প্রতি ছয় মাসে ০.৫ শতাংশ কমবে পোশাক রপ্তানিতে নগদ সহায়তা

২০২৬ সালের জুলাই মাসে রপ্তানিতে দেওয়া নগদ প্রণোদনার পুরোটা প্রত্যাহার করে নেবে সরকার। এই লক্ষ্যে প্রতি ছয় মাস পর পর প্রণোদনার হার শূন্য দশমিক ৫ শতাংশ (০.৫) কমানো হবে তৈরি পোশাক খাতের রপ্তানিতে নগদ সহায়তা। ২০২৬ সালের নভেম্বর মাসে স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে উত্তরণ (এলডিসি গ্রাজুয়েশন) হওয়ার কথা রয়েছে বাংলাদেশের। অর্থাৎ তার মাস-কয়েক আগেই এই সুবিধা বন্ধ হবে।
এই লক্ষ্য অর্থ মন্ত্রণালয়ের তৈরি করা রোডম্যাপ চলতি বছরের জানুয়ারি থেকেই কার্যকর করা হয়েছে, যার আওতায় প্রাথমিকভাবে রপ্তানিতে নগদ সহায়তা হ্রাস করা হয়। এর আওতায়, রপ্তানির অন্যান্য খাতে দেওয়া প্রণোদনাও প্রতি বছর এক-তৃতীয়াংশ হারে কমিয়ে– ২০২৬ সাল নাগাদ পুরোপুরি প্রত্যাহার করা হবে।
তবে নগদ প্রণোদনার বিকল্প হিসেবে প্রধান প্রধান রপ্তানি পণ্য উৎপাদনকারী শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোর বিদ্যুৎ বিলে ১০ শতাংশ পর্যন্ত রেয়াত দেওয়া, রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলোর সকল ধরণের লাইসেন্সিং ফি মওকুফ করা এবং মূলধনী ও খুচরা যন্ত্রপাতি আমদানিতে আরোপিত শুল্ক হার সর্বোচ্চ ১% বহাল রেখে বাকি সব ধরণের শুল্ককর হতে অব্যাহতি দেওয়া হতে পারে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের একটি নীতি আদেশের খসড়ায়, রপ্তানিমুখী যেসব শিল্প কারখানায় সার্বক্ষণিক বিদ্যুতের প্রয়োজন হয়, সেসব কারখানায় গ্রিন এনার্জি ইউনিট স্থাপনে স্বল্প সুদে ব্যাংক ঋণের ব্যবস্থা করা এবং ইফ্লুয়েন্ট ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট (ইটিপি) ও পরিবেশবান্ধব কারখানা নির্মাণে সহায়তা দেওয়ার কথা বলা হয়েছে।
দেশের সবচেয়ে বড় রপ্তানি খাত তৈরি পোশাক বা আরএমজি সবচেয়ে বেশি নগদ সহায়তা পেয়ে আসছে। এই সুবিধা পেয়ে গত চার দশকে অভূতপূর্ব উত্থান হয়েছে এ শিল্পের। কিন্তু, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকেই বাংলাদেশ ব্যাংক এই রোডম্যাপ বাস্তবায়ন করতে শুরু করায় পোশাক ও বস্ত্র শিল্পই সবচেয়ে বেশি প্রভাবিত হতে চলেছে।
বর্তমানে ৪৩টি খাতের রপ্তানির বিপরীতে নগদ প্রণোদনা দেয় সরকার। এরমধ্যে সবচেয়ে বেশি অর্থ ব্যয় হয় রপ্তানিমুখী দেশিয় বস্ত্রখাতে শুল্ক বন্ড ও ডিউটি ড্র-ব্যাক এর পরিবর্তে বিকল্প নগদ সহায়তা বাবদ। তৈরি পোশাক রপ্তানিকারকদের প্রায় সবাই এ সহায়তা পেয়ে থাকেন। এখাতে নগদ সহায়তার হার ছিল ৪ শতাংশ। গত ৩০ জানুয়ারি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক প্রজ্ঞাপনে এটি কমিয়ে ৩ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সার্কুলার পাট, হিমায়িত মাছ, আলু, প্রক্রিয়াজাত মাংসের মতো অন্যান্য রপ্তানি খাতের প্রণোদনাও কমিয়েছে — কিছুক্ষেত্রে যা ১০ শতাংশ থেকে শূন্য শতাংশে; অথবা ২০ শতাংশ থেকে ১৫ শতাংশ করা হয়েছে।
