মন্দার বিশ্বকাপেও কি অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ঘটবে!

মাগুরার কৃষক আমজাদ হোসেন এ বছর সাড়ে সাত কিলোমিটার লম্বা জার্মানির পতাকা বানিয়েছেন। এর আগে গত ২০১৮ সালের ফুটবল বিশ্বকাপে জমি বিক্রি করে নিজের প্রিয় দলের সাড়ে পাঁচ কিলোমিটার লম্বা পতাকা টানিয়েছিলেন তিনি। সে পতাকা দেখতে মাগুরা ছুটে গিয়েছিলেন জার্মান দূতাবাসের কর্মকর্তারা। ফুটবল বিশ্বকাপের সময় এলে বাংলাদেশে এ রকম অনেক পাঁড়ভক্তের দেখা মেলে। নিজেদের পছন্দের দলের প্রতি সমর্থন জানাতে তারা অবিশ্বাস্য সব কর্মকাণ্ড করে ফেলেন।
দীর্ঘ পতাকা বানানো, পুরো ভবন পতাকার রংয়ে রাঙিয়ে দেওয়া, দল জয়ী হলে সারা গ্রামে ভোজের আয়োজন ইত্যাদি খবর বিশ্বকাপের মৌসুমে প্রায়ই গণমাধ্যমে দেখা যায়। ২০২২ ফুটবল বিশ্বকাপ উপলক্ষে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার এক ব্যক্তি জমি বিক্রি করে নিজের প্রিয় দল দক্ষিণ কোরিয়ার একটি চার কিলোমিটার লম্বা পতাকা টানিয়েছেন বলে একাধিক গণমাধ্যমে খবর এসেছে।
আপাতদৃষ্টে এগুলোকে উন্মাদ ভক্তের খামখেয়ালিপনা হিসেবে মনে হলেও এ কাজগুলোর অবশ্য একটি অর্থনৈতিক দিক রয়েছে। বিশ্বকাপের আনন্দে উদ্বেল হয়ে ভক্তরা একটু বেশি খরচ করতেও দ্বিধা করেন না। বাংলাদেশি একজন ভক্ত যেমন একটা-দুটো জার্সি কেনেন বা পতাকা বানানোর জন্য চাঁদা দেন, তেমনি ইংল্যান্ডের কোনো ভক্তও পাবে বসে খেলা দেখার সময় দু-চার পাইন্ট বিয়ার বেশি পান করেন বা কোনো বেটিং সাইটে বাজি ধরতে দুবার ভাবেন না।
এ তো গেল বিশ্বকাপ আয়োজনের সঙ্গে ছোটখাটো অর্থনৈতিক সংযোগের কথা। কিন্তু এর বাইরে ফুটবল বিশ্বকাপের সামষ্টিক অর্থনৈতিক একটি দিকও রয়েছে। অতীতের বিশ্বকাপগুলোর অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে, যে দেশ বিশ্বকাপ জেতে, তার মোট দেশজ উৎপাদন বা জিডিপির প্রবৃদ্ধি ঘটে। স্বাগতিক দেশও বিশ্বকাপ আয়োজনের মাধ্যমে অর্থনীতির খেরোখাতায় কিছু লাভের মুখ দেখতে পায়। কিন্তু এবারের বিশ্বকাপ অনুষ্ঠিত হচ্ছে ভিন্ন এক বৈশ্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে। মন্দার বিশ্বকাপ কি এবার তাহলে অর্থনীতিবিদদের নতুন করে হিসাব করতে বসাবে?
