করোনা নিয়ন্ত্রণে পাকিস্তানের বিস্ময়কর সাফল্য

২৩ কোটির দরিদ্র মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ জনসংখ্যার দেশ পাকিস্তান, করোনাভাইরাসের ছোবলে দেশটি মারাত্মকভাবে পর্যদুস্ত হয়েছে। দুই লাখ ৬০ হাজার জনেরও বেশি পাকিস্তানি আ্ক্রান্ত হয়েছে এই ভাইরাসে, সুস্থের সংখ্যা দুই লাখের জনের মতো, আর মারা গেছে প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার জন। তবে, তারা কোভিড -১৯ ভাইরাসের উর্ধগামী রেখাকে নিম্নগামী করার সঠিক, কার্যকর উপায় খুঁজে পেয়েছে বলে মনে হচ্ছে।
কোভিডট্রেকার ডটকমের দেয়া তথ্যানুসারে, পাকিস্তান মৃত্যুর হার ২.১% কমিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছে, অথচ দেশটির প্রতিবেশী ভারতের মৃত্যু হার ২.৭%। এখন প্রশ্ন হল, পাকিস্তানে এ লড়াইয়ে সাফল্য এল কিভাবে? কিভাবে মৃত্যুহার কমিয়ে আনল তারা?
কৌশল:
ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়েছে এমন কয়েক শত অঞ্চলে প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান, দুই সপ্তাহের জন্য "হট স্পট" লকডাউন প্রোগ্রাম চালু করেছিলেন। এই লকডাউনের যুদ্ধে সহায়তা করার জন্য তিনি সেনাবাহিনীকেও যুক্ত করেন। সেনাবাহিনীর রসদ সরবরাহ, সুরক্ষা এবং নজরদারি করোনাভাইরাসের প্রকোপ কমিয়ে আনতে দারুণ সহায়তা করেছে।
গত কয়েক সপ্তাহের দিনগুলোতে ২,২০০ টিরও কম শনাক্তের ঘটনার সঙ্গে মৃতের সংখ্যা দাঁড়ায় ৭০ জনে, অথচ জুনে প্রতিদিনের সংক্রমণের সংখ্যাই ছিল ৬,০০০ জনের উপরে, আর মৃত্যু পৌঁছেছিল ১৫০ জনে। এ তথ্য দিচ্ছে ওয়াশিংটন পোস্ট পত্রিকা।
'বর্তমান কোভিড -১১ ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের সাফল্য লাভের জন্য, স্মার্ট লকডাউন শক্তভাবে প্রয়োগ, আর দেশ জুড়ে মানুষের আচরণের পরিবর্তনকেই সব কৃতিত্ব দিতে হবে,' পরিকল্পনা ও উন্নয়ন বিষয়ক মন্ত্রী আসাদ উমর দি এক্সপ্রেসকে ট্রিবিউনকে এ কথা বলেন। 'দেশ জুড়ে স্মার্ট লকডাউন কঠোরভাবে বাস্তবায়নের ফলো আক্রান্তের হার দেশজুড়ে ২৮% নামিয়ে আনা গেছে।'
উমরের মতে পুরো দেশ একযুগে পুরো বন্ধ করে দেওয়াটা কোনোভাবেই টেকসই পদ্ধতি না, কাজেই 'একমাত্র কার্যকর উপায় হলো, বেশি-ঘনত্বের হটস্পটগুলি চিহ্নিত করা, এবং সে অনুযায়ী এলাকাগুলোকে লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করা।'
'হটস্পট অঞ্চলগুলিকে পুরো নেটওয়ার্ক থেকে আলাদা করে ফেললে,' মন্ত্রী বলেন, 'ক্রমবর্ধমান সংক্রমণ হ্রাস পাবেই। সঙ্গে মানুষের আচরণগত পরিবর্তনও এই সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে পাকিস্তানকে সহায়তা করেছে,' দাবী করেন মন্ত্রী।
