ট্রাম্প কোথাও যাচ্ছেন না!

বাইডেন আমল শুরু হওয়া মানেই কী দৃশ্যপট পরিবর্তন? জানুয়ারিতে ক্ষমতার পালাবদল শান্তিপূর্ণভাবে শেষ হলেও কী ট্রাম্প অপ্রাঙ্গিক হয়ে পড়বেন? প্রশ্নগুলোর উত্তর হচ্ছে সোজা-সাপ্টা; না।
বাইডেন, ডেমোক্রেট দল বা নতুন প্রশাসন কেউই রেহাই পাবে না ট্রাম্পের রসালো মিথ্যাচার থেকে। অন্য সব সাবেক রাষ্ট্রপতির সঙ্গে তার চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের রাত-দিন পার্থক্য থাকাটাই যার কারণ।
এর আগের মার্কিন রাষ্ট্রনায়কেরা হাসিমুখে নির্বাচনের ফল মেনে ক্ষমতা ছেড়ে গেছেন। অভিনন্দন জানিয়েছেন প্রতিপক্ষকে। অবসরে লিখেছেন আত্মজীবনীমূলক গ্রন্থ, বা পূরণ করেছেন দীর্ঘদিনের কোনো শখ।
সৌজন্য দেখিয়ে নীরব থেকেছেন অধিকাংশ সময়; যাতে নতুন প্রেসিডেন্ট স্বস্তির সাথে তার দায়িত্ব পালন করতে পারেন। জাতীয় প্রসঙ্গেও আলোচনা থেকে দূরে সরে থেকে তারা নিভৃত থাকতেন বেশিরভাগ সময়।
এসবের কোনটাই করবেন না ট্রাম্প। তিনি মনোযোগের পাদপ্রদীপ থেকে স্বেচ্ছায় সরে যেতে মোটেও ইচ্ছুক নন।
গণমাধ্যমে শিরোনাম হতে ট্রাম্পের চেষ্টার অন্ত থাকবে না। রাষ্ট্রপতি থাকা অবস্থাতেই তার মুখের লাগাম নেই। সাবেক হওয়ার পর তার মুখে কুলুপ কে আটকাবে!
ফ্লোরিডার বিলাসবহুল মার-এ-লাগো অবসর যাপন কেন্দ্র থেকে একের পর এক বিস্ফোরক মিথ্যাচার চালিয়ে যাবেন তিনি। ফোন দেবেন নিজের প্রিয় টেলিভিশন বা রেডিও চ্যানেলের উপস্থাপকদের। বানিয়ে বানিয়ে নানা ধরনের উদ্ভট কাহিনীর জাল বুনবেন সেসব সাক্ষাৎকারে। ভক্ত আর সমর্থকদের উস্কে দেবেন নতুন প্রশাসনের বিরুদ্ধে।
তার তৎপরতা সামাজিক গণমাধ্যমেও সমানতালে চলবে। টুইটার যদি তার একাউন্ট নিষিদ্ধ না করে, তাহলে দায়িত্বপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি বাইডেনের একের পর এক কাজের সমালোচনা করে টুইটের বন্যা বইয়ে দেবেন ট্রাম্প।
২০২৪ সালের নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হওয়ার লক্ষ্যেও ট্রাম্প গণমাধ্যমে নতুন প্রচারণা শুরু করতে পারেন। জাতির বড় অংশ তাকে প্রত্যাখ্যান করলেও, তিনি যে সহজে বিস্মৃত হওয়ার পাত্র নন- প্রতিমুহূর্তে তা মার্কিনীদের স্মরণ করিয়ে দেবেন।
এব্যাপারে সাবেক প্রেসিডেন্টদের নিয়ে গবেষণাকারী রাইস বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসবিদ ডগলাস ব্রিঙ্কলি'র একই অভিমত। ''পরাজয় মেনে নিয়ে উত্তরসূরিকে হাসিমুখে স্বাগত জানাবেন- ট্রাম্পের চরিত্রে এমন শালীনতা নেই। তিনি নীরবে হারিয়ে যাওয়ার মতো অভিমানী বালক নন। তিনি আসল ক্ষমতার স্বাদ পেয়েছেন, সেটা তিনি প্রাণেপণে ফিরে পেতে চাইবেন। লোভী চরিত্রের কারণেই; তৃতীয় শ্রেণির মর্যাদা নিয়ে তার সন্তুষ্টি না থাকাটাই স্বাভাবিক।''
