অলিম্পিক তারকারা মেডেলে কামড় দেন কেন

অলিম্পিকে স্বর্ণ জয়ের পর আনন্দে উল্লসিত অলিম্পিয়ানদের পোডিয়ামের উপর দাঁড়িয়ে মেডেলে কামড় দিয়ে বিজয় প্রকাশ করা আমাদের কাছে একটি চিরচেনা দৃশ্য।
টোকিও অলিম্পিক ২০২০ আসরেও ইতিমধ্যেই এই দৃশ্য একাধিকবার দেখেছে দর্শকেরা।
তবে এবার টোকিও অলিম্পিক ২০২০ এর অফিসিয়াল একাউন্ট থেকে গেল রবিবার আবারও দর্শকদের স্মরণ করিয়ে দেয়া হয়েছে যে, অলিম্পিকের মেডেলগুলো খাওয়ার যোগ্য বস্তু নয়।
একাউন্ট থেকে দেয়া পোস্টে লেখা হয়, "আমাদের মেডেলগুলো জাপানি নাগরিকদের দান করে দেয়া বিভিন্ন ইলেকট্রনিক ডিভাইস থেকে নানা পদার্থ নিয়ে পুনঃব্যবহারযোগ্য করে বানানো হয়েছে। তাই আপনাদের সেগুলো মুখে না নিলেও চলবে...কিন্তু আমরা জানি, তবুও আপনারা মেডেলে কামড় দিবেনই।"
কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, বিজয়ী অ্যাথলেটরা কেনই বা সোনার মেডেলে কামড় দিয়ে নিজেদের জয় উদযাপন করেন?
ইন্টারন্যাশনাল সোসাইটি অফ অলিম্পিক হিস্টোরিয়ানস-এর এক্সিকিউটিভ কমিটির সদস্য, ডেভিড ওয়ালেচনস্কি মনে করেন, এটা আসলে গণমাধ্যমকে তুষ্ট করার একটা প্রয়াস।
'দ্য কমপ্লিট বুক অফ দ্য অলিম্পিকস' বইয়ের লেখক ওয়ালেচিনস্কির ভাষ্যে, "আসলে আলোকচিত্রীদের কাছে এটা একটা ঘোর সংস্কার হয়ে দাঁড়িয়েছে। তারা এটাকে একটা ঐতিহাসিক ছবির মত গণ্য করে; যার আসলেই কাটতি রয়েছে। আমার মনে হয়না, অ্যাথলেটরা এটা নিজের ইচ্ছায় করে।"
তবে মেডেল বা ট্রফিতে কামড় দেয়ার বিষয়টা শুধু যে অলিম্পিক আসরেই ঘটে, তা নয়।
টেনিস সুপারস্টার রাফায়েল নাদালের খেলা যারা দেখেন, তারা নিশ্চয়ই নাদালের জয় উদযাপনের ভঙ্গির সাথে পরিচিত। বিশেষ করে, ফ্রেঞ্চ ওপেনে পুরষদের সিঙ্গেলে বিজয়ী ট্রফি, ক্যু দে মুস্কেটায়ারস হাতে নিয়ে নাদাল যেন পারলে ট্রফি থেকেই এক কামড় নিয়ে নেন!

