বাবাকে কথা দিয়েছিলেন পেলে, ‘তোমার জন্য আমি বিশ্বকাপ জিতে আনব’

ব্রাজিল কিংবদন্তি পেলে একটি নয়, বরং নিজ দেশের হয়ে জিতেছেন- মোট তিনটি বিশ্বকাপ। ফুটবল ইতিহাসে পেলের এ অর্জনকে আজ পর্যন্ত কেউ ছাড়াতে পারেননি। ভবিষ্যতেও এই রেকর্ড কেউ ভাঙতে পারবেন কি-না ফুটবল বিশ্লেষকদের মধ্যে তা নিয়েও রয়েছে সন্দেহ। তবে অবাক করার মতো ব্যাপার এই যে, শৈশব থেকেই ব্রাজিলের হয়ে বিশ্বকাপ জেতানোর ব্যাপারে প্রচণ্ড আত্মবিশ্বাসী ছিলেন পেলে। ২০১৪ সালে প্রকাশিত পেলের আত্মজীবনী মতে, মাত্র ১০ বছর বয়সে বাবাকে ব্রাজিলের হয়ে বিশ্বকাপ জেতানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন পেলে। রোলিং স্টোন অবলম্বনে।
ফুটবলের 'কালো মানিক' খ্যাত পেলে জন্মেছিলেন ১৯৪০ সালে, ব্রাজিলের এক দরিদ্র পরিবারে। পেলের জন্মের ঠিক দশ বছর পর শত বাঁধা পেরিয়ে ১৯৫০ বিশ্বকাপ আয়োজনের দায়িত্ব পায় ব্রাজিল। ঐ আসরে ব্রাজিল এতটাই ফেভারিট ছিল যে, সবাই ধরেই নিয়েছিল ব্রাজিল চ্যাম্পিয়ন হবে। আসরে সবকিছু ব্রাজিলের অনুকুলেই যাচ্ছিল। কিন্তু নিজেদের শিরোপা নির্ধারণী শেষ ম্যাচে আচমকা বাঁধা হয়ে দাঁড়ায় উরুগুয়ে।

১৯৫০ সালে ১৬ জুলাই উরুগুয়ে বনাম ব্রাজিলের ঐ ম্যাচে প্রথমে এক গোলের লিড নিয়েও ম্যাচটি জিততে পারেনি ব্রাজিল। ২-১ গোলে শ্বাসরুদ্ধকর ম্যাচটি হেরে শিরোপা হাতছাড়া হয় সেলসাওদের। নিজেদের মাটিতে আয়োজিত বিশ্বকাপের এত কাছে যেয়েও হৃদয়বিদারক এ হার মেনে নিতে পারেননি ব্রাজিলের ফুটবলপ্রেমীরা। আর তাই এ ম্যাচের পর দীর্ঘ সময় ধরে পুরো ব্রাজিলজুড়ে চলতে থাকে শোকের মাতম।
শিরোপা না পাওয়ার এ তিক্ত বেদনা পেলের ফুটবলার বাবার হৃদয়কেও ছুঁয়েছিল। উরুগুয়ের বিপক্ষে সে ম্যাচের পর বাবাকে শোকে কাতর দেখে সেদিন পেলে দিয়ে ফেলেছিলেন বিশাল এক প্রতিশ্রুতি। নিজের লেখা আত্মজীবনী 'হোয়াই সকার ম্যাটারস' এ পেলে জানান, ম্যাচটি হারার পর বাবাকে কান্নারত অবস্থায় দেখে পেলে প্রথমে নিজেকে শক্ত করেন। পরে নিজের চোখ মুছে বাবার হাত ধরে মাত্র ১০ বছর বয়সী পেলে বলেন, "বাবা, সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে। আমি তোমাকে প্রতিশ্রুতি দিলাম, একদিন আমি তোমার জন্য ব্রাজিলের হয়ে বিশ্বকাপ জিতবো।" এর মাত্র ৬ বছর পরেই পেলে বাবাকে দেখানো স্বপ্নকে বাস্তবে রূপদান করে দেখিয়েছেন।
নিজের ফুটবলার বাবার ক্যারিয়ার নিয়েও প্রচণ্ড আশাবাদী ছিলেন পেলে। আত্মজীবনীতে পেলে জানান, নিজের জীবনের প্রায় সব গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা তিনি তাঁর পেশাদার ফুটবলার বাবার থেকে পেয়েছিলেন। পেলে বলেন, "আমি নিশ্চিত যে, পর্যাপ্ত সুযোগ পেলে আমার বাবা ব্রাজিলের অন্যতম সেরা খেলোয়াড় হতো। কিন্তু বাবা নিজেকে প্রমাণ করার পর্যাপ্ত সুযোগ পাননি।"
পেলে নিজের জীবনের স্মরণীয় সব মুহূর্তগুলো লিখে গেছেন তাঁর এ আত্মজীবনীতে। এছাড়াও বৈশ্বিক পরিমণ্ডলে খেলা হিসেবে ফুটবলের ধীরে ধীরে যে বিকাশ এবং ফুটবলারদের টিকে থাকার যে লড়াই সেটিও নিজের বইতে চমৎকারভাবে তুলে ধরেছেন তিনি।
বইটি লিখতে পেলেকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করেছেন বইটির সহযোগী আরেক লেখক মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ব্রাইন উইন্টার। ২০১৪ সালের ১ এপ্রিল প্রকাশিত এ বইটি নিঃসন্দেহে ফুটবল ইতিহাসের এক প্রামাণ্য দলিল। পেলের মৃত্যুর পর বইটি সম্প্রতি অ্যামাজনে সবচেয়ে বেশি বিক্রিত বইয়ের তালিকায় শীর্ষে উঠে এসেছে।