Skip to main content
  • মূলপাতা
  • অর্থনীতি
  • বাংলাদেশ
  • আন্তর্জাতিক
  • খেলা
  • বিনোদন
  • ফিচার
  • ইজেল
  • মতামত
  • অফবিট
  • সারাদেশ
  • কর্পোরেট
  • চাকরি
  • প্রবাস
  • English
The Business Standard বাংলা

Sunday
August 10, 2025

Sign In
Subscribe
  • মূলপাতা
  • অর্থনীতি
  • বাংলাদেশ
  • আন্তর্জাতিক
  • খেলা
  • বিনোদন
  • ফিচার
  • ইজেল
  • মতামত
  • অফবিট
  • সারাদেশ
  • কর্পোরেট
  • চাকরি
  • প্রবাস
  • English
SUNDAY, AUGUST 10, 2025
এটা একটা প্রেমের গল্প হতে পারত

ইজেল

তানজিনা হোসেন
13 March, 2021, 11:15 am
Last modified: 13 March, 2021, 03:26 pm

Related News

  • ফিরে আসা তার
  • হোজ্জা তুমি কার!
  • আগামী বছর প্রকাশিত হবে পেদ্রো আলমোদোবারের ছোটগল্প সমগ্র   
  • নিলামে বিক্রি হলো রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের হাতে লেখা দুষ্প্রাপ্য চিঠি 
  • ঈদ স্পেশাল: ভাড়া চক্ষুর দোকান

এটা একটা প্রেমের গল্প হতে পারত

রাধাচুড়া বিছানো পথে আনমনে হেঁটে চলে আরাফ। কিন্তু তার চেয়ে বেশি কাঙাল ছিল সে একজনের ভালবাসার। যার হাত ধরে এই রাধাচুড়া বিছানো পথে একদিন হাঁটতে হাঁটতে, হাঁটতে হাঁটতে...
তানজিনা হোসেন
13 March, 2021, 11:15 am
Last modified: 13 March, 2021, 03:26 pm

ছেলেটা খুব মেধাবী। আর ওর টাকারও খুব দরকার!

প্রথম দিন আরাফকে এভাবেই পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন অধ্যাপক আলী। টাকার দরকার আরাফের ছিল বই কি। বেশ বাজে ভাবেই দরকার ছিল। তার স্বামী পরিত্যক্তা মা দশ আর তেরো বছরের দুটি সন্তানকে নিয়ে ভাইয়ের বাড়িতে গলগ্রহ হয়ে উঠেছিলেন যেদিন, সেদিন স্বপ্নেও ভাবেন নি ছেলেটা রাজশাহী বোর্ডে এমন ঈর্ষণীয় রেজাল্ট করে তার কয়েক বছর পরই ঢাকার বুয়েটে চান্স পেয়ে যাবে।  আরাফের আশ্রয়দাতা মামা মামীও ভাগ্নের এই সাফল্যে কেন যেন বিশেষ আনন্দিত হতে পারেন নি। তাই রাজশাহী থেকে কোনো রকমের সহযোগিতার আশা বাতুলতা মাত্র। কিন্তু বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক আলী এসব তথ্য কীভাবে জানলেন সে সম্বন্ধে আরাফের কোন ধারণা নেই। সে তখন পাগলের মত টিউশনি খুঁজছিল।  ডিপার্টমেন্টের নতুন লেকচারার সাজিয়া ম্যাডাম একটা টিউশনি যোগাড় করে দিয়েছিলেন তাকে, বলেছিলেন-চিন্তা করো না, আরও জুটে যাবে। টিউশনির জগতে বুয়েটের ছেলেদের কদর সর্ব্বোচ্চ। তবে পড়াশোনায় বিন্দু মাত্র ঢিল দেয়া যাবে না।  ঠিক আছে?

আরাফ মাথা নেড়েছিল, কিন্তু ঢাকা শহরে চলতে হলে একটা টিউশনি দিয়ে কি আর চলে?  

তো প্রথম দিন এহেন পরিচয় পর্বের পর মিসেস নুজহাত আলী তার দিকে চেয়ে হেসে বলেছিলেন-বসো। ভিঞ্চিকে ডাকছি। খুবই বাঁদর ছেলে। তোমাকে অনেক জ্বালাবে। ওর এডিএইচডি আছে। এডিএইচডি কি, জানো?

আরাফ মাথা নেড়েছিল। না জানে না। 

-এটেনশন ডেফিসিট হাইপারঅ্যাকটিভ ডিজঅর্ডার। ওকে হ্যান্ডেল করা খুব কঠিন।  পারবে? 

