‘কেন হচ্ছে না, এই প্রশ্নের উত্তর আমার কাছে নেই’

একই উইকেটে ব্যাটিংয়ের কতো তফাৎ! যে উইকেটে রান তুলতে সংগ্রাম করতে হলো বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের, নাজমুল হোসেন শান্ত ও তাওহিদ হৃদয় ছাড়া কেউ-ই পারলেন না; সেই উইকেটে কী দাপুটে ব্যাটিং করে গেলেন ডেভিড ওয়ার্নার, ট্রাভিস হেড, গ্লেন ম্যাক্সওয়েলরা। বাংলাদেশের গড়া মাঝারি সংগ্রহও তাদের ব্যাটিংয়ের সামনে হয়ে উঠলো মামুলি! ১১.২ ওভারেই ১০০ রান তুলে ফেলে অজিরা। বৃষ্টির কারণে ডাকওয়ার্থ-লুইস-স্টার্ন পদ্ধতিতে ২৮ রানে জেতে তারা।
তবে কি এটা সামর্থ্যের পার্থক্য? অনেকেই হয়তো উত্তরে 'হ্যাঁ' বলে দেবেন। আর সেটা বাংলাদেশের সাম্প্রতিক পারফরম্যান্সের কারণেই। বিশ্বকাপ খেলতে যাওয়ার আগে ঘরের মাঠে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ৪-১ ব্যবধানে জেতা সিরিজে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ সংগ্রহ ছিল ১৬৫। যুক্তরাষ্ট্রের বিপক্ষে সিরিজে ১৫৩ এবং এখন পর্যন্ত বিশ্বকাপে তাদের সর্বোচ্চ দলীয় সংগ্রহ ১৫৯।
সুপার এইটে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ১৪০ রান তুলতেই 'জান' লাগিয়ে দিতে হয় বাংলাদেশকে। অথচ সুপার এইটের প্রথম তিন ম্যাচে আগে ব্যাটিং করা প্রতিটি দল ১৮০ বা তার চেয়ে বেশি রান তুলেছে। এই তিনটি ইনিংস বলে ভালো উইকেটেই হচ্ছে শেষ আটের লড়াই। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাটিংয়ে নামতেই ভিন্ন দৃশ্য। যদিও পরে ধারণা পাল্টে যায় অজিদের শাসন করা ব্যাটিংয়ে। একই উইকেটে এমন তফাৎ কেন, কিংবা বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা বড় ইনিংস খেলতে পারছেন না কেন? নাজমুল হোসেন শান্ত জানিয়েছেন, উত্তরটা নেই তার কাছে।
সব চেষ্টা করে যখন কেউ ব্যর্থ হন, তখন তার এমন উত্তর হয়। বাংলাদেশ অধিনায়কের উত্তরেও অসহায়ত্ব স্পষ্ট। ব্যাটম্যানরা কেন পারছেন না, ম্যাচের পর সংবাদ সম্মেলনে এমন প্রশ্ন করা হলে ৩৬ বলে ৪১ রান করা শান্ত বলেন, 'কেন পারছি না, সেটা বলা মুশকিল। আমার কাছে মনে হয়, দলের সবার সেই (বড় ইনিংস খেলার) সামর্থ্য আছে। অতীতে বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন সময় করেও দেখিয়েছে। কিন্তু (বিশ্বকাপে) কেন হচ্ছে না, এই প্রশ্নের উত্তর আমার কাছেও নেই। সবাইকে তার স্বাভাবিক খেলাটা খেলার স্বাধীনতাও দেওয়া হয়েছে। কিন্তু কোনোভাবেই হচ্ছে না।'
স্বাধীনতা দেওয়া হলেও ব্যাটসম্যানদের ব্যাট হাসছে না। তবে সেমি-ফাইনালের আশা বাঁচিয়ে রাখতে হলে বাকি থাকা দুই ম্যাচে যে এমন হলে চলবে না, তা মনে করালেন শান্ত। শেষ চারের রেসে টিকে থাকতে পরের দুই ম্যাচে ভারত ও আফগানিস্তানকে হারাতে হবে বাংলাদেশকে। এমন ব্যাটিং করে গেলে এই দলের বিপক্ষে জেতা সম্ভব হবে না, সহজেই তা বুঝতে পারছেন শান্ত।
ম্যাচ দুটি থেকে পাওয়ার অনেক কিছু আছে জানিয়ে বাংলাদেশ অধিনায়ক বলেন, 'দুটি ম্যাচ আমাদের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ। সেখান থেকে আমাদের অনেক কিছু পাওয়ার আছে। দুটি ম্যাচই জিতলে পারলে আমরা আরও ভালো অবস্থানে যাব। অবশ্যই প্রত্যেক ম্যাচই আমরা জেতার জন্য খেলব। দলের কাছে আমার চাওয়া, সবাই যেন স্বাধীনভাবে খেলে। কিন্তু এখন যেভাবে ব্যাটিং করছি, তা আবার করলে জয় পাওয়া খুব কঠিন।'
নিউ ইয়র্কে ধীর গতির উইকেট নিয়ে অনেক আলোচনা হয়েছে, সেন্ট ভিনসেন্টেও সেভাবে রান হয় না। তবে অ্যান্টিগার উইকেট তেমন নয়। নিজেদের ব্যর্থতাতেই যে বড় সংগ্রহ গড়তে পারেননি, তা মেনে নিয়েছেন শান্ত, 'এখানকার কন্ডিশন একেবারেই আলাদা। আগের ম্যাচে (নেপালের বিপক্ষে) বল ঘুরেছে। কিন্তু আজকের উইকেট ফ্ল্যাট ছিল। ব্যাটিংয়ের জন্য বেশ ভালো ছিল। আমরা আগের চেয়ে ভালো ব্যাটিং করেছি ঠিকই, তবে আমাদের ১৬০ থেকে ১৭০ রান করা উচিত ছিল।'
অল্পতে গুটিয়ে যাওয়ার পেছনে অ্যান্টিগার কন্ডিশন বা উইকেটের দায় দেখেন না শান্ত। তার ভাষায়, 'না, আমি তেমন মনে করি না। পেশাদার খেলোয়াড় হিসেবে আমাদের সব ধরনের উইকেটেই মানিয়ে নিতে হবে। উইকেট বেশ ভালো ছিল। কিন্তু আমরা পরিকল্পনামাফিক খেলতে পারিনি। বিশেষ করে নতুন বলে পাওয়ারপ্লেতে ভালো করতে পারিনি। শেষ ৫-৬ ওভারে ফিনিশিংও ভালো হয়নি। এ সময় আমরা অনেক উইকেট হারিয়েছি। শেষটা ভালো করতে পারলে ১৬০ থেকে ১৭০ রান হতে পারতো।'