডোলাইট, টেলিস্কোপসহ প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি সংগ্রহের কাজও। সেক্সট্যান্ট হলো একটি বৃত্তের ষষ্ঠাংশকে চিত্রিত করে বানানো এমন ডিভাইস, যা প্রাথমিকভাবে তারার অবস্থান পরিমাপের জন্য ব্যবহৃত হয়। অন্যদিকে, থিওডোলাইট হলো আনুভূমিক এবং উল্লম্ব সমতলে দৃশ্যমান বিন্দুর মধ্যে কোণ পরিমাপের জন্য একটি অপটিক্যাল যন্ত্র।

এভাবে ধারাবাহিকভাবে কাজ সম্পূর্ণ করতে থাকলেন। কোভিডের ভরা মৌসুমে শুরু করায় শ্রমিকদের কাজে আনা থেকে শুরু করে সব কাজেই বেশ বেগ পোহাতে হয়েছিল, বেনুর কথায়ও তা স্পষ্ট। তবে সবচেয়ে বেশি চ্যালেঞ্জ নিতে হয়েছিল ডোম স্থাপনের ক্ষেত্রে।

নিজের নকশাতেই ডোম তৈরি

ভবন নির্মাণ শেষ, এবারে চারতলা এই ভবনের উপরে ডোম স্থাপনের পালা। ডোম হলো গম্বুজাকৃতির এক ধরনের ঘর যার মধ্যে স্থায়ীভাবে টেলিস্কোপগুলি স্থাপন করা হয়। এই ডোমগুলো টেলিস্কোপগুলোকে চারপাশের অবাঞ্চিত প্রভাব থেকে রক্ষা করে বিধায় এই টেলিস্কোপগুলো সবসময় ব্যবহারের উপযোগী থাকে। কিন্তু, লকডাউনের বিধিনিষেধের কারণে দেশ-বিদেশে খুঁজেও আগ্রহী কারো দেখা পাননি। তাই একপ্রকার বাধ্য হয়েই দায়িত্বটা নিজের ঘাড়ে নিলেন শাহজাহান মৃধা।

তিনি জানেন, নকশা করতে হবে এমন এক কাঠামোর যা চারদিকে ঘোরানো যাবে আবার একইসাথে একটি জানালাও থাকবে। যে জানালার সামনে বসানো হবে টেলিস্কোপ—পর্যবেক্ষণ করা হবে সুবিশাল আকাশ। এধার ওধার ঘুরে, ডোম হওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় সমস্ত শর্ত মাথায় রেখে নিজেই তৈরি করলেন ডোমের নকশা। সেক্ষেত্রে পূর্বে মানমন্দির নির্মাণের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগালেন বেনু।

শুধু নকশাতেই তো হয় না, তার বাস্তবায়নে দরকার হয় প্রকৌশলের দক্ষতা। করোনার প্রকোপের কারণে দেখা মেলেনি কোনো ইঞ্জিনিয়ারের। তাই মৃধা ঠিক করলেন নিজেই তৈরি করবেন পুরো কাঠামো।

বেনুর ভাষায়, 'এই ফিল্ডে কাজ করে বিশ্বজুড়ে খ্যাতি কামিয়েছেন, এমন অনেকের সাথেই এই ডোম তৈরি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। কিন্তু তাদের সবাই-ই কোভিডের পরে কাজ শুরু করার জন্যে বলেছিলেন।'

বেনু বুঝতে পারলেন, তাদের কথা শুনলে দুই-আড়াই বছরের মধ্যেও কাজটি সম্পন্ন করা যাবে না। বিজ্ঞান ক্লাবের শত সমস্যা সমাধান করা বেনু ঠিক করলেন, এই সমস্যারও একটা সুরাহা করবেন। নিজের তৈরি করা নকশা নিয়ে চলে গেলেন নওয়াবপুর। সেখানে ওয়ার্কশপ আর নওয়াবপুর ঘুরে ঘুরে কাঠামো বানিয়ে তা চারতলা ভবনের উপর স্থাপন করলেন। বিশাল এই কর্মযজ্ঞ সম্পাদনের ক্ষেত্রে যে ভুল হয়নি তা বলা যাবে না। ভুল হয়েছে, তবে সেখান থেকে আবারও শুরু করেছেন।

