অদ্ভুতুড়ে ক্রিকেট

সবচেয়ে দীর্ঘ টেস্ট
ডারবান, দক্ষিণ আফ্রিকা, মার্চ ১৯৩৯
সিরিজের শেষ টেস্ট খেলতে নামে দক্ষিণ আফ্রিকা ও ইংল্যান্ড। এক ম্যাচ বেশি জিতে সিরিজে এগিয়ে ছিল লায়ন্সরা। এটি যে একটি অস্বাভাবিক ম্যাচ হতে চলেছে, তার ইঙ্গিত মেলে শুরুতেই। আগের আট টেস্টের (চারটি অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে, চারটি দক্ষিণ আফ্রিকা) সব কটিতে টস জেতা ইংলিশ অধিনায়ক ওয়েলি হ্যামন্ড এদিন টস হেরে বসলেন। দক্ষিণ আফ্রিকা বেছে নেয় ব্যাটিং। ব্রিটিশ কয়েন 'থ্রিপেনি বিট' দিয়ে টস করে এদিন হ্যামন্ডকে অবাক করে দেন দক্ষিণ আফ্রিকার অধিনায়ক অ্যালান ম্যালভিলে। কারণ, দক্ষিণ আফ্রিকায় তখন ব্রিটিশ কয়েন পাওয়া, আবার তা টসে ব্যবহার করা স্বাভাবিক কোনো বিষয় ছিল না। সে কয়েন মাঠে আসার পেছনে আছে আরেক গল্প। আগের রাতেই লে হাটনে স্নোকার (বিলিয়ার্ডজাতীয় খেলা) থেকে এই কয়েন জেতেন ম্যালভিলের সতীর্থ নরমান গর্ডন। তা আবার অধিনায়কের হাতে আসে এবং ব্যবহার হয় ম্যাচে।
টাইমলেস ম্যাচ, জয় পরাজয় নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত খেলা চলবে। ১৮৭৭ থেকে ১৯৩৯ পর্যন্ত সময়ে এরকম ৯৯টি টাইমলেস ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগ পর্যন্ত অস্ট্রেলিয়ায় অনুষ্ঠিত সব টেস্টই ছিল এরকম টাইমলেস। এর মধ্যে দুটি ম্যাচ শুধু ড্র হয়েছিল। ১৮৮২ সালে জাহাজ ধরার সময় নির্ধারিত থাকায় ইংল্যান্ডের সঙ্গে দুটি ম্যাচ অসমাপ্ত অবস্থায় শেষ হয়। মানে ড্র ঘোষিত হয়। খারাপ আবহওয়ায় দিন নষ্ট হয়, ইংল্যন্ডের ফেরার জাহাজ-টিকিট নির্দিষ্ট থাকায় ম্যাচ আর এগুনো সম্ভব হয়নি।
এরকমই সময় নির্ধারিত না থাকা এক টেস্ট ম্যাচের শুরু হয় শুক্রবার। প্রথম দিন, ফন ডার বেল নিজের সেঞ্চুরি পাওয়ার জন্য সারা দিন মন্থর গতিতে খেলতে থাকেন। এমনও হয়েছে যে ৪৫ মিনিট কোনো রান সংগ্রহ না করেই কাটিয়েছেন তিনি। ব্যাটিং উপযোগী পিচে দুই উইকেট হারিয়ে মাত্র ২২৯ রান তুলে প্রথম দিন শেষ করে দক্ষিণ আফ্রিকা।
দ্বিতীয় দিনের প্রথম এক ঘণ্টায় মাত্র ১৭ রান যোগ করে দক্ষিণ আফ্রিকা। এর মধ্যে শেষ হয় ফন ডার বেলের ৪৩৫ মিনিটের ম্যারাথন ইনিংস। এরপর ডালটন ও নোর্স মিলে ইনিংসে গতি আনেন এবং দ্বিতীয় দিন শেষে দক্ষিণ আফ্রিকার স্কোর দাঁড়ায় ৪২৩-৬। পিচ তখনো ব্যাটারদের সহায়তা করছে।