আরাফ আবারও মাথা নেড়েছিল-চেষ্টা করবো ম্যাডাম। 

নুজহাত ছেলেটাকে খুঁটিয়ে দেখছিলেন। ইস্ত্রি ছাড়া আধ ময়লা শার্ট। মাথার চুলগুলো বড় বড়। পুরু চশমার পেছনে ভীষণ মায়াময় দীপ্ত দুটি চোখ। কিন্তু ছেলেটা ভারি শীর্ণ। চোয়ালের হাড় অব্দি বের হয়ে আছে। তিনি সোফায় বসে পা দোলাতে দোলাতে বললেন-আমার ছেলের নাম ভিঞ্চি কেন জিজ্ঞেস করলে না? 

আরাফ মফস্বলের ছেলে, খাওয়া পরা আর লেখাপড়া চালিয়ে যাবার দুশ্চিন্তার বাইরে কখনও কিছু নিয়ে তার ভাবার সময় হয় নি। লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চির নামটাই যা জানে, আর জানে মোনালিসার কথা। এখন এসব সাধারণ জ্ঞান বিষয়ক প্রশ্ন শুরু হলে টিউশনির ইন্টারভিউয়ে পাশ করা মুশকিল। সে তাই সাবধানে উত্তর দিল-আপনি হয়তো পেইন্টিং খুব ভালবাসেন, তাই।           

নুজহাত আলী হাসলেন-হয় নাই। ভিঞ্চির জন্মের সময় তোমার স্যার ইটালীতে পিএইচডি করছিলেন। ইতালির ফ্লোরেন্স শহরে আমার ছেলের জন্ম। সেই বিষয়টাকে স্মরণীয় করে রাখতেই এই নাম। আমি নিজে কিন্তু মোনালিসা দেখে অত মুগ্ধ হই নাই। কেন যে মোনালিসার এত নাম ডাক তাও বুঝি না। আচ্ছা একটা কথা বলি, তুমি একটু বেশি করে খাওয়া দাওয়া করো। দুধ ডিম খেও রোজ। এ বয়সে এত স্বাস্থ্য খারাপ হলে চলে? 

জবাবে আরাফ মুখ নিচু করে হেসেছিল। মৃদু স্বরে বলেছিল-ম্যাডাম, হোস্টেলে দুবেলা ভাত, পাতলা ডাল আর ভর্তা ভাজি জোটে তাই অনেক। তার ওপর দুধ ডিম! কী যে বলেন।

কথাটা আরাফ বলেছিল কিছুটা সহানুভূতি পাবার আশায়, যাতে টিউশনিটার গুরুত্ব ম্যাডাম বুঝতে পারেন। সে যে গরিব আর অসহায়, তার টাকার সত্যি খুব বাজে ভাবে দরকার-তা যেন তিনি ভাল করে হৃদয়ঙ্গম করতে পারেন। নয়তো তাদের হোস্টেলের খাবার এত খারাপ নয়। সপ্তাহে দুদিন ডিম দেয়। দুদিন মাছ। একদিন মুরগি। রান্না খুব খারাপ হলেও পেট ভরে খাওয়া যায়। তার ওপর রুমমেটরা প্রায়ই এটা সেটা খাবার আনে। নানা রকম উদযাপন হয়। এর পরীক্ষা পাশ, ওর প্রেমে পড়া। হোস্টেলে উৎসব ফিস্ট লেগেই থাকে। বড় ভাই নেতারাও খাওয়ান। বিরানির প্যাকেট আসে, কখনও চিকেন ফ্রাই। আরাফও তার ভাগীদার হয়। সত্যি বলতে কি খাবার কষ্ট যতখানি তার চেয়ে সেদিন নুজহাতকে একটু বাড়িয়েই বলেছিল সে।  কিন্তু তার সেই চালাকিটাই এক রাশ মেঘ ডেকে আনল ঘরে। হাস্যময় চঞ্চল নুজহাত আলী তার কথা শুনে থমকে গেলেন। তাঁর সুন্দর চর্চিত মেক আপ করা মুখে নেমে এল রাজ্যির বিষন্নতা। গাঢ় করে আইলাইনার টানা চোখ দুটি ছল ছল করে উঠল।  অনেকক্ষণ পর তিনি গাঢ় বিষাদ মাখা কন্ঠে বললেন-সরি। আমি ভিঞ্চিকে পাঠিয়ে দিচ্ছি। আর তুমি রাতে অবশ্যই খেয়ে যাবে এখানে।

