Skip to main content
  • মূলপাতা
  • অর্থনীতি
  • বাংলাদেশ
  • আন্তর্জাতিক
  • খেলা
  • বিনোদন
  • ফিচার
  • ইজেল
  • মতামত
  • অফবিট
  • সারাদেশ
  • চাকরি
  • প্রবাস
  • English
The Business Standard বাংলা

Friday
June 06, 2025

Sign In
Subscribe
  • মূলপাতা
  • অর্থনীতি
  • বাংলাদেশ
  • আন্তর্জাতিক
  • খেলা
  • বিনোদন
  • ফিচার
  • ইজেল
  • মতামত
  • অফবিট
  • সারাদেশ
  • চাকরি
  • প্রবাস
  • English
FRIDAY, JUNE 06, 2025
সোভিয়েত যুগের দিনগুলো: এখনো অনেকে যেভাবে সোভিয়েতের প্রতি টান অনুভব করেন

ফিচার

কামরুন নাহার চাঁদনী & মাসুম বিল্লাহ
03 October, 2022, 12:35 pm
Last modified: 04 October, 2022, 10:40 am

Related News

  • কয়েক দশকের তৈরি বাইডেনের ইউক্রেন বিপর্যয়
  • ডুবে যাওয়া সোভিয়েত সাবমেরিন উদ্ধারে সিআইএ’র দুর্ধর্ষ অভিযান
  • সোভিয়েত ইউনিয়নের ওপর গুপ্তচরবৃত্তি করতে ‘মাইন্ড রিডার’ নিয়োগ দিয়েছিল সিআইএ
  • সোভিয়েত আমলের পুরনো গাড়ির ব্র্যান্ড ফিরিয়ে আনছে রাশিয়া
  • গর্বাচেভ কার ছিলেন? পূর্বের নাকি পশ্চিমের?

সোভিয়েত যুগের দিনগুলো: এখনো অনেকে যেভাবে সোভিয়েতের প্রতি টান অনুভব করেন

'সোভিয়েতরা তাদের সাহিত্য, সংস্কৃতিকে বাণিজ্যিকভাবে প্রচার করতে চায়নি। আপনি অনেক ফরাসি, ইউরোপীয়, এবং জাপানিজ ব্র্যান্ড দেখতে পাবেন। কিন্তু ক্যাসপারস্কি বাদে রাশিয়ার আর কোনো ব্র্যান্ডের নাম আপনার জানা নেই। মার্কেটিংয়ের ব্যাপারটা রাশিয়ানদের মধ্যে নেই।'
কামরুন নাহার চাঁদনী & মাসুম বিল্লাহ
03 October, 2022, 12:35 pm
Last modified: 04 October, 2022, 10:40 am

পান্থপথের রাস্তার ধারের অস্থায়ী দোকান থেকে স্বচ্ছ কাচের তৈরি একটা রাশিয়ান ভদকার বোতল কিনেছিলেন জাহেদুল হক। 'রাশিয়ান' যেকোনো কিছুতেই তার বিশেষ আগ্রহ। ওই ভদকার বোতলটি জাহেদুলের এতই আপন ছিল যে তার বোন সেটা ভুলক্রমে ভেঙে ফেললে বোনের সঙ্গে বেশ কয়েকদিন কথা বলেননি তিনি।

জাহেদুলের বোনের ভাষ্যে, 'এ ঘটনা থেকে বোঝা যায় আমার ভাইয়ের সমাজতান্ত্রিক সোভিয়েত রাশিয়াকে নিয়ে কতটুকু আবেগ জড়িয়ে আছে।' তাদের পরিবারে সোভিয়েত প্রভাবিত সদস্যদের মধ্যে তারা 'দ্বিতীয় প্রজন্ম' ছিলেন  বলে জানান তিনি।

'আমার বাবা ছিলেন খাঁটি কম্যুনিস্ট।'