পরের দিন রবিবার ছিল বিশ্রামের জন্য বরাদ্দ। যদিও বৃষ্টির কারণে সেদিন এমনিতেও খেলা হতো না।
তৃতীয় দিন দক্ষিণ আফ্রিকা অলআউট হয় ২৩০ রানে এবং বৃষ্টির কারণে খেলা বন্ধ হওয়ার আগে ইংল্যান্ডের স্কোর দাঁড়ায় ৩৫-১।
চতুর্থ দিনটি ছিল ম্যাড়মেড়ে। দক্ষিণ আফ্রিকার বোলাররা সেদিন দলকে সুবিধাজনক অবস্থানে নিয়ে যায়। প্যান্টার এবং অ্যামেস প্রতিরোধ গড়ার চেষ্টা করলেও ইংল্যান্ড দিন শেষ করে সাত উইকেটের বিনিময়ে ২৬৮ রান তুলে।
পঞ্চম দিনে ৩১৬ রানে গুটিয়ে যায় ইংল্যান্ড। দক্ষিণ আফ্রিকা তখন ২০০ রানের চেয়ে বেশিতে এগিয়ে। টেস্ট শেষ হওয়ার জন্য কোনো দিন নির্ধারিত না থাকায় এবং উইকেটের অবস্থা ভালো থাকায় ইংল্যান্ডকে ফলোঅন না করিয়ে নিজেরাই ব্যাটিংয়ে নামে দক্ষিণ আফ্রিকা। ফন ডার বেল এবং মিচেলের প্রথম উইকেট জুটিতেই আসে ১৯১ রান। তবে দিন শেষ হওয়ার আগমুহূর্তেই তিন উইকেট হারিয়ে বসে দক্ষিণ আফ্রিকা। দিন শেষে তাদের স্কোর ছিল ১৯৩-৩।
ষষ্ঠ দিনে, দক্ষিণ আফ্রিকার ইনিংস শেষ হয় ৪৮১ রানে। অধিনায়ক ম্যালভিলে করেন অনন্য এক সেঞ্চুরি। ইংল্যান্ডের লক্ষ্য দাঁড়ায় ৬৯৬ রান।
সপ্তম দিনে টপ অর্ডারদের ব্যাটে শক্ত ভিত পায় ইংল্যান্ড। পল গিব এবং হাটন দারুণ শুরু এনে দেন দলকে। হাটন ৫৫ রানে ফিরে গেলেও দলকে টেনে নিয়ে যান গিব। মাত্র এক উইকেট হারিয়ে ২৫৩ রান নিয়ে দিন শেষ করে সফরকারীরা। বিল এড্রিক ও পল গিব অপরাজিত ছিলেন যথাক্রমে ১০২ ও ৭৮ রান করে। অদ্ভুত বিষয় হলো এড্রিক এর আগে ইংল্যান্ডের হয়ে সর্বোচ্চ ২৯ রান করেছিলেন। কিন্তু এদিন অধিনায়ক হ্যামন্ড তাকে আগে নামিয়ে দেন আর নিজের জাত চেনান এড্রিক।
অষ্টম দিন শনিবারে বল মাঠে গড়ায়নি বৃষ্টির কারণে। এদিকে ইংল্যান্ডের হাতে সময় কম। কেপটাউন থেকে দেশে ফেরার জন্য জাহাজের অগ্রিম টিকেট কাটা ছিল তাদের। তার জন্য মঙ্গলবার সন্ধ্যার মধ্যে তাদের ডারবান ছাড়তে হতো। ডারবান টেস্টে জায়গা না পাওয়া তিনজন ক্রিকেটার ইতোমধ্যে ফিরে গেছেন।
পরদিন রোববার ছিল টেস্টের দ্বিতীয় বিশ্রামের দিন।
নবম দিন গিব আউট হওয়ার মাধ্যমে এড্রিকের সঙ্গে তার ২৮০ রানের পার্টনারশিপ শেষ হয়। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় শুরু হওয়া গিবের ইনিংস শেষ হয় সোমবার দুপুরে। তার ৯ ঘণ্টার ইনিংসে আসে কেবল চারটি চার ও একটি ওভারথ্রু থেকে আসা ৫ রান। অন্য দিকে এড্রিকের ২১৯ রানের ইনিংস ইংল্যান্ডকে জয়ের দিকে এগিয়ে নিয়ে যায়। তিন উইকেট হারিয়ে ৪৯৬ রান নিয়ে দিন শেষ করে লায়ন্সরা। জয়ের জন্য তাদের প্রয়োজন ছিল মাত্র ২০০ রান। তবে দশম দিনই ছিল তাদের শেষ সুযোগ। কারণ, সেদিনই তাদের জাহাজ ধরতে ডারবান ছাড়তে হতো। এই জাহাজ মিস করলে পরবর্তী ১৫ দিনের মধ্যে আর কোনো ইংল্যান্ডগামী জাহাজ ছিল না।