এদিকে নগদ প্রণোদনা প্রত্যাহারে বিরূপ প্রভাবের আশঙ্কা করছেন পোশাক শিল্পের নেতারা। তাঁরা বলছেন, বর্তমানে রপ্তানি খাতকে টিকিয়ে রাখতে এবং এলডিসি গ্রাজুয়েশনের পরে যখন শুল্ক-মুক্ত রপ্তানির সুবিধা শেষ হবে– তখন বিশ্ববাজারে প্রতিযোগিতার সক্ষম রাখতে সরকারকে বিকল্প বিভিন্ন সহায়তা দিতে হবে।
এই শিল্পের বিশ্লেষকরা বলছেন, বিশ্ববাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) নীতি অনুযায়ী, এলডিসি গ্রাজুয়েশনের পরে আর নগদ সহায়তা দেওয়া যাবে না। দেশের ব্যবসায়ীদের এই বাস্তবতা মোকাবিলার জন্য প্রস্তুতি নিতে হবে, এবং সরকারকেও বিকল্প নীতির মাধ্যমে রপ্তানিমুখী শিল্পকে সমর্থন দিতে হবে।
নগদ সহায়তা কত বড়
চলতি অর্থবছরের বাজেটে রপ্তানি ও রেমিট্যান্স প্রণোদনা বাবদ ১৫ হাজার ২২৫ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। ২০২১-২২ অর্থবছরে এখানে সরকারের প্রকৃত ব্যয় ছিল ১৩ হাজার ৪০৯ কোটি টাকা।
এই বরাদ্দের মধ্যে ৪ হাজার কোটি টাকা রেমিট্যান্সের প্রণোদনা, বাকিটা পান রপ্তানিকারকরা। যার প্রায় ৭০ শতাংশই আবার পান পোশাকপণ্য রপ্তানিকারকরা।
অর্থ বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, আগামী দুই অর্থবছরের প্রতি জানুয়ারি ও জুলাই মাসে পোশাক খাতে প্রণোদনার হার ০.৫ শতাংশ করে কমানো হবে। ফলে ২০২৬ সালের জুন নাগাদ এখাতে প্রণোদনা হার দাঁড়াবে ১ শতাংশ, যা পরবর্তী অর্থবছরের শুরুতে বা ২০২৬-২০২৭ অর্থবছরের ১ জুলাই থেকে পুরোপুরি প্রত্যাহার করে নেবে অর্থ মন্ত্রণালয়।
পাটসুতা, পাটপণ্য, হিমায়িত মৎস্য, চামড়া, প্লাস্টিক পণ্যসহ যেসব পণ্য রপ্তানির বিপরীতে ১০% বা তার কম হারে নগদ প্রণোদনা রয়েছে, আর যেসবখাতে ১২% থেকে ১৫% পর্যন্ত প্রণোদনা রয়েছে, সেগুলোর প্রণোদনাও প্রতিবছর এক-তৃতীয়াংশ হারে কমানো হবে। তবে প্রণোদনার হার বেশি হলেও– মোট রপ্তানিতে এসব খাতের অবদান তেমন উল্লেখযোগ্য না হওয়ায়– তারা নগদ সহায়তার অল্প অংশই পায়।
এলডিসি গ্রাজুয়েশন সামনে রেখে চলতি অর্থবছরের দ্বিতীয়ার্ধ থেকেই বিভিন্নখাতে বিদ্যমান রপ্তানির বিপরীতে নগদ প্রণোদনা কমাতে শুরু করেছে সরকার।