আরাফ সেদিন সেই মুহুর্ত থেকেই ভদ্রমহিলার প্রেমে পড়েছিল।

সে রাতে আরাফ সারা রাত ঘুমাতে পারে নি। এপাশ ওপাশ করছিল কেবল। কী সুন্দর দুটো চোখ নুজহাত আলীর। আর কী চমৎকার সৌরভ তাঁর শরীর থেকে ভেসে আসছিল। আর ওই উচ্ছ্বিসত ছেলেমানুষী কথাবার্তার মধ্যে হঠাৎ নেমে আসা এক রাশ বিষন্নতা-নাহ, তাঁর বিব্রত লজ্জিত মুখটা বার বার মনে পড়ায় আরাফ রাত তিনটায় উঠে এসে করিডোরে দাঁড়িয়েছিল। সিগারেট ধরিয়েছিল একের পর এক।  অধ্যাপক রাহাত আলীর বাসাটা চুম্বকের মত টানছিল ওকে। ওই তো কয়েক শ গজ হাঁটলেই বুয়েট কোয়ার্টার। গাছ গাছালিতে ঘেরা। সামান্যই তো পথ। অথচ এইটুকু পথ পেরোনো কত কঠিন! উফ, শুক্রবার কত দূর! কতদিন পর পর আসে একটা শুক্রবার?  

নুজহাত আলী গল্প করতে ভালবাসেন। কত রকমের গল্প তাঁর। নিজে জজের মেয়ে ছিলেন, সারা জীবন বড় বড় কোয়ার্টারে আর সরকারি বাংলোয় থেকেছেন। সেসব বাড়ির সামনে বিরাট সাজানো বাগান থাকত, মালিরা ফুল ফোটাত, বাগানের এক দিকে ঝুলত দোলনা। দোলনায় গা এলিয়ে দিয়ে দোল খেতে খেতে আকাশ দেখা যেত সবুজের ফাঁক দিয়ে, চুলগুলো নিচের দিকে ছেড়ে দিয়ে। মফস্বল শহরে কোনো কিছুরই খুব তাড়া ছিল না। রাহাত আলীর সাথে বিয়ের পর যখন ইতালি গেলেন, তখন এক রুমের বাসার মধ্যেই রান্না খাওয়া শোয়া। উফ, জীবনটা দুর্বিষহ হয়ে উঠেছিল তাঁর। এর মধ্যে তিনি সন্তানসম্ভবা হয়ে পড়লেন। সে কি বিচ্ছিরি সময়। আরাফ শোনে আর ভাবে কোনো একদিন সেও বিদেশে স্কলারশিপ নিয়ে নিশ্চয় পড়তে যাবে। ইউনিভার্সিটির ছোট্ট ডরমিটরিতে থাকতে হবে। দিনমান ক্লাস আর প্র্যাকটিক্যাল শেষে সেই ছোট্ট ঘরে ফিরে কাকে দেখবে কল্পনা করতে গিয়ে বারবার হোঁচট খায় সে। কেন যেন একটা অসম্ভব মুখই খালি ভেসে ওঠে।    

-তোমার স্যার সারা দিন থাকত ক্লাসে। তারপর প্র্যাকটিকেল। ওই এইটুকু ঘরে কেমন যে লাগত আমার। কী হাঁসফাঁস। ওই সময় থেকেই আমার একটা রোগ হল।  ক্লস্ট্রোফোবিয়া। বদ্ধ জায়গায় থাকলে দম বন্ধ হয়ে আসে। জানো আমি না লিফটেও চড়তে পারি না। আমরা একটা এপার্টমেন্ট নিয়েছি ইস্কাটনে, ইনটেরিয়রও শেষ।  আমার এই রোগের কারণেই ওটাতে উঠতে পারছি না। -গড়গড় করে কথা বলে চলেন নুজহাত। কথা বলা রোগটার বিষয়ে তিনি অবশ্য অসচেতন। আরাফ মুগ্ধ হয়ে শোনে।  

-আমার ভাল লাগে খোলা আকাশ। সবুজ মাঠ। পার্ক। এই যে বুয়েট ক্যাম্পাস-এটা এই জন্য প্রিয় আমার। এত খোলামেলা। অথচ তোমার স্যার বাসায় এসে সারাক্ষণ নিজের ওই ছোট স্টাডি রুমে বসে থাকতে পছন্দ করে। পুরা ঘরকুনো লোক একটা। কোথাও যাবার কথা বললেই বিরক্ত হয়। দূর। বাইরে জ্যাম। ধূলা, ধোঁয়া।  কোথায় যাবা এই শহরে? জানো, কতদিন আমি কোনো বড় মাঠে যাই না! আমার না এই শহরটা একটুও ভাল্লাগে না। আচ্ছা, তোমাদের রাজশাহীটা কেমন? 