আগের দিন ৫৮ রানে অপরাজিত থাকা হ্যামন্ড দশম দিনে অসাধারণ ব্যাটিং নৈপুণ্যে দলকে এগিয়ে নিয়ে যান। স্কোর ৬১১ হলে প্যান্টার আউট হন। এরপর ইংল্যান্ডের ৬১৯ রানের সময় চরম ক্লান্ত নিউসন নতুন বল হাতে নেন। এটি ছিল ম্যাচের ১২তম বল। এর মধ্যে কয়েক দফা বৃষ্টি হয়, ম্যাচও থেমে যায় এ কারণে। ১৪০ রান করা হ্যামন্ডও মনোযোগ হারিয়ে স্টাম্পিং হয়ে ড্রেসিং রুমে ফেরেন। চা-বিরতির সময় ইংল্যান্ডের প্রয়োজন ছিল ৪২ রান, হাতে পাঁচ উইকেট। এমন সময় ঝুম বৃষ্টি শুরু হয়। সেই বৃষ্টি যেন আর থামার নাম নেই।
দক্ষিণ আফ্রিকার ক্রিকেট বোর্ডের প্রধান তখন দুই অধিনায়কের সঙ্গে কথা বলেন এবং বিকেল ৫টা ৪৫ মিনিটে একটি বিবৃতি জারি করে জানান, অধিনায়কদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে দক্ষিণ আফ্রিকা ক্রিকেট বোর্ড সিদ্ধান্ত নিয়েছে, এই ম্যাচ পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হলো। ইংল্যান্ড ফেরার উদ্দেশে জাহাজে চড়ার আগে পর্যাপ্ত সময় পাওয়া না যাওয়ায় এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে।
১০ দিন এবং ৪৩ ঘণ্টা খেলার পর সিরিজের শেষ টেস্টটি এভাবে ড্র হয়। সময় নির্ধারিত না থাকা এই শেষ টেস্টটি রেকর্ড বইতেও অদলবদল আনে। কোনো প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে সর্বোচ্চ রানের (১,৯৮১) ম্যাচ ছিল এটি। এড্রিক এবং গিবের জুটি ছিল দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে যেকোনো উইকেটে সর্বোচ্চ। 'ক্রিকেট স্ট্র্যাঞ্জেস ম্যাচেস' বই লেখার সময় পর্যন্ত দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে দ্বিতীয় উইকেটে সর্বোচ্চ রানের জুটি ছিল এটি। চতুর্থ ইনিংসে সর্বোচ্চ রান, সবচেয়ে দীর্ঘ প্রথম শ্রেণির ম্যাচ (১৯৩০ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজে ৯ দিনের একটি ম্যাচ হয়), পল গিবের সবচেয়ে মন্থর শতক (পরে দক্ষিণ আফ্রিকার জ্যাক ম্যাকগ্লুর দখলে যায়) এবং এক ম্যাচে সর্বোচ্চ ১৬ অর্ধশতকের রেকর্ডও হয় এই টেস্টেই।
১১ জন বনাম ২ জন
উইটারশাম, আইল অব অক্সনি, সেপ্টেম্বর ১৯৩৬
