অক্টোবরে বাণিজ্য ঘাটতি বেড়েছে ৩৫ শতাংশ

কোভিড-১৯ এর প্রভাব কমতে থাকার সাথে সাথে, দেশে রপ্তানির তুলনায় আমদানির পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে অক্টোবরে বণিজ্য ঘাটতি বেড়েছে ৩৫ শতাংশ।
বুধবার (৮ ডিসেম্বর) বাংলাদেশ ব্যাংকের মাসিক ব্যালেন্স অব পেমেন্টসের অক্টোবর মাসের তথ্য অনুযায়ী দেখা গেছে, সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বাণিজ্য ঘাটতি ৬.৭৩ বিলিয়ন ডলার থাকলেও অক্টোবরে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯.০৯ বিলিয়ন ডলারে।
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, কোভিডের কারণে গত বছর আমদানির পরিমাণ বেশ কম ছিল। চলতি অর্থ-বছরের শুরু থেকে রেমিট্যান্সের প্রবাহ কমেছে এছাড়া আমদানির তুলনায় রপ্তানির পরিমাণ না বাড়ায় বাণিজ্য ঘাটতি বেড়েছে।
তবে বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ এখনও সন্তোষজনক অবস্থায় আছে। এ অবস্থায় আমদানি বাড়লেও কোনো সমস্যা নেই। আমদানি বাড়লে বিনিয়োগ বাড়বে। এছাড়া, বিনিয়োগ বাড়লে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে। অর্থাৎ সামগ্রিকভাবে অর্থনীতিতে গতি আসবে।
২০২১-২২ অর্থবছরের জুলাই-অক্টোবর পর্যন্ত বাণিজ্য ঘাটতি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯.০৯ বিলিয়ন ডলার। গত অর্থবছর একই সময়ে এটি ছিল ৩.৪৯ বিলিয়ন ডলার। সে হিসেবে এই সময়ে বাণিজ্য ঘাটতি বেড়েছে প্রায় ৫.৬০ বিলিয়ন ডলার।
তবে, চলতি বছরের অক্টোবরে রপ্তানি হয়েছে প্রায় ৪.৭৩ বিলিয়ন ডলার। যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় ৬০ শতাংশ বেড়েছে। নভেম্বরে এই গতি কিছুটা কমছে।
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) থেকে প্রকাশিত সর্বশেষ অস্থায়ী তথ্য অনুসারে, চলতি বছরের অক্টোবরের তুলনায় রপ্তানি প্রাপ্তি প্রায় ৬৮৬ মিলিয়ন ডলার কম।
এ প্রসঙ্গে পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বলেন, গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় চলতি অর্থবছরের জুলাই-অক্টোবর মেয়াদে আমদানি-রপ্তানি উভয়ই বেড়েছে।
"তবে রপ্তানির তুলনায় চলতি অর্থবছরে আমদানি প্রায় ৩০ শতাংশ বেড়েছে, যা আগে কখনো হয়নি। বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে হলে রপ্তানি বাড়াতে হবে বা আমদানি কমাতে হবে," বলেন তিনি।
"তবুও আমাদের জন্য কিছুটা স্বস্তি রয়েছে। আমদানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে রপ্তানিও বাড়ছে। পাশাপাশি, রপ্তানির এই প্রবণতা আরও কিছুদিন অব্যাহত থাকবে বলে মনে হচ্ছে। যে পরিমাণে আমদানি বাড়ছে, তা সঠিকভাবে বিনিয়োগ করা হলে এটি অর্থনীতির জন্য ভালো," যোগ করেন তিনি।
এছাড়া বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে দুটি জিনিস করা যেতে পারে বলে মনে করেন মনসুর। তিনি বলেন, "আমরা যদি এই ঘাটতি কমাতে চাই, তাহলে আমাদের প্রথমে রেমিটেন্স বাড়াতে হবে। দ্বিতীয়ত, টাকার অবমূল্যায়ন করলে আমদানি কমে যাবে।"
মহামারি পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ায় দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যের দৃষ্টিভঙ্গিতে ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা সত্ত্বেও নভেম্বর পর্যন্ত টানা ছয় মাস রেমিট্যান্স প্রবাহ কমেছে।
বাংলাদেশি প্রবাসীরা নভেম্বর মাসে ১.৫৫ বিলিয়ন ডলার রেমিট করেছে, যা বছরে প্রায় ২৫.২৫ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। গত বছরের নভেম্বরে রেমিট্যান্স প্রবাহ ছিল ২.০৭ বিলিয়ন ডলার।
এছাড়াও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুসারে, চলতি অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে (জুলাই-নভেম্বর) মোট প্রেরিত অর্থের পরিমাণ ছিল ৮.৬০ বিলিয়ন ডলার, যা বছরে ২১ শতাংশ কমেছে।
এদিকে, ক্রমবর্ধমান বাণিজ্য ঘাটতি চলতি হিসাবের ভারসাম্যের উপর চাপ সৃষ্টি করছে। চলতি অ্যাকাউন্ট ব্যালেন্স সেপ্টেম্বর থেকে অক্টোবরে এক মাসে ৮৭.৮২ শতাংশ কমেছে।
এদিকে আমদানি বেড়ে যাওয়ায় গত কয়েক মাসে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বেশি ডলার ছাড়লেও দেশের বৈদেশিক মুদ্রার বাজার ঊর্ধ্বমুখী। কেন্দ্রীয় ব্যাংক নভেম্বরের শেষ নাগাদ ২ বিলিয়ন ডলার বিক্রি করেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী দেখা যায়, জুলাইয়ের শুরুতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রতি ডলার বিক্রি করছে ৮৪ টাকা ৮০ পয়সা। এছাড়া লোকাল বাজারে ডলার বিক্রি হচ্ছে ৯০ থেকে ৯৩ টাকার বেশি।