জানুয়ারিতে প্রথমে তৈরি পোশাকখাতের পাঁচটি এইচএস কোডভুক্ত পণ্য রপ্তানির বিপরীতে থাকা ১% বিশেষ নগদ প্রণোদনা পুরোপুরি প্রত্যাহার করে নিয়েছিল অর্থ মন্ত্রণালয়। পরে ব্যবসায়ীদের দাবি ও প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় তা শূন্য দশমিক ৫০ শতাংশ হারে (০.৫০%) পুনর্বহাল করা হয়।
এর বাইরে তৈরি পোশাকখাতে আরও কিছু প্রণোদনা রয়েছে। যেমন- ইউরো অঞ্চলে রপ্তানিকারকদের জন্য বিদ্যমান ৩ শতাংশের অতিরিক্ত ১ শতাংশ বিশেষ সহায়তা রয়েছে। আবার তৈরি পোশাকখাতের ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প অতিরিক্ত ৪ শতাংশ নগদ সহায়তা পায়।
এছাড়া, নতুন পণ্য ও নতুন বাজারে রপ্তানি, ম্যান মেইড ফাইভার পণ্য রপ্তানিতে অতিরিক্ত ৩ শতাংশ নগদ সহায়তা দিচ্ছে সরকার। এসব প্রণোদনার হারও প্রতি ছয় মাস পর পর কমাবে অর্থ মন্ত্রণালয়।
অন্যান্য সহায়তা
বর্তমানে রপ্তানিখাতে প্রণোদনার অংশ হিসেবে ডিউটি ড্র ব্যাক স্কিম, সুদ হারে ভর্তুকি, স্পেশাল বন্ডেড ওয়্যারহাউস, ব্যাক টু ব্যাক লেটার অব ক্রেডিট, রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল (ইপিজেড) সুবিধা, রপ্তানিমুখী শিল্পের যন্ত্রপাতি আমদানি, নগদ প্রণোদনা, আয়কর রেয়াত, কারেন্সি রিটেনশন স্কিম, এক্সপোর্ট ক্রেডিট, গ্যারান্টি স্কিম, রপ্তানি উন্নয়ন তহবিল, রপ্তানির উপর ভ্যাট অব্যাহতি এবং রপ্তানিকারকদের ভ্যাট ফেরত দেওয়া উল্লেখযোগ্য।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হলে রপ্তানি প্রণোদনা, আয়কর রেয়াত ও কারেন্সি রিটেনশন স্কিম সুবিধা দেওয়া যাবে না। তবে শুল্ক প্রত্যার্পন, রপ্তানি পণ্য উৎপাদনে ব্যবহৃত ইনপুটগুলোর আমদানি ও রপ্তানির উপর ভ্যাট অব্যাহতি, রপ্তানিকারকদের ভ্যাট ফেরত, ইপিজেড সুবিধা, ব্যাক ও টু ব্যাক এলসি সুবিধা, স্পেশাল বন্ডেড ওয়্যারহাউজ ও ডিউটি ড্র ব্যাক স্কিম সুবিধা চালু রাখা যাবে।
এছাড়া, এক্সপোর্ট ক্রেডিট গ্যারান্টি স্কিম দেওয়ার ক্ষেত্রে দীর্ঘমেয়াদি অপারেটিং খরচ সংকুলান নাহলে– তা দেওয়া সম্ভব হবে না। তাছাড়া, সুদের হার ও রপ্তানি উন্নয়ন তহবিল দেওয়ার ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক পুঁজিবাজারের সুদহারের চেয়ে কম সুদে ঋণ দেওয়া যাবে না।
নগদ সহায়তার বিকল্প
সরকার নগদ প্রণোদনা প্রত্যাহার করলেও বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার নীতিমালার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে রপ্তানিকারকদের জন্য বিকল্প সহায়তা দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের। ২০২৪-২০২৭ রপ্তানি নীতি আদেশের খসড়ায় বিকল্প হিসেবে বিভিন্ন ধরণের প্রণোদনা দেওয়ার পরিকল্পনা তুলে ধরেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
