কাস্টম সার্ভারে জালিয়াতি: সাত দিনের তদন্ত শেষ হয়নি এক মাসেও

দুই রাজস্ব কর্মকর্তার ইউজার আইডি পাসওয়ার্ড ব্যবহার করে ১১টি আমদানি পণ্য চালানে জালিয়াতির ঘটনায় গত ১৫ নভেম্বর চার সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস। জালিয়াতির ঘটনায় কে বা কারা জড়িত তা তদন্ত করে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার জন্য সময় নির্ধারণ করে দেওয়া হয় ৭ দিন। কিন্তু ১ মাস পেরিয়ে গেলেও চাঞ্চল্যকর এই ঘটনার এখনো কুলকিনারা খুঁজে পায়নি তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
ঘটনার সঙ্গে জড়িত একমাত্র সিএন্ডএফ এজেন্ট প্রত্যয় ইন্টারন্যাশনাল এবং আমদানিকারকরা এর দায় স্বীকার করছে না বলে জানিয়েছে তদন্ত কমিটি।
চট্টগ্রাম কাস্টমস সূত্র জানায়, চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের দুই রাজস্ব কর্মকর্তা জয়নব বেগম এবং আমির হোসেন সরকারের ইউজার আইডি ব্যবহার করে একটি চক্র ১১টি পণ্য চালানে জালিয়াতির আশ্রয় নেয়। এর মধ্যে ৯টি পণ্য চালান চট্টগ্রাম বন্দর থেকে খালাসও হয়ে যায়। পণ্য আমদানি, বিল অব এন্ট্রি দাখিল, শুল্কায়ন ও খালাস প্রক্রিয়া যথাযথ ছিল কিনা তা যাচাই, ব্যবহৃত আইপি (ইমপোর্ট পারমিট) এর সঠিকতা যাচাই, পণ্য চালান খালাসের অপচেষ্টার সাথে কে বা কারা জড়িত এবং আনুষাঙ্গিক অন্যান্য বিষয়াদি পর্যালোচনার জন্য দায়িত্ব দেওয়া হয় তদন্ত কমিটিকে।
চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের যুগ্ন কমিশনার মোহাম্মদ তফছির উদ্দিন ভুঁইয়াকে আহবায়ক, ডেপুটি কমিশনার মো: মিজানুর রহমানকে সদস্য সচিব এবং ডেপুটি কমিশনার ওমর মবিন, সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা মো: ফারুক আবদুল্লাহকে সদস্য করা হয় ওই তদন্ত কমিটিতে। কমিটিকে ৭ দিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশনা দেয় চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের কমিশনার মোহাম্মদ ফখরুল ইসলাম।
তদন্ত কমিটির আহবায়ক তফসির উদ্দিন ভুঁইয়া দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "ইতোমধ্যে আমদানিকারক, সিএন্ডএফ এজেন্ট এবং সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার শুনানি হয়েছে। এই ঘটনার সঙ্গে অভিযুক্ত সিএন্ডএফ এজেন্ট দায় স্বীকার করছে না। তবে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে পণ্য চালানটি কীভাবে বের হল তা জানতে গত ২৯ নভেম্বর চট্টগ্রাম বন্দরের টর্মিনাল ম্যানেজারকে একটি চিঠি দেওয়া হয়। দুই কর্মদিবসের মধ্যে তথ্য জানাতে অনুরোধ করা হলেও বন্দর কর্তৃপক্ষ থেকে কোন জবাব পাওয়া যায়নি। সেজন্য তদন্ত প্রতিবেদন দিতে দেরি হচ্ছে।"
