জুলাই অভ্যুত্থানের নারীরা পেলেন যুক্তরাষ্ট্রের সম্মানজনক পুরস্কার, প্রধান উপদেষ্টার অভিনন্দন

জুলাই গণঅভ্যুত্থানে অংশ নেওয়া নারী শিক্ষার্থীরা যুক্তরাষ্ট্রের সম্মানজনক 'মেডেলিন অলব্রাইট অনারারি গ্রুপ অ্যাওয়ার্ড' পেয়েছেন। আন্তর্জাতিক নারী সাহসিকা বা ইন্টারন্যাশনাল উইমেন অব কারেজ—আইডব্লিউওসি পুরস্কারের পাশাপাশি এই পুরস্কার দেয় যুক্তরাষ্ট্র।
গত শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের ওয়েবসাইটে এই পুরস্কারের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। আগামী ১ এপ্রিল পররাষ্ট্র দপ্তরে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও ও মার্কিন ফার্স্ট লেডি মেলানিয়া ট্রাম্পের আয়োজনে বিজয়ীদের এই অ্যাওয়ার্ড দেওয়া হবে।
মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের ওয়েবসাইটে বলা হয়, দমন-নিপীড়নের বিরুদ্ধে বাংলাদেশে গত বছর জুলাই-আগস্টে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে একদল সাহসীনারী গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। তারা অসাধারণ সাহসিকতার সঙ্গে বিক্ষোভে অংশ নেন; হুমকি ও সহিংসতার শিকার হওয়ার ঝুঁকি থাকার পরও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও পুরুষ বিক্ষোভকারীদের মধ্যে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ চালিয়ে গেছেন। সহযোদ্ধা পুরুষ বিক্ষোভকারীদের যখন গ্রেপ্তার করা হয়েছে, তখন এই নারীরা উদ্ভাবনী উপায়ে যোগাযোগ বজায় রেখেছেন, আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছেন। নানা প্রতিবন্ধকতা মোকাবিলা করে ইন্টারনেট সম্পূর্ণ বন্ধ থাকার পরও তারা বিক্ষোভ চালিয়ে গেছেন। অনিশ্চয়তার মধ্যেও তাদের এই সাহসিকতা ও নিঃস্বার্থতা অসমসাহসের সংজ্ঞা।
ওয়েবসাইটে বলা হয়, মেডেলিন অলব্রাইট অনারারি গ্রুপ অ্যাওয়ার্ডের জন্য মনোনীত হয়েছে 'উইমেন স্টুডেন্ট প্রোটেস্ট লিডারস অব বাংলাদেশ'।
তবে ব্যক্তিগতভাবে এ পুরস্কার প্রয়াখান করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখপাত্র উমামা ফাতেমা গতকাল শনিবার তার ভেরিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্টে পোস্ট দেন। তাতে তিনি লেখন, 'নারী আন্দোলনকারীদের কালেকটিভ স্বীকৃতি আমাদের জন্য অত্যন্ত সম্মানজনক। তবে ২০২৩ সালের অক্টোবরে ফিলিস্তিনের ওপর ইসরায়েলের নারকীয় হামলাকে প্রত্যক্ষভাবে এন্ডোর্স করে যাওয়ার জন্য অ্যাওয়ার্ডটি ব্যবহৃত হয়েছে। ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাযুদ্ধকে অস্বীকার করে পুরস্কারটি ইসরায়েলের হামলাকে যে প্রক্রিয়ায় জাস্টিফাই করেছে, তা পুরস্কারের নিরপেক্ষতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে। যেখানে ফিলিস্তিনি জনগণ তাদের মৌলিক থেকে বঞ্চিত হয়ে আসছে। তাই ফিলিস্তিনি স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রতি সম্মান রেখে এই পুরস্কার আমি ব্যক্তিগতভাবে প্রত্যাখ্যান করলাম।'
এদিকে জুলাই কন্যারা ২০২৫ সালের যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মর্যাদাপূর্ণ 'আন্তর্জাতিক সাহসী নারী' পুরস্কার অর্জন করায় অভিনন্দন জানিয়েছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
