দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করছে বে ইকোনমিক জোন

আধুনিক সুযোগ-সুবিধাসহ শিল্প কর্মকাণ্ডে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করতে প্রস্তুত বে ইকোনমিক জোন। ইতোমধ্যে এ অর্থনৈতিক অঞ্চলে দু'টি প্রতিষ্ঠান উৎপাদন শুরু করেছে।
গাজীপুরের কোনাবাড়ীতে ৬৫ একর জমির ওপর বেসরকারি এ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা করছে বে গ্রুপ।
বে গ্রুপের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা জানান, এখানে ইতোমধ্যেই চীনের খেলনা প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান মেইগো (বাংলাদেশ) লিমিটেড ও বে স্পোর্টস ওয়্যার লিমিটেড উৎপাদন শুরু করেছে। এছাড়া জমি লিজ নিয়েছে তাইওয়ানের পোশাক প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান মাকালত ইন্ডাস্ট্রিয়াল কোম্পানি লিমিটেড।
বে গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জিয়াউর রহমান দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, '৬৫ একর জমির মধ্যে বিনিয়োগকারীদের ৪০ শতাংশ জমি লিজ দেওয়া হয়েছে। দক্ষিণ কোরিয়া, ইউরোপীয় ও তাইওয়ানের বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান বিনিয়োগে আগ্রহ দেখিয়েছে।'
তিনি বলেন, 'মূলত চীন থেকে যে প্রতিষ্ঠান তাদের ফ্যাক্টরি অন্য দেশে নিতে চাচ্ছে এমন প্রতিষ্ঠান আসছে। আমরা তাদের প্রতিনিধির সঙ্গে কথা বলছি। আশা করি দ্রুতই কিছু বিদেশি বিনিয়োগ এখানে আসবে।'
তিনি আরও বলেন, 'বে ইকোনমিক জোনে ১০০ মিলিয়ন ডলারেরও বেশি বিদেশি বিনিয়োগ হয়েছে। এছাড়া অবকাঠামো উন্নয়নসহ আমাদের নিজেদের প্রায় ৭৫ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ হয়েছে।'
বাংলাদেশ ইকোনমিক জোন অথোরিটি (বেজা) ২০১৭ সালে এ অর্থনৈতিক অঞ্চলটির অনুমোদন দেয়। এর পর চীনা প্রতিষ্ঠান মেইগো (বাংলাদেশ) লিমিটেড প্রথম বে ইকোনমিক জোনে উৎপাদন শুরু করে। প্রতিষ্ঠানটি ২০১৮ সাল থেকে খেলনা তৈরি করছে। বেজার তথ্য বলছে, প্রতিষ্ঠানটি ১৫.৮ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেছে।
মেইগো (বাংলাদেশ) লিমিটেড খেলনা তৈরি করে জাপান ও ইউরোপের মার্কেটে রপ্তানি করছে।
বের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এর পাশাপাশি তাইওয়ানের পোশাক প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান মাকালত ইন্ডাস্ট্রিয়াল কোম্পানি লিমিটেড এই জোনে একটি কারখানা স্থাপনের জন্য ১৭ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করবে। বাংলাদেশে এ কোম্পানির নিবন্ধিত নাম মাকালত (বিডি) লিমিটেড।
মাকালত (বিডি) এখানে ছয়তলা বিশিষ্ট একটি কারখানা স্থাপন করবে, যেখানে প্রায় দেড় হাজার মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হবে। এ কারখানায় খেলাধুলা, ঘুমানো, অবকাশযাপনসহ বিভিন্ন কাজের জন্য প্রয়োজনীয় পোশাক তৈরি করা হবে।
গত বছরের জানুয়ারিতে ১০ হাজার ১১৯ বর্গমিটার জায়গা বরাদ্দ দিতে তাইওয়ানের এই বিনিয়োগকারীর সঙ্গে বে ইকোনমিক জোনের একটি চুক্তি হয়। বর্তমানে ইন্দোনেশিয়া, কম্বোডিয়া, চীন ও ফিলিপাইনে মাকালতের কারখানাগুলোতে ৩৩ হাজারেরও বেশি মানুষ কর্মরত রয়েছে।
জিয়াউর রহমান বলেন, 'মাকালত (বিডি) লিমিটেড প্রতিষ্ঠানটি নির্মাণাধীন রয়েছে। আছে। এ বছরের এপ্রিলের মধ্যেই এটি পণ্য উৎপাদনে যেতে পারে বলে আশা করা হচ্ছে।'
তিনি বলেন, 'এ অর্থনৈতিক অঞ্চলে আমাদের প্রতিষ্ঠান বে স্পোর্টস ওয়্যার লিমিটেড আন্তর্জাতিক জুতা প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান স্টেলার সঙ্গে যৌথভাবে রপ্তানিযোগ্য জুতা তৈরি করে।'
আরও যেসব প্রতিষ্ঠান পণ্য উৎপাদন করবে সেগুলোর মধ্যে রয়েছে ফরমোজা মোল্ড অ্যান্ড লাস্টিং লিমিটেড (প্লাস্টিক পণ্য), বে বক্স লিমিটেড (প্যাকেজিং অ্যান্ড অ্যাক্সেসরিজ পণ্য), এসেনসিয়াল ডাইং লিমিটেড (পোশাক) ও বে কার্গো লিমিটেড (লজিস্টিক পণ্য)।
জিয়াউর রহমান টিবিএসকে বলেন, 'আমরা এখন হাই-এন্ড ভ্যালু তৈরি হয় এসব পণ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানকে বেছে বেছে জমি বরাদ্দ দেব। টেক্সটাইলের কিছু প্রতিষ্ঠান রয়েছে যেগুলো হাতে তৈরি ফাইভার উৎপাদন করবে এমন বিদেশি প্রতিষ্ঠান জমি নেওয়ার বিষয়ে কথা বলেছে। বিনিয়োগকারীদের সেবা দেওয়ার জন্য আমরা প্রস্তুত।'
এ অর্থনৈতিক অঞ্চলে প্রায় ১০ হাজার মানুষের সরাসরি কর্মসংস্থান তৈরি হবে। এছাড়াও পরোক্ষভাবে কাজের সুযোগ সৃষ্টি হবে ৫০ শতাংশেরও বেশি মানুষের।
জিয়াউর রহমান জানান, দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীদের ক্রমবর্ধমান চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে অর্থনৈতিক অঞ্চলকে ১০০ একর জমিতে সম্প্রসারণের পরিকল্পনা রয়েছে।
বর্তমানে মোট আটটি বেসরকারি অর্থনৈতিক অঞ্চল বাণিজ্যিকভাবে চালু রয়েছে। বেজা ২০৪১ সালের মধ্যে দেশজুড়ে ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে, যেখানে প্রায় ১০ মিলিয়ন মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে।
অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ এই সময়ের মধ্যে এসব অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলো থেকে ৪০ বিলিয়ন ডলার অতিরিক্ত রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে।
অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিনিয়োগকারীরা কর ছুটি, কাঁচামাল ও যন্ত্রপাতির শুল্কমুক্ত আমদানি, লভ্যাংশ কর থেকে অব্যাহতি, ভ্যাট-মুক্ত বিদ্যুৎ, গ্যাস ও পানি এবং অন্যান্য আর্থিক সুবিধা পেয়ে থাকে।
এছাড়াও তারা বন্ড সুবিধা, ওয়ান স্টপ সার্ভিস (ওএসএস), পৃথক শুল্ক পদ্ধতিসহ আরো বেশ কিছু অ-আর্থিক সুবিধা পেয়ে থাকে।