সোভিয়েতের দিন শেষ হয়েছে অনেক আগে। বাংলাদেশের বামপন্থী রাজনীতিরও এখন আর আগের মতো আবেদন আর সমর্থন নেই। তবে জাহেদুলের মতো এখনো এ দেশে অনেককে পাওয়া যাবে যারা রাশিয়াকে দিব্যি পছন্দ করে। হোক সেটা পশ্চিমাদের নিয়ে তাদের স্বপ্নভঙ্গ বা অতীত সোভিয়েতের জন্য রয়ে যাওয়া অনুরাগ।

এইতো কয়দিন আগে ঢাকায় অবস্থিত রাশিয়ান দূতাবাস 'মজাদার খাবার, সুদর্শনা নারী ও হাজারো নিষেধাজ্ঞার ধাক্কা সামলে টিকে থাকা অর্থনীতির' কথা বলে এক ভিডিওবার্তায় মানুষজনকে রাশিয়ায় বাস করার আমন্ত্রণ জানিয়েছে।

বাংলাদেশের মানুষও ওই ভিডিও দেখে বেশ আনন্দ পেয়েছে। যদিও তারা বেশিরভাগ বুঝতে পেরেছে ওই ভিডিও পশ্চিমাদের ব্যঙ্গ করে বানানো হয়েছে, তবে ভিডিওটির মন্তব্যের ঘরে ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধে রুশদের পক্ষে বাংলাদেশিদের সমর্থনের বিষয়টিও স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।

দুর্বোধ্য, তা-ই না?

বাংলাদেশ যেভাবে রপ্তানির জন্য যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় দেশগুলোর ওপর নির্ভরশীল, তাতে দেশের একটা অংশের মানুষ ও মূলধারার গণমাধ্যমের সোভিয়েতপ্রীতি দেখে যেকোনো পশ্চিমাব্যক্তির কাছে বিষয়টি দুর্বোধ্য মনে হতে পারে।

২০২১ সালে বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রে ৮.১ বিলিয়ন ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছে। এছাড়া ৩.৪ বিলিয়ন ডলার নিয়ে বাংলাদেশের এফডিআইয়ের সবচেয়ে বড় উৎসও ছিল যুক্তরাষ্ট্র। ২০২০-২১ অর্থবছরে প্রায় ১৭ ছিলেন ডলারের বেশি মূল্যমানের পণ্য ইউরোপে রপ্তানি করছে বাংলাদেশ।

এদিকে ২০১৮-১৯ অর্থবছরের বাংলাদেশের রাশিয়াতে রপ্তানি ছিল কেবল ৫৪৮.৩৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। একই সময়ে রাশিয়া থেকে বাংলাদেশ আমদানি করেছে ৬৫৩ মিলিয়ন ডলারের পণ্য।

২০২১ সালে বাংলাদেশ ও রাশিয়ার মধ্যে সার্বিক দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের পরিমাণ ছিল এক বিলিয়ন ডলারের কিছু বেশি।

বাংলাদেশি তরুণদের মধ্যে যারা রাশিয়ায় পড়তে যেতে চান, তাদের সংখ্যাও বেশ অল্প। এছাড়া অভিবাসনের গন্তব্য হিসেবেও রাশিয়া তাদের তালিকার শীর্ষে নেই।

অনেকেরই মনে হতে পারে, তাহলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোতে এত বাংলাদেশি কী কারণে রাশিয়াকে চলমান যুদ্ধে সহায়তা করছে? মূলধারার কিছু গণমাধ্যমও কেন রাশিয়ার বয়ানের পক্ষেই খবর প্রকাশ করে?