আরাফের ইচ্ছে হয় বলে-আমার সাথে যাবেন? যেখানে যেতে ইচ্ছে হয় আপনাকে নিয়ে যাব। খোলা মাঠ। কলাইশুঁটির বিস্তীর্ণ খেত। সরিষা ফুলের হলুদ চাদরে ঢাকা প্রান্তর। আমাদের গ্রামটা পেরিয়ে বড় রাস্তায় উঠলে বড় বড় শিরীষ আর কৃষ্ণচুড়া গাছে ঢাকা একটা লম্বা ছায়াময় পথ। সেই পথ ধরে একদিন হাঁটতে হাঁটতে, হাঁটতে হাঁটতে-
রুমমেট সজীব একদিন বলল-তুই প্রেমে পড়ছস? 

-ধুর।  

-ধুর কি? তোর মুখ চোখ দেখেই সব বোঝা যায়। সারা রাত ঘুমাস না। চোখ লাল। একটু পর পর জোরে জোরে শ্বাস ফেলোস! শালা, এই সব আমাগো মুখস্থ।  মেয়েটা কে? আমাদের ক্লাসের কেউ? না জুনিয়র, নতুন ব্যাচের? 

আরাফ উঠে চলে যেতে চাইল টেবিল ছেড়ে। পেছন থেকে সজীব হাসতে হাসতে বলল-একটু সেলিব্রেট কর। নতুন প্রেমে পড়ছস, কিছু খাওয়াইবি না? কিপটা কোথাকার! 

সে রাতে আরাফ নুজহাতকে স্বপ্নে দেখল। বেশ বিব্রতকর একটা স্বপ্ন। স্বপ্নে নুজহাত আটপৌরে একটা শাড়ি পরে বিছানার ধারে বসে তার মুখের ওপর ঝুঁকে ছিলেন।  তাঁর শরীর থেকে সেই অবশ করা পারফিউম আর ঘামের গন্ধ ভেসে আসছিল।  তিনি এত কাছে চলে এসেছিলেন যে তাঁর নাকের ওপর জমা বিন্দু বিন্দু ঘাম সে দেখতে পাচ্ছিল। ঝুঁকে পড়ার কারণে নীল রঙা ব্লাউজের মাঝখানে তাঁর দুই স্তনের মাঝ বরাবর সরলরেখাটিও সে স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছিল। শেষ রাতে ধড়মড় করে জেগে ওঠে আরাফ দেখে ঘামে তার বিছানা ভিজে গেছে। বুকটা প্রচন্ড জোরে ধুকপুক করছে। সমস্ত শরীর জেগে উঠেছিল তার। এই লজ্জা আর অপরাধবোধ নিয়ে সামনের শুক্রবার তাঁর মুখোমুখি কীভাবে হবে সেটা ভেবে বিচলিত বোধ করছিল সে।  

পরদিন সিনিয়রদের রুমে তার ডাক পড়ল। হোস্টেলে এসব ডাক নতুন নয়। প্রথম প্রথম অপমানে আতংকে জমে যেত, পা চলতে চাইত না, আজকাল সে এসব আর সবার মত স্পোর্টিংলি নিতে শিখেছে। রুমে চারজন বড় ভাই ছিল। একটু পর শুরু হল জেরা।  

-শুনলাম তুই প্রেমে পড়ছস?-বড় ভাই চুইংগাম চিবুতে চিবুতে জিজ্ঞেস করল।  আরাফ মাথা নিচু করে রইল। 

-মায়াডা কে? ক্যাম্পাসের? না বাইরের? ছবি দেখা। 

আরাফ এখনও চুপ। আরেকজন তার পকেট থেকে সেলফোনটা কেড়ে নিল।  গ্যালারি, মেসেজ, কললিস্ট, ইনবক্স সব চেক করল মনোযোগ দিয়ে। তারপর হুঃ করে বলল-কিছু নাই ভাই। হালায় কুনো এভিডেন্স রাখে নাই। একটা মেয়েরও ফটো নাই। শালা বাঞ্চোত।  

বড় ভাই এবার গম্ভীর স্বরে বলল-তুই মাস্টারবেট করস? 

আরাফের কান ঝাঁ ঝাঁ করে। বড় ভাই হাসতে লাগল-প্যান্ট খোল। খুইলা মায়াডার কথা চিন্তা কর। দেখি কী হয়! 