এতে নগদ প্রণোদনার বিকল্প হিসেবে প্রধান প্রধান রপ্তানি পণ্য উৎপাদনকারী শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোর বিদ্যুৎ বিলে ৫ থেকে ১০ শতাংশ পর্যন্ত রেয়াত দেওয়া, রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলোর সকল ধরণের লাইসেন্সিং ফি মওকুফ করা এবং মূলধনী ও খুচরা যন্ত্রপাতি আমদানিতে আরোপিত শুল্ক হার সর্বোচ্চ ১ শতাংশ বহাল রেখে বাকি সব ধরণের শুল্ককর হতে অব্যাহতি দেওয়ার কথা বলা হয়েছে।
রপ্তানিমুখী যেসব শিল্প কারখানায় সার্বক্ষণিক বিদ্যুতের প্রয়োজন হয়, সেসব কারখানায় গ্রিন এনার্জি ইউনিট স্থাপনে রপ্তানি উন্নয়ন তহবিল থেকে স্বল্প সুদে ব্যাংক ঋণের ব্যবস্থা করা হবে। ইফ্লুয়েন্ট ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট (ইটিপি) ও পরিবেশবান্ধব কারখানা নির্মাণে এই তহবিল থেকে সরকার হতে ভর্তুকি সুদে বা কম সুদে ঋণ সহায়তা দেওয়া হবে।
আশা, নিরাশা ও বাস্তবতা
পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের হিসাব অনুযায়ী, এলডিসি গ্র্যাজুয়েশনের কারণে শুল্কমুক্ত সুবিধা হারানোয় বাংলাদেশের রপ্তানি আয় ৭ বিলিয়ন ডলার কমতে পারে।
তবে বাংলাদেশ ট্রেড এন্ড ট্যারিফ কমিশনের সাবেক সদস্য মোস্তফা আবিদ খান টিবিএসকে বলেন, ২০২৯ সাল পর্যন্ত ইউরোপীয় ইউনিয়ন [ইইউ] এবং যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশের শুল্কমুক্ত রপ্তানি সুবিধা বজায় থাকবে। অর্থাৎ, গ্রাজুয়েশন হলেও এসময় পর্যন্ত বর্তমান রপ্তানির প্রায় ৬০ শতাংশের ওপর কোনো প্রভাব পড়বে না।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের মোট রপ্তানির ৭৩ শতাংশ প্রেফারেন্সিয়াল [অগ্রাধিকার] সুবিধার আওতায় পরিচালিত হয় — এর ৮০ শতাংশ পাওয়া যায় ইইউ ও যুক্তরাজ্যের বাজারে। বাকি ২০ শতাংশ শুল্ক-মুক্ত রপ্তানি সুবিধা এলডিসি গ্রাজুয়েশনের পর আর থাকবে না।
মোস্তফা আবিদ আরো বলেন, নগদ প্রণোদনা প্রত্যাহারের প্রভাব নির্ভর করবে রপ্তানিকারক খাতগুলো তাদের সক্ষমতা বাড়াতে কী ধরনের পদক্ষেপ নিচ্ছে, এবং গ্রাজুয়েশনের পর রপ্তানিকারকদের বিকল্প সহায়তা হিসেবে সরকার কী ধরনের নীতি সহায়তা দেবে– তার ওপর।
পর্যায়ক্রমে রপ্তানি প্রণোদনার হার কমিয়ে আনার সরকারি পরিকল্পনাকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) এর সম্মানীয় ফেলো অধ্যাপক ড. মোস্তাফিজুর রহমান।
টিবিএসকে তিনি বলেন, "একসঙ্গে পুরোটা প্রত্যাহার করা হলে ব্যবসায়ীরা তার সঙ্গে খাপ খাওয়াতে পারবেন না। তাই এখন থেকেই ক্রমান্বয়ে নগদ প্রণোদনার হার কমিয়ে আনতে হবে। তবে এক্ষেত্রে বিশ্ববাণিজ্য সংস্থায় (ডব্লিউটিও) কোন ধরণের নীতি গৃহীত হয়, তার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।"