জুলাই কন্যাদের সাহসিকতার প্রতীক অভিহিত করে প্রধান উপদেষ্টা আজ তাদেরকে অভিনন্দনবার্তা পাঠিয়েছেন বলে জানিয়েছে সংবাদসংস্থা বাসস।
সেখানে তিনি জুলাই কন্যাদের উদ্দেশে বলেন, "তোমাদের সবাইকে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পক্ষ থেকে আন্তরিক অভিনন্দন জানাচ্ছি। এই স্বীকৃতি ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্ট মাসে শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বে সংঘটিত গণ-অভ্যুত্থানে তোমাদের অসাধারণ সাহসিকতা, নেতৃত্ব এবং অটল অঙ্গীকারের শক্তিশালী প্রমাণ; সেই সংকটময় সময়ে তোমাদের কৃতি সত্যিকার সাহসিকতার উদাহরণ সৃষ্টি করেছে"।
শান্তিতে নোবেলজয়ী অধ্যাপক ইউনূস বলেন, গণ-অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দিয়ে তোমরা কেবল প্রতিরোধের প্রতীক হিসেবে দাঁড়িয়ে যাওনি, একইসঙ্গে অস্থির একটি সময়ে জাতিকেও আশা দিয়েছ।
অভিনন্দন বার্তায় উল্লেখ করা হয়, পুরস্কারে যেমনটি বলা হয়েছে, অটল সংকল্পের সঙ্গে তোমরা সহিংস দমন-পীড়নের মুখোমুখি হয়েছ, নিরাপত্তা বাহিনীর আক্রমণের মুখে তোমরা পুরুষ সহ-সংগ্রামীদের সামনে ঢাল হিসেবে দাঁড়িয়েছ। ইন্টারনেট যখন বন্ধ ছিল তখনো মারাত্মক চ্যালেঞ্জের মধ্যেও ন্যায়বিচারের জন্য লড়াই চালিয়ে যাওয়ার অভিনব উপায় খুঁজে বের করেছ।
অভিনন্দন বার্তায় অধ্যাপক ইউনূস বলেন, "তোমাদের শক্তি, দৃঢ়তা এবং দৃঢ় সংকল্প বাংলাদেশ ও বিশ্বব্যাপী অগণিত ব্যক্তি ও গোষ্ঠীকে অনুপ্রাণিত করে চলেছে। তোমাদের নিঃস্বার্থ প্রচেষ্টা আমাদের সকলের কাছে স্মরণ করিয়ে দেয় যে ন্যায়বিচারের সাধনা কখনই সহজ নয়, তবে তা সর্বদা সার্থক। তোমরা বিশ্বকে দেখিয়েছ যে প্রকৃত নেতৃত্ব এবং ত্যাগ কেমন হয় এবং তোমাদের সাহসের মাধ্যমে তোমরা বাংলাদেশের জন্য একটি উজ্জ্বল এবং আরও ন্যায়সংগত ভবিষ্যতের পথ প্রশস্ত করেছ'।
জুলাই কন্যাদের জন্য দেশবাসী গর্বিত উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, তোমাদের প্রত্যেকের জন্য আমরা ভীষণভাবে গর্বিত এবং এটি তোমাদের প্রাপ্য এক স্বীকৃতি যা তোমাদের অটল স্পৃহাকে প্রতিফলিত করে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার তোমাদের সাথে আছে এবং একসাথে আমরা গণতন্ত্র, ন্যায়বিচার এবং স্বাধীনতার আদর্শের দিকে কাজ চালিয়ে যাব, যা তোমরা এত সাহসের সাথে রক্ষা করেছ।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ এগিয়ে যাওয়ার পথে তোমাদের সম্মুখসারিতে এবং কেন্দ্রীয় ভূমিকায় পাওয়ার জন্য আমরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি।
তোমরা সমগ্র বাংলাদেশকে গর্বিত করেছ উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, 'আরও একবার এই অসাধারণ অর্জনের জন্য অভিনন্দন।'
উল্লেখ্য, যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর ২০২৩ সাল থেকে আইডব্লিউওসি অ্যাওয়ার্ডের সঙ্গে মেডেলিন অলব্রাইট অনারারি গ্রুপ অ্যাওয়ার্ড দিচ্ছে। সাবেক মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেডেলিন অলব্রাইটের নামে এই পুরস্কার প্রবর্তন করা হয়।