রাশিয়ার সঙ্গে এ আবেগ বর্তমানে কিছুটা কমতে থাকলেও এর একটি গভীর সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক ইতিহাস রয়েছে। আর এই সংস্কৃতি ও রাজনীতির সমন্বয়কে বোঝার জন্য প্রয়োজন প্রায় শতবর্ষী একটি ইতিহাসের গভীরে অনুসন্ধান চালানো।

সাংস্কৃতিক ও রাজনীতির শতবর্ষী সম্পর্ক

'আমার এক বন্ধুর নাম ছিল রুশো। দুজন সিনিয়রের মধ্যে একজনকে ডাকা হতো লেনিন, আরেকজন ছিলেন স্টালিন,' বলেন সাংবাদিক ও যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ তৌহিদ ফিরোজ। তিনি ব্যাখ্যা করেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে সোভিয়েত ইউনিয়নের সহায়তার কারণে দেশে সমাজতান্ত্রিক গণতন্ত্রের উদ্ভব ঘটে। তার ফলে এখানে রাশিয়ান নামগুলো জনপ্রিয়তা পায়।

'সেসময় বাংলাদেশে সমাজতন্ত্রের প্রচণ্ড ক্রেজ ছিল। এক্ষেত্রে ভূমিকা রেখেছিল ভিয়েতনাম যুদ্ধও। ১৯৭০-এর দশকের শুরু থেকেই বাংলাদেশের অ্যাক্যাডেমিয়াতে সাম্রাজ্যবাদবিরোধী একটি দর্শন বিরাজমান ছিল,' বলেন ফিরোজ। তিনি আরও জানান দেশের শিক্ষিত মধ্যবিত্ত শ্রেণীর কাছে সমাজতন্ত্রের বেশ আবেদন ছিল।

তবে কমিউনিস্ট পার্টির নেতা মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম মনে করেন বাংলাদেশে সোভিয়েতদের প্রভাব শুরু হয়েছিল সেই ব্রিটিশ আমল থেকেই।

'প্রতিটি সভ্যতাই একে অপরকে সবসময় প্রভাবিত করে। কিন্তু ভারতীয় উপমহাদেশে রাশিয়ার সাংস্কৃতিক প্রভাবের ক্ষেত্রে এর একটি রাজনৈতিক মাত্রাও ছিল। কারণ রাশিয়ায় কম্যুনিস্ট বিপ্লব সারাবিশ্বে একটি উত্তাল পরিস্থিতির সূচনা করেছিল,' মুজাহিদুল বলেন। তিনি আরো যোগ করেন, 'বিশেষত যেসব দেশ কলোনিয়াল শাসনের অধীনে ছিল, সোভিয়েত বিপ্লব তাদের মধ্যে নতুন একটি চেতনা জাগ্রত করেছিল। তখন ভারতীয় উপমহাদেশ থেকে অনেক বিপ্লবী সোভিয়েত ইউনিয়নে গিয়েছিলেন।'

১৯২৫ সালে কমিউনিস্ট পার্টি অব ইন্ডিয়া প্রতিষ্ঠিত হয়। দলটির একজন সহপ্রতিষ্ঠাতা ছিলেন ব্রিটিশ ভারতের বাংলা প্রদেশের চট্টগ্রামের সন্দ্বীপে জন্ম নেওয়া মুজফ্‌ফর আহমদ।

স্বভাবতই এই রাজনৈতিক সংযোগের কারণে এখানে রাশিয়ার সাংস্কৃতিক প্রভাব ছড়িয়ে পড়া সহজ হয়েছিল। এর ফলে বাংলাদেশে জনপ্রিয় হয়ে উঠে রুশ সাহিত্য। দেশে ম্যাক্সিম গোর্কি, ফিওদর দস্তয়েভস্কির মতো রুশ সাহিত্যিকদের অনেক পাঠক তৈরি হয়।

'ফ্যাসিজম-বিরোধী আন্দোলনকে কেন্দ্র করে তখন একটি সাহিত্য আন্দোলন গড়ে উঠেছিল। আর এই আন্দোলনে মূল ভূমিকা রেখেছিল রাশিয়ান সাহিত্য। বামপন্থী রাজনৈতিক কর্মীদের জন্য রুশ সাহিত্য অবশ্যপাঠ্য ছিল। ১৯৭১ সালে রণাঙ্গনে শিবিরে থাকার সময় যুদ্ধকৌশল জানার জন্য আমি মার্শাল জুকভের বই পড়েছিলাম। কিন্তু আমার ভেতর যেটা আন্দোলিত করেছিল তা সমাজেও কিছুটা উপস্থিত ছিল,' বর্ষীয়ান এ রাজনীতিবিদ বলেন।