যান্ত্রিক সমস্যা নিরসনে দক্ষতার জন্যে তিনি তরুণ বয়সেই সবার কাছে পরিচিত হয়ে উঠেন 'প্রব্লেম শুটার' নামে। এই ডোমটার ক্ষেত্রেও তিনি সেই স্বাক্ষর রেখেছেন।

ডোম ও এর সাথে সংশ্লিষ্ট সব কিছু তৈরিতে সাধারণত কোটি টাকার উপরে অর্থ এবং  দেড় থেকে দুই বছর সময়ের প্রয়োজন হলেও বেনু নিজেই এই কাজের সরঞ্জাম তৈরি করে ব্যবহার করায় খরচ ও সময় দুটোই কমে। টাকার অংকে ১৫ লাখেরও কম খরচে মাত্র তিন মাসেই ডোমের সমস্ত কাজ সম্পন্ন করেন বেনু।

কী আছে এই মানমন্দিরে

ডোম স্থাপনের গল্প শুনে ভাবলাম—মানমন্দির দেখে এসেই হোক বাকি কথা। যেই ভাবা সেই কাজ। চলে গেলাম চারতলা সেই ভবনের ছাদে। উঠতেই দেখা মিলল একটি গোল ঘরের। সেখানে প্রবেশ করা মাত্রই চোখ গেল ঘরের ভেতরের বিরাট এক মাচার দিকে। মাচার উপরে উঠার জন্যে রয়েছে সিঁড়ির ব্যবস্থা। সেটি ভেঙে উপরে উঠলে চোখ যাবে টেলিস্কোপের দিকে, এবারে টেলিস্কোপে চোখ লাগিয়ে আকাশ দেখার পালা।

নির্দিষ্ট একটি তারকার দিকে তাক করানো হলো টেলিস্কোপ। কারিগরি ভাষায় যাকে বলে ফোকাস করা। এবারে ডাকলেন তা দেখার জন্য। টেলিস্কোপে চোখ লাগিয়ে দেখতেই মনে হলো—এই তো চোখের সামনেই মহাকাশ। শত-সহস্র-কোটি মাইলের দূরত্ব ঘুচিয়ে একেবারেই হাতের নাগালেই চলে এলো তারকারাজি। দিনের আলোর মতো স্পষ্ট হয়ে এলো সবকিছু। সৌরজগতে মিটমিট করে জ্বলতে থাকা নক্ষত্রগুলোও যে এতো আলো দেয় তা টেলিস্কোপে চোখ না রাখলে বোঝা মুশকিল।

যাইহোক, এখানে দেখা মিলল একসাথে কয়েকটি টেলিস্কোপের। সেগুলোর মধ্যে বিশেষ করে উল্লেখ করা যেতে পারে ১৪ ইঞ্চি মিড ক্যাসিগ্রেনের কথা। ওজনে প্রায় আড়াইশ পাউন্ডের কাছাকাছি এই টেলিস্কোপে রয়েছে ১৪ ইঞ্চি অ্যাপার্চার এবং ৩৫৫৬ এমএম ফোকাল লেন্থ। কোনো অবাঞ্ছিত চিত্র আসা ঠেকাতে মিররলকও রয়েছে এই টেলিস্কোপটিতে।

এছাড়াও ৮ ইঞ্চি, ৬ ইঞ্চি, ৪ ইঞ্চি ও ২ ইঞ্চির টেলিস্কোপ রয়েছে এই মানমন্দিরে। এখানে থাকা টেলিস্কোপগুলোর অধিকাংশই যুক্তরাষ্ট্রের অরিয়ন, মিড ওসেলিস্ট্রন কোম্পানির তৈরি করা। এছাড়া জার্মান, রাশিয়ান ও চীনা কিছু টেলিস্কোপ এবং যন্ত্রপাতি রয়েছে।

এখানে রয়েছে দুটি সোলার টেলিস্কোপ। সেগুলো ব্যবহার করে দিনের সূর্যও পর্যবেক্ষণ করা যায়।