'প্রথমদিকে প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান যখন স্মার্ট লকডাউন চালু করলেন, তিনি তখন তীব্র বিরোধিতার মুখে পড়েছেন। এখন ফলাফল দেখে বোঝা যাচ্ছে তার ধারণা কাজে দিয়েছে। এই পদ্ধতিটি উন্নয়নশীল অনেক দেশও কাজে লাগাচ্ছে। জার্মানি, ইতালি এবং পর্তুগাল করোনাভাইরাস সংক্রমণের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে নগর লকডাইনের এই উপায় নিয়ে আলোচনা করছে। পুরো দেশ বন্ধ করার বিপরীতে অনেক দেশই ছোট অঞ্চলে লকডাউন কার্যকর করছে।'
'বিশ্বের কাছে এখন করোনা প্রতিরোধে একমাত্র সমাধান হল এই স্মার্ট লকডাউন, এতে দেশের অন্য অংশের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড অব্যাহত থাকে। আমরা এই পদ্ধতির প্রবর্তকদের একজন,' প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান টুইটারে নিজের পোস্টে এ কথা বলেছেন।
স্মার্ট লকডাউন:
সরকারের কেন্দ্রীয় রেসপন্স ইউনিট এই রোগটি বিস্তাররোধে এ পর্যন্ত দেশজুড়ে সব মিলিয়ে পাঁচ শতাধিক স্মার্ট লকডাউন কার্যকর করেছে।
'এখন অবধি সারা দেশে ৫৫১টি লকডাউন করেছি আমরা,' ন্যাশনাল কমান্ড অ্যান্ড অপারেশন সেন্টারের (এনসিওসি) একজন জেষ্ঠ্য কর্মকর্তা বলেন, এই সেন্টারটি কোভিড -১৯-এর বিরুদ্ধে যুদ্ধে দেশের মূল স্নায়ুকেন্দ্র হিসাবে কাজ করেছে। তিনি আরও জানান, মোট ৮২.২ মিলিয়ন মানুষ বর্তমানে লকডাউনের আওতায় রয়েছে।
'স্মার্ট লকডাউনগুলির সঙ্গে সক্রিয় উদ্যোগ, কোভিড -১৯ উধর্বমুখী রেখাকে নামিয়ে আনতে পাকিস্তানকে ব্যাপক সহায়তা করেছে। দেশে মানুষের মধ্যে আচরণের ব্যাপক পরিবর্তনও ঘটেছে।প্রশাসনিক প্রচেষ্টা আর ধারাবাহিক প্রচারের কারণে মুখোশ ব্যবহার বেড়েছে ১,৪০০ শতাংশ। আর গ্লাভসের ব্যবহার বেড়েছে ৭৬৬ শতাংশ,' এনসিওসির কর্মকর্তাটি জানান।
সামনের দিকে তাকিয়ে আছি:
করোনাভাইরাস মোকাবেলায় পাকিস্তান উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করলেও, আরও দীর্ঘ পথ পাড়ি দেওয়া বাকি এখনও। সামনে প্রচুর চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হবে। আসন্ন ঈদ একটা বড় উদ্বেগের বিষয়।
প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান শুক্রবার এক টুইট বার্তায় বলেছেন,'দেশে আমাদের ইতিবাচক ধারা বজায় রাখার জন্য প্রয়োজনীয় [সতর্কতা] অব্যাহত রাখার আহ্বান জানাচ্ছি আমি সবার কাছে। গত ঈদে যা ঘটেছিল তার যেন পুনরাবৃত্তি আর না হয়, ঈদুল আযহাকে আমরা অবশ্যই আড়ম্বরহীনভাবে পালন করব।'
মন্ত্রী আসাদ উমর নাগরিকদের সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন,'আসন্ন ঈদ এমনকি মহরমের দশ দিনেও কোনো রকম ঢিলে দেওয়া যাবে না। নয়তো কোভিড -১৯-এর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে আমরা যে সাফল্য পেয়েছি তা ধুলিসাৎ হয়ে যেতে পারে।'