তবে এখন থেকেই প্রণোদনা প্রত্যাহার শুরু করাকে যৌক্তিক মনে করেন না বাংলাদেশ গার্মেন্ট ম্যানুফ্যাকচারার্স এন্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিজিএমইএ)-র সভাপতি ফারুক হাসান। তাঁর মতে, "রপ্তানিকারকরা যাতে ২০২৬ সালের মধ্যে প্রতিযোগি সক্ষমতা অর্জন করতে পারেন– সেজন্য নগদ প্রণোদনা গ্রাজুয়েশন পর্যন্ত অব্যাহত রাখা যায়।"
তিনি বলেন, এলডিসি- পরবর্তী সময়ে নগদ সহায়তা ছাড়া টিকে থাকার জন্য রপ্তানিকারকদের তাঁদের সক্ষমতা বাড়াতে হবে।
"সেজন্য অনেক শিল্প কারখানা এখন থেকেই প্রস্তুতি নিচ্ছে। অনেক কারখানা জালানি-সাশ্রয়ী প্রযুক্তি গ্রহণ করছে। যন্ত্রপাতি আপগ্রেড করা হচ্ছে। এসব প্রচেষ্টার মাধ্যমে আমাদের উৎপাদনশীলতা যেমন বাড়াতে হবে, তেমনি পণ্যের ডিজাইনে বৈচিত্র্য আনতে হবে।"
বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স এন্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিকেএমইএ) এর নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম টিবিএসকে বলেন, এলডিসি গ্রাজুয়েশন সামনে রেখে সরকার নগদ প্রণোদনা প্রত্যাহার করে নেওয়া শুরু করলেও– এর বিকল্প হিসেবে কোন সুবিধা দেওয়া শুরু করেনি।
"আমরাও জানি যে, গ্রাজুয়েশন হলে আর প্রণোদনা দিতে পারবে না। কিন্তু তা এখনই প্রত্যাহার করার প্রয়োজন কী? ২০২৬ সালের নভেম্বর পর্যন্ত অব্যাহত রাখতে পারে"- বলেন তিনি।
হাতেম বলেন, নগদ প্রণোদনা প্রত্যাহার বিষয়ে অর্থ মন্ত্রণালয় যে রোডম্যাপ তৈরি করেছে, সে বিষয়ে রপ্তানিকারকদের সঙ্গে কোনও আলোচনা করেনি। "আমরা মনে করি, নগদ সহায়তা কিভাবে প্রত্যাহার করা হবে এবং তার বিকল্প হিসেবে কি কি সুবিধা কবে থেকে দেওয়া হবে- তা ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত। ব্যবসায়ীদের অন্ধকারে রেখে সিদ্ধান্ত নেওয়া হলে– এসবখাতে নতুন বিনিয়োগ আসবে না।"
চীন, ভারত, পাকিস্তান, ভিয়েতনামসহ বিভিন্ন উন্নয়নশীল দেশ রপ্তানিকারকদের নানান সহায়তা দিচ্ছে উল্লেখ করে হাতেম বলেন, ছয়টি রাজ্যে টেক্সটাইলখাতে বিনিয়োগ করলে ওইসব কারখানার শ্রমিকদের বেতনের ৫০ শতাংশ ভারত সরকার পরিশোধ করার ঘোষণা দিয়েছে। এছাড়া, কোনো উদ্যোক্তা এখাতে ঋণ নিয়ে বিনিয়োগ করলে তার সুদের ৩০ শতাংশ ভারত সরকার পরিশোধ করে। বিদ্যুৎ বিলে প্রতি ইউনিটে ২ রুপি ছাড়ও দিচ্ছে। নগদ সহায়তা প্রত্যাহারের পরে একই ধরনের সুযোগ-সুবিধা দিলেই আমরাও টিকে থাকতে পারব।