তিন মাসে কোটি টাকার ব্যাংক অ্যাকাউন্ট বেড়েছে ৩,৩৬২টি

চলতি বছরের জুন মাস পর্যন্ত তিন মাসে এক কোটি বা তার বেশি পরিমাণ টাকার ব্যাংক অ্যাকাউন্টের সংখ্যা বেড়েছে ৩,৩৬২টি।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, জুন শেষে এক কোটি টাকার বেশি অর্থ সমৃদ্ধ অ্যাকাউন্টের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১.১৪ লাখে, যা মার্চ প্রান্তিকের শেষে ছিল ১.১০ লাখ।
জুনের শেষে ব্যাংকগুলোতে মোট আমানতের পরিমাণ ছিল ১৬.৮৭ লাখ কোটি টাকা, যার মধ্যে ৭.৩১ লাখ কোটি বা আমানতের ৪৩.৩৩% কোটি টাকার অ্যাকাউন্টে রাখা হয়েছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেছেন, বিষয়টিকে দুটি দৃষ্টিকোণ থেকে দেখা যেতে পারে: গত পাঁচ বছরে কোটি টাকা অ্যাকাউন্টের সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে।
"অন্যভাবে বলতে গেলে, ব্যবসা পরিস্থিতি বেশ ভালো এবং এ অ্যাকাউন্টগুলোর বেশিরভাগই প্রাতিষ্ঠানিক বা ব্যবসায়িক অ্যাকাউন্ট। তাদের লাভ বাড়ার কারণে আমানতও বেড়েছে। আমানত বৃদ্ধি সামগ্রিকভাবে অর্থনীতির জন্য উপকারী। যখন একটি দেশের সঞ্চয় বাড়ে, তখন তাদের বিনিয়োগ ক্ষমতাও বাড়ে," টিবিএসকে বলেন তিনি।
জুন প্রান্তিকে দেশের ব্যাংকিং খাতে আমানত বেড়েছে ৭৪ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে কোটি টাকার অ্যাকাউন্টে আমানত বেড়েছে প্রায় ৪০,৫০০ কোটি টাকা।
"আমাদের দেখতে হবে কীভাবে মোট অ্যাকাউন্টধারীর সংখ্যা বাড়ছে এবং সেই অনুযায়ী আমানত কীভাবে বাড়ছে। যদি কোটি টাকা ব্যতীত অন্যান্য অ্যাকাউন্ট হোল্ডারদের আমানত সেভাবে না বাড়ে, তবে এটি অবশ্যই বলতে হবে যে দেশে বৈষম্য বাড়ছে," বলেন এই কর্মকর্তা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, দেশের ব্যাংকগুলোতে মোট ১৪.৬০ কোটি অ্যাকাউন্টের মধ্যে ৬৫% বা ৯.৫১ কোটি অ্যাকাউন্টে ৫ হাজারেরও কম টাকা জমা রয়েছে। এসব অ্যাকাউন্টে গড়ে এক হাজার টাকা জমা হয়। অর্থাৎ দেশের জনগণের একটি বড় অংশের ব্যাংক আমানতের পরিমাণ সর্বনিম্ন পর্যায়ে রয়েছে।
ব্র্যাক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সেলিম আর এফ হোসেন বলেন, "আমাদের দেশে বৈষম্য বাড়ছে; এটা অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই। একটি দেশে কোটি টাকা অ্যাকাউন্টের সংখ্যা ক্রমাগত বৃদ্ধির মানে সমাজে অর্থনৈতিক বৈষম্য বাড়ছে। তবে, ব্যাংকিং খাতে আমানতের বৃদ্ধি অবশ্যই এই খাতের জন্য সুখবর।"
রাষ্ট্রীয় ব্যাংকে আমানত আরও বাড়ছে
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মতে, মার্চ প্রান্তিকের তুলনায় জুন প্রান্তিকে ব্যাংকগুলোতে আমানত বেড়েছে ৪.৫৯%। রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ব্যাংকগুলোতে আমানত বেড়েছে ৫.৭৩%, যা ২০২০ সালের ডিসেম্বর প্রান্তিকে ৯.৩১% বেড়েছিল। সে অনুযায়ী, গত আড়াই বছরের মধ্যে এবারের এপ্রিল-জুনে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোতে আমানত সর্বোচ্চ হারে বেড়েছে।
রাষ্ট্রায়ত্ত জনতা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আব্দুল জব্বার বলেন, বেশকিছু বেসরকারি ব্যাংকের নেতিবাচক খবর শুনে অনেকেই রাষ্ট্রীয় ব্যাংকের দিকে ঝুঁকেছেন।
"কারণ তারা জানে যে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকে টাকা জমা রাখা নিরাপদ। জনগণের আস্থা বৃদ্ধি আমাদের ব্যাংকে আমানত বাড়াতে মুখ্য ভূমিকা পালন করেছে," যোগ করেন তিনি।
জনতা ব্যাংকে যোগদানের পর তিনি নতুন অ্যাকাউন্ট এবং আমানত বাড়ানোর জন্য ১০১ দিনের একটি কর্মসূচি গ্রহণ করেছিলেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, "আমরা এই কর্মসূচিতে অপ্রত্যাশিত সাফল্য পেয়েছি। এই সময়ে দুই লাখেরও বেশি নতুন অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছে। নতুন অ্যাকাউন্ট খোলা হলে আমানতও কিছুটা বাড়ে। আমরা এখন নতুন উদ্যোগ নিয়ে কাজ করছি।"
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, বিশেষায়িত ব্যাংকে আমানত বেড়েছে ৪.১৩%, বেসরকারি ব্যাংকে ৪.৪৮% এবং বিদেশি ব্যাংকে ০.৩৬%।