চট্টগ্রাম কাস্টমস সূত্র জানায়, রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল-ইপিজেড এর আওতাভুক্ত বন্ডেড প্রতিষ্ঠানের আমদানি ও রপ্তানি পণ্যচালানের শুল্কায়ন কার্যক্রমের ক্ষেত্রে ঝুঁকি ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে নজরদারির আওতায় প্রত্যয় ইন্টারন্যাশনালের ১১টি বিল অব এন্ট্রি বিষয়ে সিপিইজেড ডিভিশন পর্যালোচনা করে। উক্ত ১১টি বিল অব এন্ট্রির বিষয়ে রাজস্ব কর্মকর্তা আমির হোসেন সরকার এর ইউজার আইডি পাসওয়ার্ড ব্যবহার করে ইপিজেড থেকে কর্মকর্তার বদলি পরবর্তী বিভিন্ন সময়ে ৮টি বিল অব এন্ট্রির পণ্য খালাস করা হয়।
অপর তিনটি বিল অব এন্ট্রির মধ্যে ২টি বিল অব এন্ট্রি রাজস্ব কর্মকর্তা জয়নব বেগমের ইউজার আইডি ও পাসওয়ার্ড ব্যবহার করা হয়েছে। একটি চালান একটি ইতোমধ্যে খালাস হয়েছে এবং অপরটি খালাস হয়নি। এছাড়া অবশিষ্ট একটি পণ্যচালানের শুল্কায়ন কার্যক্রম সম্পন্ন হয়নি। উক্ত ১১টি বিল এন্ট্রিতে উল্লেখিত আইপি সিইপিজেড কর্তৃক বেপজার অটোমেশন সিস্টেমে যাচাই করে বিল অব এন্ট্রি এবং আইপিতে সংরক্ষিত তথ্যের মধ্যে অসামঞ্জস্যতা পাওয়া যায়।
আমদানিকৃত পণ্যের মধ্যে এমজিএল কোম্পানি বিডি লিমিটেড দুইটি, গোল্ড শাইন ইন্ডাস্ট্রিজ এর দুইটি এবং গ্রামীণ নিটওয়্যার লিমিটেড, হেলিকন লিমিটেড, শান্তা ডেনিমস লিমিটেড, কুং কেং টেক্সটাইল বাংলাদেশ, অ্যাকটর স্পোর্টিং লিমিটেড, টাইগারকো লিমিটেড এবং ব্রাদার্স প্লাস্টিক এর ১ টি করে চালান রয়েছে। এসব আমাদনিকারকের ১১টি আমাদনি চালান খালাসের দায়িত্বে ছিলো চট্টগ্রামের সিএন্ডএফ এজেন্ট প্রত্যয় ইন্টারন্যাশনাল।
চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসে দাখিল হওয়া বিল এব এন্ট্রি অনুযায়ী এ বছরের জুন থেকে অক্টোবরের মধ্যে এসব ঘটনা ঘটে। প্রত্যয় ইন্টারন্যাশনালের প্রোপ্রাইটর মো: হাফিজুর রহমান হ্যাপির সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি নিজেকে নুরুল ইসলাম বলে দাবি করেন। তবে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের ইস্যু করা লাইসেন্স এবং সিএন্ডএফ এজেন্টস এসোসিয়েশনের ওয়েবসাইটে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী হাফিজুর রহমান হ্যাপির দুটি মোবাইল নম্বর, ছবি সহ যাবতীয় তথ্য একই পাওয়া যায়।
ইউজার আইডি ও পাসওয়ার্ড ব্যবহার হওয়া রাজস্ব কর্মকর্তা জয়নব বেগমের মোবাইলে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি। ক্ষুদে বার্তা দিলেও সাড়া দেননি।
এদিকে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের কর্মকর্তাদের ইউজার আইডি পাসওয়ার্ড জালিয়াতির ঘটনায় কাস্টমসের ইপিজেড ডিভিশন সম্প্রতি ১২টি নির্দেশনা দিয়ে একটি গণবিজ্ঞপ্তি জারি করে।
চট্টগ্রাম কাস্টমসের দুর্বল সাইবার নিরাপত্তার সুযোগ নিয়ে কর্মকর্তাদের ইউজার আইডি পাসওয়ার্ড জালিয়াতির বিষয়ে গত ১ ডিসেম্বর দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডে Swindlers take advantage of weak Ctg customs cyber security শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়।