আরব বসন্তের শেষ আলো বাঁচাতে পারবে মরক্কো?

ব্যতিক্রমী ঘটনায় পর্দা ওঠে কাতার বিশ্বকাপের। উদ্বোধনী ম্যাচে ইকুয়েডরের বিপক্ষে হেরে যায় স্বাগতিক কাতার। ইকুয়েডরের বিপক্ষে কাতারের হারকে ব্যতিক্রমী বলার কারণ ফুটবল বিশ্বকাপের ইতিহাস। ফুটবলের বিশ্ব আসরের দীর্ঘ পথচলায় মধ্যপ্রাচ্যের দেশটি একমাত্র দল, যারা আয়োজক হিসেবে নিজেদের প্রথম ম্যাচে হারে। আগের আসরগুলোয় কয়েকটি আয়োজক দেশ জিততে না পারলেও অন্তত ড্র নিয়ে মাঠ ছেড়েছে।
আয়োজক কাতারের বিব্রতকর শুরু হলেও বিশ্বকাপে সুরভী ছড়ায় আরব বসন্ত। আরব অঞ্চলের চার দলের তিন দলই চমক জাগানিয়া পারফরম্যান্সে বিশ্বকাপে শুরু করে। যদিও আরব বসন্ত দীর্ঘ হয়নি, সাফল্যের ধারায় এগিয়ে যেতে পারেনি সবাই। কয়েকটি দল শেষ ষোলোর আশা বাঁচিয়ে রাখলেও কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে আছে।
এ পথে সবার দৃষ্টি আজ মরক্কোর দিকে। আফ্রিকার আরব অঞ্চলের এই দেশটি বাংলাদেশ সময় আজ সন্ধ্যা সাতটায় দোহার আল থুমামা স্টেডিয়ামে বেলজিয়ামের মুখোমুখি হবে। শক্তি-সামর্থ্য, অভিজ্ঞতা, সাফল্যে এগিয়ে দলের বিপক্ষে ঝলমলে পারফরম্যান্স করে আরব বসন্তের আলো মরক্কো জ্বালিয়ে রাখতে পারবে কিনা, এ নিয়ে জিজ্ঞাসা অনেকেরই।
লড়াকু পারফরম্যান্সে মরক্কো বেলজিয়ান দূর্গ কাঁপিয়ে দিতে পারে কিনা, সেটা জানতে আরও কয়েক ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হবে। এর আগে আরব অঞ্চলের দেশগুলোর পথচলায় চোখ রাখা যাক। শুরুতেই ফুটবল বিশ্বকে চমকে দেয় সৌদি আরব। হট ফেবারিট আর্জেন্টিনাকে ২-১ গোলে হারিয়ে দেয় তারা।
একই দিন শক্তিশালী ডেনমার্ককে রুখে দিয়ে গোলশূন্য ড্র করে তিউনিশিয়া। পরের দিন বিস্ময় জাগানিয়া পারফরম্যান্স করে মরক্কো। বিশ্বকাপের বর্তমান রানার্স আপ ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে তারাও গোলশূন্য ড্র করে। চার দলের মধ্যে তিন দলের সাফল্যে ফুটবল জোয়ার আসে আরব অঞ্চলে। কিন্তু আরব বসন্ত ওই পর্যন্তই।
এরপর যেন বাস্তবতা ফিরে আসে ফুটবলের শ্রেষ্ঠত্বের আসরে। দ্বিতীয় ম্যাচেও হতাশার পারফরম্যান্সে সেনেগালের বিপক্ষে ৩-১ গোলে হারে কাতার, সবার আগে বিদায় নেয় তারা। যা বিশ্বকাপের ইতিহাসে আয়োজক হিসেবে দ্রুততম বিদায়। এ ছাড়া দক্ষিণ আফ্রিকার পর দ্বিতীয় দল হিসেবে শেষ ষোলোয় উঠতে ব্যর্থ হওয়া আয়োজক দেশ।
তিউনিশিয়াও পারেনি সাফল্যের ধারায় থাকতে। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে দাপুটে ফুটবল খেললেও ১-০ গোলের হার নিয়ে মাঠ ছাড়ে তারা। উড়ন্ত সূচনা করা সৌদির আরব নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচে মাটিতে নেমে আসে। পোল্যান্ডের বিপক্ষে লড়াই করলেও মেনে নিতে হয় ২-০ গোলের।
এরপরও অবশ্য পরের রাউন্ডে যাওয়ার লড়াইয়ে টিকে আছে দলটি। এক জয় ও হারে তিন পয়েন্ট নিয়ে তালিকার তিন নম্বর দল তারা। চার পয়েন্ট নিয়ে পোল্যান্ড এক নম্বরে ও জয়ে ফেরা আর্জেন্টিনা দুই নম্বরে। শেষ ম্যাচে মেক্সিকোকে হারাতে পারলে ১৯৯৪ সালের পর দ্বিতীয়বারের মতো শেষ ষোলোয় উঠবে তারা। ড্র করলেও থাকবে আশা।
কাতার বাদ পড়েছে, তিউনিশিয়ার আশাও নেই বললেই চলে। তাদের গ্রুপ থেকে সবার আগে শেষ ষোলো নিশ্চিত করেছে বর্তমান চ্যাম্পিয়ন ফ্রান্স। অস্ট্রেলিয়া তিন পয়েন্ট নিয়ে দুই নম্বরে। ডেনমার্কের বিপক্ষে জিতলেই তারা চলে যাবে পরের রাউন্ডে। আর শেষ ম্যাচে তিউনিশিয়ার প্রতিপক্ষ ফ্রান্স, অঘটন না ঘটলে যাদের বিপক্ষে জেতাটা আরব অঞ্চলের দেশটির জন্য খুবই কঠিন কাজ।
দ্বিতীয় ম্যাচে খেলতে নামা মরক্কোর ভালো সম্ভাবনা আছে। প্রথম ম্যাচে ড্র করে এক পয়েন্ট নিয়ে তিন নম্বরে আছে তারা। আজ বেলজিয়ামের বিপক্ষে জয় পেলে এক ধাপ এগিয়ে যাবে দেশটি। এই পথে অবশ্য বেলজিয়ামের বিপক্ষে কঠিন পরীক্ষাই দিতে হবে মরক্কোকে। র্যাঙ্কিংয়ের দুই নম্বর দল বেলজিয়াম প্রথম ম্যাচ জিতে তালিকার শীর্ষে। র্যাঙ্কিংয়ের হিসাব ধরলে মরক্কো পিছিয়ে ৩২ ধাপ। এ ছাড়া রেকর্ডেও এগিয়ে বেলজিয়ানরা, তিনবারের সাক্ষাতে দুবার জিতেছে তারা। বিশ্বকাপেও বেলজিয়ামের বিপক্ষে সাফল্য নেই মরক্কোর। একবারের সাক্ষাতে ১৯৯৪ বিশ্বকাপের সেই ম্যাচে ১-০ গোলে হারে তারা।