মহাকাশের ছবি তোলার জন্য বিশেষ ব্যবস্থাও রয়েছে এখানে। এক বিশেষ ক্যামেরা ব্যবহার করে ধারণ করা হয় মহাকাশের ছবি। তবে অন্যান্য ছবির মতো মূহুর্তেই তোলা সম্ভব হয় না মহাকাশের ছবি। একেকটি ছবি তুলতে বেশ কয়েক ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয় ক্যামেরা পার্সনকে। একাগ্রতা আর ধৈর্যই হলো এমন ফটোগ্রাফির প্রথম শর্ত।

ভবিষ্যতে ১০০ ইঞ্চি ডায়ামিটার রিফ্লেক্টর টেলিস্কোপ স্থাপনের পরিকল্পনাও আছে বেনুর।

সীমিত সক্ষমতা নিয়ে আপাতত মানুষকে আগ্রহী করে তোলাই লক্ষ্য

বেনুর ব্যক্তিগত উদ্যোগে স্থাপিত এই মানমন্দিরের কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে। তবে এই অবজারভেটরির মাধ্যমে বেনু নতুন প্রজন্মকে মহাকাশ সম্পর্কে জানাতে চান। তার মতে, 'উন্নত বিশ্বের অনেক দেশের তুলনায় এই যন্ত্রগুলোর সক্ষমতা কম হলেও এর মাধ্যমে সবাইকে মহাকাশের বিষয়াবলী সম্পর্কে মনোযোগী ও অবগত রাখতে চান। এ সম্পর্কে বাস্তবিক জ্ঞান থাকলে মানুষ আরও উচ্চতর গবেষণায় আগ্রহী হবে।'

বিশ্বের বড় বড় মহাকাশ গবেষণা সংস্থার সাথে কাজ করতে চান বেনু। এতে করে শিক্ষার্থীরা সেসব সংস্থার সাথে গবেষণা করতে গিয়ে সীমাবদ্ধতার কথা উপলদ্ধি করবে এবং তা থেকে উত্তরণের পথ খুঁজবে।

তিনি এখানে বিশ্বের উন্নত সব প্রযুক্তি স্থাপন করতে না পারলেও তার দৃঢ়তা যে এই মানমন্দির তথা অবজারভেটরিকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যাবে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। তাছাড়া বেনু সাহেবের অনেক গুণের মাঝে একটি হলো, সীমাবদ্ধতাকে স্বীকার করে তা উতরে যাওয়ার প্রচেষ্টা। তিনি চান সমস্ত সীমাবদ্ধতা কাটিয়ে উঠে নতুন নতুন প্রযুক্তি যুক্ত করতে।

এখানে আসতে পারবেন সাধারণ মানুষও

মানমন্দির নিয়ে বেনুর সাথে কথা বলার এক ফাঁকে মধ্যবয়সী এক ভদ্রলোক উপস্থিত হলেন, সঙ্গে তিন সন্তান ও স্ত্রী। বেনু সাহেবকে মহাকাশ নিয়ে তার সন্তানের আগ্রহের কথা জানালে তিনি তাদেরকে মহাকাশ দেখার ব্যবস্থা করে দেন।

বেনু জানালেন, 'যে-কেউ যোগাযোগ করে আসতে পারবেন। এখানে একটি 'অ্যাস্ট্রো উঠান' আছে যেখানে সাধারণভাবে পর্যবেক্ষণের ব্যবস্থা থাকবে।'

তবে মহাকাশ নিয়ে যাদের আগ্রহ রয়েছে তাদেরকে বিশেষভাবে স্বাগত জানায় এই প্রতিষ্ঠান।

কেউ আসেন অ্যাস্ট্রো-ফটোগ্রাফি করতে, আবার কেউ আসেন মহাকাশ পর্যবেক্ষণ করতে। এখানে আসা মানুষদের আগ্রহের উপর ভিত্তি করে তাদেরকে উপদলে ভাগ করে দেওয়া হয়। সেই দলগুলোর সাথে মহাকাশ পর্যবেক্ষণ কিংবা ছবি তোলার সুযোগ পাবেন আগ্রহীরা। কেউ চাইলে নিজেদের গ্রুপ নিয়ে এসেও পর্যবেক্ষণ করতে পারবেন।

