মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার পর বিমান চলাচল আরও সহজ করে দিল চীন

চীনের এয়ারলাইন্সগুলোর বিমানকে যুক্তরাষ্ট্রে যাতায়াতে বাধা দেবে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন- মার্কিন সরকারের এমন ঘোষণার প্রেক্ষিতে বিমান চলাচল উল্টো আরও সহজ করে দিয়েছে চীন।
চীনের বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (সিএএসি) বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধে বিদেশি বিমানগুলোর চীনে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছিল। তবে এখন থেকে সপ্তাহে একবারের জন্য এই দেশগুলোকে তাদের পছন্দের একটি শহরে ফ্লাইটে পরিচালনার অনুমতি দেওয়া হবে।
ফ্লাইটের যাত্রীদের মাধ্যমে করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধে এরআগে মার্চের শেষের দিকে আন্তর্জাতিক ফ্লাইটের সংখ্যা কমিয়ে দেয় সিএএসি।
কিন্তু গতকাল বুধবার মার্কিন প্রশাসনের ঐ ঘোষণার পর, আজ বৃহস্পতিবার থেকে বিমান চলাচলের এই নিষেধাজ্ঞা শিথিল করার সিদ্ধান্ত নিল চীন। খবর রয়টার্সের।
'ফাইভ ওয়ান' নীতির আলোকে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানায় সিএএসি। এই নীতি অনুযায়ী, প্রতি সপ্তাহে চীনের মূল ভূখণ্ডের কেবল একটি বিমান বিশ্বের যে কোনও একটি দেশে যেতে পারবে এবং একই ভাবে অন্য যেকোন একটি দেশের মাত্র একটি ফ্লাইট চীনের যেকোন একটি শহরে এসে নামতে পারবে।
শুধু তাই নয়, গত ১২ মার্চ সিএএসি দ্বারা অনুমোদিত একটি সাপ্তাহিক সময়সূচী অনুযায়ী নির্ধারিত সংখ্যার ফ্লাইট দেশটিতে আসা-যাওয়া করতে পারবে, এর বেশি নয়।
কিন্তু যেহেতু গত ১২ মার্চ থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিমান সংস্থাগুলোর বিমান চলাচল বন্ধ, ফলে চীনে যাতায়াত করা সম্ভব হচ্ছে না তাদের পক্ষে।
গতকাল বুধবার ট্রাম্প প্রশাসন জানিয়েছে যে, যুক্তরাষ্ট্র হয়ে আসা যাওয়া করা চীনের বিমানগুলোকে বাধা দেওয়ার পরিকল্পনা করছে তারা। চীন সরকার ১৬ জুন থেকে মার্কিন বিমানগুলোকে দুই দেশের মধ্যে চলাচলে কার্যকরভাবে বাধা দেওয়ার পর এই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে চায় ট্রাম্প প্রশাসন।
সিএএসি জানিয়েছে, এর মধ্যে পরপর তিন সপ্তাহ যদি যাত্রীদের কেউ করোনা আক্রান্ত শনাক্ত না হন, তবে আন্তর্জাতিক বিমানগুলো প্রতি সপ্তাহে সর্বোচ্চ দুইটি ফ্লাইট আসা-যাওয়ার অনুমতি পাবে।
আর যদি চীনে পৌঁছানো একটি ফ্লাইটে পাঁচজন যাত্রী বা একাধিক ফ্লাইটে করোনা শনাক্ত হয়, তবে এক সপ্তাহের জন্য এই পরিসেবা নিষিদ্ধ করা হবে। আর ১০ জন বা তার অধিক সংখ্যক যাত্রী যদি করোনা শনাক্ত হন, তবে ৪ সপ্তাহের জন্য পরিসেবা বন্ধ রাখা হবে বলে জানায় সিএএসি।
এদিকে গত মার্চে চীনে প্রবেশের বৈধ ভিসা বা আবাসনের অনুমতি আছে এমন বিদেশীদের চীনে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে চীন সরকার। এর অর্থ, কেবলমাত্র চীনা নাগরিক বাণিজ্যিকভাবে যাত্রীবাহী ফ্লাইটে দেশে ফিরে যেতে পারবেন।
প্রসঙ্গত, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের বিমান চলাচল নিয়ে এই বিরোধটি শুরু হয় মূলত গত ২৬ মার্চ থেকে, যখন চাইনিজ সরকার মাসের প্রথমের দিকে বিদেশি বিমানের জন্য সপ্তাহে একটি ফ্লাইট চালু করার কথা বলে।
কিন্তু তখন থেকে আমেরিকা ও চীনের মধ্যে চলাচলকারী যুক্তরাষ্ট্রের তিনটি বিমান সংস্থাই মহামারির কারণে তাদের পরিসেবা বন্ধ করে দেয়। ফলে চীন সরকার তখন কার্যকরভাবে দুই দেশের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের বিমান চলাচল নিষিদ্ধ করে দেয়। কিন্তু উল্টো দিকে. চীনের বিমান সংস্থাগুলোর বিমান যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন শহরে চলাচল অব্যাহত রেখেছিল।
ডেল্টা এয়ারলাইন্স এবং ইউনাইটেড এয়ারলাইন্স এই মাসে চীনে আবারও ফ্লাইট শুরু করার আশা করেছিল। উভয় সংস্থা চীনের সিভিল এভিয়েশন কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করলেও কোনও সাড়া পায়নি।
এদিকে, গত ১৪ মে মার্কিন পরিবহন অধিদফতর আমেরিকান বিমানগুলো দুই দেশের মধ্যে চালু করতে অনুমতি দেওয়ার জন্য চাপ প্রয়োগ করে। যুক্তরাষ্ট্র দাবি করেছিল যে, চীন ১৯৮০ সালের এই চুক্তি লঙ্ঘন করছে। চুক্তি অনুযায়ী, দুই দেশের মধ্যে বিমান পরিচালনা করতে দেশিও বিদেশী বিমানগুলোকে সমান সুযোগ দেবে।