২০২২ বিশ্বকাপের প্রাইজমানি
ফুটবল বিশ্বকাপের প্রাইজমানির পরিমাণটা নেহায়েতই কম নয়। দ্য স্পোর্টিং নিউজের তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সালের ফুটবল বিশ্বকাপের প্রাইজমানির জন্য ফিফার মোট বরাদ্দ ৪৪০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার (প্রায় ৪,৫১৫ কোটি টাকা)।
২০১৮ সালের রাশিয়া বিশ্বকাপের চেয়ে ৪০ মিলিয়ন ডলার বেশি এবারের প্রাইজমানি। আর ২০১৪ সালে ব্রাজিলে অনুষ্ঠিত ফিফা বিশ্বকাপের প্রাইজমানি ছিল ৩৫৮ মিলিয়ন ডলার।
এবারের বিশ্বকাপে যে দল চ্যাম্পিয়ন হবে, তারা পাবে ৪২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার (প্রায় ৪৩১ কোটি টাকা)। আর রানার্সআপের জন্য থাকছে ৩০ মিলিয়ন ডলার। তৃতীয় স্থান অধিকারী দল জিতবে ২৭ মিলিয়ন ডলার। গ্রুপ পর্বে খেলা প্রতিটি দলের জন্য রয়েছে সর্বনিম্ন ৯ মিলিয়ন ডলার।
বিশ্বকাপ ও জিডিপির প্রবৃদ্ধি
২০১৮ সালে ফুটবল বিশ্বকাপের ফাইনালের আগে এক প্রতিবেদনে মার্কিন গণমাধ্যম দ্য ওয়াশিংটন টাইমস ব্যাখ্যা করেছিল- কীভাবে বিশ্বকাপজয়ী দেশ তাদের জিডিপিতে প্রবৃদ্ধি আশা করতে পারে।
১৯৯০ সালের পর থেকে যেসব দেশ বিশ্বকাপ ফুটবল জিতেছিল, সেগুলো আগের বছরের তুলনায় জিডিপিতে প্রবৃদ্ধির দেখা পেয়েছিল। এসব দেশের গড়ে ১.৬ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি ঘটে।
এমনকি যেসব দেশ অর্থনৈতিক সংকটে ভুগছিল, ফুটবলের কল্যাণে সেগুলোর অর্থনীতিও চাঙা হয়ে উঠেছিল। ২০১০ সালে নেদারল্যান্ডসকে হারিয়ে প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপ জেতে স্পেন। দেশটির অর্থনীতি তখন খুব একটা সুবিধাজনক পরিস্থিতিতে ছিল না। ২০০৯ সালে বৈশ্বিক মন্দার প্রভাবে স্পেনের অর্থনীতি ৩.৬ শতাংশ হ্রাস পায়। ২০১০ সালে বিশ্বকাপ জয়ের পর সেই অর্থনীতি শূন্য শতাংশের সমতল প্রবৃদ্ধিতে ফিরে আসে।
তবে হাসির পরে কান্না থাকে। তথ্য-উপাত্ত বলছে, বিশ্বকাপ জয়ের বছরের পরবর্তী বছর এলে অর্থনীতি আবার মুখথুবড়ে পড়ে। ২০১৮ সালের আগের আট বিশ্বকাপে যেসব দেশ জয়ী হয়েছিল, জয়ের পরবর্তী বছরে ওই দেশগুলোর জিডিপি আবারও সংকুচিত হয়ে গেছিল। কেবল স্পেন (২০১০) ও জার্মানির (২০১৪) ক্ষেত্রে জয়ের দ্বিতীয় বছরে জিডিপি অতি অল্প পরিমাণে বৃদ্ধি পেয়েছিল।
খেলাধুলার বড় কোনো আসরের সঙ্গে কোনো দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সহ-সম্পর্ক দেখতে অর্থনীতিবিদেরা অনেক অনুসন্ধান চালিয়েছেন। বিখ্যাত ইংরেজ অর্থনীতিবিদ জন মেনার্ড কেইনস 'অ্যানিমেল স্পিরিট' বলে একটি তত্ত্ব দিয়েছিলেন অনেক আগেই। এ তত্ত্ব অনুযায়ী, অস্থির সময়ে মানুষ অর্থনৈতিক সিদ্ধান্ত যুক্তির বদলে আবেগ দ্বারা তাড়িত হয়ে গ্রহণ করে। অর্থনীতিবিদেরা মনে করেন, খেলাধুলায় কোনো দেশ বিশ্বকাপ অর্জনের মতো সাফল্য পেলে তার আবেগীয় প্রভাব দেশের ভোক্তা ও বিনিয়োগকারীর অর্থনৈতিক সিদ্ধান্তের ওপরে প্রভাব রাখে।
