ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে ইতিহাস গড়ার অপেক্ষায় জাপান

কাতার বিশ্বকাপে জাপানকে অঘটনের দল নামে ডাকা হলেও হয়তো ভুল হবেনা। কেননা চলমান বিশ্বকাপে গ্রুপ পর্বে নিজেদের তিন ম্যাচের দুটিতেই 'অঘটন' ঘটিয়েছে এশিয়ার এই দেশটি। টুর্নামেন্টের অন্যতম দুই ফেভারিট জার্মানি ও স্পেনকে ২-১ গোলে হারিয়ে অবাক করেছে গোটা বিশ্বকে।
গ্রুপ 'ই' থেকে চারবারের বিশ্বকাপজয়ী দল জার্মানি পরবর্তী রাউন্ডে কোয়ালিফাই করতে না পারলেও, স্পেনকে টপকে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়ে ঠিকই শেষ ষোলোর টিকেট নিশ্চিত করেছে সামুরাই ব্লু খ্যাত জাপান। আর শেষ ষোলোয় জাপান যখন শক্তিশালী ক্রোয়েশিয়ার মুখোমুখি হচ্ছে তখন জাপানের সামনে হাতছানি দিচ্ছে ইতিহাস সৃষ্টির দারুণ এক সুযোগ।
আজ সোমবার (৫ ডিসেম্বর) বাংলাদেশ সময় রাত ৯টায় কাতারের আল জানুব স্টেডিয়ামে ক্রোয়েশিয়ার মুখোমুখি হবে জাপান। আজকের ম্যাচে ক্রোয়েশিয়াকে হারাতে পারলে নিজেদের ফুটবল ইতিহাসে প্রথমবারের মতো কোয়ার্টার ফাইনালের টিকিট নিশ্চিত করবে এশিয়ার এ দেশটি।
তবে স্পেন ও জার্মানির মতো দলকে হারিয়ে শেষ ষোলোয় উঠলেও ২০১৮ বিশ্বকাপের রানার্স আপ ক্রোয়েশিয়াকে হারানো জাপানের জন্য একেবারেই সহজ হবেনা। গ্রুপ পর্বে অপরাজিত ক্রোয়েশিয়া বিশ্বকাপে নিজেদের শেষ দশ ম্যাচের নয়টিতেই জিতেছে। যে একটি ম্যাচ তারা হেরেছে, সেটিও ২০১৮ বিশ্বকাপ ফাইনালে চ্যাম্পিয়ন ফ্রান্সের বিপক্ষে ৪-২ গোলে লড়াই করে।
২০১৮ রাশিয়া বিশ্বকাপে ২-০ গোলে এগিয়ে থেকেও পরবর্তীতে বেলজিয়ামের বিপক্ষে ম্যাচটি হারার দুর্বিষহ স্মৃতি মনে করে জাপানের ডিফেন্ডার ইউতো নাগাতোমো বলেন, "গত বিশ্বকাপের তুলনায় চলতি বিশ্বকাপে আমরা মানসিক ও শারীরিকভাবে নিজেদেরকে তুলনামূলক ভালোভাবে প্রস্তুত করতে পেরেছি। আমাদের বর্তমান দলটি বেশ ভালো এবং জাপানের হয়ে বিশ্বকাপে প্রতিনিধিত্ব করা সবচেয়ে ভালো দল।"
অন্যদিকে ক্রোয়েশিয়ার কোচ লাতকো দালিচ অবশ্য জাপানের বিপক্ষে খেলার আগে নিজেদের আত্মবিশ্বাসের কথা বলেছেন। সংবাদ সম্মেলনে দালিচ বলেছেন, "ক্রোয়েশিয়ার জনসংখা মাত্র ৪০ লক্ষ। তবুও আমরা বিশ্বমঞ্চে ফুটবলের মাধ্যমে যা অর্জন করেছি তা অভাবনীয়। আমরা প্রতিনিয়ত বিভিন্ন আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্ট ও বিশ্বকাপে ভালো করছি। আমরা বিশ্ব ফুটবলে নিজেদের সক্ষমতার জানান দিচ্ছি।"
এছাড়াও প্রতিপক্ষ জাপান সম্পর্কে দালিচ বলেন, "'গ্রুপ পর্বে জাপানের বিপক্ষে স্পেন প্রথম গোল করার পর ভেবেছিলাম জাপান শেষ। কিন্তু ওরা হাল ছাড়েনি। জার্মানি, বেলজিয়াম, ডেনমার্কের ছিটকে যাওয়া প্রমাণ করে, টুর্নামেন্টের প্রতিটি দলই শক্তিশালী।"
তবে গত বিশ্বকাপের রানার্স আপ ক্রোয়েশিয়া যতই শক্তিশালী হোক না কেন, হাল ছাড়তে নারাজ জাপানের কোচ হাজিমে মরিইয়াসু। নিজ দলের খেলোয়াড়দের শান্ত থাকার পরামর্শ দিয়ে হাজিমে বলেছেন, "এক বা দুই শতাংশ সুযোগ সৃষ্টি হলেও আমরা সেটা লুফে নেব। এবার ড্র হলে ম্যাচের অতিরিক্ত সময়ে এমনকি টাইব্রেকারে গড়াবে। সবকিছুর জন্যই আমাদের প্রস্তুত থাকতে হবে।"
ষোলো বছর পর মুখোমুখি হওয়া দল দুটি ১৯৯৭ সাল থেকে মাত্র তিনটি ম্যাচে পরস্পরের মুখোমুখি হয়েছে। এরমধ্য ১৯৯৭ সালের ফ্রেন্ডলি ম্যাচটি জিতেছে জাপান, ১৯৯৮ ফ্রান্স বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্বের ম্যাচটি জিতেছে ক্রোয়েশিয়া এবং ২০০৬ জার্মানি বিশ্বকাপের ম্যাচটি ড্র হয়েছে। আর তাই শুধু পরিসংখ্যান নিয়ে জাপান ও ক্রোয়েশিয়ার শেষ ষোলোর ম্যাচটির ফলাফল আন্দাজ করা কঠিন হবে। জাপানের গ্রুপ পর্বের ফর্ম এবং একইসাথে বিশ্বকাপে ক্রোয়েশিয়ার সাম্প্রতিক জয়ের ধারা বিবেচনায় ম্যাচের ফলাফল যেকোনো দলের পক্ষেই যেতে পারে।
সূত্র: সিএনএন