কেন্ট-সাসেক্স সীমান্তের আইল অব অক্সনিতে আয়োজিত হওয়া ১১ জন বনাম ২ জনের অদ্ভুত ম্যাচটির ধারণাটি এসেছে ১০০ বছর আগে—১৮৩০-এর দশকে একই নিয়মের অনুষ্ঠিত একটি ম্যাচ থেকে। উইটারশামের নরটন ইনের স্থানীয় গ্রামবাসী তাদের ক্রিকেট খেলা নিয়ে একরকম অহংকার করত। সেখানকার জমিদাররা বিষয়টি নিয়ে বিরক্ত ছিলেন। তারা মাত্র দুইজন ক্রিকেটার দিয়ে স্থানীয়দের হারানোর বাজি ধরলেন। কেন্ট থেকে দুই পেশাদার ক্রিকেটার এডওয়ার্ড ওয়েনম্যান এবং রিচার্ড মিলকে নিয়ে আসলেন। দুই ইনিংসের ম্যাচে তারা দুইজন মিলে আইল অব অক্সনি একাদশকে ৬৬ রানে হারিয়ে দেন।
১৯৩৬ সালে কারও একজনের মাথায় আবার এমন একটি ম্যাচ আয়োজনের বুদ্ধি আসে। দুই পেশাদার ক্রিকেটারের বিরুদ্ধে আবারও স্থানীয় একাদশের ম্যাচ আয়োজনের সিদ্ধান্ত হয়। এই ম্যাচটিও দুই ইনিংসের হবে বলে পরিকল্পনা হয়। যেখানে পেশাদার ক্রিকেটারদের একজন আউট হলেই তারা 'অলআউট' হয়ে যাবে। তবে চাইলে বোলিংয়ের সময় একজনকে পরিবর্তন করে মাঠে নামানোর সুযোগ দেওয়া হয়। তবে মাঠে ফিল্ডার থাকবে দুইজনই।
পেশাদার হিসেবে সাসেক্স থেকে যোগ দিলেন বার্ট ওয়েনসলে এবং কেন্ট থেকে আনা হলো বিল অ্যাশডনকে। আর আইল অব অক্সনি একাদশের অধিনায়ক করা হয় কয়লা ব্যবসায়ী এস জে প্রিধামকে। একাদশের বাকি সবাই ছিলেন কর্মজীবী। তিনজন মালি, দুইজন রংমিস্ত্রি, দুইজন কৃষক, একজন করে রাজমিস্ত্রি, গাড়ি মেকানিক ও সাধারণ শ্রমিক।
এই খেলার প্রচারণা চালানো হয় জোরেশোরে। সবগুলো পানশালায় বিজ্ঞাপন প্রচার করা হয়। সেখানকার মানুষের মধ্যে ম্যাচটি নিয়ে ব্যাপক আগ্রহ তৈরি হয়। বিবিসি সিদ্ধান্ত নিল রেডিওতে সেই ম্যাচের ধারাভাষ্য প্রচার করার। মাঠে দর্শকসংখ্যাও ছিল উল্লেখযোগ্য। এক সূত্র থেকে জানা যায়, দর্শকসংখ্যা ছিল ২,০০০। আরেক সূত্রমতে, ৪,০০০। ম্যাচ থেকে আসা অর্থ দাতব্য কাজে ব্যয়ের সিদ্ধান্ত হয়।
ম্যাচ শুরু হয় বেলা ১১টা ৩০ মিনিটে। শুরুতে ব্যাটিং করে আইল অব অক্সনি। ওয়েনসলে এবং অ্যাশডন প্রান্ত অদলবদল করে বোলিং ও উইকেটকিপিং করতে থাকেন। মাত্র দুইজন ফিল্ডার হওয়ায় চারপাশই ছিল ফাঁকা। একটি ওভারেও তাই আর মেইডেন যায়নি। শুরু থেকেই ভালো ব্যাটিং করছিলেন স্থানীয়রা। ৩৯ রানে প্রথম উইকেট যাওয়ার পর রাজমিস্ত্রি ওয়েন বিল কেট এবং এ ব্রোমহাম মিলে স্কোর নিয়ে যান ১০২ পর্যন্ত। দুই পেশাদার ক্রিকেটার এবং তাদের পক্ষে বাজি ধরা লোকদের চোখে-মুখে তখন অন্ধকার। কিন্তু কেট আউট হওয়ার পর থেকে ম্যাচে ফিরে আসে পেশাদাররা। এরপর ২৪,৪ ওভারে ১৫৩ রানে অলআউট হয়ে যায় আইল অব অক্সনি। সর্বোচ্চ ৬৮ রান করেন বিল কেট। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ২৮ রান আসে শানব্রুকের ব্যাট থেকে।