২০১৪ সালে ফোর্বস ম্যাগাজিনের এক লেখায় অ্যালেন সেন্ট জন লিখেন, 'বিশ্বকাপ জয়ের পরবর্তী মাসগুলোতে অল্প সময়ের জন্য মানুষের উৎপাদনশীলতা তুঙ্গে থাকে। এরপর এটি ক্রমে ক্ষয়ে আসতে থাকে। এর কারণ খুব সম্ভবত মানুষ ধীরে ধীরে বুঝতে পারে বিশ্বকাপ জয় করলেও তাতে আর দেশের অন্যসব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে না।'
২০১৮ সালে সেমিফাইনালে ক্রোয়েশিয়ার কাছে ২-১ গোলে হেরে বিশ্বকাপ থেকে বাদ পড়ে যায় ইংল্যান্ড। ওই ম্যাচের আগপর্যন্ত ইংল্যান্ডের জয়ের কথা চিন্তা করে কিছুটা অর্থনৈতিক উন্নতির চিন্তা করছিল থ্রি লায়ন ভক্তরা। ব্যাংক অব ইংল্যান্ডের তৎকালীন গভর্নর মার্ক কানরি তো সরাসরি বলে দিয়েছিলেন, ইংল্যান্ড জিতলে সেটা হবে ব্রিটিশ অর্থনীতির জন্য সার্বিকভাবে একটি 'নিখাদ, নির্ভেজাল অর্থনৈতিক মঙ্গল'।
মন্দা ও ২০১০ ফুটবল বিশ্বকাপ
২০০৯ সালের বিশ্বমন্দার পরের বছরই দক্ষিণ আফ্রিকাতে অনুষ্ঠিত হয় ১৯তম ফিফা বিশ্বকাপ। মন্দা-পরবর্তী সময়ে দক্ষিণ আফ্রিকার জন্য আশীর্বাদ হয়ে দাঁড়িয়েছিল এ আসর।
২০১০ বিশ্বকাপের আগে সমালোচকেরা বলেছিলেন, দক্ষিণ আফ্রিকার উচিত ফুটবলের পেছনে অর্থ ব্যয় না করে দারিদ্র্য দূরীকরণে কাজ করা। হার্টল্যান্ড ইনস্টিটিউটের অর্থনীতিবিষয়ক পলিসি উপদেষ্টা রব বাড খেলার দুনিয়ার বড়সড় আসর নিয়ে অনেকগুলো গবেষণা করেছেন। তার মতে, বিশ্বকাপের মতো অনুষ্ঠানে স্বাগতিক দেশে পর্যটকের ঢল নামলে দেশের অর্থনীতি ফুলেফেঁপে উঠবে-এ ধারণার সঙ্গে বাস্তবের অনেক ফারাক। এর পেছনে অনেকগুলো ফ্যাক্টরের কথা উল্লেখ করেন তিনি।
যেমন রব বলেন, অনেক সম্ভাব্য পর্যটক হয়তো ভিড়ভাট্টার কথা মনে করে ওই দেশে ভ্রমণে যাবেন না। অনেক সময় স্বাগতিক দেশের বাসিন্দারা আয়োজনের সময়টাতে নিজের দেশ ছেড়ে বাইরে চলে যান। ২০০৪ সালের গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিকের কথা উল্লেখ করে রক বলেন, ওই অলিম্পিকের আগে এথেন্সের ছোট-বড় ব্যবসায়ীর মধ্যে উত্তেজনার পারদ চড়েছিল। কিন্তু অলিম্পিক শেষ হয়ে যাওয়ার পর তা ক্রমে মিইয়ে এসেছিল।
তবে দক্ষিণ আফ্রিকার ক্ষেত্রে এমনটা ঘটেনি বলেই দেখা গেছে। দেশটির সরকারি বার্তা সংস্থা এসএ নিউজ জানিয়েছে, ফুটবল বিশ্বকাপের আয়োজনের ফলে দেশটির জিডিপি সে বছর প্রত্যাশার চেয়ে বেশি বেড়েছিল।
দক্ষিণ আফ্রিকার সরকারের অনুমান ছিল, বিশ্বকাপ তাদের জিডিপিতে ০.৫ শতাংশ বার্ষিক প্রবৃদ্ধি আনবে। অথচ ২০০৬ সালের পর থেকে দেশটি বিশ্বকাপের জন্য স্টেডিয়াম ও অন্যান্য অবকাঠামো বানানোর জন্য যে পরিমাণ অর্থ খরচ করেছে, তা হিসাবে নেওয়ার পর জিডিপির প্রবৃদ্ধি দাঁড়িয়েছিল ১ শতাংশে।
