অবশেষে বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে অংশ নেওয়ার অনুমতি পেলেন আরাফাত

অবশেষে অনুমতি মিলল আরাফাতের। বাংলাদেশের প্রথম এই আয়রনম্যান তার কর্মস্থল বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ছাড়পত্র পেয়েছেন বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে অংশগ্রহণ করার।
প্রথমে অনুমতি না দিলেও এবার টনক নড়েছে ব্যাংক কর্তৃপক্ষের। বাংলাদেশ ব্যাংকের অতিরিক্ত পরিচালক মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম খান বুধবার আরাফাতকে বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে অংশ নেওয়ার অনুমতিপত্র দেন।
এর আগে দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডের সঙ্গে এই বিশেষ সাক্ষাৎকারে শামসুজ্জামান আরফাত জানান, আয়রনম্যান ৭০.৩ বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে সুযোগ পেয়েও অংশগ্রহণ করতে পারছেন না তিনি। পেশায় ব্যাংকার আরাফাতকে তার অফিস থেকে এই প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করার জন্য ছুটি দেওয়া হয়নি।
ফিনল্যান্ড এবং ফ্রান্সে অনুষ্ঠিত হবে এবারের আয়রনম্যান চ্যাম্পিয়নশিপ। বাংলাদেশের কেউ কখনো এই প্রতিযোগিতায় এর আগে সুযোগ পাননি। আরাফাতের সামনে সুযোগ ছিলো, বাংলাদেশের নাম উজ্জ্বল করার।
দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বিশেষ এক সাক্ষাৎকারে আরাফাত তার আক্ষেপের কথা জানান, 'আমি খুবই কষ্ট পেয়েছি, একেবারেই ভেঙে পড়েছি। আমার জন্য এটা বিশ্বাস করার কঠিন যে এরকম একটা জায়গায় আমি বাংলাদেশকে প্রতিনিধিত্ব করার সুযোগ পেয়েও যেতে পারছি না। বাংলাদেশের কেউই এর আগে এখানে যেতে পারেনি। আমার অফিসের যেখানে আমাকে আরো উৎসাহ দেওয়া উচিত, কারণ এটি খুবই দুর্লভ একটি সুযোগ। ট্রায়াথলনে এর থেকে সম্মানজনক কিছু আর হয় না।'
আরাফাত নিজেও জানেন না কেন তাকে অনুমতি দেওয়া হলো না, যেখানে তিনি সব ধাপই ঠিকমতো পূরণ করেছেন।
ফিনল্যান্ড এবং ফ্রান্সে হতে যাওয়া আয়রনম্যান চ্যাম্পিয়নশিপ ছাড়াও মালয়েশিয়াতে আয়রনম্যানের আরেকটি প্রতিযোগিতা এবং বার্লিন ম্যারাথনে দৌড়ানোর জন্যেও অনুমতি চেয়েছেন।
এ বিষয়ে আরাফাত জানান, 'আমি আসলে জানিনা, আমি ২০ জুন অনুমতির জন্য আবেদন করেছিলাম। আমার স্পন্সর একজন বিদেশি। সুতরাং বৈদেশিক মুদ্রা আমার এখান থেকে নেওয়ারও কোনো বিষয় নেই। এমনকি যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় থেকে আমার অংশগ্রহণের জন্য চিঠিও দেওয়া হয়েছে। কিন্তু আমার অফিস অনুমতি দেয়নি।'
বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে এ ব্যাপারে ফোনে যোগাযোগ করা হলেও কর্তৃপক্ষ কোনো মন্তব্য করতে রাজি হয়নি।
আরাফাত এখন উপায় খুঁজছেন কীভাবে নিজের স্বপ্ন ধরে রাখার পাশাপাশি চাকরিও করতে পারেন। কারণ এটিই তার আয়ের একমাত্র উপায়, 'বাংলাদেশ ব্যাংকের হয়ে চাকরি করার সময় আমাকে কোনো ধরনের খেলায় অংশ নিতে নিষেধ করা হয়েছে। আমার জন্য অন্য কোনো পেশাও রাতারাতি বেছে নেওয়া কঠিন। এটা বাংলাদেশে একেবারেই নতুন একটা খেলা, এই খেলা আমার পেশা নয় বা এটা খেলে আমি আয়ও করি না। আমাকে আমার পরিবারের দিকেও দেখতে হবে। আমি যা করি সেটা এই খেলার প্রতি ভালোবাসা থেকেই। আমি চাই বাংলাদেশের নাম যেন এই খেলায় ওপরের দিকে থাকে। কিন্তু এই মুহূর্তে দুটো একসঙ্গে চালিয়ে যাওয়া আমার পক্ষে সম্ভব নয়।'
আরাফাত জানেন, ট্রায়াথলনকে বাংলাদেশে জনপ্রিয় করতে এবং এই সম্পর্কে আরো মানুষকে জানাতে হলে অবকাঠামোগত উন্নয়ন সবথেকে বেশি জরুরি, 'ট্রায়াথলন এবং ম্যারাথন বাংলাদেশে এখনও জনপ্রিয় নয়। এখানে এর জন্য কোনো অবকাঠামো নেই। জাতীয় ক্রীড়া সংস্থা কিংবা বাংলাদেশ অলিম্পিক এসোসিয়েশনে এই খেলা সংযুক্ত নয়। জাতীয় কোনো ট্রায়াথলন প্রতিযোগিতাও হয় না। জাতীয় ক্রীড়া সংস্থা থেকে এই খেলা নিয়ে আরো কাজ করা উচিত। আমাদের দেশ থেকে বিশ্বমানের ট্রায়াথলেট বের করা সম্ভব।'