বই ও সিনেমায় প্রভাবের সন্ধানে

১৯৭০-এর দশকে বাংলাদেশি প্রজন্মের একটি বড় অংশকে প্রভাবিত করেছিল সোভিয়েত ইউনিয়ন। এর ৫০ বছর পরে এসে এ প্রভাবের কতটুকু এসেছিল রুশ রাজনীতি থেকে আর কতটুকুর উৎস ছিল রাশিয়ার বই আর সিনেমাগুলো, তা নিয়ে যে কেউ প্রশ্ন তুলতেই পারেন।

'তখন একদম বাচ্চা ছিলাম। এক বন্ধুর বাড়িতে একদিন দারুণ একটা বই চোখে পড়ে। বইটা ছিল হার্ডকভার, ইংরেজি। ভেতরে অনেক অলংকরণ। কাগজের মান আর প্রিন্টিংটাও বেশ ভালো। আমার এখনো মনে আছে, বইয়ের ভেতরের গল্পগুলো ছিল মোরগ, ব্যাঙ ইত্যাদি নিয়ে। এটা ছিল একটা সোভিয়েত বই,' সোভিয়েত সাহিত্যের সংস্পর্শে আসার কথা এভাবে বর্ণনা করেন সাংবাদিক শাহরিয়ার খান।

'আরেকদিন ওই বন্ধুর বাড়িতে আমি 'রুশদেশের উপকথা' নামক আরেকটি বইয়ের সন্ধান পাই। সেসময় এমন কোনো বাচ্চা ছিল না যে এই বইটা পড়েনি। এই বইয়ের মাধ্যমে আমি রুশ সংস্কৃতি ও ফোকলোরের প্রথম আসল স্বাদ পাই। এরপর থেকে আমি অনেক সোভিয়েত বই সংগ্রহ করেছি,' জানান শাহরিয়ার।

সে সময় সোভিয়েত ইউনিয়নের অনেক প্রকাশনা সংস্থা সোভিয়েত সাহিত্যের অনুবাদ প্রকাশ করত। প্রগতি এবং রাদুগা ছিল বাংলা অনুবাদের প্রকাশনা। তারা লিও টলস্টয়, ফিওদর দস্তয়েভস্কি, ম্যাক্সিম গোর্কি, অ্যান্টন চেকভ, মিখাইল লার্মন্টভ, নিকোলাই গোগল, চেঙ্গিজ আইৎমাতোভ, ইভান তুর্গেনেভের মতো ধ্রুপদী সোভিয়েত সাহিত্যিকদের রচনাগুলোর অনুবাদ প্রকাশ করেছিল। প্রগতির হয়ে সবচেয়ে বেশি অনুবাদ করেছিলেন সম্ভবত ননী ভৌমিক।

শাহরিয়ার খানের মতো অনেকে যারা সেসময় রাশিয়ান সাহিত্য, সিনেমা, সংগীত ইত্যাদিতে মজেছিলেন, তারা সবাই অবশ্য কমিউনিস্ট হয়ে যাননি। তবে এদের মধ্যে অনেকের আবার আদর্শগত দিক থেকে সমাজতন্ত্রের প্রতি ঝোঁক ছিল।

তখন রুশ সাহিত্য ও সংস্কৃতি বাংলাদেশের সাহিত্য ও সংস্কৃতিকেও দারুণভাবে প্রভাবিত করেছিল।

'সস্তাদরের থ্রিলারের চরিত্রগুলো রবিনহুডের দ্বারা প্রভাবিত ছিল। তবে তাদের মধ্যে আবার সমাজতান্ত্রিক কিছু আমেজও থাকত,' তৌহিদ ফিরোজ বলেন। 'এসব গল্পের মূল চরিত্র যেকোনো সামাজিক নিয়ন্ত্রণের বাইরে বাস করতেন এবং গরিবদের সাহায্য করার জন্য দুর্নীতিবাজ ও ধনীদের অর্থ লুট করতেন,' তিনি যোগ করেন।

