বাংলাদেশে বিরল মানিকজোড় পাখির বংশবিস্তার

বিপণ্ন প্রজাতির মানিকজোড় পাখি 'এশিয়ান উলিনেকে'র সন্ধান মিলেছে বাংলাদেশে। বাংলায় এর নাম 'ধলা গলা মানিকজোড়'। রাজশাহী ও চাপাইনবাবগঞ্জ এলাকায় এ প্রজাতির মানিকজোড়ের বংশবিস্তারও হয়েছে বলে জানা গেছে এক গবেষণায়। ঢাকার পিক্সমেটিক ডিজিটালের মোহাম্মদ তারিক হাসান এবং নেপালের নেপাল ওপেন ইউনিভার্সিটির বিজ্ঞান, স্বাস্থ্য ও প্রযুক্তি বিভাগের শিক্ষক প্রশান্ত গিমিরের ওই গবেষণাপত্র রোববার প্রকাশ পেয়েছে এসআইএস (স্টর্ক, আইবিস অ্যান্ড স্পুনবিল) কনভারসেশন জার্নালে।
গবেষণায় বলা হয়, দক্ষিণ এশিয়া ও দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ায় এ প্রজাতির মানিকজোড়ের বিচরণ। মাটি থেকে ১ হাজার ৩০ মিটার (কোনো-কোনো ক্ষেত্রে ৫০ মিটার) উপরে, কোনো গাছে কিংবা টাওয়ারের মতো কৃত্রিম অবকাঠামোতে বাসা বাঁধে এরা।

বাংলাদেশে ধলা গলা মানিকজোড়কে শীতকালীন বিরল পরিযায়ী পাখি হিসেবে গণ্য করা হয় এবং এটি এখানে 'মারাত্মক বিপণ্ন' প্রজাতির পাখি হিসেবে তালিকাভুক্ত। বলা হয়, সুন্দরবন, ময়মনসিংহ ও সিলেট অঞ্চলে এটি কালেভদ্রে বংশবিস্তার করে। তবে এ দেশে দীর্ঘকাল এ পাখির কোনো দেখা মেলেনি। দশকব্যাপী চলা গবেষণায় দেখা যায়, ১৯৭১ সালে রাজশাহীতে একটি মৃতপাখি পাওয়া গিয়েছিল। এদিকে, ১৯৯০-এর দশক থেকে ২০১৩ সালের মধ্যে যমুনা নদী, পদ্মা নদী ও সুন্দরবন এলাকায় এ প্রজাতির মাত্র তিনটি মানিকজোড়ের দেখা মেলে।
এতদিন বাংলাদেশে ধলা গলা মানিকজোড়ের কোনো বংশবিস্তারের নথি পাওয়া যায়নি। অবশেষে তারিক ও প্রশান্তের গবেষণাপত্রে বংশবিস্তারের দুটি পর্যবেক্ষণ তুলে ধরা হয়।
২০১৭ সালের নভেম্বরে রাজশাহী জেলায় পদ্মা নদীর কাছাকাছি এক কৃষিজমিতে একটি সেলফোন টাওয়ারে এই মানিকজোড়ের খোঁজ পান ওই দুই গবেষক। স্থানীয়দের কাছ থেকে তারা জানতে পারেন, ওই বাসা থেকে ২০১৭ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত প্রতি বছর যথাক্রমে দুই, তিন ও দুটি বাচ্চা উড়তে দেখা গেছে।

অন্যদিকে, ২০১৮ সালের নভেম্বরে চাপাইনবাবগঞ্জ জেলায় আরেকটি বাসার দেখা মেলে। পদ্মা নদীর খুব কাছেই থাকা আরেকটি সেলফোন টাওয়ারে দুই প্রাপ্তবয়স্ক মানিকজোড়ের বাসাটিতে বাচ্চা ছিল চারটি। অবশ্য, টাওয়ারটিতে নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ চলায় ওই মানিকজোড়দের বসবাস খুবই কঠিন হয়ে পড়ে। তাই ওরা সেই বাসা পরিত্যাগ করেছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
জানা যায়, ধানক্ষেতে বিচরণ করতে ভালোবাসে এ প্রজাতির পাখি। কিন্তু দিনের পর দিন শিকারিদের ফাঁদে পড়ে ওরা এখন বিপন্ন। তবু এত বছর পর আবারও রাজশাহী অঞ্চলে ওদের দেখা মেলায় ধারণা কর যায়, ওই অঞ্চলে মানিকজোড় শিকার কমেছে।