টিকাদান সত্ত্বেও বৈশ্বিক কোভিড সংক্রমণের সাপ্তাহিক পরিসংখ্যানে নতুন রেকর্ড

গত সাত দিনে মহামারি শুরু হওয়ার পর থেকে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক ব্যক্তির দেহে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে বিশ্বব্যাপী। নানান দেশের স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষের দেওয়া তথ্যানুসারে মোট সংখ্যাটি ৫২ লাখেরও! বেশি। ভয়াবহ গতির ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার ঘটনা আবার ঘটছে অপেক্ষাকৃত দুর্বল অবকাঠামোর দেশে। এটাই বড় আশঙ্কার, কারণ বিশাল আকারের সংক্রমণ পরিস্থিতি মোকাবিলায় পর্যাপ্ত স্বাস্থ্য খাতের সক্ষমতাও নেই রাষ্ট্রগুলোর।
মহামারির এই ধাক্কা তাই শুধু রীতিমতো অতি-আশঙ্কাজনক নয়, বরং মারাত্মক উদ্বেগের। সবচেয়ে বড় ব্যাপার হলো, মহামারিতে বৈশ্বিক মৃত্যুর সংখ্যা ৩০ লাখ ছাড়ানোর পর শুরু হয়- যখন ভাইরাসের বিস্তার রোধের চেষ্টায় বিভিন্ন বৃহৎ জনসংখ্যার দেশে জোরেশোরেই চলছে টিকাদান।
যুক্তরাষ্ট্রের জনস হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের করোনাভাইরাস ডেটাবেজ অনুসারে গত সাতদিনে তার আগের সপ্তাহের তুলনায় সংক্রমণ বেড়েছে ১২ শতাংশ। এই অবস্থায় টিকাদানের কল্যাণে অচিরেই মহামারির অবসানের যে আশা উন্নত দেশগুলো করেছিল- সেটাও ফিকে হয়ে আসছে। বিগত সপ্তাহে যে পরিমাণ মানুষ আক্রান্ত হয়েছে তা গেল বছরের ডিসেম্বরের রেকর্ড সাপ্তাহিক সংখ্যাকেও ছাড়িয়ে যায়।
আশাভঙ্গের প্রথম কারণ, উন্নয়নশীল দেশ ও উদীয়মান বাজার করোনামুক্ত না হলে প্রভাবিত হবে উন্নত দেশের বাণিজ্য। তাছাড়া, নতুন ধরনের ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার হুমকি রয়ে যাবে উন্নত দেশগুলোয় সকল প্রাপ্তবয়স্কদের টিকা দেওয়া হলেও।
উন্নত দেশগুলো টিকদানের কল্যাণে অবশ্য অন্যখানে সুবিধা পাচ্ছে, সেগুলো হলো; অসুস্থতা প্রতিরোধ, সংক্রমণ সংখ্যা হ্রাস এবং মৃত্যু কমিয়ে আনতে। যেমন; টিকাদানে এগিয়ে থাকা যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যে সংক্রমণ গতি হ্রাস পেয়েছে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে। অন্যদিকে, বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহৎ জনসংখ্যার দেশ ভারত এবং লাতিন আমেরিকার সবচেয়ে জনবহুল দেশ ব্রাজিলে লাগামহীন গতিতে সংক্রমণ ধরা পড়ছে। বিশ্বের মোট সংক্রমণের অধিকাংশই হচ্ছে এ দুটি দেশে।
উদ্বেগজনক লক্ষণগুলো:
আজ ১৯ এপ্রিল জনস হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয় জানায়, বিশ্বব্যাপী টিকাদানে গতি আসার পরও নতুন সংক্রমণের হার রেকর্ড মাত্রায় বাড়ছে।
গতি পেয়েছে বৈশ্বিক প্রাণহানির সংখ্যাও। গেল এক মাসে তার আগের মাসের তুলনায় বেড়েছে প্রাণহানি, আর গত ১৮ এপ্রিলে সমাপ্ত সপ্তাহেই মারা গেছেন ৮২ হাজার জন, অর্থাৎ প্রতিদিন গড় মৃত্যু ছিল ১২ হাজার করে। যদিও, গত ১৪ মার্চে সমাপ্ত সপ্তাহে ৬০ হাজার জন মারা যান। অর্থাৎ, প্রতিদিন গড়ে ৮,৬০০ জনের মৃত্যু হয় ওই সময়ে।
আসলে ভারত ও ব্রাজিলের মহামারি পরিস্থিতির ভয়াল দশাই বৈশ্বিক সংক্রমণ সংখ্যা বাড়ার প্রধান কারণ। মহামারির দ্বিতীয় ঢেউয়ে কেস সংখ্যা বাড়ায় ভারত আবারও বিশ্বের দ্বিতীয় প্রভাবিত দেশের অনাকাঙ্ক্ষিত স্থান ফিরে পেয়েছে ব্রাজিলকে পেছনে ফেলে। এর আগে গত মার্চে ভারতকে ছাড়িয়ে দ্বিতীয় স্থানে উঠে আসে ব্রাজিল। সাও পাওলো থেকে মুম্বাই সবখানেই তাই চোখে পড়ছে হাসপাতাল ব্যবস্থার উপর বিপুল চাপ।
ভারত ও ব্রাজিল যথাক্রমে নিজেদের জনসংখ্যার ৪.৫ ও ৮.৩ শতাংশকে এপর্যন্ত টিকা দিতে পেরেছে, সেই তুলনায় যুক্তরাষ্ট্র দিয়েছে ৩৩ শতাংশকে, আর যুক্তরাজ্যে পেয়েছে ৩২ শতাংশ নাগরিক। ব্লুমবার্গ ভ্যাকসিন ট্র্যাকার সূত্রে তথ্যটি জানা গেছে।
মারাত্মক বাধার প্রাচীর:
শুধু উন্নয়নশীল দেশগুলোই কেবল মহামারি প্রতিরোধের চেষ্টায় বাধা-বিপত্তির মুখে পড়ছে না, অ্যাস্ট্রাজেনেকা পিএলসি ও জনসন অ্যান্ড জনসনের টিকার বিরল পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় রক্ত জমাট বাধার ঘটনায় এবার বিশ্বজুড়ে টিকা নিয়ে সন্দেহ পোষণকারীদের বিশ্বাস আরও শক্তিশালী হচ্ছে। এতে ব্যাহত হচ্ছে সরকারি টিকা কর্মসূচির লক্ষ্যমাত্রা। উন্নত দেশে সরকারের সমালোচনাও পাচ্ছে নতুন মাত্রা।
সবচেয়ে বড় বিপদ ভাইরাসের নতুন ধরনগুলোর বিস্তার, ইতোমধ্যেই সেগুলো হয়ে উঠছে সংক্রমণের প্রধান উৎস। নতুন ধরনগুলোর মধ্যে ব্রাজিলেই করোনাভাইরাসের অভিযোজিত একটি প্রাণঘাতী নতুন বংশজ শনাক্ত করা হয়, বিজ্ঞানীরা যাকে বলছেন পি-১ ভ্যারিয়ান্ট। এপর্যন্ত করা গবেষণা বলছে, ব্রাজিল, দ. আফ্রিকা এবং যুক্তরাজ্যে পাওয়া নতুন ধরনগুলো অনেক বেশি সংক্রামক।
- সূত্র: ব্লুমবার্গ