সৈয়দ সালাউদ্দিন জাকী'র 'ঘুড্ডি' বা ১৯৭৫ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত আলমগীর কবিরের 'সূর্যকন্যা' সিনেমাটির কথা চিন্তা করুন। সূর্যকন্যার লেনিন নামক মূল চরিত্রটি ছিল নিম্ন-মধ্যবিত্ত পরিবারে বেড়ে ওঠা বেকার শিল্পী। আলমগীর কবিরকে এখনও বাংলাদেশের সেরা চলচ্চিত্র নির্মাতাদের মধ্যে একজন হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

আলমগীর কবির নিজেই বামপন্থী ছিলেন।

'বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পরে এই চলচ্চিত্রনির্মাতারা এ দেশের সিনেমা-শিল্প ইত্যাদির প্রগতিশীলতার প্রতিনিধি ছিলেন এবং তাদের কাছ থেকেই বাকিরা প্রভাবিত হয়েছিল,' বলেন তৌহিদ ফিরোজ।

'সিনেমা ও টেলিভিশন নাটকগুলোতে দেখা যেত মূলচরিত্র সবসময় মেজাজি, বিপ্লবী বামপন্থী বেকার ছিলেন। এ ট্রোপ ব্যবহার করে পরে চলচ্চিত্র-নাটক বানিয়েছেন অন্যরাও।'

১৯৮০-এর দশকে প্রচারিত দেশের প্রথম টিভি সিরিয়াল 'সকাল-সন্ধ্যা' বামপন্থী আদর্শ দ্বারা প্রভাবিত ছিল। বেশিরভাগ টেলিভিশন নাটক-সিরিয়ালে সমাজতান্ত্রিক দৃষ্টিভঙ্গির স্পর্শ ছিল। ১৯৮৪ বা '৮৫ সালে বিটিভিতে একটি নাটক প্রচারিত হতো। নাম ছিল 'আয়না'। ওই নাটকের মূলচরিত্র একজন সাংবাদিকের চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন রাইসুল ইসলাম আসাদ। নাটকটির গল্প গড়ে উঠেছিল ইগালিটারিয়ান (সমতাভিত্তিক) আদর্শের ওপর ভিত্তি করে,' তিনি বলেন।

দেওয়ালে দেওয়ালে চে'র মুখ

১৯৭০-এর দশকে বাংলাদেশের শিক্ষিত তরুণদের একটি বড় অংশ সমাজতন্ত্র দ্বারা প্রভাবিত হয়েছিল। এদের অনেকে সরকারি চাকরি ছেড়ে দিয়ে সাংবাদিকতায় যোগ দিয়েছিলেন।

'প্রয়াত জাকারিয়া সিরাজী, এইউএম ফখরুদ্দীন, জামাল আরসালান এবং যারা এখনো কাজ করে যাচ্ছেন, যেমন এনএম হারুন, নীল রতন হালদার, শহীদ রহিম, মাকসুদ ইবনে রহমান, মাহফুজ আনাম, নুরুল কববর, ও শাহানূর ওয়াহিদ- এরা সবাই শিক্ষিত ছিলেন। সাংবাদিকতায় প্রবেশের ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা রেখেছিল এদের সমাজতান্ত্রিক ইগালিটারিয়ান আদর্শ,' তৌহিদ বলেন।

দ্বিতীয়ত, এটি ছিল বিদ্যমান ব্যবস্থার প্রতি এক ধরনের বিদ্রোহ। এদের সবাই সাংবাদিকতায় এসেছিলেন কারণ তারা ভেবেছিলেন এর মাধ্যমে তারা সমাজে কিছু পরিবর্তন আনতে পারবেন, তৌহিদ বলেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, সাংবাদিক, লেখক, কবিসহ অনেকেই রুশ সিনেমা দেখার জন্য তখন নিয়মতি সোভিয়েত সাংস্কৃতিক কেন্দ্রে যেতেন।