অ্যাশডন এবং ওয়েনসলি জানতেন এক ভুলে ম্যাচ তাদের হাতছাড়া হয়ে যাবে। তারা দুইজনই চমৎকার ব্যাটিং প্রদর্শনী দেখালেন। ৩৬.৪ ওভার ব্যাটিং করে প্রথম, শেষ ও একমাত্র উইকেট জুটিতে তারা সংগ্রহ করেন ১৮৬ রান। তিন ছক্কা আর ১৩টি বাউন্ডারির মাধ্যমে ৯৬ রান করে আউট হন ওয়েনসলি। অ্যাশডন অপরাজিত ছিলেন ৮৩ রানের। তার ইনিংসে ছিল ১৪টি চার।
দুর্ভাগ্যক্রমে বৃষ্টি নেমে আসে। আর শেষ দুই ইনিংস শুরুই করা যায়নি। প্রথম ইনিংসে এগিয়ে থেকে জিতে যায় পেশাদাররা।
হানিফ মোহাম্মদের অবিশ্বাস্য ইনিংস
করাচি, জানুয়ারি ১৯৫৯
প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে অনেক বড় বড় ইনিংসের রেকর্ড আছে। তবে করাচি বনাম বাহাওয়ালপুরের ম্যাচে করা ২৪ বছর বয়সী হানিফ মোহাম্মদের কাছাকাছি কেউ যেতে পারেনি।
বৃহস্পতিবার চা-বিরতির পর তার ইনিংস শুরু হয়। আর শেষ হয় পরবর্তী রোববারের একদম শেষ বলে গিয়ে। হানিফ মোহাম্মদ প্রায় ১০ ঘণ্টা ৩৫ মিনিট ব্যাটিং করেন এবং ডন ব্র্যাডম্যানের ৪৫৩ রানের ইনিংসকে ছাপিয়ে যান। ১৯২৯-৩০ সালে নিউ সাউথ ওয়েলসের হয়ে কুইন্সল্যান্ডের বিপক্ষে এই ইনিংস গড়েন ব্র্যাডম্যান। হানিফের ইনিংসে চার ছিল ৬৪টি।
সেই ম্যাচে প্রথমে ব্যাট করে বাহাওয়ালপুর। মাত্র ১৮৫ রানে শেষ হয় তাদের ইনিংস। প্রথম দিন শেষে হানিফ মোহাম্মদের সংগ্রহ ছিল ২৫ রান। শুক্রবার সারা দিন ব্যাটিং করে তার সংগ্রহ দাঁড়ায় ২৫৫। এর মধ্যে দুটি শত রানের জুটি গড়েন তিনি। তার মধ্যে প্রথমটি ছিল দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে ওয়াকার হোসেনের সঙ্গে। ১৭২ রানের জুটিতে দুইজন মাঠে ছিলেন ১৫৫ মিনিট। আর তৃতীয় উইকেট জুটিতে ওয়াজির মোহাম্মদের সাথে গড়েন ১০৩ রানের (৯৫ মিনিট) জুটি। এই ওয়াজির ছিলেন হানিফ মোহাম্মদেরই ভাই। তাদের আরেক ভাইয়ের নাম ছিল মুশতাক মোহাম্মদ।
শনিবার ছিল বিশ্রাম। রবিবার আবারও বাহাওয়ালপুরের বোলারদের ওপর চড়াও হন হানিফ মোহাম্মদ। এদিনে ওয়ালিস ম্যাথিয়াসের সঙ্গে চতুর্থ উইকেটে তিনি গড়েন ২৫৯ রানের জুটি। হানিফ মোহাম্মদ যখন সেদিনের শেষ বল মোকাবেলা করছিলেন, তখন তার স্কোর ছিল ৪৯৯। শেষ বলে স্বল্প দূরত্বে সিঙ্গেল নিতে গিয়ে রান আউট হন হানিফ।
