সু চি’র ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ীদের সেনাবাহিনীর জিজ্ঞাসাবাদ; রিমান্ডের মেয়াদ বাড়ল আরও দুইদিন

এ মাসের শুরুতে মিয়ানমারের ক্ষমতাসীন দল ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্র্যাসিকে (এএলডি) ক্ষমতাচ্যুত করে দেশটির নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে সামরিক বাহিনী। নেত্রী সু চি, প্রেসিডেন্ট উইন মিন্টসহ এনএলএডির শীর্ষস্থানীয় নেতাদের গ্রেপ্তার করে আটকাদেশ দেওয়া হয়েছে।
সু চিকে রিমান্ডে নেয়ার পাশাপাশি তার ঘনিষ্ঠ কিছু ব্যবসায়ীকেও সেনা কর্মকর্তারা জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন। এদের মধ্যে উ জাও জাও, উ চিত খাইং এবং উ মং ওয়েইককে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে কয়েক ঘন্টা জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে বলে জানা যায়।
ইয়াঙ্গুনের একাধিক ব্যবসায়িক সূত্রে জানা গেছে, গত ১ ফেব্রুয়ারি সামরিক বাহিনী ক্ষমতা দখলের পর থেকেই মিয়ানমারের অন্যতম বড় সমন্বিত ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান (কংগ্লোমারেট) ম্যাক্স মিয়ানমার গ্রুপের চেয়ারম্যান উ জাও জাওকে তিনবার জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে।
ইডেন গ্রুপের প্রেসিডেন্ট এবং মিয়ানমারের অন্যতম ধনী ব্যক্তি উ চিত খাইংকেও জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। এনএলডি'র প্রাক্তন সদস্য এই ধনকুবের নব্বইয়ের দশকে জেলও খেটেছেন।
রিয়েল এস্টেট ডেভেলপার উ মং ওয়েইককেও স্বল্প সময়ের জন্য আটক করে পরে ছেড়ে দেওয়া হয়। তিনি সেসব 'বিজনেস টাইকুন'দের একজন যারা ২০১৯ সালে রাজধানী নেপিডোতে 'ইটারনাল পিস প্যাগোডা' বিনির্মাণে অনুদান দিয়েছিলেন।
এদের তিনজনই অতীতে সামরিক বাহিনীর সাথে কখনো না কখনো মিলে কাজ করেছেন; এবং এক পর্যায়ে মার্কিন নিষেধাজ্ঞার আওতায়ও ছিলেন। ২০১৬ সালে এনএলডি ক্ষমতায় আসার পরে আমেরিকা সমস্ত নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়।
জিজ্ঞাসাবাদের পর এদের ছেড়ে দেয়া হয়েছে এবং এ বিষয়ে এখন পর্যন্ত তারা মুখ খোলেননি।
এই তিন ব্যবসায়ীর প্রত্যেকেই সু চি'র মায়ের নামে প্রতিষ্ঠিত একটি দাতব্য সংস্থায় অনুদান দিয়েছেন বলে ধারণা করা হয়। সেনা কর্মকর্তারা বর্তমানে এই সংস্থাটির আর্থিক লেনদেনের রেকর্ড খতিয়ে দেখছেন। তাদের কথা, বিদেশ থেকেও এখানে সাহায্য গ্রহণ করা হত। ফাউন্ডেশনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদেরও জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে।
তৃতীয় ধনকুবের উ মং ওয়েইক ইয়াঙ্গুনের মুখ্যমন্ত্রী উ ফিয়ো মিন থেইন এবং মান্দালয়ের মুখ্যমন্ত্রী ডা. জাও মিন্ট মংয়ের ঘনিষ্ঠজন। সামরিক সূত্রগুলো বলছে, এসব ঘনিষ্ঠ সংযোগ ঘুষের সন্দেহ তৈরি করেছে।
গত সপ্তাহেই মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ঘোষণা দিয়েছিলেন যে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের তহবিলে রাখা একশ কোটি ডলার যেন মিয়ানমার সেনাবাহিনী পেতে না পেরে সেজন্য তিনি পদক্ষেপ গ্রহণ করতে যাচ্ছেন। তিনি সু চিসহ বেসামরিক নেতাদের মুক্তি দেওয়ার আহবান জানান।
এদিকে, মিয়ানমারের ক্ষমতাচ্যুত নেত্রী অং সান সু চির প্রাথমিক রিমান্ডের মেয়াদ সোমবার শেষ হওয়ার কথা থাকলেও তা বুধবার পর্যন্ত গড়াবে বলে জানিয়েছেন তার আইনজীবী।
সোমবার সকালে সু চির আইনজীবী উ খিন মং জ গণমাধ্যমকে বলেন যে, ডিস্ট্রিক্ট এটর্নি তাকে জানিয়েছেন, সু চি'র রিমান্ডের মেয়াদ আরও দুইদিন পর অর্থাৎ ১৭ তারিখ শেষ হবে।
রিমান্ডের মেয়াদ কেন আরও দু'দিন বাড়ানো হলো এবং এটি কি প্রেসিডেন্টের ওপরেও বহাল হবে কিনা তা এখনো স্পষ্ট নয়।
১ ফেব্রুয়ারি থেকেই সু চি এবং প্রেসিডেন্ট উভয়ে আটক রয়েছেন। আটকের পর এদের বিরুদ্ধে প্রাকৃতিক দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা আইন এবং রপ্তানি ও আমদানি আইনে মামলা দায়ের করে সেনা সমর্থিত সরকার।
আদালতে সু চির প্রাথমিক উপস্থিতি ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে হবে বলেও জানিয়েছেন তার আইনজীবি।
তবে উ খিন মং জ নিজে এখনো সু চি কে দেখেননি বলে জানান।
"আমার তার সাথে সাক্ষাত ভীষণ প্রয়োজন। কেননা আইনজীবি হিসেবে তার নির্দেশনা আমার লাগবে।"
উল্লেখ্য, ১ ফেব্রুয়ারি মিয়ানমারে নির্বাচিত ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসি পার্টির প্রথম সংসদ অধিবেশন বসার কথা থাকলেও তার কয়েক ঘন্টা আগেই সেখানে মিয়ানমার সেনাবাহিনী (তাতমাদাও) ক্ষমতা দখল করে। সেনাবাহিনী অং সান সু চিসহ অসংখ্য নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তারের পাশাপাশি দেশটিতে কারফিউ জারি করে ইন্টারনেট সংযোগও বন্ধ করে দেয় কিছু সময়ের জন্য।
সেনা অভ্যুত্থানকে কেন্দ্র করে মিয়ানমার জুড়ে প্রতিদিনই বিভিন্ন প্রতিবাদী মিছিল, ধর্মঘট চলছে। সোমবার চলমান বিক্ষোভের নবম দিনে মিয়ানমারের বেশ কয়েকটি শহরের রাস্তায় সাঁজোয়া যানসহ সেনাদের ব্যাপক উপস্থিতি দেখা গেছে।
- সূত্রঃ দ্য ইরাবতী