চে গুয়েভারা, সমাজ থেকে বিপ্লবের সৃষ্টির ধারণা, ইউটোপিয়া, ও ইগালিটারিয়ান সমাজব্যবস্থা; এগুলো সবই তখনকার সময়ে বহুল চর্চিত ও জনপ্রিয় ধারণা ছিল। সেসময় মানুষ কম্যুনিস্ট ম্যানিফেস্টোসহ অন্যান্য কম্যুনিস্ট বই কিনত।

কিন্তু এরপর ১৯৮৫ থেকে ১৯৯১ সালের মধ্যে দৃশ্যপট বদলে যায়। পেরেস্ত্রইকা ও গ্লাসনস্তের পর সোভিয়েত ইউনিয়নের ভেতরের খবর বাইরে চলে আসে। ১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে পড়ে। একই সময় বাংলাদেশের অর্থনীতিও উন্মুক্ত অর্থনীতিতে পরিণত হয় এবং বিশ্ববাণিজ্যের সঙ্গে সংযোগ সৃষ্টি হয়। এভাবে দেশীয় সমাজব্যবস্থার পুরোদস্তুর পুঁজিবাদী হওয়ার পথ খুলে যায়। এরপর থেকে বাংলাদেশের সোভিয়েত রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক প্রভাব ক্রমশ কমতে থাকে।

'প্রভাবশালী অর্থনীতি'র কাছে হার

শাহরিয়ার খান মনে করেন তার প্রজন্মের ওপর সোভিয়েত সাহিত্য ও সংস্কৃতির প্রভাব 'স্নায়ুযুদ্ধের একটি ইতিবাচক দিক' ছিল।

'সোভিয়েতরা নিজেদের সংস্কৃতিকে অন্য দেশে ছড়িয়ে দিয়েছিল এবং তারা এ কাজে বেশ দক্ষ ছিল। তাদের সঙ্গীত, সাহিত্য, সিনেমা উঁচুমানের ছিল- সংস্কৃতি ছিল সমৃদ্ধ। তাদের সংস্কৃতি মানসম্পন্ন না হলে বিশ্বজুড়ে এটির এত আবেদন তৈরি হতো না,' শাহরিয়ার খান বলেন।

'আমরা তাদের বই পড়েছি, তাই সেগুলোকে আমাদের পরবর্তী প্রজন্মের মাঝে ছড়িয়ে দিতে চেষ্টা করেছি। বইগুলোর চমৎকারিত্বের কারণে এগুলোর প্রভাব দীর্ঘদিন ধরে আমাদের মধ্যে ছিল।'

'তবে ১৯৮০'র দশকের শুরুর দিক থেকে সোভিয়েত সংস্কৃতির প্রভাব এখান থেকে ধীরে ধীরে উবে যেতে থাকে। একই দশকের মাঝামাঝিতে মিখাইল গর্বাচেভের সাথে সোভিয়েত সংস্কৃতিও পুরোপুরি হারিয়ে যায়,' শাহরিয়ার বলেন।

কিন্তু এত দ্রুত কীভাবে হারিয়ে গেল এ জৌলুস?

'প্রভাবশালী অর্থনীতির সংস্কৃতি কর্তৃত্বপূর্ণ সংস্কৃতি হয়ে ওঠে,' সহজ কথায় উত্তর দেন মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম।

'রোমান ভাষা প্রাধান্য পেয়েছিল কারণ রোম ছিল ধনী। এরপর ইংরেজি এল যখন ব্রিটিশরা শক্তিশালী হলো। তারপর এসেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র,' তিনি বলেন।

মুজাহিদুল ইসলাম সেলিমের বক্তব্য নিয়ে দ্বিমত পোষণ করা যায় কিন্তু প্রভাবশালী মার্কিন সংস্কৃতি যে বাংলাদেশ থেকে সোভিয়েত সংস্কৃতিকে একেবারে দূর করে দিয়েছে সে ব্যাপারে কারও দ্বিমত থাকার কথা নয়।