আরাফ বিড়বিড় করে বলে-মাপ করে দেন বড় ভাই। এইবার মাপ করে দেন।  

-আরে শালা নতুন নতুন প্রেম! একটু ইমাজিন কর, ইমাজিন। ইমাজিনেশন ছাড়া আর্কিটেক্ট হবি কেমনে? হা হা হা।             

রাতভর আরাফ বিছানায় ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদল। অনেক রাতে তাকে শান্তি দিল কেবল পুরু আইলাইনার দেয়া গভীর মমতাময় সরলতায় ভরা দুটি চোখ। আরাফ ঘুমের মধ্যেই বিড়বিড় করে বলল-মাপ করে দিয়েন ম্যাডাম। মাপ করে দিয়েন।  

পরের শুক্রবার নুজহাত ম্যাডামের দিকে তাকাতেও লজ্জা করছিল আরাফের। আর আশ্চর্য, নুজহাত আলীও কেমন মুখ কালো করে ছিলেন সারাটা ক্ষণ। বুকটা দুরদুর করছিল আরাফের। উনি কি সব জেনে গেছেন? ঘৃণা করছেন তাকে? কিংবা করুণা? 

শুক্রবার রাতে ভিঞ্চিদের বাসায় ডিনার খাওয়া বাধ্যতামূলক। ড্রইংরুমের নিচু টেবিলেই ট্রে তে করে খাবার দেয়া হয় তাকে। কাজের মেয়েটা দিয়ে যায়। সে চুপচাপ খেয়ে উঠে আসে। কদাচিৎ নুজহাত সামনে বসে গল্প করেন। নয়তো এটা তাঁর টার্কিশ সিরিয়াল দেখার সময়। আজ সিরিয়াল ফেলে তিনি গম্ভীর মুখে সামনে এসে বসলেন। চুপচাপ বসে আরাফের খাওয়া দেখলেন। খাওয়া শেষ হলে কাজের মেয়েটাকে ডেকে এক গ্লাস দুধ দিতে বললেন আরাফকে। আরাফ বলল-দুধ খাব না ম্যাডাম। আজ উঠি।

নুজহাত কঠিন গলায় বললেন-না। বসো। কথা আছে। 

আরাফের হাত কাঁপতে শুরু করেছে। বুকের মধ্যখান ভিজে গেছে ঘামে। কি কথা বলবেন তিনি? আরাফ কেন তাঁকে স্বপ্ন দেখে? কেন তাঁর সামনে এলে আরাফের গা ঘামে ভিজে যায়? 

-একটা সত্যি কথা বলবে আরাফ? -নুজহাতের কন্ঠ কান্না ভেজা। -তুমি কি জানো নতুন লেকচারার সাজিয়া আফরিনের সাথে তোমার স্যারের সম্পর্ক কি?

আরাফ আকাশ থেকে পড়ে। এসব কি প্রশ্ন? এসব নিয়ে ভাবার বা লক্ষ্য করবার অবকাশ কোথায় তার? সাজিয়া ম্যাডাম ভীষন সুন্দরী আর স্মার্ট বটে। তবে নুজহাত আলীর কাছে কিছুই নন। ডিপার্টমেন্টে তাঁর আগে লিস্টে আরেকজন এলিজিবল ছিলেন, ইন্টারভিউতে রহস্যজনক ভাবে তাকে বাদ দিয়ে সাজিয়া ম্যাডামকে নেয়া হয়েছিল। ভদ্রমহিলার কানেকশন নিয়ে তখন কথা উঠেছিল শিক্ষক মহলে। অবশ্য কানেকশন ছাড়া দেশে একটা পাতাও নড়ে না। কিন্তু এসব জাহাজের খবরে তার কি লাভ? 

নুজহাত শাড়ির আঁচল মুখে চেপে ফুলে ফুলে কাঁদতে লাগলেন। সেই কান্নার মধ্যে সে যা বুঝল তা হচ্ছে অধ্যাপক রাহাতের সাথে সাজিয়া আফরিনের মেলামেশা ও সময় কাটানোর বিষয়টা আজ ফোন করে কোনো এক কলিগ নুজহাতকে জানিয়েছেন।  নুজহাত অবশ্য আগে থেকেই কিছুটা আঁচ করতে পারছিলেন। অধ্যাপক রাহাতের প্রায়ই দেরি করে বাড়ি ফেরা, হঠাৎ করে ল্যাবওয়ার্ক বেড়ে যাওয়া, প্রশ্নপত্র তৈরি আর খাতা দেখার নামে ছুটির দিনেও সাজিয়ার কোয়ার্টারে যাওয়া, সাজিয়ার জন্মদিনে তাকে উপহার পাঠানো-এসব তার আগেই নজরে এসেছিল। কিন্তু প্রাণপনে তা অবিশ্বাস করতে চেয়েছিলেন তিনি। আজ শংকরদার টেলিফোন সব বিশ্বাস ভেঙেচুরে দিয়েছে।  

