ক্যানসারে মৃত্যুশয্যায় বাবা, মেয়ের বিয়ে হাসপাতালে

সময় নেই হাতে, নয় বছর ধরে ক্যানসারের বিরুদ্ধে লড়তে লড়তে এসে দাঁড়িয়েছেন শেষ প্রান্তের দরজায়। কিন্তু যেতে কি ইচ্ছে করে? শেষ একটাই ইচ্ছে- একমাত্র মেয়ের বিয়ে দেখে যেতে চান তিনি।
ভারতের পশ্চিমবঙ্গের সন্দীপকুমার সরকারের শরীরে মরণরোগ বাসা বেঁধেছে। এখন সময়ও যেন আর সময় দিতে নারাজ। তেমনটাই আশঙ্কা তার পরিবার ও চিকিৎসকদের। তাই তার চোখের সামনে অন্তত মেয়ের বিয়ের রেজিস্ট্রিটুকু হতে পারে, তারই ব্যবস্থা করল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। আনন্দবাজার পত্রিকার এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানা যায়।
মঙ্গলবার ১২ ফেব্রুয়ারি পশ্চিমবঙ্গের হাওড়ার এক হাসপাতালে বাবা সন্দীপকুমারের সামনেই তার মেয়ে দিওতিমার সরকারি মতে বিয়ে হল। হাসপাতালের ঘরে সব কিছুর ব্যবস্থা করেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
ভারতীয় রেলের অবসরপ্রাপ্ত ইঞ্জিনিয়ার সন্দীপকুমার সরকার। ২০১১ সাল থেকে তিনি জিহ্বার ক্যানসারে আক্রান্ত। মুম্বইয়ের একটি ক্যানসার হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন তিনি। বর্তমানে হাওড়ার একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
তবে নিজের শেষ ইচ্ছে পূরণ করেছেন সন্দীপকুমার, শেষ পর্যন্ত মেয়ের রেজিস্ট্রির প্রশংসাপত্রে নিজেই সই করলেন। কেক কেটে অতিথিদের মুখে কেকের টুকরো তুলেও দিলেন। আর সেই সন্ধ্যায় হল তার অস্ত্রোপচার।
বরাহনগরের বাসিন্দা, সন্দীপকুমার সরকারের মেয়ে দিওতিমা রাজাবাজার সায়েন্স কলেজে শারীরবিদ্যা নিয়ে গবেষণা করছেন। তার সঙ্গে এ দিন বিয়ে হল একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের কর্মকর্তা সুদীপ্ত কুণ্ডুর।
দিওতিমা জানান, ‘‘অদ্ভুত অনুভূতি। আমাদের নতুন জীবন শুরু হল অথচ বাবার জীবন শেষের পথে। চিকিৎসায় আর সাড়া দিচ্ছেন না। শুধু আমাদের একসঙ্গে দেখার অপেক্ষায় মনের জোরে লড়াই করছেন। বাবার ইচ্ছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের জন্য সফল হয়েছে।’’
জামাই সুদীপ্ত বলছেন, ‘‘কয়েক বছর ধরে ওনার লড়াই দেখছি। এমন মনের জোর কারও দেখিনি। হাসপাতাল থেকে বিয়ের অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার ইচ্ছার কথাও জানিয়েছেন।’’
সন্দীপবাবুর এই লড়াইয়ের সর্বক্ষণের সঙ্গী স্ত্রী সুজাতাদেবী। ভবিষ্যৎ কী, তা তিনি আন্দাজ করতে পারেন। তবুও স্বামীর মতো তিনিও হাল ছাড়তে নারাজ। সুজাতাদেবী বলেন, ‘‘জানতাম উনি পারবেন, পেরেছেন।’’
সন্দীপকুমারের লড়াই আর কতক্ষণের, তা সময় বলবে।
তবে হাসপাতাল কর্মীদের কথায়, ‘‘এমন লড়াই বহু দিন মনে থাকবে। আমরা একটা মুহূর্তের সাক্ষী রইলাম।’’