'কমিউনিজম-পূর্ব রাশিয়ার সংস্কৃতি বিশ্বের অন্যতম সমৃদ্ধ সংস্কৃতি ছিল। অন্যদিকে আধুনিক সময়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পাশাপাশি কোরিয়া এবং জাপানেরও জনপ্রিয় সংস্কৃতি রয়েছে,' শাহরিয়ার খান বলেন।

'বিটিএসের কথা ধরা যাক। এরা কিন্তু কোরিয়ান সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা পায়না। তারা নির্ভর করে বাজারের ওপর। সোভিয়েতরা তাদের সাহিত্য, সংস্কৃতিকে বাণিজ্যিকভাবে প্রচার করতে চায়নি। আপনি অনেক ফরাসি, ইউরোপীয়, এবং জাপানিজ ব্র্যান্ড দেখতে পাবেন। কিন্তু ক্যাসপারস্কি বাদে রাশিয়ার আর কোনো ব্র্যান্ডের নাম আপনার জানা নেই। মার্কেটিংয়ের ব্যাপারটা রাশিয়ানদের মধ্যে নেই,' খান বলেন।

তবে সোভিয়েত সংস্কৃতির প্রভাব ও পতন বিষয়ে ভিন্ন ধারণা পোষণ করেন গবেষক ও সাংবাদিক আফসান চৌধুরী।

'ইবেতে সবচেয়ে বেশি বিক্রি হওয়া পোস্টার ছিল চে গুয়েভারা'র। অথচ কেউ চেকে পছন্দ করেনা। কিন্তু চে একজন রোমান্টিক চরিত্র- সুদর্শন পুরুষ যিনি যুদ্ধ করতে করতে মারা গেছেন। এই সবগুলো ব্যাপার চে'র রোমান্টিসিজমের সাথে জড়িয়ে গেছে,' আফসান চৌধুরী বলেন।

'তরুণেরা ফ্যাশন অনুসরণ করে। চেকে আবেদনময়ী হিসেবে বিবেচনা করা হতো।' 

'যেসব শিক্ষার্থীরা সোভিয়েতে পড়ালেখা করতে গিয়েছে তারা চাকরির বাজারে খুব একটা সুবিধা করতে পারেনি। নতুন প্রজন্মকে তাদের ক্যারিয়ার নিয়ে উদ্দেশ্য পরিবর্তন করতে হয়েছে। অন্য সংস্কৃতিকে আঁকড়ে ধরার ব্যাপারটা নির্ভর করে আপনি সেটা থেকে কী পাচ্ছেন তার ওপর,' তিনি বলেন।

এক ধরনের পুনরুত্থানের চেষ্টা

কিন্তু এখনো দেশে সোভিয়েত-স্মৃতিকাতর কিছু মানুষ রয়েছেন। এদের অনেকেই এই ভেবে পরিতাপ করেন যে তাদের সন্তানেরা তাদের মতো রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক পরিবেশে বেড়ে উঠতে পারছে না।

এমন একজন হচ্ছেন দিও প্রকাশনীর হাসান তারেক। রাদুগা ও প্রগতির প্রকাশিত পুরোনো বইগুলো নতুন করে প্রকাশ করছে এটি।

'সোভিয়েত বই পড়ে বড় হওয়া শেষ প্রজন্ম আমরা। আমরা চেয়েছি আমাদের সন্তানদের মধ্যে বইগুলো পৌঁছে দিতে। এ বইগুলো যাতে কালের গর্ভে হারিয়ে না যায় তার একটি বাণিজ্যিক প্রচেষ্টা এটি,' তিনি বলেন।

'আমার মনে হয় না সেসব দিনগুলোকে আমরা আর কখনো ফিরিয়ে আনতে পারব। কিন্তু যারা এগুলো পড়বে তারা ব্যক্তিগতভাবে তার একটা স্বাদ অনুধাবন করতে পারবে,' যোগ করেন হাসান। 

 

Related Topics

টপ নিউজ

সোভিয়েত ইউনিয়ন / সোভিয়েত যুগ / রুশ সংস্কৃতি

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.

