অপরের বিপদে পাশে সবসময় কিউবার মেডিকেল টিম

সারা দুনিয়া যখন করোনা ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়ে যাচ্ছে, তখন সেই লড়াইয়ে শক্তি যোগাচ্ছে কিউবা। বৈশ্বিক এই মহামারির বিরুদ্ধে লড়াই করতে ইতোমধ্যেই ১৪টি দেশে ৫৯৩ জন চিকিৎসাকর্মী পাঠিয়েছে দেশটি। এ তথ্য জানিয়েছে কিউবার স্বাস্থ্যমন্ত্রণালয়।
কিউবা প্রথম মেডিকেল টিম পাঠায় ইতালিতে, ২১ মার্চ। এরইমধ্যে অ্যান্ডোরা, ভেনেজুয়েলা, নিকারাগুয়া, সুরিনাম, জ্যামাইকা, হাইতিসহ ১৪টি দেশে টিম পাঠিয়েছে দেশটি।
২৮ মার্চ প্রয়াত কিংবদন্তি নেতা ফিদেল কাস্ত্রোর দেশের বর্তমান স্বাস্থ্যমন্ত্রী জোসে অ্যাঞ্জেল পোর্টাল মিরান্ডা এক টুইট বার্তায় জানান, ইতিহাসে অনেকবারই অন্য দেশের সংকটকালে পাশে দাঁড়িয়েছে কিউবা। তবে কখনো এত অল্প সময়ে এত দেশে এত বড় টিম পাঠায়নি।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে জানানো হয়, এ পর্যন্ত চিকিৎসা সেবা দিতে ১৭৯ জন ডাক্তার, ৩৯৯ জন নার্স এবং ১৫ জন হেলথ টেকনোলজিস্ট পাঠিয়েছে কিউবা। খবর আল জাজিরার।
এই চিকিৎসাকর্মীরা উনবিংশ শতকে কিউবার প্রথম স্বাধীনতা যুদ্ধে লড়াই করা, যুক্তরাষ্ট্রে জন্ম নেওয়া জেনারেল হেনরি রিভের নামে কিউবার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় পরিচালিত বিশেষ ইউনিট 'হেনরি রিভ ইমার্জেন্সি মেডিকেল কন্টিনজেন্ট'-এর অন্তর্ভুক্ত।
২০০৫ সালে বিপ্লবী নেতা ফিদেল কাস্ত্রোর হাতে এই ইউনিটের সৃষ্টি। মূলত প্রাকৃতিক বিপর্যয় ও প্রাদুর্ভাব মোকাবেলায় এই ইউনিট কাজ করে।

প্যান আমেরিকান হেলথ অর্গানাইজেশনের তথ্যমতে, ২০০৫ থেকে ২০১৭ সালের মধ্যে বন্যা, ভূমিকম্প, ঘূর্ণিঝড় ও মহামারির মতো বিপর্যয়ে আক্রান্ত ২১টি দেশে এই ইউনিটের কর্মীরা ৩৫ লাখ মানুষকে সাহায্য করেছেন। এরমধ্যে ২০১৪ সালে পশ্চিম আফ্রিকার ইবোলা প্রাদুর্ভাবেও তাদের ভূমিকা বিশ্বব্যাপী প্রশংসিত হয়েছে।
এদিকে ১৮ মার্চ কয়েকজন করোনা আক্রান্ত যাত্রীসহ একটি ব্রিটিশ ক্রুজ শিপ যখন ক্যারিবিয়ান অন্যান্য দেশে নোঙ্গর করার অনুমতি পাচ্ছিল না, কিউবা সেটিকে ভিড়তে দেয়। সেই জাহাজের প্রায় ৬৮০ যাত্রী এরপর হাভানা থেকে চার্টার্ড ফ্লাইটে যুক্তরাজ্যে ফিরে গেছেন।
কিউবায় এ পর্যন্ত ১৭০ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। এদের মধ্যে মারা গেছেন চারজন। করোনা প্রতিরোধে জনসচেতনা তৈরি করা হলেও অন্যান্য দেশের মতো দেশজুড়ে লকডাউন করেনি দেশটি।
'সকলে আমরা সকলের তরে, প্রত্যেকে আমরা পরের তরে...'
অন্য দেশের বিপদে কিউবার চিকিৎসাদলের ঝাঁপিয়ে পড়ার ইতিহাস বেশ পুরনো। ফিদেল কাস্ত্রোর নেতৃত্বে কিউবান বিপ্লব পরবর্তী শুরুর দিনগুলো থেকেই এর নজির দেখে আসছে বিশ্ব।
কাস্ত্রো রাষ্ট্রক্ষমতায় বসার এক বছর পর, ১৯৬০ সালে কিউবা একটি মেডিকেল টিম পাঠিয়েছিল চিলিতে, সেদেশের প্রলয়ঙ্কারী ভূমিকম্পের প্রেক্ষিতে। এর তিন বছর পর সদ্যস্বাধীন আলজেরিয়ার স্বাস্থ্যখাত গড়ে দিতে চিকিৎসাকর্মী পাঠিয়েছে কিউবা।
অন্যদিকে, ভেনেজুয়েলায় হুগো শ্যাভেজ ক্ষমতায় আসার পর সেদেশে মেডিকেল স্টাফ ও শিক্ষক পাঠানো শুরু করে কাস্ত্রোর দেশ।
কিউবার এ রকম উদ্যোগের নজির প্রচুর। গত ৫০ বছরেরও বেশিকাল ধরে ১ লাখ ৩৫ হাজার থেকে ৪ লাখ কিউবান ডাক্তার বিদেশে গিয়েছেন সেবা দিতে।
করোনা দুর্যোগে দেশটির সেই অনন্য ঐতিহ্যের প্রমাণ আরও একবার পেল গোটা দুনিয়া।