হার্ভে রেনার্ডের ‘হাই-লাইন’ ও আর্জেন্টিনার দুর্বলতা

আর্জেন্টিনাকে ২-১ গোলে হারিয়ে বিশ্বকাপ ইতিহাসের অন্যতম বড় অঘটনের জন্ম দিয়েছে সৌদি আরব। অথচ পেনাল্টি থেকে লিওনেল মেসির করা গোলে শুরুতেই এগিয়ে গিয়েছিল আলবিসেলেস্তেরা। এগিয়ে থেকে প্রথমার্ধও শেষ করে তারা। কিন্তু দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই ভিন্ন চিত্র। গতিময় ফুটবলে মেসিদের রক্ষণ গুঁড়িয়ে মাত্র ৬ মিনিটে ২ গোল আদায় করে নেওয়া সৌদি আরব পায় স্বপ্নের এক জয়।
৩৬ ম্যাচ ও তিন বছর পর এসে প্রথম হারের স্বাদ নিলো আর্জেন্টিনা। এই হারে শেষ ষোলোর পথটা কঠিনই হয়ে উঠলো শিরোপা প্রত্যাশী দলটির। শক্তি-সামর্থ্য, সাফল্য, অভিজ্ঞতায় অনেক পিছিয়ে থাকার পরও কীভাবে আর্জেন্টিনাকে হারাল সৌদি আরব? কী পরিকল্পনা করেছিলেন তাদের ফরাসী কোচ হার্ভে রেনার্ড? সেই পরিকল্পনা কীভাবে বাস্তবায়ন করলো সৌদি আরব?
আর্জেন্টিনার সব সময়ের দুর্বলতাকে খুব সুন্দরভাবে কাজে লাগিয়েছেন হার্ভে রেনার্ড। তিনি তার দলকে খেলিয়েছেন হাই-ডিফেন্সিভ লাইনে। যা একইসঙ্গে কার্যকরী এবং বিপদজনক। আর্জেন্টিনা এই ম্যাচে ফেভারিট হিসেবেই নেমেছিল। এমন প্রতিপক্ষের বিপক্ষে সৌদির মতো দল সচরাচর হাই-লাইন ও 'অফসাইড ট্র্যাপ' কৌশলে খেলে না। কারণ এশিয়ান অঞ্চলের কোনো দলের পক্ষে এই কৌশল ৯০ মিনিট অনুসরণ করা কঠিন। এরপরও সৌদি আরব কেন হাই-লাইনে খেললো?
এর সবচেয়ে বড় কারণ আর্জেন্টিনার গতিশীল উইঙ্গার নেই, যারা ডিফেন্স লাইনের পেছনের জায়গায় নিজেদের গতি দিয়ে প্রতিপক্ষের রক্ষণ নড়বড়ে করে দেবে। দি মারিয়া ছাড়া শেষ ১২ বছরে ভালো মানের ও গতিশীল উইঙ্গার পায়নি আর্জেন্টিনা।
মেসি-পারেদেস-ডি পলদের শক্তির জায়গা পাসিং। এ রকম পাস অভিজ্ঞদের আটকাতে চাইলে তাদের পাসের রাস্তা বন্ধ করতে হবে, অঞ্চল আটকে দিতে হবে। তবে 'বিট্যুইন দ্য লাইন'- এ জায়গা দেওয়া যাবে না। এতে করে হাই-লাইনে ডিফেন্স করতে হয়, তাতে পাসিং আটকে যায়।
সৌদি আরব পুরো ম্যাচেই এই পরিকল্পনা অনুসরণ করে করে সফল হয়েছে। হাই-লাইন ডিফেন্স ভাঙার জন্য ৩৪ বছরের ডি মারিয়া ছাড়া গতিশীল কেউ-ই ছিলেন না আর্জেন্টিনা শিবিরে। মেসি, লাউতারো মার্তিনেজরা তাই তিনবার অফসাইড ট্র্যাপে আটকে গেছেন। তিনবার জালে বল পাঠিয়েও পাননি গোল।
৪ বছর ধরে দল গোছানোর সময় লিওনেল স্কালোনি যে ধরনের খেলোয়াড় দলে নিয়েছেন, তাদের মধ্যে উচ্চতায় লম্বা খেলোয়াড়দের আধিক্য ছিল। কারণ উচ্চতা থাকায় লং বল এবং এরিয়াল ডুয়েলসে তারা বেশি কার্যকরী। নিকো গঞ্জালেস, হোয়াকুই কোরেয়া সেই পরিকল্পনারই অংশ ছিলেন।
৫ ফুট ১১ ইঞ্চি উচ্চতার নিকো, ৬ ফুট ১ ইঞ্চি উচ্চতার হোয়াকুইন ইনজুরির জন্য স্কোয়াড থেকে বাদ পড়েছেন। সৌদির বিপক্ষে আর্জেন্টিনা অনেকগুলো লং বল খেলে, অনেক বেশি সেটপিসের সুযোগ ছিল। কিন্তু উচ্চতায় লম্বা সৌদি আরবের ফুটবলারদের বিপক্ষে এরিয়াল ডুয়েলস জেতার মতো কোনো ফরোয়ার্ড ছিল না আর্জেন্টিনার।
আর্জেন্টিনার মোট শট ছিলো ১৫ টা, যার মধ্যে ৬ টা লক্ষ্যে ছিল। অর্থাৎ সম্ভাব্য গোল সংখ্যা ছিলো ২.২৬। অন্যদিকে সৌদি আরব শট নেয় ৩ টা, এর মধ্যে ২টি লক্ষে ছিল। সম্ভাব্য গোল সংখ্যা ০.১৫, অর্থাৎ গোলের সুযোগ তৈরির হিসেবে আর্জেন্টিনার ২-০ ব্যবধানে জেতার কথা ছিল। কিন্তু আর্জেন্টিনা লক্ষ্যে ৬টা শট নিয়েও গোল করতে পারেনি। কিন্তু সৌদি আরবের গোলমুখে নেওয়া ২টি শটের ২টি লক্ষ্যে ছিল। হার্ভে রেনার্ড যে পরিকল্পনা সাজিয়েছিলেন, পুরোটাই কাজে লাগিয়েছেন তার শিষ্যরা।