MOST VIEWED

  • ‘মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল আইন’ থেকে বাতিল হল মুজিব বাহিনী, মুজাহিদ বাহিনীর নাম
  • তিক্ত লড়াইয়ে ট্রাম্প-মাস্ক: দুই ক্ষমতাধরের ‘ব্রোম্যান্স’ এখন অতীত, টালমাটাল ওয়াশিংটন
  • বিদেশি গণমাধ্যমে বাংলাদেশবিরোধী অপপ্রচার রোধে সহায়তার প্রস্তাব চীনের
  • মাস্ক ‘বদ্ধ উন্মাদ' হয়ে গেছেন: ট্রাম্প; 'আমাকে ছাড়া ট্রাম্প জিততে পারতেন না': মাস্ক
  • জি-৭ শীর্ষ সম্মেলনে আমন্ত্রণ পাননি মোদি, ভারত-কানাডা সম্পর্কের টানাপোড়েনের প্রতিফলন
  • পৃথিবীর ইতিহাসের সবচেয়ে বড় বন্যার ফলে যেভাবে সৃষ্টি হয়েছিল ভূমধ্যসাগর

Related News

  • কয়েক দশকের তৈরি বাইডেনের ইউক্রেন বিপর্যয়
  • ডুবে যাওয়া সোভিয়েত সাবমেরিন উদ্ধারে সিআইএ’র দুর্ধর্ষ অভিযান
  • সোভিয়েত ইউনিয়নের ওপর গুপ্তচরবৃত্তি করতে ‘মাইন্ড রিডার’ নিয়োগ দিয়েছিল সিআইএ
  • সোভিয়েত আমলের পুরনো গাড়ির ব্র্যান্ড ফিরিয়ে আনছে রাশিয়া
  • গর্বাচেভ কার ছিলেন? পূর্বের নাকি পশ্চিমের?

Most Read

1
বাংলাদেশ

‘মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল আইন’ থেকে বাতিল হল মুজিব বাহিনী, মুজাহিদ বাহিনীর নাম

2
আন্তর্জাতিক

তিক্ত লড়াইয়ে ট্রাম্প-মাস্ক: দুই ক্ষমতাধরের ‘ব্রোম্যান্স’ এখন অতীত, টালমাটাল ওয়াশিংটন

3
বাংলাদেশ

বিদেশি গণমাধ্যমে বাংলাদেশবিরোধী অপপ্রচার রোধে সহায়তার প্রস্তাব চীনের

4
আন্তর্জাতিক

মাস্ক ‘বদ্ধ উন্মাদ' হয়ে গেছেন: ট্রাম্প; 'আমাকে ছাড়া ট্রাম্প জিততে পারতেন না': মাস্ক

5
আন্তর্জাতিক

জি-৭ শীর্ষ সম্মেলনে আমন্ত্রণ পাননি মোদি, ভারত-কানাডা সম্পর্কের টানাপোড়েনের প্রতিফলন

6
আন্তর্জাতিক

পৃথিবীর ইতিহাসের সবচেয়ে বড় বন্যার ফলে যেভাবে সৃষ্টি হয়েছিল ভূমধ্যসাগর

EMAIL US
contact@tbsnews.net
FOLLOW US
WHATSAPP
+880 1847416158
The Business Standard
  • About Us
  • Contact us
  • Sitemap
  • Privacy Policy
  • Comment Policy
Copyright © 2025
The Business Standard All rights reserved
Technical Partner: RSI Lab

Contact Us

The Business Standard

Main Office -4/A, Eskaton Garden, Dhaka- 1000

Phone: +8801847 416158 - 59

Send Opinion articles to - oped.tbs@gmail.com

For advertisement- sales@tbsnews.net