বর্ণবাদের বিরুদ্ধে কালো রাণীর লড়াই

কুচকুচে কালো ত্বকের জন্য বিখ্যাত তিনি। ফ্যাশন-দুনিয়া তাকে চেনে ‘কুইন অব ডার্ক’ নামে। তিনি নিয়াকিম গ্যাটওয়েচ। জন্মগতভাবে সুদানিস। এখন যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক।
গায়ের রঙ খ্যাতি এনে দিলেও এ নিয়ে শুরুতে ভোগান্তি তার কম ছিল না। ইথিওপিয়া ও কেনিয়ার শরণার্থী শিবিরে বেড়ে উঠেছেন তিনি। সেই দিনগুলোতে এমন কালো বলে তাকে কোনো কটু কথা শুনতে হয়নি। কিন্তু তার পরিবার যখন আমেরিকায় পাড়ি জমায়, তখনই বাঁধে বিপত্তি। তখন তিনি ১৩ বছরের কিশোরী। তাকে লক্ষ্য করে চারপাশ থেকে ভেসে আসত নানা বিদ্রূপ। এমনকি নিউইয়র্কের বাফালোর মিডল স্কুলে পড়াকালে সহপাঠীসহ অনেকেরই বর্ণবাদী আচরণের শিকার হতেন তিনি। কেউ কেউ তার সঙ্গে পশুর মতো ব্যবহার করত, কেউ আবার তাকে দেখে ভয় পেয়ে সরে যেত।

বর্ণবাদ সম্পর্কে তখনো কোনো ধারণা ছিল না বলে এমন আচরণের অর্থ বুঝতেন না নিয়াকিম। প্রতিদিনই স্কুল থেকে কাঁদতে কাঁদতে বাড়ি ফিরতেন। সেখান থেকে মিনেসোটার সেন্ট ক্লাউডে এসে হাইস্কুলে ভর্তি হয়ে দেখা পেলেন আরও কিছু সোমালিয়ান ও সুদানিস শিক্ষার্থীর। নতুন স্কুলে পরিস্থিতি তার জন্য কিছুটা ইতিবাচক হলো। তাই বলে উপদ্রব পুরোপুরি থামেনি। খবর অডিটি সেন্টালের।
তাকে শুনিয়ে কেউ কেউ বলত, নিশ্চয় কোনো অসুখের কারণেই গায়ের রঙ এত কালো। কেউ কেউ বলত, নিয়াকিম নাকি গোসলই করেন না। একবার এক উবার ড্রাইভার বলে বসলেন, তিনি যেন ১০ হাজার ডলার খরচ করে গায়ের রঙটা সাদা করে নেন! এ কথা শুনে খুব কষ্ট পেয়েছিলেন নিয়াকিম। তবে ভেঙ্গে না পড়ে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটা পোস্ট দিয়েছিলেন। রাতারাতি তাকে নিয়ে আলোচনা শুরু হয়ে যায় সেবার।

এখন খ্যাতির চূঁড়ায় থাকলেও মডেলিংয়ে তার আগমন ভেবে-চিন্তে ঘটেনি। তখন তার ১৭ বছর বয়স। তার টিউটর ছিলেন ডিজাইনিংয়ের এক ছাত্রী। একটি স্টুডেন্ট ফ্যাশন শোতে নিজের ডিজাইন করা পোশাক পরার অনুরোধ নিয়াকিমকে করেছিলেন সেই তরুণী। আনমনেই রাজি হয়ে গিয়েছিলেন নিয়াকিম। ব্যাপারটি বেশ উপভোগও করেছেন। তারপর থেকে ফ্যাশন দুনিয়ার প্রেমে পড়ে যান তিনি। সুপার মডেলের মতো দাবড়ে বেড়াচ্ছেন মিনেসোটা, নিউইয়র্ক সিটি, লস অ্যাঞ্জেলেসসহ আমেরিকার নানা শহরের নামিদামি ফ্যাশন শোগুলো।

খ্যাতি পেলেও নিপীড়নের সেই দিনগুলো ভুলেননি নিয়াকিম। বরং খ্যাতিকে কাজে লাগিয়ে লড়ছেন বর্ণবাদের বিরুদ্ধে। নিজের ইন্সট্রাগামে নিয়মিতই করছেন এ সংক্রান্ত পোস্ট। সেখানে পাঁচ লক্ষাধিক ফলোয়ার তার।

নিয়াকিম বলেন, ‘নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া কিংবা মন্তব্য এখন আমাকে আর খুব একটা প্রভাবিত করে না; উল্টো মাঝে মধ্যে আমার হাসিই পায়। তবে কিছু কিছু প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্য এতই হীন, মনটা খারাপ করে দেয়। কেউ কেউ বলে, আমি সুন্দরী বলে নয়, বরং আমার জন্য লোকের মায়া হয় বলেই নাকি এত ফলোয়ার। তারা বলে, আমি নাকি দুনিয়ার সবচেয়ে হাবাগোবা মানুষ। কিন্তু লাখ লাখ লোক ঠিকই আমাকে সুন্দরী ভাবে, প্রেরণা যোগায়।’