দক্ষিণ আফ্রিকার তখনকার অর্থমন্ত্রী প্রবিন গোর্দান আরও বলেছিলেন, ২০১০ বিশ্বকাপ আয়োজন দেশটির সক্ষমতাকে বহির্বিশ্বের কাছে আরও শক্তিশালী করে তুলে ধরেছে। আর এর জন্য দেশের অর্থনীতির ওপর কোনো চাপ পড়েনি।
নতুন মন্দার শঙ্কা ও কাতার বিশ্বকাপ
২০২২ সালে কাতারের বিশ্বকাপের আয়োজন করার বিষয়টি ঠিক হয়ে গিয়েছিল ২০১০ সালেই। দীর্ঘ ১২ বছর ধরে বিশ্বকাপ আয়োজনের প্রস্তুতি নিয়েছে মধ্যপ্রাচ্যের ছোট এ দেশটি। তবে স্বাগতিক এ দেশটি সমকামী সম্পর্ক নিয়ে অবস্থান, মানবাধিকার ও অভিবাসী শ্রমিকদের প্রতি আচরণ ইত্যাদি বিষয়ে সমালোচনার শিকার হয়েছে।
মার্কিন ক্রেডিট রেটিং এজেন্সি এসঅ্যান্ডপি গ্লোবাল রেটিংসের বরাত দিয়ে ৭ নভেম্বর ব্লুমবার্গ জানিয়েছে, ২০২২ বিশ্বকাপের পর কাতারের অর্থনৈতিক কর্মকা- স্থগিত হয়ে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আতিথেয়তা ও রিয়েল স্টেট খাতে বাড়তি ব্যয়ের কারণে এ স্থবিরতা সৃষ্টি হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
তবে একই সাথে এসঅ্যান্ডপি জানিয়েছে, বিশ্বকাপের ফলে কাতার একটি সম্ভাব্য তাৎক্ষণিক অর্থনৈতিক সুবিধা লাভ করবে। এর ইতিবাচক প্রভাব পড়বে প্রতিবেশী উপসাগরীয় দেশগুলোতেও। কাতারের সরকারের অনুমান, এ বিশ্বকাপ উপলক্ষে দেশটিতে ১২ লাখ পর্যটক ও দর্শক ভ্রমণ করবেন। এর ফলে ধনী এ দেশের অর্থনীতিতে ১৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার যোগ হবে।
এসঅ্যান্ডপির প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সালে কাতারের প্রকৃত জিডিপি প্রবৃদ্ধি হবে ৪.৮ শতাংশ। এর আগে ২০২১ সালে এটি ছিল ১.৫ শতাংশ। এ প্রবৃদ্ধির বেশির ভাগের কারণ বিশ্বকাপের ফলে দেশটির নেওয়া বাড়তি অর্থনৈতিক কার্যক্রম। এ ছাড়া করোনাভাইরাস-পরবর্তী অর্থনৈতিক পুনরুত্থানের প্রতিফলনও দেখা যাবে এ প্রবৃদ্ধিতে।
করোনাভাইরাসের ধাক্কা পুরোপুরি সামাল দিয়ে ওঠার আগেই রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বৈশ্বিক অর্থনীতিকে নতুন করে খাদের কিনারায় নিয়ে গেছে। বৈশ্বিক মন্দার আশঙ্কা থাকলেও কাতারের বর্তমান অর্থনীতি যেন ভিন্ন কিছুরই ইঙ্গিত দিচ্ছে। দোহাভিত্তিক সংবাদপত্র দ্য পেনিনসুলা গত জুলাইয়ে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) বরাত দিয়ে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, গ্যাসের দাম ক্রমাগত বৃদ্ধি ও বিশ্বকাপ আয়োজনের ফলে এ বছর কাতারের অর্থনীতির ৪.৯ শতাংশ প্রবৃদ্ধি ঘটবে।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ায় পর থেকে বৈশ্বিক অর্থনীতি বর্তমানে যে টালমাটাল পরিস্থিতিতে আছে, তার কোনো প্রভাব এখন পর্যন্ত কাতার বিশ্বকাপে দেখা যাচ্ছে না। কাতার কেবল কিছু সামাজিক ও সাংস্কৃতিক বিষয়ে সমালোচনার শিকার হচ্ছে। মধ্যপ্রাচ্যের অন্যতম ধনী দেশ কাতার। ইরানের সঙ্গে ভাগাভাগি করা কাতারের দ্য নর্থ ফিল্ড গ্যাসক্ষেত্রে বিশ্বের এখন পর্যন্ত আবিষ্কৃত মোট গ্যাসের প্রায় ১০ শতাংশ মজুত রয়েছে। বৈশ্বিক আকাশপথের একটি বড় স্টেশন কাতার। এছাড়া দেশটির রয়েছে প্রভাবশালী গণমাধ্যম আল-জাজিরা।