মেডেল নিরাপদে রাখা
নিজেদের মেডেলকে সুরক্ষি রাখতেও কম ঝক্কি পোহাতে হয়না অলিম্পিকের বিজয়ী অ্যাথলেটদের।
সোমবার পুরুষদের ১০ মিটার ডাইভিং প্রতিযোগিতায় সঙ্গী ম্যাটি লি'কে নিয়ে স্বর্ণ জিতেছেন জিবি টিমের টম ডালে। টোকিওতে থাকাকালীন, নিজের এই সোনার মেডেলকে সাবধানে রাখার জন্য একটি ছোট পাউচ ব্যাগও বুনিয়ে নিয়েছেন ডালে।
করোনাভাইরাস মহামারির সময় গৃহবন্দী থাকাকালীন কুশিকাটার বুনন শিখেছিলেন ডালে। তার সেই প্রচেষ্টা যে বৃথা যায়নি, সেটিই ইনস্টাগ্রামে পোস্ট করে জানিয়েছেন ডালে। ক্যাপশনে লিখেছেন, 'মেডেলের গায়ে যেন আঁচড় না পড়ে।'
অন্যদিকে, পুরুষদের একক টাইম ট্রায়ালে স্বর্ণ জেতার পর স্লোভেনীয় সাইক্লিস্ট প্রিমোজ রগ্লিক জানিয়েছেন, তিনি নিজেও এই জয়ে বিস্মিত! গণমাধ্যমকে রগ্লিক বলেন, "আসলে এটা খুব ভারি একটা জিনিস, কিন্তু সুন্দর। আমি অত্যন্ত গর্বিত ও আনন্দিত।"
২০০৮ সালে যুক্তরাষ্ট্র দলের ফুটবলার ক্রিস্টি র্যাম্পোন ট্যাম্পা বে টাইমসকে জানিয়েছিলেন যে, তিনি তার ঘরের হাঁড়িপাতিলের মধ্যে তার সোনার মেডেলগুলো লুকিয়ে রেখেছেন। কারণ তিনি ভেবেছিলেন, সেসব জায়গায় নিশ্চয়ই চোর মেডেলের খোঁজ করবে না!
অলিম্পিকে নিজের জয়যাত্রার শুরুর দিনগুলোতে মাইকেল ফেলপসও তার মেডেলগুলো বয়ে বেড়ানোর জন্য অভিনব কৌশল অবলম্বন করেছিলেন।
২০১২ সালে অ্যান্ডারসন কুপারের সঙ্গে 'সিক্সটি মিনিটস' শীর্ষক সাক্ষাতকারে ফেলপস জানান, তিনি ২০০৮ বেইজিং অলিম্পিক থেকে পাওয়া তার আটটি সোনার মেডেলকে একটি ধূসর টি-শার্টে মুড়িয়ে ভ্রাম্যমাণ মেকআপ বাক্সে রেখেছিলেন।
তবে অলিম্পিকের ইতিহাসের সর্বোচ্চ ২৮টি মেডেলের অধিকারী হওয়ার পর ফেলপস নিশ্চয়ই তার মেডেলগুলোকে সুরক্ষিত রাখতে নতুন কোনো পদ্ধতি অনুসরণ করেছেন।
তবে সব অলিম্পিক তারকাই যে মেডেলকে নিজের কাছে বাক্সবন্দী করে রেখেছেন, তাও কিন্তু নয়।
সুপারস্টার বক্সার ভ্লাদিমির ক্লিশকো গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, ১৯৯৬ সালে আটলান্টা গেমসে পাওয়া সোনার মেডেল তিনি ১ মিলিয়ন ডলারে বিক্রি করে দিয়েছেন।
সেই অর্থ তিনি কাজে লাগিয়েছেন নিজেদের দাতা সংস্থা ক্লিশকো ব্রাদার ফাউন্ডেশনে। নিজের দেশ ইউক্রেনের দরিদ্র শিশুদের উন্নয়নের লক্ষ্যে কাজ করে এই সংস্থাটি।
ভ্লাদিমির বলেন, "আমরা শিক্ষা ও খেলাধুলার দিকে গুরুত্ব দেই; যা একটি শিশুর জন্য মূল গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তাদের মধ্যে যদি জ্ঞান থাকে, তাহলে বড় হয়ে তারা সফল হতে পারবে এবং খেলা তাদেরকে নিয়মানুবর্তীতা শেখাবে; শেখাবে কি করে প্রতিপক্ষকে সম্মান করতে হয়, নিয়মকে সম্মান করতে হয়। জীবন আসলে এরকমই; আপনি বারবার নিচে পড়ে যাবেন, কিন্তু আবার উঠে দাঁড়াতে হবে। খেলা আপনাকে সেই শিক্ষাই দিবে।"
যুক্তরাষ্ট্রের সাঁতারু, অ্যান্থনি আর্ভিনও তার ২০০০ সালের অলিম্পিকে পাওয়া সোনার মেডেল 'ইবে' তে বিক্রি করে দিয়েছেন। সেখান থেকে প্রাপ্ত টাকা দিয়ে তিনি ২০০৪ সালে ভারত মহাসাগর সুনামি থেকে বেঁচে ফেরা মানুষদের সাহায্য করেছেন।
- সূত্র- সিএনএন