রমজানের আগে খেজুর ও ভোজ্য তেলের আমদানি শুল্ক কমানোর উদ্যোগ

রমজানে ভোজ্য তেল ও খেজুরের দাম স্থিতিশীল রাখতে আগেভাগেই জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) পণ্য দুটির আমদানি শুল্ক কমানোর পরিকল্পনা করছে বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা।
একজন সিনিয়র এনবিআর কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে টিবিএসকে জানান, বর্তমানে খেজুরের ওপর প্রায় ৬৪ শতাংশ আমদানি শুল্ক রয়েছে, যার মধ্যে কাস্টমস ডিউটি, অগ্রিম কর, অগ্রিম আয়কর ও মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) অন্তর্ভুক্ত। এই শুল্কহার কমিয়ে ৩৯ শতাংশ করা হতে পারে।
এছাড়া ভোজ্য তেলের আমদানি পর্যায়ে ভ্যাটের হার ১৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৫ শতাংশ করা হতে পারে বলেও জানান তিনি। এর আগে এনবিআর স্থানীয় পর্যায়ে ভোজ্য তেলের পরিশোধন ও বিক্রির ওপর থেকে সমস্ত ভ্যাট প্রত্যাহার করেছিল।
আরেকজন এনবিআর কর্মকর্তা বলেন, 'আমরা এখন এসব পণ্যের কর হ্রাস নিয়ে কাজ করছি। শীঘ্রই এ-সংক্রান্ত একটি স্ট্যাটুটরি রেগুলেটরি অর্ডার (এসআরও) ইস্যু করা হবে।'
তিনি আরও বলেন, "ব্যবসায়ীরা এবং বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন কিছু পণ্যের আমদানি শুল্ক কমানোর অনুরোধ জানিয়েছে। আশা করছি, রমজান সামনে রেখে নেওয়া এই উদ্যোগ দাম স্থিতিশীল রাখতে এবং ভোক্তাকে স্বস্তি দিতে সাহায্য করবে।'
ফল আমদানিকারকরা এই উদ্যোগকে স্বাগত জানালেও তারা বলছেন, খেজুরের ওপর আমদানি শুল্ক আরও আগেই কমানো উচিত ছিল, কারণ অনেক ব্যবসায়ী ইতিমধ্যে ঋণপত্র (এলসি) খুলে ফেলেছেন।
মনসুর কোল্ড স্টোরেজের স্বত্বাধিকারী এবং বিশিষ্ট ফল আমদানিকারক মনসুর আলম বলেন, খেজুর আমদানির জন্য এলসি খোলার প্রক্রিয়া সেপ্টেম্বর মাসেই শুরু হয়েছে। তাই 'কর ছাড়ের আদেশ ইস্যু করতে বিলম্ব হলে দাম বেড়ে যেতে পারে।'
এছাড়া আমদানিকৃত খেজুরের শুল্কায়ন মূল্য যেন চালান মূল্য অথবা প্রকৃত বাজারমূল্যের ভিত্তিতে করা হয়, সেই আহ্বান জানিয়েছেন আমদানিকারকরা।
রমজানে সাশ্রয়ী মূল্যে খেজুর সরবরাহ নিশ্চিত করতে ১৪ নভেম্বর আমদানি শুল্ক কমানোর প্রস্তাব দেয় বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন (বিটিটিসি)। এই প্রস্তাব অর্থ মন্ত্রণালয়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও এনবিআরে কাছে পাঠানো হয়েছে।
ট্যারিফ কমিশনের সুপারিশে বলা হয়েছে, শুল্ক স্টেশন কর্তৃক নির্বাহী আদেশে খেজুর আমদানিতে বিদ্যমান শুল্কায়ন মূল্য ত্রুটিপূর্ণ। এজন্য যথাযথ পদ্ধতি অনুসরণ করে প্রকৃত বিনিময়মূল্যকে ভিত্তি ধরে শুল্কায়ন করার সুপারিশ করেছে কমিশন।
প্রতি বছর প্রায় ১ থেকে ১.১০ লাখ টন খেজুরের চাহিদা রয়েছে দেশে। এর মধ্যে ৫০-৬০ হাজার টন খেজুর ব্যবহার হয় শুধু রমজানেই।
করছাড়ের পরও বাড়ছে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম
গত দুই মাস ধরে চাল, চিনি, ডিম, আলু, পেঁয়াজসহ অনেক নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের ওপর আমদানি শুল্ক অনেকটা কমিয়েছে এনবিআর। স্থানীয় পর্যায়ে ভোজ্য তেলের ভ্যাটও প্রত্যাহার করেছে। কিন্তু বাজারে এসব পণ্যের দাম এখনও কমছে না; বরং বেড়েছে।
এনবিআর কর্মকর্তারা জানান, যেসব পণ্যের জন্য কর অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে, তার সম্ভাব্য পরিমাণ ৮ হাজার কোটি টাকার বেশি।
তবে ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ-এর (টিসিবি) সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, গত এক মাসে মোটা চলের দাম বেড়েছে ৭ শতাংশ। সয়াবিন ও পাম তেলের দাম প্রায় ১২ শতাংশ, আমদানিকৃত পেঁয়াজের দাম ৫ শতাংশ ও খেজুরে দাম ৭ শতাংশ বেড়েছে। চিনির দাম সামান্য কমেছে, আর ডিমের দাম কমেছে প্রায় ৭ শতাংশ।
কনজিউমার অ্যাসোসিয়েশন অভ বাংলাদেশের ভাইস প্রেসিডেন্ট এস এম নাজের হোসেন বলেন, বড় ব্যবসায়ী ও কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোর কারসাজির কারণেই করছাড়ের পরও দাম কমছে না।
'ব্যবসায়ীদের কারসাজি রয়েছে এবং সরকারের তদারকির অভাব রয়েছে। এ কারনে ট্যাক্স কমালেও দাম কমছে না,' বলেন তিন।
কর্পোরেটদের কেউ কেউ বিশ্ববাজারে মূল্যবৃদ্ধির ওপর দায় চাপাতে চাইলেও নাজের হোসেন এর সঙ্গে একমত নন তিনি। তিনি বলেন, 'বিশ্ববাজারে বেশিরভাগ পণ্যেরই দাম বাড়েনি।'
সাবেক এনবিআর সদস্য মো. ফারিদ উদ্দিন বলেন, করছাড়ের ফলে খুচরা মূল্য কমে আসা উচিত ছিল, কিন্তু পর্যাপ্ত সরবরাহ না থাকলে সরবরাহ চেইনে কেউ না কেউ এই সুবিধা নেবে।
জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মোহাম্মদ আলিম আখতার খান বলেন, বাজারে এখনও আগের সরকারের মিত্ররা সক্রিয়। তারা এখনও নিজেদের প্রভাব বজায় রেখেছে। 'চাহিদা ও সরবরাহে ব্যবধান থাকলে কারসাজিকারীরা এই সুযোগ নেয়।'