গত মে মাসে কাতার ইনভেস্টমেন্ট অথোরিটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মানসুর আল মাহমুদ মার্কিন গণমাধ্যম সিএনবিসিকে এক সাক্ষাৎকারে বলেন, বিশ্বে যদি কোনো মন্দা পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়ও, তার প্রভাব হবে 'সামান্য'। তিনি বলেন, 'ব্যাংকিং খাতের দিক থেকে আমরা (কাতার) ভালো অবস্থানে আছি। আমাদের ভালো তারল্যও রয়েছে। তাই মন্দা এলেও তা হবে সামান্য।' কাতারি বিজনেসম্যান অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান শেখ ফয়সাল বিন কাসিম আল থানিও মনে করেন না বিশ্বকাপের পর কাতারের অর্থনীতি মন্দার মুখে পড়বে।
এসঅ্যান্ডপির প্রতিবেদন বিশ্বকাপের পরবর্তী বছরে অর্থনীতি কিছুটা স্থবির হয়ে যাওয়ার যে আভাস দিয়েছে, তা খুব একটা অস্বাভাবিক কোনো ব্যাপার নয়। নর্দান আয়ারল্যান্ডের অলস্টার বিশ্ববিদ্যালয়ের ইকোনমিক পলিসি সেন্টারের জ্যেষ্ঠ অর্থনীতিবিদ এসমন্ড বার্নির মতে, বিশ্বকাপ কোনো দেশের কর্মীদের উৎপানশীলতায় একটি আপাত-বিপরীত প্রভাব সৃষ্টি করে। আর এটি জিডিপির প্রবৃদ্ধিতে একটি মৌলিক চলক।
তিনি ব্যাখ্যা করেন, বিশ্বকাপের উত্তেজনায় কর্মক্ষেত্রে কর্মীরা হয়তো কাজ কিছুটা কম করবেন। কিন্তু বিশ্বকাপজয়ের দীর্ঘকালীন অর্থনৈতিক সুবিধা রয়েছে। কাতার হয়তো বিশ্বকাপ জয় করতে পারবে না, কিন্তু এ মন্দার সময়ে দেশটি সফলভাবে বিশ্বকাপ আয়োজন করতে পারলে তা কাতারকে আন্তর্জাতিকভাবে আরও বেশি সমীহ এনে দেবে।
২০১৩ সালে দ্য পিপল, আইডিয়াস, অ্যান্ড থিংস (পিআইটি) জার্নালে এক বিশ্লেষণে গবেষক ইয়ুনডং লেও দাবি করেন, বিশ্বকাপ স্বাগতিক দেশের জন্য দীর্ঘমেয়াদে অর্থনৈতিক শ্রীবৃদ্ধিই আনে। এক্ষেত্রে তিনি দীর্ঘমেয়াদি বিশ্লেষণের বিভিন্ন ফ্যাক্টর বিবেচনা করার ওপর গুরুত্ব দেন। এ ফ্যাক্টরগুলোর মধ্যে তিনি উল্লেখ করেন নতুন স্টেডিয়ামের প্রভাব, স্বাগতিক দেশের জনগণের বিশ্বকাপকে ঘিরে উৎসাহ ও প্রফুল্লতা, আয়োজন নিয়ে ওই দেশের প্রতি বৈশ্বিক দৃষ্টিভঙ্গি ইত্যাদি।
২০১৮ সালের বিশ্বকাপ আয়োজন করে প্রশংসা পেয়েছিল রাশিয়া। রাশিয়ান ভক্তদের আতিথেয়তার প্রশংসায় পঞ্চমুখ ছিলেন বাইরের দেশ থেকে আগত দর্শকেরা। এবার দৃশ্যপট পাল্টে গেছে। বৈশ্বিক মন্দার জন্য রাশিয়াকেই অনেকাংশে দায়ী করবেন অনেকে। তবে কাতারের আইন ও বিশ্বাসের কারণে বিশ্বকাপে সমকামী দর্শকদের অংশগ্রহণ করা নিয়ে যে সংকট তৈরি হয়েছে এবং বিশ্বকাপ এগিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে 'বয়কট কাতার' আন্দোলনও যেভাবে শক্তিশালী হচ্ছে; সেসব দিক বিবেচনা করলে কাতার বিশ্বকাপ কতটুকু সফল আসর হিসেবে ইতিহাসের পাতায় ঠাঁই নেবে, তা সময়ই বলে দেবে।