তবে অবজারভেটরিতে যাওয়ার রাস্তার উপরের ব্রিজটির নির্মাণকাজ 'ঠিকাদারের অবহেলায়' এখনও শেষ হয়নি। বাইরে থেকে কোন গবেষকের আসতে তাই বেগ পেতে হয় তাদের।

কীভাবে যাবেন এই মানমন্দিরে

গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার বাঘের বাজার নেমে অটোরিকশায় বেনু ভিটার নাম বলতেই চিনে ফেললেন—ভাড়া চাইলেন ত্রিশ টাকা। গাজীপুরের ভাওয়াল বনাঞ্চলের মধ্য দিয়ে চলতে থাকলো অটো রিকশা। দু'পাশের সবুজ গাছপালা মাথা নুইয়ে যেন অভিবাদন জানাল।

কিন্তু বিপত্তি বাধল অন্য জায়গায়। কিছুদূর যাওয়ার পর রাস্তার মাঝে ছোট খাল পড়ল। সেখানে নামিয়ে দিয়ে অটো চালক বললেন, এই পথে হেঁটে গেলেই পাবেন বেনু ভিটা, অবশ্য তা স্থানীয়দের কাছে 'বেনু মিয়ার প্রজেক্ট' হিসেবে পরিচিত।

যাইহোক, খালের উপর দেওয়া সরু সেই বাঁধ পার হয়ে হাঁটতে থাকলাম। মিনিট পনেরো পর দেখা মিলল স্থাপনাটির।

যে কারণে শহরের বাইরে মানমন্দির

শহর থেকে এতদূরে কেন এই গবেষণা প্রতিষ্ঠান করা হলো তারও উত্তর মিলল বেনুর কথায়। বেনু বলেন, 'আকাশ পর্যবেক্ষণ করার জন্যে প্রয়োজন পরিচ্ছন্ন বায়ুমন্ডলের। ইতোপূর্বে আমরা ঢাকায় একটি অবজারভেটরি স্থাপন করেছি—সেখানে অনেক সীমাবদ্ধতা রয়েছে। বায়ুদূষণ এবং আলোদূষণের জন্য সেখান থেকে ভালো অবজারভেশন সম্ভব হয় না। এছাড়াও সেখানে উঁচু ভবনের কারণে চারপাশে সব আবদ্ধ হয়ে আছে। এর ফলে আকাশ দেখার পরিসরও ছোট হয়ে গেছে।'

এসব সমস্যার বাইরে গিয়ে মানমন্দিরের কাজ যথাযথভাবে পরিচালনার জন্যে প্রয়োজন ছিল নির্মল বায়ু ও আলোর দূষণমুক্ত পরিবেশ। একইসাথে প্রয়োজন ছিল মুক্ত আকাশের। সেসব দিক বিবেচনায় রেখে শাহজাহান মৃধা গাজীপুরে এই স্থানটিকে নির্বাচন করেন।

এখানেও প্রতিবন্ধকতা ছিল। চারপাশের লম্বা গাছপালার কারণে আকাশ অনেকটা ছোট হয়ে গিয়েছিল। তাই চারতলা ভবনের ছাদে, প্রায় ৪০ ফুট উচ্চতায় এই মানমন্দির স্থাপন করেন বেনু। এতে করে সব সমস্যাকে পেছনে রেখে আকাশ পর্যবেক্ষণ সম্ভব হচ্ছে।

পূর্বেও নির্মাণ করেছেন মানমন্দির

১৯৯০ সালে অনুসন্ধিৎসু চক্রের জ্যোতির্বিজ্ঞান বিভাগের সভাপতি থাকাকালীন বেনু জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি জাদুঘরের ছাদে নির্মাণ করেন বাংলাদেশের প্রথম অবজারভেটরি। ১৯৯০ সালের ৭ই ফেব্রুয়ারি এই অবজারভেটরির উদ্বোধন করা হয়। এদিক-ওদিক ঘুরে তহবিল সংগ্রহ করেন বেনু, সংগ্রহ করেন ১৬ ইঞ্চি রিফ্লেক্টিং টেলিস্কোপ।

