সন্দেহভাজন কর ফাঁকিদাতাদের তথ্য দিতে চায় না অনেক ব্যাংক: এনবিআর কর্মকর্তাদের অভিযোগ

কর ফাঁকির বিষয়ে সন্দেহভাজনদের লেনদেনের তথ্য চাওয়া হলে কোনো কোনো ব্যাংক তা গোপন করে বলে অভিযোগ তুলেছেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কর্মকর্তারা।
তারা বলেন, এটি ফৌজদারি অপরাধ এবং এজন্য বিদ্যমান আয়কর আইন অনুযায়ী 'অ্যাসেসি ইন ডিফল্ট'-এর আওতায় সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা সমপরিমাণ করের জন্য খেলাপি হিসেবে গণ্য হবেন।
এছাড়া সহযোগিতা না করায় ইতিমধ্যে সাতটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালককে কারণ দর্শানোর চিঠি দেওয়া হয়েছে বলে জানান এনিবিআর কর্মকর্তারা।
বুধবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে এনবিআরের প্রধান কার্যালয়ে 'মানি লন্ডারিং ও কর ফাঁকি রোধে পারস্পরিক সহযোগিতা' শীর্ষক এক ওয়ার্কশপে তারা এসব কথা বলেন। সভায় এনবিআরের ইন্টেলিজেন্সের সঙ্গে যুক্ত কর্মকর্তা ছাড়াও বিভিন্ন ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট বিভাগের সিনিয়র কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
ইনকাম ট্যাক্স ইন্টেলিজেন্স অ্যান্ড ইনভেস্টিগেশন ইউনিটের কমিশনার মো. আব্দুর রাকিব বলেন, 'আমরা প্রায় ৭০০ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের কর ফাঁকির বিষয়টি তদন্ত করছি।
'অনেক সময় ব্যাংকগুলোর কাছে তথ্য চাওয়া হলেও তা গোপন করা হচ্ছে বা ভুল তথ্য দেওয়া হচ্ছে। অনেক সময় যৌথ নামে থাকা অ্যাকাউন্টের তথ্য দেওয়া হয় না, এফডিআরের তথ্য দেওয়া হচ্ছে না।'
এ বিষয়টির গুরুত্ব উল্লেখ করতে গিয়ে তিনি বলেন, 'মিথ্যা তথ্য দেওয়া ফৌজদারি অপরাধ।'
এনবিআর চেয়ারম্যান আবদুর রহমান খান গোয়েন্দা কার্যক্রম চালাতে প্রচুর তথ্যের প্রয়োজনীয়তার কথা পুনর্ব্যক্ত করেন।
ব্যাংকগুলোকে আইনি বাধ্যবাধকতা মেনে চলার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, 'আপনারা [ব্যাংকগুলো] আমাদের তথ্যের বড় সোর্স। এবং এটা আইনী বাধ্যবাধকতা। আমাদের সহযোগিতা না করলে কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগ আছে,'
অনেক ব্যাংকে সন্দেহভাজনদের ব্ল্যাঙ্ক চেক আছে উল্লেখ করে তা এনক্যাশ না করতে ব্যাংক কর্মকর্তাদের সতর্ক করেন এনবিআরের সেন্ট্রাল ইন্টেলিজেন্স সেলের (সিআইসি) মহাপরিচালক আহসান হাবীব।
দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, 'আওয়ামী লীগসংশ্লিষ্ট থিঙ্কট্যাঙ্ক সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড ইনফরমেশন (সিআরআই), সাবেক মন্ত্রী নসরুল হামিদসহ আরও বেশ কিছু ব্যাক্তি ও প্রতিষ্ঠানের কিছু ব্ল্যাঙ্ক চেক আছে। এসব অর্থ যাতে উত্তোলন করতে না পারে, তা বলেছি।'
বৃহৎ করদাতা ইউনিটের (এলটিইউ) কমিশনার মো. খায়রুল ইসলাম বলেন, 'কোনো কোনো ব্যাক্তির অ্যাকাউন্ট থেকে প্রায় প্রতিদিন বিপুল পরিমাণ টাকা ডেবিট হচ্ছে; কিন্তু কোথায় যাচ্ছে, কোনো জবাব পাই না।"
অর্থপাচারের তীব্রতা তুলে ধরে এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, 'মানি লন্ডারিং অর্থনীতির সংকটের এক নম্বর কারণ। অর্থ পাচার ঠেকাতে না পারলে দীর্ঘ মেয়াদে বড় বিপদ।'
এনবিআরের এমন বক্তব্য সম্পর্কে জানতে যোগাযোগ করা হলে মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মাহবুবুর রহমান টিবিএসকে বলেন, 'আমাদের ব্যাংক থেকে কর্তৃপক্ষকে যথাযথ সময়ে তথ্য প্রদান করছি।'
অবশ্য এতে চ্যালেঞ্জ আছে জানিয়ে তিনি বলেন , 'প্রতিদিন বিভিন্ন সংস্থা থেকে এ ধরনের প্রচুর তথ্য চাওয়া হয়। এসব ম্যানেজ করতে অনেক সময় ও লোকবলের প্রয়োজন হয়। হাজার হাজার পৃষ্ঠা তথ্য পাঠাতে হয়। আবার দেখতে হয় ভুল আছে কি না—অনেক ঝুঁকি।'
এই অভিজ্ঞ ব্যাংকার বলেন, 'এসব তথ্য সমন্বিতভাবে চাওয়া হলে আমাদের জন্য সুবিধা হতো।'
ওয়ার্কশপে এনবিআর চেয়ারম্যানও এসব তথ্য আদান-প্রদানের বিষয়টি অটোমেশনের আওতায় আনার ওপর গুরুত্ব দেন।
জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান বলেন, অন্যান্য নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর মতোই কেন্দ্রীয় ব্যাংককেও তথ্য সরবরাহ করতে বাধ্য ব্যাংকগুলো।
তবে এনবিআর কর্মকর্তাদের অভিযোগের প্রেক্ষাপট এবং কারণ না জেনে বিস্তারিত মন্তব্য করা ঠিক হবে না বলে উল্লেখ করেন তিনি।
আর্থিক অনিয়ম প্রসঙ্গে এনবিআর কর্মকর্তা আহসান হাবীব বলেন, 'এস আলমের প্রতিষ্ঠানগুলো ব্যাংকের মাধ্যমে লেনদেনর করেছে ২ লাখ ৪২ হাজার কোটি টাকা। এই হিসাব ঠিক করতে সাতজন ট্যাক্স অফিসারের এক মাস সময় লেগেছে।'
'এস আলমের দুই ছেলে সিঙ্গাপুরে নাগরিকত্ব নেওয়ার জন্য ৫০০ কোটি টাকার সম্পদ দেখিয়েছেন।'
তিনি আরও বলেন, 'রাজনৈতিক সরকার ক্ষমতায় এলে অলিগার্করা পার পাওয়ার চেষ্টা করবে। এজন্য আমাদের চেষ্টা হলো, কিছু গুরুত্বপূর্ণ তদন্ত কাজ সম্পন্ন করা।'