মজার বিষয় হলো, সবার ধারণা ছিল নিজের ৫০০ রান আদায় করতে এভাবে সিঙ্গেল নেওয়ার চেষ্টা করেছেন হানিফ। তবে এই ক্রিকেটারের ভাষ্য ছিল, তিনি জানতেন, তার রান ৪৯৮। আর পরের দিন নিজে শুরুতে বোলারদের মুখোমুখি হওয়ার ইচ্ছায় এভাবে সিঙ্গেল নেওয়ার চেষ্টা করেছেন। হানিফ আউট হওয়ার পর করাচি তাদের ইনিংস ঘোষণা করে এবং পরবর্তী সময়ে ইনিংস ও ৪৭৯ রানের ব্যবধানে তারা জিতে যায়।
তবে এত বড় জয়ের আনন্দ বেশি দিন ছিল না করাচি শিবিরে। এক সপ্তাহ পর একই প্রতিযোগিতার ফাইনালের সম্মিলিত বাহিনীর বিরুদ্ধে খেলতে নামে করাচি। দিলদার আহমেদ নামের এক অফ স্পিন বোলারের পঞ্চম বল করাচির উইকেটকিপার-ব্যাটার আব্দুল আজিজের বুকে লাগে। ১৫ মিনিট পরেই হাসপাতালের পথে থাকা আজিজ মারা যায়। সেদিনের জন্য ম্যাচ সাসপেন্ড করা হয়। আজিজের প্রতি সম্মান জানাতে তার বাসায় যান দুই দলের অধিনায়ক। পরে জানা যায়, আজিজের হার্টে সমস্যা ছিল।
৯ বল করে ৯ উইকেট শিকার
ব্লেইনহেইম, নিউজিল্যান্ড, ডিসেম্বর ১৯৬৭
দুই ইনিংসের ম্যাচটি ছিল মার্লবোরো কলেজ 'এ' বনাম বোহালি ইন্টারমিডিয়েট স্কুলের মধ্যে। এই ম্যাচে মার্লবোরো কলেজের স্টিফেন ফ্লেমিং ৯ বল করে। আর ৯ বলেই সে উইকেট পায়। ম্যাচটিতে ৮ বলে ওভার হিসাব হতো। ম্যাচ শেষে স্টিফেনের বোলিং ফিগার ছিল ১.১-০-০-৯।
ম্যাচের শুরুতে ব্যাটিং করে বোহালি। স্টিফেন যখন বোলিংয়ে আসে, তখন বোহালির স্কোর ১৭-৯। স্টিফেন প্রথম বল করেই উইকেট পেয়ে যায় আর বোহালির ইনিংস শেষ হয়। এরপর মার্লবোরো কলেজ ৯ উইকেট হারিয়ে ৪৫ রান নিয়ে তাদের ইনিংস ঘোষণা করে।
বোহালির দ্বিতীয় ইনিংসে বোলিং শুরু করে স্টিফেন। আট বলের এক ওভার করে স্টিফেন, আর প্রতিটি বলেই একটি করে উইকেট পায়। ছয়জন বোল্ড হয়ে এবং দুইজন ফিল্ডারের হাতে ক্যাচ দিয়ে আউট হয়। বোহালির স্কোর তখন ৮ উইকেটের বিনিময়ে ০। দ্বিতীয় ওভারে তারা দুই রান পায় অতিরিক্ত থেকে আর একটি রান আসে ব্যাট থেকে।
পরের তৃতীয় ওভারে আর স্টিফেনের হাতে বল তুলে দেওয়া হয়নি। এ ওভার করতে আসে প্রথম ইনিংসে একটি হ্যাট্রিকসহ ৫ উইকেট পাওয়া গ্রাহাম হোল্ডওয়ে। পাঁচ বলের মধ্যে বাকি দুই উইকেট তুলে নেয় হোল্ডওয়ে। ৮ বলের ওভারের ম্যাচে তিন ওভারের মধ্যে মাত্র ২১ বলে শেষ হয় বোহালির ইনিংস। মার্লবোরো জিতে যায় ইনিংস ও ২৫ রানে।