সময়ের ব্যবধানে সেই টেলিস্কোপ চলে গেছে জাদুঘরে। এ নিয়ে তিনি অনেকটা আক্ষেপ নিয়েই বলেন, 'টেলিস্কোপের ব্যবস্থা করে দিয়েছিলাম মহাকাশ দেখার জন্যে। কিন্তু অযত্ন-অবহেলায় সেই টেলিস্কোপ নষ্ট হয়ে গেল। এখন আকাশ নয়, সেই নষ্ট টেলিস্কোপেরই প্রদর্শনী চলছে বিজ্ঞান জাদুঘরে।'

এছাড়া বেইলি রোডের পূর্বপাশে তার নিজের মালিকানায় যে ভবন রয়েছে তার ছাদেও তিনি একটি মানমন্দির স্থাপন করেছেন। কিন্তু চারপাশের আকাশচুম্বী ভবনের চাপে সেখানেও এক চিলতে আকাশের দেখা মেলা ভার! ব্যক্তিগত নানা সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও শেষে তিলে তিলে বেনু গড়ে তুলেছেন গাজীপুরের অবজারভেটরিটি।

Related Topics

টপ নিউজ

জ্যোতির্বিজ্ঞান / বেনুভিটা / মানমন্দির / সৌরজগৎ

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.

MOST VIEWED

  • প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক: নির্বাচন নিয়ে বাদানুবাদে জড়ায় বিএনপি ও এনসিপি
  • সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য সুখবর: ১০–১৫ শতাংশ বিশেষ সুবিধা দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি, কার্যকর ১ জুলাই
  • ‘একটি ফুলকে বাঁচাব বলে’ গানের শিল্পী আপেল মাহমুদ প্রমাণ দিলেন তিনি বীর মুক্তিযোদ্ধা
  • ১৮ মাসের প্রস্তুতি, রাশিয়ায় ড্রোন পাচার: যেভাবে রুশ বিমানঘাঁটিতে ইউক্রেনের দুঃসাহসিক হামলা
  • জাতীয় গ্রিডে আসতে চলেছে রূপপুরের বিদ্যুৎ

Related News

  • রাতের আকাশে বিরল গ্রহসমাবেশ, ফের দেখা যাবে ২০৪০ সালের পর
  • বড় এক গ্রহকে গিলে ফেলল নক্ষত্র! এই প্রথম বাঙালি বিজ্ঞানীর নেতৃত্বে এমন ঘটনা পর্যবেক্ষণ
  • আমরা কি কখনো বিগ ব্যাং-এর ছবি দেখতে পাব? যা বলছেন বিশেষজ্ঞ
  • এক মিনিটে পড়ুন: চাঁদ কি সারাক্ষণই দৃশ্যমান?
  • শুক্র গ্রহে প্রাণের সম্ভাব্য নিদর্শন খুঁজে পেয়েছেন জ্যোতির্বিদরা

Most Read

1
বাংলাদেশ

প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক: নির্বাচন নিয়ে বাদানুবাদে জড়ায় বিএনপি ও এনসিপি

2
বাংলাদেশ

সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য সুখবর: ১০–১৫ শতাংশ বিশেষ সুবিধা দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি, কার্যকর ১ জুলাই

3
বাংলাদেশ

‘একটি ফুলকে বাঁচাব বলে’ গানের শিল্পী আপেল মাহমুদ প্রমাণ দিলেন তিনি বীর মুক্তিযোদ্ধা

4
আন্তর্জাতিক

১৮ মাসের প্রস্তুতি, রাশিয়ায় ড্রোন পাচার: যেভাবে রুশ বিমানঘাঁটিতে ইউক্রেনের দুঃসাহসিক হামলা

5
বাংলাদেশ

জাতীয় গ্রিডে আসতে চলেছে রূপপুরের বিদ্যুৎ

The Business Standard
Top

Contact Us

The Business Standard

Main Office -4/A, Eskaton Garden, Dhaka- 1000

Phone: +8801847 416158 - 59

Send Opinion articles to - oped.tbs@gmail.com

For advertisement- sales@tbsnews.net

Copyright © 2022 THE BUSINESS STANDARD All rights reserved. Technical Partner: RSI Lab