প্রাসঙ্গিকতা থাকবে আরও যেসব কারণে:
ক্ষমতা হারানোর পর নানা অভিযোগে আইনি কৌসুলিদের অনুসন্ধানের কেন্দ্রে চলে আসবেন প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি। ব্যক্তিগত জীবনের একটি বড় অংশ তাকে ব্যয় করতে হবে মামলা- মোকদ্দমা লড়ে। তাছাড়া, তার ব্যবসায় অনিয়ম নিয়ে যেসব তদন্তের উদ্যোগ নেওয়া হবে, সেগুলোও আদালতের মাধ্যমে ঠেকাতে ব্যস্ত থাকবেন ট্রাম্প।
ভুলে গেলে চলবে না । রক্ষণশীল রাজনীতি এবং মার্কিন শ্বেতাঙ্গ আধিপত্যবাদী গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর মধ্যে ট্রাম্পের বিপুল সমর্থন আছে। তাদের কাছে ট্রাম্প নিজেকে বর্তমান প্রশাসনের অন্যায় রোষানলের শিকার বলে দাবি করবেন। সহানুভূতিও পাবেন তুলনামূলক অনেক কম শিক্ষিত এসব জনগোষ্ঠীর কাছ থেকে।
তার নিজ দল রিপাবলিকান পার্টিতে যে কারণে পড়বে বড় এক প্রভাব। অর্থাৎ, দলের রাজনীতিতেও তিনি হয়তো দীর্ঘদিন প্রাসঙ্গিক থাকবেন।
ট্রাম্পের বিরুদ্ধে যেসব আইনি অনুসন্ধান চলবে তার মধ্যে অন্যতম; ব্যবসায় কর ফাঁকির অভিযোগ। এজন্য নিউইয়র্ক শহরের ম্যানহাটন অঞ্চলের ডিস্ট্রিক্ট অ্যাটর্নির দপ্তর তার প্রতিষ্ঠানের আট বছরের আয়কর রিটার্নের নথি পাওয়ার চেষ্টা করছে। ইতোমধ্যেই, করা এক আবেদনে অ্যাটর্নি সাইরাস ভ্যান্স ট্রাম্পের ব্যবসায়িক লেনদেন তদন্ত করার অনুমতি চেয়েছেন।
নিউইয়র্ক রাজ্যের অ্যাটর্নি জেনারেল লেটিসিয়া জেমস স্বতন্ত্র আরেক আবেদনে ট্রাম্পের সংস্থার বিরুদ্ধে তদন্তের অনুমতি চেয়েছেন। অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়, ব্যাংক ঋণ নেওয়ার জন্য জামানতের সম্পদমূল্য বাড়িয়ে দেখিয়েছে বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানটি। সোজা কথায়; ব্যাংক জালিয়াতির কথা বলা হচ্ছে।
এমন আরও অসংখ্য অভিযোগে ট্রাম্প শাস্তি পান আর নাই পান- রিপাবলিকান দলে তার প্রতিপত্তি সহজে চ্যালেঞ্জ করার ক্ষমতা কারো নেই। দলের পরবর্তী নেতৃত্বের উপর বড় প্রভাব থাকবে ট্রাম্পের। ক্ষমতায় থাকাকালে জনতার এক বড় অংশের সঙ্গে তিনি আবেগের যে সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করেছেন-সেটাকেই কাজে লাগাবেন; প্রতিপক্ষের জীবন বিষিয়ে তুলতে।
লাখ লাখ রিপাবলিকান সমর্থক ট্রাম্পের নিজস্ব রায় মেনে নিয়ে বিশ্বাস করে যাবেন; তিনি আসলে হারেননি। বরং স্বার্থান্বেষী মহলের চক্রান্তের শিকার হয়ে ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন। এই বিশ্বাস থেকে দলের নেতৃত্বে যেই থাকুক, নানা প্রসঙ্গে ট্রাম্পের রায়ের উপরই আস্থা রাখবে এই অন্ধ ভক্তের দল।
- সূত্র: দ্য আটলান্টিক
- অনুবাদ: নূর মাজিদ