আরাফের ইচ্ছে করল নুজহাতের পিঠে হাত বুলিয়ে দেয়। তাঁর ভেজা চোখগুলো মুছে দিয়ে বলে-তাতে কী হয়েছে? আমি তো আছি। আপনার জন্য আমি সমস্ত রাত আপনার দালানের সামনের ওই জারুল গাছটার নিচে দাঁড়িয়ে থাকতে পারি। কেন ওই পেট মোটা স্বার্থপর অবিশ্বস্ত স্বামীর জন্য কষ্ট পাচ্ছেন? 

নুজহাতের জন্য কষ্টের পাশাপাশি একটু অনাবিল সুখও হচ্ছিল তার। যাক, অধ্যাপক রাহাত আর তার প্রতিদ্বন্দী নন। তিনি সেই যোগ্যতা হারিয়েছেন। নুজহাতের কাছে তার স্থান এখন অনেক নীচে।  

তার পরদিন থেকে আরাফের কাজ হল সাজিয়া আর রাহাত স্যারের খুঁটিনাটি খবর এনে দেয়া। এতদিন এই জিনিসটা তার চোখে পড়ে নি তাতে সে আশ্চর্যবোধ করল। ক্যাম্পাসের ওপেন সিক্রেট এটা। ছাত্র-ছাত্রীরা হাসাহাসি করে। অধ্যাপক রাহাতের কক্ষেই সাজিয়া ম্যাডাম বেশির ভাগ সময় কাটান। ডিপার্টমেন্টে সাজিয়া যা চান তাই হয়। অন্য শিক্ষকদের রীতিমত তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করেন তিনি। শিক্ষকরা এ ব্যাপারটাতে ক্ষুব্ধ। নুজহাত এসব শোনেন মুখ শক্ত করে। আরাফ তাঁর সহমর্মী হয়, দুঃখ প্রকাশ করে। কখনও বলে-আপনার মত এত সুন্দর আর এত ডিসেন্ট ওয়াইফকে রেখে স্যার ওই মহিলার মাঝে কী পেলেন আমি বুঝি না। বিশ্বাস করেন উনি একজন ডিসগাস্টিং মহিলা।  

একদিন নুজহাত কাঁদতে কাঁদতে বলেন-আরাফ আমার দম বন্ধ হয়ে আসছে।  ক্লস্ট্রোফোবিক লাগছে।  

আরাফ প্রস্তাব দেয়-চলেন তাহলে দূরে কোথাও ঘুরে আসি। কোন খোলা জায়গায়।

-এই শহরটা আমার কাছে অসহ্য লাগছে-ফুঁপিয়ে ওঠেন নুজহাত।  

-চলেন আমরা তাহলে শহরের বাইরে কোথাও যাই।  

জানা যায় নুজহাতের বান্ধবীর মুন্সিগন্জে একটা বাগানবাড়ি আছে। রবিবার ক্লাস বাদ দিয়ে ওই বাগানবাড়ি যাবার পরিকল্পনা হয়। 

শনিবার সারা রাত উত্তেজনায় ছটফট করে আরাফ। তার ঘুম আসে না। সে বার বার উঠে পানি খায়। পায়চারি করে। নুজহাতকে কতটা কাছে পাবে সে? কতটা একলা? এই দুঃখী বঞ্চিত অপমানিত মহিলাটিকে সে কি করে একটু শান্তি দেবে? যদি তাঁর কান্না ভেজা গালটা চুমু খেয়ে ঠোঁট দিয়ে মুছে দিতে পারত! উনি কি খুব রাগ করবেন? আচ্ছা উনি এত কিছু বোঝেন আর আরাফের আবেগটা বোঝেন না? নাকি বুঝেছেন বলেই একটু একান্ত সময় কাটাতে চান?  

