সেরার মুকুট জিতে বিসিবির বিদায়ী সম্মাননা নিলেন তামিম

একটু আগেই বিপিএলের ফাইনাল শেষ হয়েছে, টানা দ্বিতীয় শিরোপা জেতার আনন্দে মেতেছে ফরচুন বরিশাল। উদযাপনের শুরুটা নিজেদের নিয়ে, পরে পুরো দল মিরপুর স্টেডিয়াম প্রদক্ষীণ করেছে দর্শকদের অভিন্দনের জবাব দিতে। এরপরই তামিম ইকবাল পর্ব। আগেরদিনই বিসিবি জানিয়ে রেখেছিল, ম্যাচের পর পুরস্কার বিরতণীর আগে বিদায়ী সম্মাননা জানিয়ে অভিজ্ঞ এই ওপেনারকে বিশেষ স্মারক দেওয়া হবে। চ্যাম্পিয়নের মুকুট জিতে সেই স্মারক নিলেন ফরচুন বরিশালের অধিনায়ক।
গত ১০ জানুয়ারি আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসর নেন তামিম, বাংলাদেশের ক্রিকেটে রাখা অবদানের জন্য তামিমকে বিসিবির এই সম্মাননা। শুরুতেই মিরপুর স্টেডিয়ামের জায়ান্ট স্ক্রিনে দেখানো হয় তামিমের ক্যারিয়ারের বিশেষ বিশেষ মুহূর্ত দিয়ে বানানো ভিডিওচিত্র। যেখানে দেখানো হয় লর্ডসের সেঞ্চুরি উদযাপন, এক হাতে ব্যাটিং করাসহ তামিমের আরও কিছু আইকনিক মুহূর্ত। এরপর তামিমের সঙ্গে খেলার অভিজ্ঞতা ও তাকে শুভ কামনা জানান সতীর্থরা।
এই পর্ব শেষে জাতীয় দলের তামিমের দীর্ঘ দিনের দুই সতীর্থ মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ও মুশফিকুর রহিমকে যেকে নেন উপস্থাপক। বরিশালেও তামিমের সতীর্থ হওয়া এ দুজন জানান দেশসেরা ব্যাটসম্যানের সঙ্গে নিজেদের খেলার অভিজ্ঞতার কথা। এরপর তামিমের টেস্ট, ওয়ানডে এবং টি-টোয়েন্টি জার্সি দিয়ে বানানো একটি ফ্রেমসহ সম্মাননা স্মারক দেওয়া হয় জাতীয় দলের সাবেক ওয়ানডে অধিনায়ককে।
শিরোপা জেতার দিনে বিসিবির বিশেষ সম্মাননা, আপ্লুত হয়েছেন তামিম। এর মাঝেই তিনি বিশেষ এক বার্তা দিয়েছেন বিভিন্ন ক্রিকেটারদের ভক্ত-সমর্থকদের উদ্দেশ্যে। নির্দিষ্ট ক্রিকেটারদের ভক্ত-সমর্থকদের মধ্যকার দ্বন্দ্ব দেশের ক্রিকেটকে ধ্বংস করছে বলে মনে করেন তিনি। এ কারণে ক্রিকেটারদের বদলে কেবলই বাংলাদেশকে সমর্থন দেওয়ার আহ্বান জানান তামিম। বিপিএল বরিশালকে সমর্থন দেওয়ায় ভক্ত-সমর্থকদের ধন্যবাদ দিয়ে তিনি বলেন, 'ভক্ত-সমর্থকরা দুর্দান্ত ছিল। তাদের আমি ধন্যবাদ দিতে চাই। কোনো সাকিবিয়ান, তামিমিয়ান বা মাশরাফিয়ান নেই। শুধু একটাই সমর্থনের বিষয় আছে, বাংলাদেশ।'
'এই জিনিসগুলো বাংলাদেশ ক্রিকেটকে ধ্বংস করেছে। তাই দয়া করে এসব বন্ধ করুন। আপনারা আমার, সাকিবের অথবা মাশরাফির সমর্থক হতে পারেন, কিন্তু আমরা যখন খেলি, বাংলাদেশি ক্রিকেটার হিসেবেই খেলি। এসব জিনিস তরুণ প্রজন্মকে ধ্বংস করবে। আমার পক্ষ থেকে এটাই শেষ বার্তা। আমরা সবাই বাংলাদেশি, আর কিছু নই। তাই দয়া করে দলকে সমর্থন করুন। এই দলটা তরুণ, তারা ভুল করবে, তারা খেলবে। তবে এটা আপনাদেরই দল। তাই সবাই একসঙ্গে থাকুন। এখানে ব্যক্তি বিশেষ কিছু নেই। সবাই বাংলাদেশকে সমর্থন করুন।' যোগ করেন তামিম।
১৭ বছর আগে ওয়ানডে ক্রিকেট দিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক হয় তামিমের। ২০০৭ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে দেশের হয়ে প্রথম ম্যাচ খেলেন দেশের ইতিহাসের সেরা এই ব্যাটসম্যান। এই ফরম্যাটে তামিম শেষ ম্যাচ খেলেন নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে, ঘরের মাঠে ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে। বাংলাদেশের জার্সিতে ২৪৩ ম্যাচের ওয়ানডে ক্যারিয়ারে ১৪টি সেঞ্চুরি ও ৫৬টি হাফ সেঞ্চুরিসহ ৩৬.৬৫ গড়ে ৮ হাজার ৩৫৭ রান করেছেন তামিম। তিনিই বাংলাদেশের একমাত্র ব্যাটসম্যান, যার নামের পাশে ৮ হাজারের বেশি ওয়ানডে রান আছে। রানের মতো সেঞ্চুরি ও হাফ সেঞ্চুরিতেও বাংলাদেশের মধ্যে সবার উপরে তামিম।
৭০ টেস্টের ১৩৪ ইনিংসে ১০টি সেঞ্চুরি ও ৩১টি হাফ সেঞ্চুরিসহ ৩৮.৮৯ গড়ে ৫ হাজার ১৩৪ রান করেছেন তামিম। যা বাংলাদেশি ব্যাটসম্যানদের মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। বাংলাদেশের হয়ে তিনি সর্বশেষ টেস্ট খেলেন ২০২৩ সালের এপ্রিলে। ৭৮ টি-টোয়েন্টিতে একটি সেঞ্চুরি ও ৭টি হাফ সেঞ্চুরিসহ ২৪.৬৫ গড়ে তামিমের রান ১ হাজার ৭৫৮ রান। সংক্ষিপ্ততম এই ফরম্যাটে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের মধ্যে একমাত্র সেঞ্চুরিটি তার। তামিম সর্বশেষ টি-টোয়েন্টি খেলেন ২০২০ সালের মার্চে, এই ফরম্যাটকে বিদায় জানান ২০২২ সালের জুলাইয়ে।