যুক্তরাষ্ট্রের বিপক্ষে জিততে ঘাম ছুটে গেল দক্ষিণ আফ্রিকার

গ্রুপ পর্বের চারটি ম্যাচই জেতে দক্ষিণ আফ্রিকা, গ্রুপসেরা হয়ে সুপার এইটে পা রাখে প্রোটিয়ারা। চারে চার, তবু অস্বস্তি ছিল তাদের। একটি ম্যাচেও যে দাপট দেখিয়ে জিততে পারেনি এবারের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের অন্যতম ফেবারিটরা। প্রথম তিন ম্যাচ জিততে ঘাম ছুটে যায় প্রোটিয়াদের, নেপালের বিপক্ষে হারতে হারতে জেতে। সুপার এইট পর্বেও তাদের জয়ের গল্প লেখা হলো একইভাবে। বড় সংগ্রহ গড়েও যুক্তরাষ্ট্রকে হারাতে ভালোই বেগ পেতে হলো দক্ষিণ আফ্রিকাকে।
বুধবার অ্যান্টিগার স্যার ভিভিয়ান রিচার্ডস স্টেডিয়ামের সুপার এইটে দুই নম্বর গ্রুপের ম্যাচে যুক্তরাষ্ট্রকে ১৮ রানে হারিয়েছে এইডেন মার্করামের দল। ফল দেখে মনে হতে পারে সহজেই জিতেছে দক্ষিণ আফ্রিকা। শেষ হিসাবও তাই বলে, তবে যুক্তরাষ্ট্রের ব্যাটিংয়ের সময় ক্ষণে ক্ষণে বদলেছে ম্যাচের রং। ১৮তম ওভার পর্যন্তও ম্যাচে ছিল প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপে অংশ নিয়ে চম জাগানিয়া পারফরম্যান্স করা দলটি। কিন্তু দারুণ ব্যাটিং করতে থাকা হারমিত সিংকে ফিরিয়ে যুক্তরাষ্ট্রকে ম্যাচ থেকে ছিটকে দেন প্রোটিয়া পেসার কাগিসো রাবাদা।
যুক্তরাষ্ট্র হারলেও লড়েছে বুক চিতিয়ে। তাদের এই হার না মানা মানসিকতার প্রমাণ অবশ্য আগেই মিলেছে। প্রথম ম্যাচে কানাডার দেওয়া বিশাল লক্ষ্য তাড়া করে জেতে বিশ্বকাপের সহ-আয়োজকরা। পরের ম্যাচে তাদের শিকার শিরোপা প্রত্যাশী পাকিস্তান, সুপার ওভারে জিতে শেষ আটে ওঠার পথ সহজ করে রাখে তারা। পরের ম্যাচে ভারতকে কাঁপিয়ে দেওয়া যুক্তরাষ্ট্রকে গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচ থেখলতে হয়নি। আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচটি বৃষ্টিতে পরিত্যক্ত হলে এখান থেকে পাওয়া ১ পয়েন্টসহ পাঁচ পয়েন্ট নিয়ে সুপার এইটে ওঠে তারা। সুপার এইটেও দেখা গেল তাদের চোয়ালবদ্ধ প্রত্যয়।
যুক্তরাষ্ট্রের বিপক্ষে টস হেরে আগে ব্যাটিং করতে নামে দক্ষিণ আফ্রিকা। ম্যাচসেরা কুইন্টন নডি ককের অসাধারণ ইনিংসের সঙ্গে মার্করাম ও হেনরিখ ক্লাসেনের সময় উপযোগী ব্যাটিংয়ে ৪ উইকেটে ১৯৪ রান তোলে তারা। জবাবে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত অসাধারণ লড়াই করা ওপেনার আন্দ্রিয়েস গাউস ও হারমিত সিংয়ের ব্যাটে জয়ের আশা এগিয়ে গেলেও শেষ পর্যন্ত পেরে ওঠেনি যুক্তরাষ্ট্র। ৬ উইকেটে ১৭৬ রানে থামে তাদের ইনিংস।
বড় লক্ষ্য তাড়ায় শুরুটা ভালো ছিল না যুক্তরাষ্ট্রের, পাশাপাশি নিয়মিত বিরতিতে হারাতে হয় উইকেট। এর মাঝেও অবিচল থাকেন গাউস। ৭৬ রানে ৫ উইকেট হারানো দলের হাল ধরেন গাউস ও হারমিত। মুহূর্তেই চাপ কাটিয়ে তুলে এ দুজন দাপুটে ব্যাটিং শুরু করেন, সাজিয়ে বসেন চার-ছক্কার ফুলঝুরি। ষষ্ঠ উইকেটে মাত্র ৪৩ বলে ৯১ রানের জুটি গড়ে তোলেন গাউস ও হারমিত। নিজেদের টি-টোয়েন্টি ইতিহাসে ষষ্ঠ উইকেটে সেরা এই জুটিতে ভালোভাবেই ম্যাচে থাকে যুক্তরাষ্ট্র।
জয়ের জন্য শেষ ১৮ বলে ৫০ রান দরকার ছিল তাদের। দক্ষিণ আফ্রিকার রিস্ট স্পিনার তাবরাইজ শামসির করা ১৮তম ওভারে ৩টি ছক্কাসহ ২২ রান তুলে ব্যবধান কমিয়ে আনেন গাউস ও হারমিত। কিন্তু ১৯তম ওভারে হারমিতকে ফিরিয়ে প্রোটিয়াদের জয়ের সম্ভাবনা বাড়ান রাবাদা। ২২ বলে ২টি চার ও ৩টি ছক্কায় ৩৮ রান করেন হারমিত। দুর্বার ব্যাটিং করা গাউস ৪৭ বলে ৫টি করে চার ও চক্কায় ৮০ রানে অপরাজিত থাকেন। আরেক ওপেনার স্টিভেন টেইলর ১৪ বলে ২৪ রান করেন। প্রোটিয়া পেসার রাবাদা ৪ ওভারে ১৮ রানে ৩টি উইকেট নেন। একটি করে উইকেট পান কেশব মহারাজ, আনরখি নরকিয়া ও তাবরাইজ শামসি।
এর আগে ব্যাটিং করা দক্ষিণ আফ্রিকার শুরুটা ভালো না হলেও চাপ বুঝতে হয়নি। দ্বিতীয় উইকেটে ৬০ বলে ১১০ রানের জুটি গড়েন ডি কক ও মার্করাম। ৪০ বলে ৭টি চার ও ৫টি ছক্কায় ৭৪ রানের ঝলমলে ইনিংসে খেলেন ম্যাচসেরা ডি কক। ৩২ বলে ৪টি চার ও একটি ছক্কায় ৪৬ রান করেন অধিনায়ক মার্করাম। ২২ বলে ৩টি ছক্কায় হার না মানা ৩৬ রান করেন ক্লাসেন। ১৬ বলে ২০ রানে অপরাজিত থাকেন ট্রিস্টান স্টাবস। যুক্তরাষ্ট্রের সৌরভ নেত্রাভালকার ও হারমিত সিং ২টি করে উইকেট নেন।