রবিবার হোস্টেলের সবাই ক্লাসে চলে গেলে আরাফ সময় নিয়ে শেভ করল। ইস্ত্রি করল নতুন বাদামী শার্টটা। সজীবের বডিস্প্রেটা একটু গায়ে মেখে নিল। তারপর বের হতে যাবে এমন সময় ফোন। সজীব। তার ক্লাসমেট আর রুমমেট। 

-তুই কই? ক্লাসে আসস নাই? রাহাত স্যার তোরে খুঁজতেছে। 

লোকটার নাম শুনেই কেন যেন পিত্তি জ্বলে গেল তার। কিন্তু স্যার তাকে কেন খুঁজবেন? টার্ম পরীক্ষা শেষ। পরীক্ষা সে ভালই দিয়েছে। এসাইনমেন্টও জমা দেয়া হয়ে গেছে।  

ডিপার্টমেন্টে এল আরাফ। শুনল রাহাত স্যার তাঁর রুমে দেখা করতে বলেছেন।  অস্থির ভঙ্গিতে তাঁর রুমের দিকে রওনা দিল সে। হারামজাদা অন্য কোন দিন পায় নি কথা বলার! আজকেই তার কথা বলতে হবে? স্কাউন্ড্রেল একটা!  

রাহাত স্যারের রুমে ঢুকে একটু থমকে গেল আরাফ। স্যারের চেয়ারের পাশে রাখা ইজিচেয়ারে আধ শোয়া হয়ে আছেন সাজিয়া আফরিন ম্যাডাম। চকলেট কালারের সালোয়ার কামিজে চোখ ধাঁধিয়ে যাচ্ছে যেন। ঠোঁটে কড়া লিপস্টিক, চুলগুলো পনিটেল করা। তাকে দেখে স্যার বললেন-আরে আসো আরাফ। সিট ডাউন। হাউ ইজ এভরিথিং? 

-এভরিথিং অলরাইট স্যার।  

-সাজিয়া ইউএসএ তে স্কলারশিপ পেয়েছে। কনগ্রাচুলেট হার।  

আরাফ সাজিয়ার দিকে চেয়ে হাসল-কনগ্রাচুলেশনস ম্যাডাম।  

-থ্যাংক ইউ-মিষ্টি করে হাসলেন ম্যাডাম। 

-আমি দেনদরবার না করলে, বোস্টনে চিঠি লিখে রিকমেন্ড না করলে এটা হত না, তাই না সাজিয়া? 

সাজিয়া হাসলেন-ইউ আর সো কাইন্ড হার্টেড স্যার। 

অধ্যাপক রাহাত আরাফের দিকে ফিরে চোখে চোখ রেখে বললেন-কি? এই সংবাদটা নুজহাতকে দেবে না? 

বুকটা ধড়াস করে উঠল আরাফের। অধ্যাপক রাহাত চিবিয়ে চিবিয়ে বলতে লাগলেন-ইউ ক্রিপ। আমি তোমার উপকার করতে চেয়েছিলাম। আই ওয়াজ কাউন্ড টু ইউ।  তার বিনিময়ে তুমি-হাউ ডেয়ার! 

-স্যার, আমি, আমি-আমতা আমতা করতে থাকল আরাফ। 

-বলতে বাধ্য হচ্ছি যে স্ট্যাটাস থেকে তুমি এখানে এসেছ, তোমাকে সেখানেই মানায়। ছোটলোক কখনও ভদ্রলোক হয় না। আই ওয়াজ সো ফুল এবাউট ইউ! 

-স্যার আই অ্যাম এক্সট্রিমলি সরি-আরাফ কথা খুঁজে পায় না কিছু।  

-ইউ হ্যাভ বিন চার্জড ফর কপিয়িং প্রজেক্ট। জুনাইদের প্রজেক্ট তুমি চুরি করেছ। 

-এটা ঠিক না স্যার। বরং সে ই আমার-

-ডোন্ট ডেয়ার টু টক এনিমোর-হুংকার দিয়ে উঠলেন অধ্যাপক রাহাত। আই উইল মেক ইওর লাইফ মিজারেবল। আমি দেখব তুমি কিভাবে বুয়েট থেকে পাশ করো! স্কলারশিপ তো দূরের কথা! 

এ বছর বসন্তে রাজশাহী শহর কৃষ্ণচুড়া আর রাধাচুড়া ফুলে ছেয়ে গেছে।  সার্কিট হাউসের সামনের বড় রাস্তাটা জুড়ে হলুদ আর লাল ফুলের কার্পেট বিছানো। টার্ম পরীক্ষায় এবার ফেল করেছে আরাফ। তার জীবনের প্রথম ফেল। ছুটির আগের দিন সাজিয়া আফরিনের জন্য ডিপার্টমেন্টে ফেয়ারওয়েল আয়োজন করা হয়েছিল। সেখানেই নুজহাতের সাথে শেষ দেখা। সাজিয়া চলে যাচ্ছেন, তাই নুজহাতের মুখে আবার হাসি ফুটেছে। বিষন্নতা কেটে গিয়ে মুখ ঝলমল করছিল তাঁর। ডিনার টেবিলে রাহাতের পাশে বসে অনেক হাসছিলেন তিনি। আরাফের বুকের ভেতরটা চিন চিন করছিল।  এক ফাঁকে নুজহাতকে কাছে পেয়ে আরাফ বলেছিল-ম্যাডাম, আমি বাড়ি যাচ্ছি কাল।  

-ওহ তাই?-অবাক হয়ে বলেছিলেন নুজহাত-বলো নাই কেন আগে? এ মাসের এডভান্স স্যালারিটা দিয়ে দিতাম তাহলে। তোমার নিশ্চয় টাকার দরকার।  

টাকার দরকার আরাফের সব সময়ই ছিল। বেশ বাজেভাবেই ছিল বই কি।  রাধাচুড়া বিছানো পথে আনমনে হেঁটে চলে আরাফ। কিন্তু তার চেয়ে বেশি কাঙাল ছিল সে একজনের ভালবাসার। যার হাত ধরে এই রাধাচুড়া বিছানো পথে একদিন হাঁটতে হাঁটতে, হাঁটতে হাঁটতে...।

Related Topics

টপ নিউজ

ছোটগল্প

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.

MOST VIEWED

  • ড্যাপ সংশোধন: ঢাকার কিছু এলাকায় ভবন নির্মাণে ফ্লোর এরিয়া রেশিও দ্বিগুণ পর্যন্ত বাড়ানো হচ্ছে
  • প্রথমবারের মতো সরকারিভাবে টাইফয়েডের টিকা পাবে ৫ কোটি শিশু, কার্যক্রম শুরু সেপ্টেম্বরে
  • “স্ত্রীকে মেরে ফেলছি, আমাকে নিয়ে যান”: হত্যার পর ৯৯৯-এ স্বামীর ফোন
  • গাজীপুরে সাংবাদিক হত্যার ঘটনায় আরও তিনজন গ্রেপ্তার
  • মিয়ানমারে বিদ্রোহীদের নিয়ন্ত্রণাধীন এলাকায় বিরল মৃত্তিকা উত্তোলন ব্যাপকভাবে বেড়েছে, যাচ্ছে চীনে
  • স্বাধীনতার পক্ষে–বিপক্ষে বলে বিভক্তি সৃষ্টি কাম্য নয়: সালাহউদ্দিন আহমদ

Related News

  • ফিরে আসা তার
  • হোজ্জা তুমি কার!
  • আগামী বছর প্রকাশিত হবে পেদ্রো আলমোদোবারের ছোটগল্প সমগ্র   
  • নিলামে বিক্রি হলো রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের হাতে লেখা দুষ্প্রাপ্য চিঠি 
  • ঈদ স্পেশাল: ভাড়া চক্ষুর দোকান

Most Read

1
বাংলাদেশ

ড্যাপ সংশোধন: ঢাকার কিছু এলাকায় ভবন নির্মাণে ফ্লোর এরিয়া রেশিও দ্বিগুণ পর্যন্ত বাড়ানো হচ্ছে

2
বাংলাদেশ

প্রথমবারের মতো সরকারিভাবে টাইফয়েডের টিকা পাবে ৫ কোটি শিশু, কার্যক্রম শুরু সেপ্টেম্বরে

3
বাংলাদেশ

“স্ত্রীকে মেরে ফেলছি, আমাকে নিয়ে যান”: হত্যার পর ৯৯৯-এ স্বামীর ফোন

4
বাংলাদেশ

গাজীপুরে সাংবাদিক হত্যার ঘটনায় আরও তিনজন গ্রেপ্তার

5
আন্তর্জাতিক

মিয়ানমারে বিদ্রোহীদের নিয়ন্ত্রণাধীন এলাকায় বিরল মৃত্তিকা উত্তোলন ব্যাপকভাবে বেড়েছে, যাচ্ছে চীনে

6
বাংলাদেশ

স্বাধীনতার পক্ষে–বিপক্ষে বলে বিভক্তি সৃষ্টি কাম্য নয়: সালাহউদ্দিন আহমদ

EMAIL US
contact@tbsnews.net
FOLLOW US
WHATSAPP
+880 1847416158
The Business Standard
  • About Us
  • Contact us
  • Sitemap
  • Privacy Policy
  • Comment Policy
Copyright © 2025
The Business Standard All rights reserved
Technical Partner: RSI Lab

Contact Us

The Business Standard

Main Office -4/A, Eskaton Garden, Dhaka- 1000

Phone: +8801847 416158 - 59

Send Opinion articles to - oped.tbs@gmail.com

For advertisement- sales@tbsnews.net